Revision in "Facebook Class" (পড়ুন এবং শেয়ার করুন) 
বিষয়: তিরমিজিতে বর্ণিত মদ্যপানের হাদিসটি কি গ্রহণযোগ্য? 
কৃত: মিসবাহুল ইসলাম আকিব 
অনলাইন এক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ।
তিরমিজী শরীফের ঐ হাদিসটি, যাতে আলী (রা.)-এর মদ্যপানের কথা উল্লেখ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এলমে হাদিসের কষ্টিপাথরে দেখা যায়– বর্ণনাটিতে রাবিগণের সবাই নির্ভরযোগ্য। তাই ইমাম তিরমিজী অকপটে বলে দিয়েছেন– হাদিসটি হাসান সহিহ গরীব। হয়ত: ইমাম তিরমিজীর দৃষ্টিতে বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোনো ত্রুটি ছিল না, বা থাকলেও তা চোখে পড়ে নি। কিন্তু অন্য মুহাদ্দিসগণের চোখে সেই হাদিসের বর্ণনাকারীরা দেখতে কেমন? তারা কি সকলক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য? তাদের ব্যাপারে কি মুহাদ্দিসকুলে বিন্দুমাত্রও কোনো প্রশ্ন নাই? জানতে হলে একেবারে শেষপর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে এই লেখাটি। 

চলুন, প্রথমে জেনে নিই, হাদিসটিতে বর্ণনাকারী হিসেবে আছেন কারা? কার কার নাম লিপিবদ্ধ আছে বর্ণনার ফিরিস্তিতে। যথাক্রমে বলতে গেলে যাঁদের নাম আসে, তারা হলেন– 'আবদ ইবনে হুমাইদ, আব্দুর রহমান ইবনে সা'দ, আবু জাফর রাজী, আতা ইবনে সায়েব, আবু আব্দুর রহমান সুলামী' এবং আলী (রা.) স্বয়ং। এ ছয়জনের মধ্যে চারজনকে নিয়ে কোনো কথাই নেই। অবশিষ্ট দু'জনকে ঘিরে আবর্তিত হবে আমাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা। এক, আতা ইবনে সায়েব। দুই, তাঁরই শিষ্য আবু জাফর রাজী। 

প্রথমেই দেখব– আতা ইবনে সায়েব কে ছিলেন? বিভিন্ন কিতাব থেকে যতদূর জানা যায়– নাম তাঁর আতা ইবনে সায়েব আস সাকাফী আল কুফী। ছিলেন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী। কুরআন সম্পর্কে যার ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। হাদিসশাস্ত্রেও রয়েছে প্রায় সম-মর্যাদা। তবে আকারে দেখতে খুব ছোট্ট হলেও পারিপার্শ্বিক ক্রিয়ার দিক থেকে অনেক বড়, পাকা একটা শর্ত আছে। সেই শর্তটা মুহাদ্দিসগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইজলী (রহ.) এভাবে বলেছেন: শেষজীবনে (হাদিস) উলট-পালট করে ফেলতেন 'আতা'। সেজন্য তার থেকে যে ব্যক্তি উলট-পালটকালে শ্রবণ করেছেন, হাদিসের ক্ষেত্রে সে মুদতারাব তথা দূর্বল বর্ণনাকারী' (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল- আল কাউয়াকিবুন নাইয়্যিরাত ফি মান ইখতিলাতা মিনার রুওয়াতিস সিকাত)

এভাবে প্রায় সকল মুহাদ্দিসই একসুরে বলে দিয়েছেন– প্রথমজীবনে 'আতা' হতে যেসকল হাদিস বর্ণিত, তা-ই গ্রহণযোগ্য; আর শেষজীবনেরগুলো বিনাবাক্যে প্রত্যাখ্যাত। 
তাই 'আতা'র হাদিসগুলো গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার আগে সুগভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যেচে দেখতে হবে– হাদিসটি কি প্রথমজীবনে বর্ণিত, না শেষজীবনে। তা নিশ্চিত হবার জন্য চিহ্নিত করতে হবে– প্রথম জীবনের বর্ণনাকারী কে, আর শেষজীবনের কে৷ সেই ভিত্তিতে প্লেইন ওয়াটারের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে উঠবে, প্রকৃতপক্ষে কোনটি কোনকালের বর্ণনা।

চলুন দেখে নিই, প্রথমজীবনে 'আতা' হতে বর্ণনা করেছেন কে কে। এসম্পর্কে দুটো মন্তব্য পাওয়া যায় কিতাবাদিতে। একটি সর্বসম্মত ভিত্তিতে। অন্যটি মুহাদ্দিসকুলের অনেকের অভিমতের প্রেক্ষিতে। প্রথমটি সবচেয়ে সতর্কতামূলক এবং দ্বিতীয়টিও তার পরিপূরক হিসেবে গ্রহণীয়। 

