খাসী কোরবানী প্রসঙ্গেঃ
❏ খাসী কোরবানী প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে আছে,
عن ابی رافع قال ضحی رسول الله صلی الله علیه وسلم بکبشین املحین خصیین
-"হযরত আবী রাফে (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) দুইটি মোটা তাজা খাসীকৃত বকরা কোরবানী করেছেন।" (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৩৮৬০; ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ৫৯৬৬)
ইমাম হায়ছামী (رحمة الله) ও ইমাম ইবনে মুলাক্কিন (رحمة الله) হাদিসটিকে حسن হাছান বলেছেন।
❏ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস লক্ষ্য করুন,
عن جابر بن عبد الله قال ان رسول الله ﷺ اتی بکبشین اقرنین املحین عظیمین مٶجوءین فاضجع احدهما وقال بسم الله والله اکبر....
-"হযরত জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল ﷺ এঁর নিকট দুইটি মোটাতাজা, লম্বা সিংযুক্ত, বড় খাসী আনা হল। ইহার একটিকে কোরবানী করার সময় বললেন, বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার..। (মুসনাদু আবী ইয়ালা, হাদিস নং ১৭৯২; ইমাম বায়হাকী: সুনানুল কুবরা, হাদিস নং ১৯০৪৮)
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম হায়ছামী রঃ এবং ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রঃ বলেছেন, واسنده حسن ইহার সনদ হাছান। (ইমাম হায়ছামী: মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, হাদিস নং ৫৯৬৯; ইমাম আসকালানী: মাতালিবুল আলিয়া, হাদিস নং ২২৮৯)
এ ব্যাপারে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه), হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) ও হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকেও খাসী কোরবানীর ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত আছে যে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) খাসী কোরবানী করেছেন।
❏ আমাদের মাজহাবের ইমামের অভিমত,
روی عن ابی حنیفة فانه روی عنه انه سٸل عن التضیة بالخصی فقال ما زاد فی لحمه انفع مما ذهب من خصیتیه
-"ইমামে আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় তাকে খাসী কোরবানীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এমন পশু দ্বারা কোরবানী করা সর্বোত্তম, কেননা খাসীর গোস্ত অধিক উত্তম ও উপকারী।" (বাদাউছ সানাঈ, ৪র্থ খন্ড, ২২৩ পৃঃ, জাওহারাতুন নাইয়ারা, ২য় খন্ড, ৪৫৫ পৃঃ; ফতোয়ায়ে বাহরুর রায়েক, ৯ম খন্ড, ৩২৩ পৃঃ)
❏ ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর ছাত্র ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাছান (رحمة الله) বলেন,
الخصی من الاضحییة یجزٸ مما یجزٸ منه فحل
কোরবানীর বেলায় পাঠা যেমন জায়েয তেমনি খাসী কোরবানী জায়েয। (মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, ২৮০ পৃঃ)
❏ ইমাম কাজীখান (رحمة الله) বলেন,
والانثی من الابل والبکر افضل من الذکر من المغر افضل وکذا الذکر من الضان اذا کان موجبا ای خصیا
-"কোরবানীর বেলায় পাঠা থেকে গাভী ও উষ্ট্রী উত্তম, আর পাঠা, গাভী ও উষ্ট্রী থেকে খাসী আরো উত্তম।" (ফতোয়ায়ে কাজীখান, ৪র্থ জিল্দ, ৩৩১ পৃঃ)
❏ ফতোয়ায়ে আলমগিরীতে আছে,
والخصی افضل من الفحل لانه اطیب لحما کذا فی المحیط
-"খাসী কোরবানী করা পাঠা কোরবানীর চেয়ে উত্তম, কেননা ইহার গোস্ত অধিক সুস্বাদু।" (ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ৫ম খন্ড, ৩৭০ পৃঃ)
❏ আলা হযরত আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (رحمة الله) বলেন, "খাসী কি কোরবানী আফজাল হায় আওর উছমে সওয়াব যিয়াদা হায়" অর্থাৎ খাসি কোরবানী উত্তম এবং এতে সওয়াব বেশী। (ফতোয়ায়ে রেজবিয়া, ৮ম খন্ড, ৪৪২ পৃঃ)
❏ ইমাম কুরতবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,
والجمهور من العلماء وجماعتهم علی انه لا بٱس ان یضحی بالخصی واستحسنه بعضهم
-"জমহুর উলামাগণের মতে, খাসী কোরবানী করা অসুবিধা নেই এবং ইমামদের অনেকে খাসী কোরবানীকে উত্তম বলেছেন।" (তাফছিরে কুরতুবী, ৫ম জিল্দ, ৩৪১ পৃঃ)
এছাড়াও কুদূরী, হেদায়া, ফাতহুল কাদির, মেরকাত, বেনায়া, নাছবুর রায়া, মুহিতুল বুরহানী, আল মুহিত, ফাতহুল বারী, বাহারে শরিয়ত, আওনুল মাবুদ, আশিয়াতুল লুময়াত সহ প্রায় অর্ধশত কিতাবে খাসী কোরবানী জায়েয হওয়ার ব্যাপারে দলিল বিদ্যমান রয়েছে। অতএব, হানাফী মাজহাব মোতাবেক প্রত্যেক মুসলমানের জন্য খাসী কোরবানী করা জায়েয ও উত্তম, কেননা প্রিয় নবীজি (ﷺ) খাসী কোরবানী করেছেন এই মর্মে ৫ জন সাহাবী থেকে হাদিস বর্ণিত আছে। আল্লাহ পাক আমাদের ছহীহ্ আমল করার তৌফিক দেন, আমিন।