জিজ্ঞাসা–৮৯৬: একজন মা যদি যিনা করে তাহলে একজন সন্তানের কি করণীয়?–এরফান উদ্দিন নাঈম।
জবাব:
এক. যদি বাস্তবেই কোনো মায়ের এজাতীয় চারিত্রিক পদস্খলন নিজ সন্তানের কাছে ধরা পড়ে তাহলে ওই মায়ের উচিত আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা করা এবং সন্তানের উচিত নিজের মাকে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। আর যদি তিনি তাওবা করতে আগ্রহী না হন তাহলে শালীন ভাষায় তিরস্কার করা।
দুই. তবে কোনো অবস্থাতেই সন্তান তার মায়ের গায়ে হাত তুলতে পারবে না, তাকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করতে পারবে না, তাঁর সেবা বন্ধ করে দিতে পারবে না।
ইবন তাইমিয়া কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘এক মহিলা কয়েক সন্তানের মা। কিন্তু সে পরপুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। যখন বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে গেল তখন সে নিজের স্বামীকে ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা কি তাঁর সন্তানদের উপর কোনো প্রকার অধিকার রাখে? সন্তানরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলে তাদের কোনো গুনাহ হবে কি? যে সন্তানের কাছে সে ধরা পড়েছে সে কি তার মাকে গোপনে হত্যা করতে পারবে? যদি করে তাহলে সে গুনাহগার হবে কি?’
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন,
الواجب على أولادها وعصبتها : أن يمنعوها من المحرمات ، فإن لم تمتنع إلا بالحبس : حبسوها ، وإن احتاجت إلى القيد : قيَّدوها ، وما ينبغي للولد أن يضرب أمََّه ، وأمَّا برُّها : فليس لهم أن يمنعوها برَّها ، ولا يجوز لهم مقاطعتها بحيث تتمكن بذلك من السوء ، بل يمنعوها بحسب قدرتهم ، وإن احتاجت إلى رزق وكسوة رزقوها وكسوها ، ولا يجوز لهم إقامة الحد عليها بقتلٍ ولا غيره ، وعليهم الإثم في ذلك
সন্তানদের উপর এবং তার অভিবাবকদের উপর ওয়াজিব হল, তাকে উক্ত হারাম কাজ থেকে নিষেধ করা। যদি সে না শুনে তাহলে প্রয়োজনে তাকে আটক করে রাখবে। কোনো অবস্থায় কোনো সন্তান তাকে মারধর করতে পারবে না। কোনো অবস্থাতেই সন্তানরা তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করতে পারবে না এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না; যাতে সে তার অনৈতিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। বরং তাকে এ কাজ থেকে নিজেদের সাধ্যানুপাতে ফিরিয়ে রাখবে। যদি তার ভরণ-পোষণের প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে তা দিতে হবে। হত্যা কিংবা অন্য কোনো পন্থায় তার উপর দণ্ডবিধি কায়েম করা সন্তানদের জন্য জায়েয হবে না। যদি করে তাহলে গুনাহগার হবে। (মাজমুউ’ল ফাতাওয়া ৩৪/১৭৭,১৭৮)
তিন. সুতরাং উক্ত সন্তানের প্রতি আমাদের পরামর্শ হল–
১. পরিবারে অধিক সময় দিন, যাতে আপানার মা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার পরিবেশ না পায়।
২. তাকে ভদ্র ভাষায় ব্যভিচারের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করুন। তাকে বলুন যে, ইসলামে এর শাস্তি হচ্ছে, ব্যভিচারী বিবাহিত হলে তাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে হয়। এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। পারিবারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। সমাজে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে ইত্যাদি।
৩. যার সঙ্গে তিনি ব্যভিচারে জড়িত সে লম্পটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রাখার সকল উপায় বন্ধ করে দিন।
৪. তাঁকে পর্দা করে চলতে এবং পরপুরুষের সঙ্গে কথাবার্তা না বলার জন্য বাধ্য করুন। এ লক্ষে প্রয়োজনে তাঁকে বাসায় আবদ্ধ করে রাখুন, যাতে তিনি বাহির হতে না পারেন। উল্লখ্য, এর অর্থ এই নয় যে, তাঁকে কোনো কামরায় বন্দি করে রাখবেন কিংবা পায়ে শিকল পরিয়ে রাখবেন!
৫. সর্বোপরি তাঁর অন্তরে আল্লাহভীতি জাগিয়ে তুলুন। এ জন্য বাসায় তালিমের ব্যবস্থা চালু করতে পারেন কিংবা কোনো মুত্তাকী আলেমের নসিহত শুনানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
৬. এ সকল উপায় অবলম্বন করার ক্ষেত্রে এটা ভুলে যাবেন না যে, তিনি আপানার মা। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই তাঁকে অবহেলা করা যাবে না, মারধর করা যাবে না, অশালীন ভাষায় গালি দেয়া যাবে না; বরং এসব পন্থা অবলম্বন করবেন ভদ্র ও শালীনভাবে। এক্ষেত্রে তাঁর থেকে প্রাপ্ত কষ্টে ধৈর্য ধারণ করবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদব্যবহার কর। (সূরা ইসরা ২৩)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী