কবি ফররুখ আহমদের ধর্মীয় মতাদর্শ
_ আবু সাঈদ নয়ন
কবি ফররুখ আহমদকে বাংলাদেশের বিতর্কবহুল সাম্প্রদায়িক দল ‘জামায়াতে ইসলামী’র কবি মনে করা হয় এবং তারাও কবিকে তাদের ‘দলীয় কবি’ হিসেবেই জনসমাজে তুলে ধরেন— এজন্য আমাদের প্রগতিশীল সাহিত্যের আসরে তাঁর আলোচনা অনেকাংশে কম। কিন্তু ফররুখ আহমদ বাস্তবিকভাবে কেবল রাজনৈতিক আদর্শে উক্ত তথাকথিত ইসলামী দলের সমর্থক ছিলেন, ধর্মীয় সমর্থক নয়। উক্ত দলের ধর্মীয় আদর্শ, দৃষ্টিকোণ, ভাবাবেগ সবকিছুর সাথে ফররুখ আহমদের বৈসাদৃশ্য মোটাদাগে চিহ্নিত—অর্থাৎ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের ঠিক বিপরীত আদর্শে আদর্শবান, বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ব্যক্তি ফররুখ আহমদের ধর্মীয় আদর্শ যথার্থরূপে বিশ্লেষণ করাই আলোচ্য প্রবন্ধের একমাত্র লক্ষ্য।
অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তাঁর স্মৃতিকথায় বলেন: “একবার আমরা কয়েকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে একটি তরুণের প্রতি ক্ষুদ্ধ হতে দেখি। রাজশাহীর তরুণটি তাঁর ‘সাত সাগরের মাঝি’ পড়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে এবং কাব্য সম্পর্কে তাঁর সঙ্গে কিছু অজানা বিষয়ে আলোচনা করতে ঢাকায় আসে। ফররুখ নিজের প্রশংসা শোনা পছন্দ করতেন না। ছেলেটির প্রশংসা শুনে তিনি ক্রুব্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে কোন কিছু আলোচনা করতেই অস্বীকার করলেন। হতাশ হয়ে ছেলেটি চলে যায়। আমরা ফররুখের ঘরে ঢুকে দেখি তিনি রাগে ফুঁসছেন এবং বললেন, “আমি এ-সব সস্তা প্রশংসা শোনা পছন্দ করি না। আমি এ-ধরনের প্রশংসার জন্য কলম ধরিনি। আমি লিখেছি আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্যে। কোন মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পাওয়া তো আমার কাম্য নয়।”—এই যে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে, সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কবিতা লেখার অঙ্গীকার তা কি ফররুখ আহমদের সাহিত্য-জীবনের শুরু থেকেই ছিল? নাকি কোনো মাধ্যমে তিনি এ অঙ্গীকার অর্জন করেছেন?
কবিতনয়া সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু ‘আব্বাকে যেমন দেখেছি’ স্মৃতিচারণে বলেছেন, “প্রথম জীবনে আব্বা ছিলেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত মানবতাবাদী কমরেড এম. এন. রায়ের শিষ্য।” উপমহাদেশের রাজনীতি নিয়ে যাদের জানাশোনা আছে তাদের কাছে কমরেড এম. এন. রায় একেবারেই পরিচিত মুখ—তিনি ছিলেন সত্যিকারের কমিউনিস্ট, ‘মানবতাবাদী’ খ্যাতি অর্জন করেন। কামরুল হাসান নামের একজন ফররুখ আহমদের ছোট ভাই মুশীর আহমদের সহপাঠী তাঁর ‘ফররুখ ভাই’ স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “সে বোধ হয় ১৯৩৫ সালের কথা। তখন স্বদেশী আন্দোলনের রেশ। আমরা কেবল এটা-ওটা শুনি আর থ্রিল অনুভব করি। এমনি একদিন মুশীর সন্ধ্যাবেলা আমাদের বেনে পুকুরের বাড়ীতে এসে, যেন সাংঘাতিক একটা ঘটনা এমনি ভাব নিয়ে, অতি গোপনে আমাকে ডেকে বলল, জানিস ফররুখ ভাই কম্যুনিস্ট হয়ে গেছে।” ফররুখ আহমদের প্রথম কবিতা ‘বুলবুল’—পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে; অর্থাৎ সাহিত্য-জীবনের সূচনালগ্নে তিনি কম্যুনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। কবিকন্যা এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের সহপাঠীর স্মৃতিচারণ থেকে নির্গত বিধায় এ তথ্যটি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের কারণ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কিভাবে এ মতাদর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইসলামী মতাদর্শে দীক্ষিত হলেন?