প্রথম অভিমতে পাওয়া যায়, সুফিয়ান সাওরি এবং শু'বা– 'আতা'র প্রথমজীবনে এ দু'জন ব্যক্তিই বর্ণনা করেছেন; তাই কেবল তাদেরগুলিই গ্রহণযোগ্য হবে। এক বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-কে আতা ইবনে সায়েব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: 'যারা তার নিকট হতে প্রথমজীবনে (হাদিস) শ্রবণ করেছেন, তাদেরগুলো বিশুদ্ধ হবে। আর নতুনদের মধ্যে যারা (শেষে) শ্রবণ করেছেন, তা শুধুই সারশূন্য। তার নিকট হতে প্রথমজীবনে শ্রবণ করেছেন শু'বা এবং সুফিয়ান সাওরি' (আল্লামা ইবনে আদী জুরজানী- আল কামিল ফিদ দ্বোয়াফাইর রিজাল)

আর দ্বিতীয় অভিমতটি হলো এই– পূর্বোক্ত দু'জনসহ হাম্মাদ ইবনে জায়েদ এবং হাম্মাদ ইবনে সালামার নামও এতে অন্তর্ভুক্ত; মানে 'আতা' হতে তাদেরগুলোও একইসাথে গ্রহণীয়। ইমাম নাসাঈ (রহ.) বলেন: 'আতা ইবনে সায়েব হতে হাম্মাদ ইবনে যায়েদ, শু'বা, সুফিয়ান সাওরির বর্ণনা বিশুদ্ধ' (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল- আল কাউয়াকিবুন নাইয়্যিরাত ফি মান ইখতিলাতা মিনার রুওয়াতিস সিকাত)

অন্য এক বর্ণনায় আবার বহু মুহাদ্দিসের রেফারেন্সে পরিপূর্ণ চারজনের নামই উল্লিখিত হয়েছে, সেই বর্ণনাটি আরেকটু সামনে আসছে। যাইহোক, মুহাদ্দিসগণের এসকল বক্তব্যের আলোকে 'আতা' হতে কমপক্ষে দু'জন বা সর্বোচ্চ চারজন গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীর নাম পাওয়া যায়; এরচেয়ে বেশি পাওয়া যায় না। একারণে 'আতা'র হাদিস নিতে চাইলে এ দু'জন বা চারজন থেকেই গ্রহণ করতে হবে। এর বাইরে কারো বর্ণিত হাদিস পাওয়া গেলে, সেই হাদিসটি বিকৃতি বা উলট-পালটের সময়কালে বর্ণিত ধরে প্রত্যাখ্যাত মনে করতে হবে; এ ব্যাপারে ইমামগণের বক্তব্য ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।  

এসকল বক্তব্যে আমরা দেখতে পেলাম– গ্রহণযোগ্য চারজনের তালিকায় মদ্যপান সংক্রান্ত ঐ হাদিসের বর্ণনাকারী আতারই শাগরেদ আবু জাফর রাজীর নাম কিন্তু নেই। তাহলে কি তিনি অগ্রহণযোগ্য? শেষজীবনের তথা উলট-পালটকালীন বর্ণনাকারী? তা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হবার আগে আমাদের আরেকটা বিষয় দেখতে হবে– অগ্রহণযোগ্যদের তালিকায় তাঁর নাম এসেছে কি-না। দেখা যায়– অগ্রহণযোগ্যদের সীমিত তালিকায় কোথাও আবু জাফর রাজীর নামটা আসে নি। এসেছে কিছু ব্যক্তিদের নাম এবং একটা শ্রেণীবিশেষের। কী করা যায়! বিপদে পড়ে গেলাম না তো?

বর্ণনাকারীর সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে মুহাদ্দিসগণের পক্ষে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সবার নাম সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না, হয়ত সেকারণে ঐ ছোট্ট তালিকাটায় আবু জাফর রাজীর নাম আসে নি৷ তাছাড়া 'আতা'ও তো জীবনের শেষপ্রান্তে এসে, অনেকের কাছে হাদিস বর্ণনা করে বেড়িয়েছেন। উলট-পালট অবস্থা নিয়ে গিয়েছিলেন বসরা দেশেও। তার মুখ দরস থেকে সেখানেও হাদিস শুনেছে অনেকে। মুহাদ্দিসগণ কয়জনেরই বা নামোল্লেখ করবেন? তাই সংক্ষেপে কয়েকজনের নামোল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। তারপর এও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, 'আতা' হতে বর্ণনা করা বসরাবাসীর সকল বর্ণনাই অগ্রহণযোগ্যের তালিকাভুক্ত। 
আমি তো আর নিজমুখে বানিয়ে রচিয়ে বলছি না। দেখুন, ইমাম উকাইলী (রহ.) কী বলছেন– 'আতা ইবনে সায়েব হতে কেবলমাত্র সেসকল হাদিসই গ্রহণযোগ্য হবে, যা শু'বা এবং সুফিয়ান সাওরির মত বর্ণনাকারীরা বর্ণনা করেছেন। তার (আতা) থেকে শ্রবণের মাধ্যমে জারির, খালেদ ইবনে আব্দুল্লাহ, ইবনে উলাইয়া, আলি ইবনে আসেম, হাম্মাদ ইবনে সালামা এবং বসরাবাসীর বর্ণিত সকল হাদিস উলট-পালটকালের পরবর্তী সময়ের পর্যায়ভুক্ত। কেননা, তিনি এদের দ্বারে গিয়েছেন জীবনের শেষপ্রান্তে। তাই এরা ও অনুরূপ যারাই উলট-পালট হবার পর বর্ণনা করেছেন, তাদের হাদিসগুলোও অগ্রহণযোগ্য' (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল- আল কাউয়াকিবুন নাইয়্যিরাত ফি মান ইখতিলাতা মিনার রুওয়াতিস সিকাত)

ইমাম আবু হাতেম (রহ.)-ও একই সুরে সুর মিলিয়েছেন এই বলে: 'আতা ইবনে সায়েব হতে বসরাবাসীদের হাদিসে উলট-পালট থাকার ব্যাপারে আমার নিকট তথ্য পৌঁছেছে। কেননা, তারা আতা হতে উলট-পালটকালেই শ্রবণ করেছে' (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল- আল কাউয়াকিবুন নাইয়্যিরাত ফি মান ইখতিলাতা মিনার রুওয়াতিস সিকাত)। এই কথাটা ইমাম আবু হাতেম 'আল জারহু ওয়াত তাদীল'– নামক স্বীয় গ্রন্থেও বলে গেছেন। অনুরূপ কথাটি ইমাম উকাইলী (রহ.)-এর সূত্রে অন্য কিতাবে এসেছে– 'অনুরূপ সমস্ত বসরাবাসী উলট-পালটকালেই শ্রবণ করেছে' (ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী– তাদরিবুর রাবী)। আরো এসেছে: আল্লামা ইবনুল কাত্তান (রহ.) বলেন– আতা ইবনে সায়েব হতে সমস্ত বসরাবাসীর হাদিসগুলো উলটপালট হবার পর শোনা বর্ণনাসমূহের পর্যায়ভুক্ত। কেননা, তিনি তাদের নিকট গিয়েছেন শেষজীবনে। (আল্লামা সালাহউদ্দিন আলায়ী– আল মুখতালিতীনা মায়া জিয়াদাতিল বুসীরি)

এসকল বক্তব্যের সার দাঁড়ায়– 'আতা হতে বসরাবাসীর হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়'। 

এসব কথা যাকগে, অধৈর্য হবেন না। আরো চমক আছে। এবার চলুন পরের স্টেইজে। পরের আলোচনা 'আতা'রই শাগরেদ ও দ্বিতীয় বর্ণনাকারী আবু জাফর রাজীকে নিয়ে। সর্বপ্রথম জানতে হবে– কোন দেশের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। আতার ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য খ্যাত সেই বসরাবাসীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না তো? তাও জেনে নিন মালেকী মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় ইমাম ও মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে আব্দুল বার-এর মিষ্ট-জুবান থেকে– 'আবু জাফর রাজী। ঈসা ইবনে মাহান এবং ঈসা ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহান– দু-নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। মূল যার বসরা দেশে। সেদেশে জন্ম তার। অবস্থান রাই নামক এলাকায়। সেখানেই বাস করতেন' (ইমাম ইবনে আব্দুল বার– আল ইস্তিগনা)

বক্তব্যটা শুধু উক্ত ইমামেরই নয়। এ এক সর্বসম্মত অভিমত, যা আসমাউর রিজালের প্রায় সকল কিতাবে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ আবু জাফর রাজী ছিলেন বসরাবাসী। আর ইতিপূর্বেই আমরা পেয়েছিলাম– আতা ইবনে সায়েব থেকে বসরাবাসীর বর্ণনা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অতএব মদ্যপান সংক্রান্ত তিরমিজীতে বর্ণিত বসরাবাসী আবু জাফর রাজীর বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না; কস্মিনকালেও না। 
এ গেলো, ঐ বর্ণনায় আবু জাফর রাজীর অগ্রহণযোগ্য হবার প্রথম সূত্র। 

