ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব
আল্লাহ্ তা‘আলা মানব জাতির জন্য পরিবেশের সকল উপাদান সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন। পরিবেশের উপাদানসমূহ ছাড়া মানব জাতীর টিকে থাকা অসম্ভব প্রায়। 

🌱আল্লাহ্ পাক কোরআনে বলেন, ‘আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি। আমি পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তু সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি। এতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও, তাদের জন্যও। প্রতিটি বস্তুর ভান্ডার আমার কাছে রয়েছে। আমি তা প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করে থাকি। আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি। এরপর আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করি। তা তোমাদের পান করতে দিই। এর ভান্ডার তোমাদের কাছে নেই।’ (সুরা হিজর : ১৯-২২)

প্রকৃতির প্রাণকেন্দ্র হলো পৃথিবী। আর পৃথিবীর মৌলিক সম্পদ হলো ভূমি, পানি ও পরিবেশের বৈচিত্র। পরিবেশ বৈচিত্রের অন্যতম কারিগর হলো উদ্ভিদ, যার ২৫ ভাগই হলো বৃক্ষ। অর্থাৎ, বৃক্ষ আর পরিবেশ অনেকটাই একে অপরের পরিপূরক। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো- ‘পরিবেশ বাঁচাতে বৃক্ষের ভূমিকা’। গাছ ও লতা-পাতা হতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী নিজেদের খাদ্য সরবরাহ করে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন, আর অক্সিজেন আমরা গাছ থেকে পেয়ে থাকি। পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য হুমকি হলো নাইট্রোজেন, যা গাছ শোষণ করে পরিবেশকে সুন্দর রাখে। ঝড়, তুফানের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, মাটির ক্ষয়রোধ সহ গাছের নানাবিধ উপকারীতা আছে। ইসলামে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। 

🌱আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করে অথবা ক্ষেতখামার করে, অতঃপর তা হতে মানুষ, পাখি বা অন্য কোনো জন্তু ভক্ষণ করে, তা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫৫৩২) 

🌱আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হাদিসে নবী কারীম (ﷺ.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি লাগাবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৫৫৬০)

মানুষের অপরিকল্পনা, অদূরদর্শিতা ও অমানবিক কর্মকান্ডের কারণে বর্তমানে প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের জলবায়ুতে যার প্রভাব দৃশ্যমান। বায়ুদূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, রোগ-বালাই, পানির স্তর বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগ বেড়ে চলেছে। তাই এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য বিজ্ঞানীরা বনরক্ষা ও বৃক্ষরোপণকে অন্যতম উপায় বলে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু গাছ রক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ইসলাম ও বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি বৃক্ষ রক্ষার ব্যাপারে সোচ্চার। অকারণে গাছ কাটা বা গাছের পাতা ছিড়তেও রাসুলুলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লাম) নিষেধ করেছেন। 

🌱হাদিস শরীফ হতে জানা যায়, একবার এক লোক অকারণে গাছের পাতা ছিড়লেন। তখন প্রিয়নবী সে লোকটির চুল ধরে মৃদুভাবে টান দিয়ে বললেন, তুমি যেমনিভাবে শরীরে আঘাত পেলে ব্যথা পাও, গাছের পাতা ছিড়লে বা ডাল ভাঙলে গাছও তেমন ব্যথা পায়।

পরিবেশের অন্যতম উপাদান পাহাড়। পাহাড় ভূমিকম্প হতে আমাদের রক্ষা করে। 

🌱পাহাড়ের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ পাক কোরআনে বলেন- ‘এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।’ (সূরা আন নাহল : ১৫)। 

এছাড়াও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক নির্দেশনা হাদিসে পাওয়া যায়। 

🌱হযরত মু‘আজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা অভিশাপ পাওয়ার তিনটি কাজ অর্থাৎ পানির ঘাট, রাস্তার মাঝে এবং বৃক্ষের ছায়াতলে মলত্যাগ থেকে বিরত থাকো।’ 

🌱হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ.) পানিতে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। 

যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। অথচ ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। 

🌱প্রিয় নবী (ﷺ) সাবধান করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আঙিনাকে পরিচ্ছন্ন রাখো।’ (জামিউত তিরমিজি : ২৭৯৯)। 

নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, ও নিজের চারপাশ, এলাকা, রাষ্ট্রকে পরিষ্কার রাখলে পরিবেশ সুন্দর থাকবে। আর অপরিষ্কার রাখলে পরিবেশ হবে দূষিত। একজন মুসলিমের জন্য সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ হলো ঈমান। আর হাদিসে পরিষ্কার পরিচ্ছনতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। 

🌱রাসুল (ﷺ) এরশাদ করেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।’ (সহিহ মুসলিম : ২২৩)।

আমাদের কর্মের মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হয় এবং ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যার ফলে আমরাই নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পড়ি। 

🌱এপ্রসঙ্গে কোরআনে আসছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।’ (সূরা আর রুম : ৪১)। 

আসুন আমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি। পরিবেশ দূষিত হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলি। আসুন আমাদের স্লোগান হোক- গাছ লাগাই, পরিবেশ বাচাই।

লেখা প্রেরণে-
 
মুশফিক ইলাহী 
চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ
মোবাইল- ০১৮৭৯-৯১১২৬২

Top