কবিতনয়া সাইয়েদা ইয়াসমিন বানু একই স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেন, “আব্বার জীবনে এক অচিন্তনীয় পরিবর্তনের মূলে যে মহান আউলিয়ার দোয়া ছিল, তিনি হচ্ছেন আব্বার পীর মরহুম অধ্যাপক আবদুল খালেক—তৎকালীন যুগে ইংরেজী এবং আরবীতে এম. এ. ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট (গোল্ড মেডালিস্ট)। বহু বিতর্কের মাধ্যমে আব্বাকে পরাস্ত ক’রে সেদিন তিনি আব্বাকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা, যেখানে মানুষের জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় প্রকার সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান রয়েছে।” ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছতুরা দরবার শরীফের পীর সাহেব, যিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন—তাঁর মাধ্যমেই ফররুখ আহমদ কম্যুনিস্ট মতাদর্শকে কবর দিয়ে ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট শান্তিপূর্ণ পথ—সূফিধারার অনুসারী হয়ে গেলেন। অধ্যাপক আবদুল খালেকের তিন খণ্ডের বিখ্যাত গ্ৰন্থ ‘সাইয়েদুল মুরসালীন’র ভাষা পরিমার্জনায় কবি ফররুখ আহমদ সরাসরি সহায়তা করেছিলেন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “ফররুখ আহমদ রচনাবলী ২”র ভূমিকায় আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন, “কবি-সমালোচক সৈয়দ আলী আহসানের মুখে শুনেছি, মওলানা আবদুল খালেকের বিখ্যাত রসূল (সা.)-চরিত ‘সাইয়েদুল মুরসালীন’ গ্ৰন্থে ফররুখ আহমদের হস্তাবলেপ ছিল।” প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৪৫ সালে—তখনকার স্মৃতিস্মরণে তিনি বলেন, “এ সময়ে ফররুখ ভাই দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছিলেন। তাঁর সম্পূর্ণ ব্যক্তিসত্তাই তখন ভেঙেচুরে এক নতুন রূপ নিতে চলেছে। এক কথায় তখন তাঁর ‘কনভার্শন’-এর শেষ পর্যায়। ‘কনভার্শন’ একটি আত্মিক প্রক্রিয়া, এর কোন বাংলা প্রতিশব্দ আমার জানা নেই। আমি এই প্রক্রিয়া সম্বন্ধে শুনেছি ও পড়েছি; তবে অভিজ্ঞতা হিসেবে এটা এতোই দূরবর্তী যে, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে সংকোচ বোধ করি। যিনি ফররুখ ভাইয়ের এই ‘কনভার্শনের’ মুখ্য পুরুষ, সেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিটি মওলানা আবদুল খালেক—ঘটনাচক্রে—আমাদের টেইলর হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন। তাঁর পরিচয় হিসেবে এটা একেবারেই তুচ্ছ। তিনি অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন। তখন কোন একটা গ্ৰন্থ রচনায় ব্যস্ত ছিলেন। এবং তাঁকে ভাষার পরিমার্জনায় সাহায্য করছিলেন ফররুখ ভাই। এ উপলক্ষে তাঁকে মাঝে মধ্যে টেইলর হোস্টেলে আসতে দেখেছি, এবং সবসময় তাঁর মধ্যে একটা অস্থিরতা লক্ষ্য