ফেরেশতারা যাদের জন্য দোয়া করেন -১ম পর্ব
১. ওযূ অবস্থায় ঘুমানো ব্যক্তি:
ঘুমানোর পূর্বে ওযু করা উত্তম অভ্যাস গুলোর একটি।ওযুর মাধ্যমে বাহ্যিক পবিত্রতার পাশাপাশি মানসিক প্রফুল্লতাও লাভ করা যায়।আর আল্লাহ তা’আলার ফেরেশতাগণ ঐ ব্যক্তির জন্য দরবারে ইলাহীতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যারা ওযু অবস্থায় নিদ্রা যাপন করেন।
❏ রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় (ওজূ অবস্থায়) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথেই আল্লাহ তালার সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে,হে আল্লাহ! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও,কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।”
[আল ইহসান ফি তাকরির সহীহ ইবনে হিব্বান: ৩/৩২৮-৩২৯]
❏ অপর হাদিসটি হজরত ইবনু ‘আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে।রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,তোমাদের শরীরকে পবিত্র রাখো,আল্লাহ তা’আলা তোমাদের পবিত্র করবেন।যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযু অবস্থায়) রাত যাপন করবে,অবশ্যই একজন ফেরেশতা তার সাথে রাত যাপন করবে,রাতে যখন সে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে তখনই (ফেরেশতাগণ) আল্লাহ তা’আলার সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলবে, হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলবে, হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করুন। কেননা সে পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমিয়েছে। [মু’জামুল আওসাত: ৫০৮৭]
❏ অপর হাদীসে এসেছে,ইবনু ওমর (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) বলেছেন,‘তোমাদের এই শরীরকে পবিত্র রাখ।আল্লাহ তোমাদেরকে পবিত্র করবেন।যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) রাত অতিবাহিত করবে,অবশ্যই একজন ফেরেশতা তার সঙ্গে রাত অতিবাহিত করবেন।রাতে যখনই সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে তখনই সে ফেরেশতা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করুন। কেননা সে পবিত্রাবস্থায় (ওযূ অবস্থায়) ঘুমিয়েছে’।
[আত-তারগীব ওয়াত তারহীব: ১ম খন্ড (বৈরুত: দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, ১৪০১), পৃঃ ৪০৮-৪০৯; হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী হাদীসটিকে জাইয়িদ বা উত্তম বলেছেন।দ্রঃ ফাতহুল বারী: ১১তম খন্ড (সঊদী আরব: রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ), পৃঃ ১০৯।]
❏ ২. রাসূল (ﷺ) এঁর প্রতি দুরূদ পাঠকারী:
“যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এঁর ওপর দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহতালা তার ওপর সত্তর বার দয়া করেন ও তাঁর ফেরেশতারা তার জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করবে।অতএব বান্দারা অল্প দুরূদ পাঠ করুক বা অধিক দুরূদ পাঠ করুক (এটা তার ব্যাপার)।” [সহীহ ইবনে হিব্বান]
❏ হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এঁর উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর সত্তর বার দয়া করেন ও তার ফেরেশতাগণ তার জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অতএব বান্দারা অল্প দরূদ পাঠ করুক বা অধিক দরূদ পাঠ করুক (এটা তার ব্যাপার)’।
তথ্যসূত্রঃ
●(ক.) আল-মুসনাদ: হা/৬৬০৫, ১০/১০৬-১০৭,হাদীস হাসান।
●(খ.) আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ২/৪৯৭
●(গ.) মাযমাউয যাওয়ায়েদ: ১০/১৬০
●(ঘ.) আল-কাউলুল বাদী: ১৫৩ পৃঃ
❏ রহমতে আলম,নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে (ব্যক্তি) কিতাবে আঁমার উপর দরূদ পাক লিখেছে,যতক্ষণ পর্যন্ত আঁমার নাম তাতে থাকবে,ফিরিশতারা তার জন্য ইস্তিগফার (অর্থাৎ- ক্ষমা প্রার্থনা) করতে থাকবে।”
[মুজাম আওসাত,১ম খন্ড, ৪৯৭ পৃষ্ঠা, হাদিস-১৮৩৫]
❏ রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”আল্লাহ তা’আলা বিরাটাকারে এক ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন,যার এক বাহু ভূমণ্ডল পূর্ব প্রান্তে এবং অপর বাহু পশ্চিম প্রান্তে।মস্তক আরশে আযিম এর সন্নিকটে এবং পদদ্বয় সাত তবক জমিন অতিক্রম করেছে । তাকে সমগ্র জগতসম পাখা-পালক দ্বারা সুসজ্জিত করা হইয়াছে ।আঁমার কোন উম্মত যখন আঁমার উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করে,তখন উক্ত ফেরেশতা আল্লাহ পাকের আরশের নীচে অবস্থিত নূরের সমুদ্রে ডুব দেয়।অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে সে ফেরেশতা নূরের সমুদ্র থেকে বের হয়ে সর্বশরীর ঝাড়া দেয়।ফলে তার অগণিত পাখা ও পালক থেকে অসংখ্য পানির ফোঁটা ঝরে পরে।তা থেকে আল্লাহর কুদরতে এক একজন ফেরেশতা সৃষ্টি হয়।এ অসংখ্য-অগণিত ফেরেশতা কেয়ামত পর্যন্ত দরূদ পাঠকারীর মাগফেরাত জন্য দোয়া করতে থাকে।
[মুকাশাফাতুল কুলূব গ্রন্থের ৩৪ নং এর ১]