আহার করানাের ফযীলত 

এপ্সঃ 🔎 উত্তম চরিত্র [মূলঃ ইমাম তাবারানী রহ.]

সূত্রঃ 🌍 সুন্নি-বিশ্বকোষ


▶১৫৩... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) বলেন: যখন হুযুর পুরনূর (ﷺ) মদীনা মুনাওয়ারায়  তাশরীফ আনয়ন করলেন, তখন লােকেরা তাড়াতাড়ি তাঁর দিকে দৌঁড়ে আসে, আমিও এসেছিলাম যে, তাঁকে দেখবাে। আমি যখনই নবী করীম হুযুর (ﷺ) এর পবিত্র চেহারা দেখলাম সাথে সাথেই বুঝে গেলাম যে, এটি কোন মিথ্যুকের চেহারা হতে পারে না। সর্বপ্রথম যে উক্তিটি আমি তাঁর কাছ থেকে শুনলাম তা হলাে; “আহার করাও ও সালাম প্রসার করাে এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করাে আর যখন মানুষ ঘুমিয়ে যায় তখন নামায পড়াে, তবে নিরাপত্তার সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সুনানে তিরমিযী, কিতাবু সিফতিল কিয়ামাতি, ৪২তম অধ্যায়, হাদীস নং- ২৪৯৩, ৪/২১৯]


▶১৫৪... হযরত সায়্যিদুনা ওবাদা বিন ছামিত (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলাে: “উত্তম আমল কোনটি?” আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব, হাবীবে লাবীব (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনা। তার সত্যায়ন করা। আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদ করা এবং মকবুল হজ্ব।” যখন লােকটি চলে যাচ্ছিলাে তখন হুযুর (ﷺ) তাকে ডেকে ইরশাদ করলেন: “এর চাইতেও সহজ হলাে আহার করানাে এবং নম্র ভাষায় কথাবার্তা বলা।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুল ঈমান, বাবু আয়্যিল আমালি., হাদীস নং- ২০১-২০২, ১/২২৪-২২৫।)


▶১৫৫... হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন আবাসা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: “আমি প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে উপস্থিত হলাম এবং আর করলাম: “ইসলাম কী?” প্রিয় নবী (ﷺ). রাসূলে আরবী (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “আহার করানাে এবং নম্র ভাষায় কথা বলা।” আমি আরয করলাম: “ঈমান কী?” ইরশাদ করলেন: “ধৈৰ্য্য ধারণ করা এবং দান-খয়রাত করা।”

(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুল ঈমান, বাবু আয়্যিল আমালি..., হাদীস নং- ২১৫, ১/২২৭)


▶১৫৬... হযরত সায়্যিদুনা ছুহাইব বিন সিনান (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ). নূরে মুজাসসাম কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “তােমাদের মধ্যে উত্তম সেই, যে আহার করায়।” 

––––––––––––––––––––––––––––––––

(আল মুসনাদে লি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হাদীসে সুহাইব বিন সিনান, হাদীস নং- ২৩৯৮১, ৯/২৪০)


▶১৫৭... হযরত সায়্যিদুনা জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন: “মাগফিরাতের কারণ সমূহ হতে একটি কারণ হলাে, ক্ষুধার্ত মুসলমানকে আহার করানাে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: 

[কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ] অথবা ক্ষুধার দিনে আহার দেয়া। (পারা ৩০, সূরা বালাদ, আয়াত ১৪) 

(মুস্তাদরিক লিল হাকিম, কিতাবুত তাফসির, হাদীস নং- ৩৯৯, ৩৩৭২।)


▶১৫৮... হযরত সায়্যিদুনা শুরাইহ্ (رضي الله عنه) তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন: রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর (ﷺ) ইরশাদ। করেন: “মাগফিরাত লাভের কারণ সমূহের মধ্যে আহার করানাে এবং সালাম প্রসার করাও রয়েছে।”

(আল মু'জামুল কবীর, হাদীস নং- ৪৬৯, ২২/১৮০।)