করেছি।” কম্যুনিস্ট আদর্শকে তালাক দিয়ে ইসলামের আধ্যাত্মিক ধারা অর্থাৎ সূফিধারায় যে ফররুখ আহমদ অধ্যাপক আবদুল খালেকের মাধ্যমেই পূর্ণোদ্যমে প্রবেশ করলেন তা উপর্যুক্ত জবানবন্দি থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। কবিতনয়ার স্মৃতিচারণের একটি খণ্ড এখানে অনিবার্য উল্লেখ্য, “যিনি প্রথম জীবনে শরাব এবং কাবাবের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন, কিভাবে পরবর্তী জীবনে আবার তিনিই হলেন সাধক। এই বিস্ময়কর এবং অনিন্দ্যসুন্দর কাহিনী বলবার সময় আব্বার গভীর চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়তো।”
সূফিধারার ভাবাদর্শের দীক্ষা গ্রহণ করেই ফররুখ আহমদ রচনা করলেন তাঁর কাব্যজীবনের অন্যতম আলোকোজ্জ্বল সৃষ্টি “সিরাজাম মুনীরা” (১৯৫২)। এবং সর্বজনবিদিত যে, এ কাব্যগ্রন্থটি কবি ফররুখ আহমদ তাঁর জীবনের মোড় পাল্টে দেওয়া আধ্যাত্মিক গুরু অধ্যাপক আবদুল খালেকের ‘দস্ত্ মুবারকে’ উৎসর্গ করেন। কবিতায় ফররুখের প্রিয়তম ধারা—চৌদ্দ লাইনের একটি অসাধারণ তাৎপর্যপূর্ণ সনেটে শোভিত উৎসর্গপত্রটি হুবহু তুলে দিচ্ছি—
পরম শ্রদ্ধাভাজন
আলহাজ্জ মৌলানা আবদুল খালেক সাহেবের দস্ত্ মুবারকে—
যে আলোক শামাদানে জ্ব’লেছিল অম্লান বিভায়
অফুরান প্রাণৈশ্বর্যে সমুজ্জ্বল করি অন্ধকার,
তারি আলোকণা বহি দীপ জ্বলে দীপাগ্নিতে ; আর
প্রাণ পায় প্রাণের পাথেয়। নিশান্তের প্রত্যাশায়
জাগে সে অপূর্ব দ্যুতি প্রভাতের বর্ণ সুষমায়
নিরন্ধ্র রাত্রির বক্ষে, নিষ্প্রাণ মৃত্যুর কালঘুমে
(বিদ্যুৎ চমকে যেন—অথবা দুরন্ত সাইমুমে)
সিরাজাম মুনীরার জ্যোতির্লেখা মুক্ত ঝরোকায়।
তৌহিদী মশাল বহি চলে গেছে যারা যাত্রীদল
—পাথর চাপানো ভার, আঘাতের ভারী বোঝা টেনে,
অবিশ্বাসী শর্বরীর শিলা-বক্ষে সূর্য তীর হেনে
অগণ্য মৃত্যুর মাঝে নিষ্কম্প, নির্ভীক—অচঞ্চল ;
তাদের কাফেলা মাঝে নিঃসংশয় অভিযাত্রী জেনে
মানুষের মুক্ত স্বপ্ন রেখে যাই অশ্রু সমুজ্জ্বল।
‘প্রাণের পাথেয়’ পেয়েছেন বলেই ফররুখ আহমদ তাঁর নিকট সূফিধারার সূত্রানুসারে ‘মুরীদ’ হয়েছিলেন। ‘মুরীদ’ বিষয়টিকে ফররুখ আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতেন। কবি মুহম্মদ আবূ তালিব তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন, “আমি তখন আমার ব্যক্তিগত দেখা কয়েকটি স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি শুনে কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে বললেন,
- আপনি কোনো পীরের মুরীদ হয়েছেন?
- আমি বললাম, না।
- তিনি বললেন, অবিলম্বেই মুরীদ হোন।
- আমি বললাম, কেন?
- তিনি বললেন, আপনার স্বপ্ন খুব শুভ। তার নির্দেশই এইরূপ। মুরীদ না হলে জীবনের পূর্ণাঙ্গতা আসে না। আল্লাহ আপনার জন্য ইমামতী রেখেছেন, আর আপনি দূরে দূরে ঘুরছেন।
- আমি বললাম, ভালো পীর কোথায় পাই?
- তিনি বললেন, কামিল পীর কি আর ঘরে বসে পাওয়া যায়? তবে হাতের কাছে ফুরফুরা শরীফে যেতে পারেন। এ কালে কামিল পীরের সন্ধান পাওয়া মুশকিল।
- আমি সবিনয়ে বললাম, আমার মরহুম আব্বা ফুরফুরা শরীফের মরহুম পীর হযরত আবু বকর সিদ্দিকীর মুরীদ ছিলেন। আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আল্লামা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবও তাঁর মুরীদই নন শুধু, তাঁর অন্যতম খলীফাও ছিলেন। আমি জানি, তাঁর কয়েকজন মুরীদও ছিল। আমি তো ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সংস্পর্শে বহুদিন কাটিয়েছি। বর্তমানেও তাঁর আদর্শেই পথ চলতে চেষ্টা করছি; তাই যদি বলি, আমি তাঁরই মুরীদ, তাহলে কি ভুল বলা হবে?
- তিনি বললেন, মনে মনে মুরীদ হলে চলে না। মুরীদ মানে বাইয়াত হওয়া। বাইয়াত হওয়া মানে বিক্রি হয়ে যাওয়া। মহাকবি হাফিজের ভাষায় ‘বামায় সাজ্জাদা রঙ্গিন কুন’ ইত্যাদি। মানে হাফিজ বলেছিলেন, পীর যদি নির্দেশ দেন তবে জায়নামাযে শারাব ঢেলে দাও। কারণ তিনি পথ দেখান, তাঁর পথের আদি-অন্ত জানা আছে। তাই কামিল পীরের সন্ধানই কাম্য।”
এই যে আধ্যাত্মিকতা, সূফিধারার একনিষ্ঠতা তাঁর মধ্যে গাঁথা ছিল তা আমৃত্যু তিনি বহন করেছিলেন। আধ্যাত্মিকতার রঙে রঞ্জিত ছিলেন তিনি আমরণ—সেজন্যই ফররুখ আহমদের প্রথম জীবনের প্রকাশক তৈয়েবুর রহমান যখন ইন্তেকালের মাসখানেক পূর্বে তাঁর খবরাখবর নিতে গিয়ে দুরবস্থা দেখে হতাশ হন তখন ফররুখ আহমদ ওলী-আউলিয়াদের বাণী উদ্ধৃতি করে বলেন, “তাঁরা বলেছেন, ভয় নেই। পরিস্থিতি বদলাবে।” আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ—ইসলামী পরিভাষায় ওলী-আউলিয়া— তাঁদের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আমরণ অটুট ছিল তাঁর। কবিতনয়া সাইয়েদা ইয়াসমিন বানুর বিশ্বস্ত কণ্ঠে শুনে আমরা আরও আশ্বস্ত হই: “আওলিয়া-দরবেশদের আলোচনা আব্বার অত্যন্ত প্রিয় প্রসঙ্গ ছিল। হযরত ফজিল আয়াজ (র), হযরত বিশর হাফী (র), হযরত হাবীব আজমী (র), রাজর্ষি ইবরাহীম ইবনে আদহামের প্রসঙ্গ ছিল আব্বার কাছে প্রিয়। আব্বা বলতেন, দাম্ভিক পরহেজগারের চাইতে অনুতপ্ত পাপী ভালো। আব্বা ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু গোঁড়া ছিলেন না ; সাম্প্রদায়িক তো ছিলেনই না।” সাহিত্যিক আবুল ফজল যে বলেছেন “একটা সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে প্রবলভাবে বিশ্বাসী থেকেও ফররুখ আহমদ বিশুদ্ধ কবি ছিলেন”—সে মতাদর্শ যদি ধর্মীয় হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তা সূফিধারা বা ইসলামের আধ্যাত্মিক মতাদর্শ।
১৯৪১ সালে অধ্যাপক আবদুল খালেকের নিকট একটি চিঠি লিখেছিলেন ফররুখ আহমদ। সে চিঠির মধ্যাংশ হচ্ছে: “আল্লার রহমতে — আমি যে বিরাট সম্ভাবনার ইঙ্গিত পেয়েছি — তার মধ্যে আপনাকে জেনেছি উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্করূপে— হজরতের, উমর ফারুকের মহান আদর্শ আপনার বুকে সুপ্ত আছে... সেই আনন্দের সংবাদ আপনাকে জানালাম।” (ফররুখ আহমদ জীবন ও সাহিত্য : আবদুল মান্নান সৈয়দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৩, ৩২৩ পৃষ্ঠা) এ চিঠির টীকায় আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন: “মওলানা আবদুল খালেকের সংস্পর্শে এসে ফররুখ আহমদ আধ্যাত্মিকতায় দীক্ষিত হয়েছিলেন — যে-প্রভাব তাঁর ভিতরে শেষ-পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ‘সম্ভাবনার ইঙ্গিত’ তাঁর পরবর্তী কবিতায় ফলপ্রসূ হয়েছিল।”
