▶লেখক পরিচিতি নাম ও বংশ:


তাঁর নাম মােবারক হলাে সুলায়মান বিন আহমদ বিন আয়ুব মুতীর লাখামী তাবারানী। উপনাম আবু কাসিম আর তিনি ইমাম তাবারানী নামেই প্রসিদ্ধ। 


▶সৌভাগ্য মন্ডিত জন্ম:

২৬০ হিজরির সফরুল মুযাফফরে তাবারিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। 


▶শিক্ষা জীবন:

তিনি رضي الله عنه বাল্যকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন করা শুরু করেছিলেন। অতএব তাবারিয়ায় হযরত সায়্যিদুনা আহমদ বিন মাসউদ মিকদাসী رضي الله عنه এর কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করার সময় তাঁর বয়স শরীফ ছিলাে ১৩ বৎসর। অতঃপর সিরিয়া চলে যান, সেখানে তিনি رضي الله عنه ইলমে হাদীসের অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের নিকট হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেন, অতঃপর ২৮০ হিজরিতে মিসরে সফর করেন এবং ২৮২ হিজরিতে ইয়ামেন গমন করেন। ২৮৩ হিজরিতে মদীনা মুনাওয়ারা চলে আসেন। অতঃপর মক্কা মুকাররমা হয়ে পুনরায় ইয়ামেনে চলে আসেন। ২৮৫ হিজরিতে মিসরে ফিরে আসেন এবং ২৮৭ হিজরিতে ইরাক সফর করেন। এসব সফরের সময় কিছুদিন হাদীস শরীফের ইমামদের কাছ থেকে হাদীস শুনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। অতঃপর পারস্যে স্থানান্তরিত হয়ে যান এবং জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন।


▶শিক্ষকবৃন্দ:

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম যাহাবী رضي الله عنه ‘তাযকিরাতুল হুফফাজে’ লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা সুলাইমান বিন আহমদ তাবরানী رضي الله عنه এর ওস্তাদগণের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।” হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه এর শাগরেদ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু নাঈম ইসফাহানী رضي الله عنه ‘হিলিয়াতুল আউলিয়া" কিতাবে বলেন: “তিনি رضي الله عنه এ অসংখ্য বড় বড় পূর্ববর্তী ওলামা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কতিপয় প্রসিদ্ধ মাশায়িখের নাম হলো ১২ জন। ১) হযরত সায়্যিদুনা আলী ইবনে আবদুল আযীয বাগাবী ২) হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসলিম কাশী ৩) হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হারামী ৪) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল ৫) হযরত সায়্যিদুনা ইসহাক বিন ইব্রাহীম দাবরী ৬) হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ বিন এয়াকুব কাযী এবং ৭) হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ওসমান বিন আবি শায়বা 

(رضي الله عنه)


▶ছাত্রবৃন্দ:

অসংখ্য জ্ঞান-পিপাসু তাঁর জ্ঞানের সমুদ্র থেকে নিজের পিপাসা নিবারণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম হলাে: ১) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয আহমদ বিন মুসা বিন মুর্দবিয়া ২) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন আহমদ জারূদী ৩) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন ইসহাক বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া ইসবাহানী এবং ৪) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন আবু আলী আহমদ বিন আব্দুর রহমান হামদানী যাকওয়ানী (رضي الله عنه) তাছাড়া তাঁর কতিপয় শায়খও তাঁর কাছ থেকে রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন। 


▶রচনা ও সংকলন

তিনি رضي الله عنه অসংখ্য কিতাব রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটির নাম হলাে: ১) আল মুজামুল কবীর ২) আল মুজামুল আওসাত ৩) আল মু’জামুস সগীর ৪) (এই কিতাব) মাকারিমুল আখলাক ৫) কিতাবুল আওয়ায়িল ৬) কিতাবুল আহাদীসিত তিওয়াল ৭) কিতাবুদ দোয়া।


▶প্রশংসা মূলক বাণী:

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম সামআনী رضي الله عنه ‘আল আনসাব' কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه আপন যুগের হাফিযুল হাদীস ছিলেন। ইলমে হাদীস অর্জনের জন্য বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন এবং অসংখ্য শায়খের সাথে সাক্ষাত করেছেন আর হাফিযে হাদীসগণের কাছ থেকে পরামর্শও নিয়েছেন। অতঃপর জীবনের শেষ প্রান্তে ইসবাহানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন এবং অসংখ্য কিতাব রচনা করেন।”

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ইবনে আসাকির رضي الله عنه ‘তারীখে দামেশক' কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه ছিলেন অসংখ্য হাদীস হিফযকারী এবং হাদীস সংগ্রহের জন্য সফরকারীদের মধ্যে অন্যতম।”

হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ইবনে ইমাদ رضي الله عنه ‘শাযরাতুয যাহাব’ কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه নির্ভরযােগ্য এবং সত্যিকার মুহাদ্দিস ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী এবং আলাল ও রিজাল হাদীস এবং অধ্যায় সম্বন্ধে অত্যন্ত পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।” 


▶ওফাত:

ইলম ও আমলের এই অনুপম আদর্শরূপী ব্যক্তিত্ব জ্ঞানের মুক্তো ছড়াতে এবং জ্ঞান পিপাসুদের পিপাসা নিবারণ করাতে করাতে ৩৬০ হিজরি সনের জিলকদ মাসে এই নশ্বর জগত থেকে অবিনশ্বর জগতের দিকে গমন করেন।

(আল্লাহ পাকের রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক, আমিন)


দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “নসিহতোঁ কে মাদানী ফুল বাওসিলায়ে আহাদীসে রাসূল (ﷺ) ”এর ৫১-৫২ পৃষ্ঠায় রয়েছে: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:  হে আদম সন্তান! যে হেসে হেসে গুনাহ করে, আমি তাকে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবাে এবং যে আমার ভয়ে কান্না করতে থাকে, আমি তাকে খুশি করে জান্নাতে প্রবেশ করাবাে। হে আদম সন্তান! কতাে ধনী ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে, যারা হিসাব নিকাশের দিন অপারগতা ও দ্রারিদ্রতার আকাংখা করবে। কতাে নির্দয় ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে, মৃত্যু তাদেরকে অপমানিত ও অপদস্থ করে দিবে। কতাে মিষ্ট জিনিসের অবস্থা এমন হবে, মৃত্যু তাকে তিক্ত করে দিবে। নিয়ামত সমূহের উপর অনেক আনন্দ প্রকাশের অবস্থা এমন হবে, যাকে মৃত্যু মেঘাচ্ছন্ন করে দিবে। অনেক আনন্দ প্রকাশের অবস্থা এমন হবে, যা এরপরে দীর্ঘ কষ্টে লিপ্ত করিয়ে দিবে। 


তথ্যসূত্রঃ মজমুআতু রাসাইল আল ইমাম গাযালী, ৫৭৭ পৃষ্ঠা)।

Top