আর দ্বিতীয় সূত্রটি হলো– ঐ যে শুরুতেই গ্রহণযোগ্য চারজনের নাম বলেছিলাম না! মনে আছে তো? কিতাব থেকে জেনেছিলাম যে, ঐ চারজনের বাইরে 'আতা'র অন্য কোনো শাগরেদের বর্ণনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, তারা ব্যতীত বাকী সকলেই উলট-পালট করার সময়ে শুনেছেন এবং বর্ণনা করেছেন– এই মতটা দিয়েছেন মুহাদ্দিসগণের অনেকেই (চারজনের মধ্যে দুইজনের ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে এবং চারজনেরই ব্যাপারে অধিকাংশের প্রেক্ষিতে অভিমত রয়েছে– যার কথা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে)। এবার অভিমত দু'টো কিতাব থেকেই নিন– ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেন: শু'বা এবং সুফিয়ান সাওরি ব্যতীত যতজনই আতা ইবনে সায়েব হতে বর্ণনা করেছেন, তাদের সকলেই উলট-পালট করার (তথা জীবনের শেষ)-কালে বর্ণনা করেছেন' (আল্লামা ইবনে আদী জুরজানী- আল কামিল ফিদ দ্বোয়াফাইর রিজাল)। ইমাম জাহাবীর কিতাবেও উল্লেখ আছে– 'শু-বা এবং সুফিয়ান ব্যতীত আতা হতে যারা বর্ণনা করেছেন, সকলেই উলট-পালটকালে করেছেন' (ইমাম জাহাবী– সিয়ারু আ'লামিন নুবালা) 

অনেক ইমামের রেফারেন্সে আসা নিম্নোক্ত ইবারতটি বিষয়টাকে অনেকটা স্পষ্ট করে দিয়েছে– 'আতা হতে কেবল চারজন ব্যতীত অন্যকারো হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই চারজন হলেন: শু'বা, সুফিয়ান সাওরি, হাম্মাদ ইবনে সালামা, হাম্মাদ ইবনে যায়েদ' (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যাল- আল কাউয়াকিবুন নাইয়্যিরাছ ফি মান ইখতিলাতা মিনার রুওয়াতিস সিকাত)

অর্থাৎ এ চারজনের বাইরে আতা হতে কারো বর্ণনাই গ্রহণযোগ্য হবে না; না আবু জাফর রাজীর, আর না অন্য কারোরই। সুতরাং এই ভিত্তিতে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, আবু জাফর রাজীর বর্ণনাটিও অগ্রহণযোগ্য। 

এতসব দলিল-দস্তাবেজে প্রমাণ হবার পরও যদি কারো মনে এই প্রশ্ন জাগে যে– 'যেহেতু আতা ইবনে সায়েবের প্রথমজীবন বা শেষজীবনের বর্ণনাকারীদের তালিকায় আবু জাফর রাজীর নামটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই, তাই হতে পারে– তিনি 'মধ্যবর্তী জীবনে'র বর্ণনাকারী ছিলেন?' এ প্রশ্নেরও সুন্দর একটা জবাব আছে। 

এই ইখতিলাত বা উলট-পালটের ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীর 'মধ্যবর্তী জীবন' বলে তৃতীয় কোনো জীবনের অস্তিত্ব নেই। কেননা, উলট-পালটকে আগে এবং পরে– এ দু'টি অংশে ভাগ করা হলে মধ্যখানে তো আর তৃতীয় কোনো জীবনাংশই অবশিষ্ট থাকে না। যদি থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই মুহাদ্দিসগণ তা উল্লেখ করতেন; কিন্তু করেন নি। উল্লেখ করেছেন শুধু উলট-পালটের আগে এবং পরেরটাকে। 
অতএব 'মধ্যবর্তী জীবনে'র ধূয়া তোলে আতা হতে আবু জাফর রাজীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত করতে চাওয়াটা শুভঙ্করে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা মাত্র!! 

পরিশেষ কথা হলো, ইতিমধ্যে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে– আবু জাফর রাজী ছিলেন বসরাবাসী, আর আতা হতে বসরাবাসীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সেকারণেই তিরমিজীতে আবু জাফর রাজীর সূত্রে বর্ণিত হযরত আলী (রা.) কর্তৃক মদ্যপানের হাদিসটি হুকুম প্রয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রহণযোগ্য।
Top