“ফররুখ আহমদ জীবন ও সাহিত্য” নামে ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে আবদুল মান্নান সৈয়দের যে-গ্ৰন্থ প্রকাশিত হয় সে-গ্ৰন্থের ২৮৭ পৃষ্ঠায়, ফররুখ আহমদের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির একটি চিত্রের প্রতিলিপি উল্লেখ করা হয়েছে। ফররুখ আহমদের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির উক্ত প্রতিলিপিতে ‘ওসিলা’ শিরোনামে লেখা রয়েছে: “আল্লাহ্ লাভের জন্য পীরানে পীরদের ওসিলা যেরূপ কার্যকরী সেই রূপ আল্লাহ তা’য়ালার রহমত এবং ফয়েজে এলাহী লাভের জন্য পীরানে পীরদের সেলসেলার মাধ্যমে দোওয়া এবং মোনাজাতও বিরাট সহযোগী। এই জন্য বোজর্গগণ আল্লাহ তা’য়ালার নিকট নিজেদের আবেদন নিবেদন পেশ করনার্থে সর্বদা নিজ নিজ পীর পীরান পীরানদের সেলসেলার ওসিলাকে মাধ্যম স্বরূপ পরিগ্ৰহণ করিয়া থাকেন এবং এই ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট নিজেদের দোওয়া মঞ্জুর করার জন্য এই সেলসেলার ওসিলা তাফসিরে আজমের ন্যায় উপকার করাইয়া থাকে।”— এ প্রতিলিপি থেকেও ফররুখ আহমদের সূফিমানসের গভীরতা ও প্রোজ্জ্বলতা সম্পর্কে হলফ করেই—নিঃসন্দিহান ধারণা লাভ করা যায়। এতেই শেষ নয়! এ প্রতিলিপির নিচে আবদুল মান্নান সৈয়দ নিঃসঙ্কোচে লিখে দিয়েছেন: “আধ্যাত্ম চর্চার নিদর্শন। কবিতাচর্চার সূচনাকালেই ফররুখের আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ ঘটে। এ ক্ষেত্রে তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন মওলানা আবদুল খালেক— যাঁকে কবি তাঁর “সিরাজাম মুনীরা” (১৯৫২) কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেন। তাঁর [ফররুখ আহমদের] পীর ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর মুজাদ্দেদে হাসান হযরত মওলানা শাহ সুফী আবুবকর সিদ্দিকী (রহ.) এর খলিফা হযরত মওলানা শাহ সুফী প্রফেসার আবদুল খালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি। এই পীরের কাছ থেকে তিনি নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া তরিকার বিভিন্ন সবক গ্ৰহণ করেন। একে একে তিনি সব ক’টি মকাম উত্তীর্ণ হন।”— স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বস্ত এবং দক্ষ সম্পাদক হিসেবে আবদুল মান্নান সৈয়দ অতুলনীয় বিধায় তাঁর প্রদত্ত তথ্য গ্ৰহণ করাতে সঙ্কোচের কারণ নেই। ‘তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া’ সঙ্গীত রচয়িতা কবি যখন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের, তরিকার পীর-মুর্শিদের ‘ওসিলা’ ধরার কথা বলেন তখন তো আর এটাকে ‘সূফিমানসের সাক্ষ্য’ হিসেবে গ্ৰহণ না করে গত্যন্তর নেই।
