জিজ্ঞাসা–৫৭৮: আসসালামু আলাইকুম। অনেক বইতে দেখি সহবাসের সময় স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে দেখা জায়েজ নাই, এতে নাকি স্বামীর চোখের জ্যোতি কমে যায়। আমি সহবাস সম্পর্কিত এ ধরণের সকল বিধি নিষেধ, সকল মাসয়ালা মাসায়েল আর নিয়মগুলো জানতে চাচ্ছি। একেক জায়গায় একেক ধরণের নিয়মকানুন দেখতেছি। আমি বুঝতেছি না আমি কোনটার উপর আমল করব? জানালে উপকৃত হব, ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক। –নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. স্ত্রী সহবাসের সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত, সংক্ষেপে তা নিম্নে পেশ করা হল-
১- নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِيأَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার গুনাহ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। (মুসলিম ২২০১)
২- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,
كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)
৩- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
৪- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)
৫- মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺবলেছেন,
لا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)
৬-ঋতুবতী অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
আরো জানার জন্য দেখুন–জিজ্ঞাসা নং–৮২।
৭- একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود
যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)
তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُএরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)
ফরয গোসলের নিয়ম জানার জন্য দেখুন–জিজ্ঞাসা নং–৩৭৫।
দুই. সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয আছে। হাদিসে এসেছে, বাহয বিন হাকীম তিনি তাঁর পিতা তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, একদা তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের গোপনাঙ্গ কী গোপন করব, আর কী বর্জন করব?’ তিনি বললেন, احْفَظْ عَوْرَتَكَ ، إِلَّا مِنْ زَوْجَتِكَ ، أَوْ مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ‘তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের হেফাযত কর।’ সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা আপোসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।’ সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেউ যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, اللهُ أَحَقُّ أَنْ يُسْتَحْيَا مِنْهُ مِنَ النَّاسِ ‘মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাঁকে লজ্জা করা হবে।’ (আবূ দাঊদ ৪০১৯, তিরমিযী ২৭৯৪)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবন হাজর আসকালানী রহ. বলেন,
وَمَفْهُومُ قَوْلِهِ (إِلَّا مِنْ زَوْجَتك) يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ يَجُوزُ لَهَا النَّظَرُ إِلَى ذَلِكَ مِنْهُ ، وَقِيَاسه أَنَّهُ يَجُوزُ لَهُ النَّظَرُ
‘তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া’ (إِلَّا مِنْ زَوْجَتِكَ)-এর দ্বারা বোঝা যায়, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের গোপনাঙ্গের দিকে তাকানো জায়েয। যুক্তিও বলে, এটা জায়েয হবে। (ফাতহুল বারী ১/৩৮৬)
ইবন কুদামা আল মাকদেসী রহ. বলেন,
وَيُبَاحُ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْ الزَّوْجَيْنِ النَّظَرُ إلَى جَمِيعِ بَدَنِ صَاحِبِهِ ، وَلَمْسُهُ ، حَتَّى الْفَرْجِ … ؛ وَلِأَنَّ الْفَرْجَ يَحِلُّ لَهُ الِاسْتِمْتَاعُ بِهِ ، فَجَازَ النَّظَرُ إلَيْهِ وَلَمْسُهُ ، كَبَقِيَّةِ الْبَدَنِ
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সমস্ত দেহের দিকে তাকানো, স্পর্শ করা, এমনকি যৌনাঙ্গের ক্ষেত্রেও বৈধ। কেননা, যৌনাঙ্গে মিলন হালাল। সুতরাং শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত তা দেখা ও স্পর্শ করাও জায়েয। (আল মুগনী ৭/৭৭)
হাশিয়াতুত দাসুকী (২/২১৫)-তে আছে,
وَحَلَّ لَهُمَا ، أَيْ لِكُلٍّ مِنْ الزَّوْجَيْنِ … نَظَرُ كُلِّ جُزْءٍ مِنْ جَسَدِ صَاحِبِهِ ، حَتَّى نَظَرُ الْفَرْجِ ، وَمَا وَرَدَ مِنْ أَنَّ نَظَرَ فَرْجِهَا يُورِثُ الْعَمَى مُنْكَرٌ لا أَصْلَ لَهُ
স্বামী-স্ত্রীর জন্য জায়েয একে অপরের সমস্ত দেহের দিকে তাকানো, এমনকি যৌনাঙ্গের দিকেও। বলা হয়, স্ত্রীর গোপনাঙ্গের দিকে তাকালে স্বামীর চোখের জ্যোতি কমে যায়-একথার কোনো ভিত্তি নেই।
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী