অন্তরের পরিচ্ছন্নতা এবং মুসলমানের প্রতি ঘৃণা থেকে বাঁচার ফযীলত।
এপ্সঃ 🔎 উত্তম চরিত্র [মূলঃ ইমাম তাবারানী রহ.]
সূত্রঃ 🌍 সুন্নি-বিশ্বকোষ
▶৭১) হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আমার উম্মতের আবদালরা (ইবাদতকারীরা) জান্নাতে (শুধুমাত্র) তাদের আমলের কারণেই প্রবেশ করবে না বরং তারা আল্লাহ তায়ালার দয়া, ব্যক্তিগত উদারতা, অন্তরের পরিচ্ছন্নতা এবং সকল মুসলমানের প্রতি দয়াবান হওয়ার কারণেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
তথ্যসূত্রঃ (কানযুল উম্মাল, কিতাবুল ফাযায়িল, হাদীস নং- ৩৪৫৯৬, ১২/৮৫।)
▶৭২) হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন; আমরা নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম আর হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “এই পথ দিয়ে তােমাদের নিকট একজন জান্নাতী ব্যক্তি আসবে।” এমন সময় একজন আনসারী সাহাবী এলেন, যাঁর দাড়ি থেকে অযুর পানি ঝরছিলাে। তিনি তার জুতােগুলাে বাম হাতে করে নিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি সালাম করলেন। দ্বিতীয় দিন আবারাে হুযুর (ﷺ) একই কথা ইরশাদ। করলেন, তখন আবারাে সেই আনসারী সাহাবীটি আগের মতই এলেন। তৃতীয় দিনও এরূপ হলাে। যখন হুযুর (ﷺ) তাঁর মজলিস থেকে উঠলেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) সেই সাহাবীটির পিছনে পিছনে গমন করলেন। তাঁকে বলতে লাগলেন: “আল্লাহ তায়ালার শপথ, আমি আমার পিতাকে লজ্জা করি, তিনদিন পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাবাে না, আপনি যদি ভাল মনে করেন, তবে এই তিনদিন আমাকে আপনার সাথে থাকার অনুমতি দিন।” আনসারী সাহাবীটি অনুমতি দিয়ে দিলেন। হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) তাকে বললেন যে, আমি তিনটি রাত তাঁর সাথে কাটিয়েছি কিন্তু তাঁকে রাতে ইবাদত করতে দেখিনি। হ্যাঁ, তবে তিনি যখন বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন, তখন আল্লাহর যিকির এবং তাঁর মহত্ব বর্ণনা করতেন, এমতাবস্থায় ফজরের নামাজের জন্য উঠে যেতেন।”
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন: আমি আনসারী সাহাবীটির কাছ থেকে ভাল কথা ছাড়া অন্য কোন কথাই শুনিনি। যখন তিনদিন পূর্ণ হয়ে গেলাে, তখন আমার তাঁর আমলকে তুচ্ছ মনে হওয়ার উপক্রম হচ্ছিলাে, কিন্তু যখন আমি সেই আনসারী সাহাবীটিকে বললাম: “হে আল্লাহর বান্দা! আমার আর আমার পিতার মাঝে কোন মনােমালিন্য এবং বিরােধ নেই বরং আমি তাে হুযুর (ﷺ) কে তিন বার বলতে শুনেছি যে, এখনই তােমাদের নিকট একজন জান্নাতী লােক আসবে আর তিনবারই আপনি উপস্থিত হয়েছেন। তাই আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম যে, আপনার সাথে অবস্থান করবাে আর দেখবাে আপনি কী আমল করেন, যেনাে আমিও আপনাকে অনুসরণ করতে পারি। কিন্তু আমি তাে আপনাকে কোন বড় আমল করতে দেখলাম না, তবে কিভাবে আপনি এতাে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হলেন যে, হুযুর (ﷺ) আপনার ব্যাপারে এই কথাটি ইরশাদ করলেন?” আনসারী সাহাবীটি উত্তর দিলেন: “আর তাে কোন আমল নেই, ব্যস এতটুকুই যা আপনি দেখেছেন।” হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) বলেন: এ কথা শুনে আমি যখন সেখান থেকে চলে আসছিলাম, তখন আনসারী সাহাবীটি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন: “আমার আর কোন আমলই নেই, ব্যস এতটুকুই যা আপনি দেখেছেন। তাছাড়া আমি কোন মুসলমানের জন্য আমার মনে ঘৃণা পােষণ করি না এবং আল্লাহ তায়ালা কাউকে কিছু দান করলে আমি তাতে হিংসা করি না।” হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আমর (رضي الله عنه) বলেন যে, আমি তাঁকে বললাম: “এটাই সেই আমল, যা আপনাকে মর্যাদা সম্পন্ন করেছে এবং আমরা এর ক্ষমতা রাখি না।”
তথ্যসূত্রঃ (মুসান্নিফ আব্দুর রাযযাক, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং- ৪৯৪৪, ১/২৬০।)
▶৭৩) হযরত সায়্যিদুনা মুয়াবিয়া বিন কুররা (رضي الله عنه) বলেন: “মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে পবিচ্ছন্ন অন্তরের
অধিকারী এবং সবচেয়ে বেশী যে গীবত থেকে বিরত থাকে।”
তথ্যসূত্রঃ (মুসান্নিফ লিইবনে আবী শায়বা, কিতাবুয যুহুদ, হাদীস নং-৮, ৮/২৫৪।)
▶৭৪) হযরত সায়্যিদুনা কা’ব (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করা হলাে: “ঘুমন্ত ব্যক্তি মাগফিরাতপ্রাপ্ত এবং নামাযী ব্যক্তি কৃতজ্ঞ কিভাবে হবে?” তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “এক ব্যক্তি রাতে নামায পড়ে এবং নিজের ঘুমন্ত ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য দোয়া করে, তবে আল্লাহ তায়ালা সেই নামাযরত ব্যক্তির দোয়ার কারণে সেই ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির কল্যাণ কামনার কারণে নামাযরত ব্যক্তি এই বিষয়ের
অধিকারী হয়ে যায়, তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা হয়।”