ফররুখ আহমদ ব্যক্তিগত জীবনের ধর্মীয় বিশ্বাস—সূফি মতাদর্শ ও বিশ্বাসকে কবিতায় অবতীর্ণ করেছিলেন। তাঁর অনেক রচনা আমাদের এ দাবীর পক্ষে স্পষ্ট সাক্ষ্য দেয়। ফররুখ আহমদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সবচেয়ে বেশি প্রবেশ যে কাব্যগ্রন্থে ঢুকেছে—সিরাজাম মুনীরা—এ প্রসঙ্গে ফররুখ আহমদের অন্তরঙ্গ বন্ধু সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন: “একসময় ফররুখ ও আমি আলোচনা করেছিলাম, রসূলের জন্ম-মুহূর্তে পৃথিবীব্যাপী যে সমস্ত তাৎপর্যবহ সংঘটনের বিবরণ মৌলুদগ্রন্থে আছে, সেগুলোকে বাংলা শব্দের ভাবার্থে রূপান্তরিত করা যায় কিনা। ইরানের অগ্নিপূজকদের চিরকালীন অগ্নিশিখা নির্বাপিত হয়েছিলো, কাবাঘরের মূর্তিগুলো ভেঙে পড়েছিলো, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নিষ্ঠুর শাসকবৃন্দ অজানা আতঙ্কে কম্পিত হয়েছিলো, একটি অলৌকিক জন্মের তাৎপর্য জানবার জন্য সমস্ত প্রকৃতি যেন উন্মুখ হয়েছিলো। এ বোধগুলোকে বাংলা শব্দে কুশলতার সঙ্গে সমর্পণ করে একটি সুন্দর কাব্যনাট্য রচনা করা যায় এবং একটি সচল প্রশস্তির প্রদীপ্তি নির্মাণ করা যায়। ফররুখ বলেছিলো সে লিখবে, কিন্তু যখন লিখলো তখন সে সূফীতত্ত্বের অন্তর্লীন ভাবাবেগে নিমগ্ন। ‘সিরাজাম মুনীরা’ শীর্ষক কবিতাটিতে ফররুখ সূফী সাধনার পদ্ধতির মাধ্যমে সত্য আবিষ্কারের কথা বলেছে, বলেছে যে রসূলে খোদা নবুঅত প্রাপ্তির পূর্বে হেরার গুহায় মোরাকেবালীন ছিলেন এবং সে অবস্থায়:
একাগ্রতার সকল সেতারা চেরাগে জ্বালায়ে মনের সাধ—
খোঁজো হে সাধক মৌন: পরম সত্যদ্রষ্টা আল-আহাদ,
খুঁজে ফেরো তুমি লা-শরীকের মহান সত্য অভিজ্ঞান!
মরুর পিপাসা অশ্রু ভিজায়ে জাগাও দু’চোখে কী সন্ধান?
ফররুখের বিবেচনায় রসূলের সমগ্র অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো তাসাওফ এবং তাঁর ইশক-তত্ত্ব। এর প্রমাণস্বরূপ রসূলের যথার্থ অনুসারী হিসাবে সে নাম উল্লেখ করেছে হযরত আবদুল কাদের জিলানীর এবং হযরত মঈনুদ্দীন চিশ্তীর। ধ্যান-তন্ময়তার একটি একান্ত জীবনপদ্ধতিকে রসূলের সর্বস্ব-রূপ হিসাবে সূফি সাধকগণ চিহ্নিত করে থাকেন। ফররুখও তার বিবেচনায় সেটাকেই সত্যি বলে মেনেছিলো।”
‘সিরাজাম মুনীরা’ কাব্যগ্রন্থের সূচিতে দৃষ্টি ফেললেই যে কোন পক্ষপাতমুক্ত পাঠক ফররুখ আহমদের সূফিমানসকে বিনা-ওজরে চিহ্নিত করতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং চার খলিফাকে বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে প্রশস্তিসূচক কাব্য নির্মাণ করাকে যদি ‘সাধারণ মুসলমান’র কর্তব্যবোধক চিহ্ন বলে ধরি, তাহলে ‘গাওসুল আজম’ শিরোনামে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানীর; ‘সুলতানুল হিন্দ’ শিরোনামে গরীবে নেওয়াজ খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তীর; ‘মুজাদ্দিদ আলফেসানী’ শিরোনামে হযরত মুজাদ্দিদ আলফেসানীর; ‘খাজা নকশ্বন্দ’ শিরোনামে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দীর প্রশস্তিমূলক কাব্য রচনাকে কি একজন একনিষ্ঠ সূফির সাক্ষ্য বলে ধরে নেওয়া যায় না? একান্ত সূফিতাত্ত্বিক মানস ব্যতীত সূফিধারার প্রধান-প্রদীপ্ত পুরুষবর্গ—উপর্যুক্ত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন প্রশস্তিমূলক কাব্য রচনা কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই তো অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইউমের দৃঢ় কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, “সিরাজাম মুনীরা গ্ৰন্থে ‘গাওসুল আজম’, ‘সুলতানুল হিন্দ’, ‘খাজা নকশবন্দ’, ‘মুজাদ্দিদ আলফেসানী’ প্রভৃতি আলাদা আলাদা কবিতায় তাঁর এল্মে তাসাউফের প্রতি গভীর আগ্রহের কথার উল্লেখ রয়েছে।”
এছাড়াও আমরা তাঁর কাব্যসমগ্রের শিরোনামরাশিতে দেখি দীউয়ানা মদিনা, রুমী, জামী, সাদী, হাফিজ, তাজকেরাতুল আউলিয়া, কাসাসুল আম্বিয়া, চাহার দরবেশ, প্রেমপন্থী, শবে-কদর উপলক্ষে, মদীনার মুসাফির, দুই মৃত্যু, শেরে বাঙলার মাজারে, শবেবরাত পীলখানায়, ধ্যানীর প্রতি, আত্মবিক্রয়ের পন্থা ইত্যাদি—যেগুলো আমাদেরকে ফররুখ আহমদের গহীন সূফিমানসের সাথে নিবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়।
‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যগ্রন্থের একটি বিখ্যাত কবিতা ‘ডাহুক’—এ কবিতাটিকে অনেকে ইংরেজি সাহিত্যের ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও শেলীর অনুকরণ বলেছেন, কিন্তু আদৌ কি এটি অনুকরণের ফল? আমরা বিস্মিত হই যখন বরেণ্য সাংবাদিক ও কূটনীতিক, আখতার-উল-আলমের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে এ কবিতার ব্যাপারে ফররুখ আহমদের বক্তব্য শুনি, “শোন, আমার ডাহুক কবিতা নিয়ে দিগ্গজেরা তো মহাচিন্তায় পড়ে গেল। ‘ওড টু স্কাইলার্ক’ ‘ওড টু নাইটিঙ্গেল’—কোনোটার সাথেই মেলাতে পারে না। কিন্তু ওরা তো কথার বেপারী। তালে-গোলে মিলিয়ে দিয়ে সাব্যস্ত করে ছাড়ল যে, ‘ডাহুক’ আদৌ মৌলিক কবিতা নয়। ঠিক নকল না হলেও ভাবানুকরণ ইত্যাদি। আরে, ওরা কোথা থেকে জানবে, বল্? ওরা তো খালি বইয়ের পাতায় জীবনের মানে খুঁজে বেড়ায়—ভুল মানেকে সঠিক মানে ভেবে নিয়ে বগল বাজায়। তুই তো জানিস, মুজাদ্দেদী তরিকায় জিকির কি জিনিস। ‘ডাহুক’ রাতভর ডেকে ডেকে গলায় রক্ত ওঠায়। মুজাদ্দেদী সাধকও তেমনি রাতভর ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ জিকির করে নিজেকে ফানা করে দেন। গভীর রাতে নীরব নির্জন কোন গ্ৰাম্য মসজিদে মুজাদ্দেদী তরিকার কোন সাধক যখন ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ জিকির করতে থাকেন, তখন মনে হয় অবিকল যেন একটা ডাহুক একমনে ডেকে চলেছে। আমার ‘ডাহুক’ কবিতা এই ধরনের মুজাদ্দেদী সাধকের জিকির নিয়েই রচিত। স্কাইলার্ক কিংবা নাইটিঙ্গেলের সাথে তার মিল থাকবে কোত্থেকে?”—ডাহুক কবিতার এ গূঢ় তাৎপর্য জেনে বিস্মিত না হয়ে একদমই উপায় থাকে না! সাথে সাথে ‘ব্যক্তি ফররুখ আহমদ সূফিধারার একনিষ্ঠ অনুসারী’ বলে আমাদের বিশ্বাসের ভিত আরও বহুলাংশে মজবুত হয়।
উপর্যুক্ত বিশদ আলোচনা থেকে ফররুখ আহমদের ব্যক্তিগত এবং সাহিত্যিক জীবনের যে বিষয়গুলো আমরা লক্ষ্য করছি:
১. ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট শান্তিপূর্ণ মতাদর্শ—সূফিধারার একনিষ্ঠ অনুসারীরূপে সূফিদের বিশ্বাস এবং আচরণ আমৃত্যু আত্মস্থ রেখেছেন।
২. আধ্যাত্মিক পূর্ণাঙ্গতার জন্য পীর-মুরীদির পদ্ধতিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন।
৩. নিজ-পীরের এবং সিলসিলা তথা তরিকার ঊর্ধ্বতন পীরদের ওসিলাকে আল্লাহ তা’য়ালার রহমত এবং ফয়েজপ্রাপ্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।
৪. সূফিধারার প্রাণপুরুষদের প্রশস্তিগাঁথায় ভিন্ন-ভিন্ন শিরোনামে কাব্য রচনা করেছেন।
৫. কবি আমরণ আধ্যাত্মিকতার এমনই চর্চা করেছিলেন যে, কবিকন্যা কবিকে ‘সাধক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ফররুখ আহমদ রাজনৈতিক আদর্শে উক্ত বিতর্কিত তথাকথিত ইসলামী দলটির সমর্থক থাকতে পারেন, কিন্তু কখনোই তাদের ধর্মীয় আদর্শের সমর্থক ছিলেন না। ফররুখ আহমদ ছিলেন তাঁদের মতাদর্শে আদর্শবান যারা উপমহাদেশে কেবল প্রেম, ভালোবাসা, সহিষ্ণু, মানবিকতা দিয়ে বৃহদাঙ্গনে ইসলামের বাতি জ্বালিয়েছেন; তাঁদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী যাঁরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি সর্বৈব শ্রদ্ধাশীল এবং কৃতজ্ঞ। অধ্যাপক আবদুল খালেকের মাধ্যমেই— ফররুখ আহমদ ‘বিরাট সম্ভাবনার ইঙ্গিত’ পেয়ে এমনই সূফিধারার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যাঁরা প্রকৃত অসাম্প্রদায়িকতার চর্চার মাধ্যমে উপমহাদেশে, বিশেষত বাঙলায় ইসলামের স্থায়ী সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। আর উক্ত দলটির সাম্প্রদায়িক কদর্যতম বিশ্বাস এবং কার্যক্রম সম্পর্কে প্রায় সকলেই অবগত আছেন বিধায় বলতে দ্বিধা নেই—ফররুখ আহমদ ধর্মীয় মতাদর্শের দিক থেকে তাদের বিপ্রতীপ কোণে সূফিধারার অসাম্প্রদায়িক নিশান নিয়ে দাঁড়িয়ে।
ফররুখ আহমদের অগ্রজ প্রতীম—সৈয়দ সিদ্দীক আহমদ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, “বিদ্রোহী কবি নজরুলের সাথে একদিন ফররুখের দেখা। কবি বললেন, ‘ফররুখ, তুই এসেছিস? ‘হ্যাঁ, এসেছি।’ বিদ্রোহী কবি বললেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, খিজির তোকে পথ দেখাচ্ছে। খিজির তোকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যা, ঠিক আছে।”—কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ দিব্যদৃষ্টির ভবিষ্যদ্বাণী আক্ষরিক অর্থেই ফররুখ আহমদের জীবনে ফলেছিল বিধায় কবিকন্যা তাঁর বাবার ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় আমাদেরকে জানিয়ে দেন, “পরবর্তী জীবনে আবার তিনিই হলেন সাধক”। সাধক ফররুখ আহমদ ‘সূফীতত্ত্বের অন্তর্লীন ভাবাবেগে নিমগ্ন’ থেকেই ‘প্রেমপন্থী’ কবিতায় লিখেছেন—
মেটাতে পারেনি প্রজ্ঞা কোনদিন সে প্রাণ পিপাসা!
সৃষ্টির প্রথম কথা—শুধু প্রেম, শুধু ভালোবাসা।
তথ্যসূত্র:
১. ফররুখ আহ্মদ ব্যক্তি ও কবি : শাহাবুদ্দীন আহ্মদ সম্পাদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১৯৮৩ (লেখায় ব্যবহৃত স্মৃতিচারণের সবগুলো খণ্ড ও মন্তব্য এ সংকলন থেকে সংগৃহীত)
২. ফররুখ আহমদ রচনাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড : আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৫
৩. ফররুখ আহমদ জীবন ও সাহিত্য : আবদুল মান্নান সৈয়দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৩