▶১৫৯... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে মুকাররাম, নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইকে আহার করালাে, এমনকি সে পরিতৃপ্ত হলাে এবং পানি পান করালাে, এমনকি পরিতৃপ্ত হলাে, তবে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তিকে (যে আহার করিয়েছে তাকে) জাহান্নাম থেকে সাত খন্দক দূরত্বে রাখবেন। প্রতি দু'টি খন্দকের মাঝখানে ১০০ বৎসরের দূরত্ব।”

(শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফিয যাকাত, হাদীস নং- ৩৩৬৮, ৩/২১৭)


▶১৬০... উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ). শাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দার দস্তরখানা বিছানাে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।” 

(আল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং- ৪৭২৯, ৩/৩২৪।)


▶১৬১... হযরত সায়্যিদুনা জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় ঐ খাবার, যে খাবার আহারকারীর সংখ্যা বেশি হয়।”

––––––––––––––––––––––––––––––––

(আল মুসনাদ লি ইবনে আবী ইয়ালাল মাওসুলী, মুসনাদে জাবির বিন আব্দুল্লাহ, হাদীস নং- ২০৪১, ২/২৮৮।)


▶১৬২... হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যেই ঘরে মেহমান রয়েছে, সেই ঘরের দিকে কোহানে (উটের কুঁজে) ছুরি চলার চাইতেও দ্রুত গতিতে কল্যাণ পৌঁছে যায়।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল আইম্মা, বাবুয যিয়াফত, হাদীস নং- ৩৩৫৬, ৪/৫১।)


▶১৬৩... হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আপন মুসলমান ভাইয়ের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করে এবং তাকে পরিতৃপ্তি সহকারে আহার করায়, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।"

(আল মুসনাদ লি আবী ইয়ালাল মাওসুলী, মুসনাদে আনাস বিন মালেক, হাদীস নং- ৩৪০৭, ৩/২১৪।)


▶১৬৪... হ্যরত সায়্যিদুনা জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে। ব্যক্তি ক্ষুধার্তকে আহার করায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন আরশের ছায়ায় জায়গা দান করবেন।”

(তামহীদুল ফরশ ফিল খিসাল মাজিবাতিল লি যিল্লিল আরশ লিস সুয়ুতী, ৮ পৃষ্ঠা।)


▶১৬৫... হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা ক্ষুধার্ত কলিজা ঠান্ডাকারীকে (অর্থাৎ তাকে খাবার খাওয়ায় এমন ব্যক্তিকে) ভালবাসেন।”

(আল কিনী ওয়াল আসমাউ লিদুল আবী, বাবু মান কুনিয়াত আবু ইয়াহইয়া, হাদীস নং- ২০৮১, ৩/১১৮৮।)


▶১৬৬... হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যেই ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইকে কোন মিষ্টি বস্তু খাওয়ালাে, তবে আল্লাহর তায়ালা তার হাশরের দিনের কষ্টসমূহ দূর করে দিবেন।”

––––––––––––––––––––––––––––––––

(আল ফিরদাউস বিমাসুরিল খাত্তাব, বাবু মীম, হাদীস নং- ৬০৫০, ২/২৮১)


▶১৬৭... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় জান্নাতে বালাখানা বিদ্যমান, যার ভেতরের দৃশ্য বাহির থেকে এবং বাইরের দৃশ্য ভিতর থেকে দেখা যায়।” সাহাবায়ে কিরামগণ (رضي الله عنه) আরয করলেন: “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ! এগুলাে কাদের জন্য?” ইরশাদ করেন: “সেগুলাে তার জন্য, যে ভাল কথা বলে। আহার করায় এবং রাতে যখন লােকেরা ঘুমে থাকে, তখন সে আল্লাহ তায়ালার দরবারে কিয়াম করে (অর্থাৎ নামায পড়ে)।”

(আল মুস্তাদরিক লিল হাকীম, কিতাবু সালাতিল তাতুও, বাবু সালাতিল হাজাতি, হাদীস নং- ১২৪০, ১/৬৩১।)


▶১৬৮... হযরত সায়্যিদুনা জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (ﷺ). রাসূলে আরবী (ﷺ) এর দরবারে আরয করা হলাে: “হজ্বের (অনুরূপ) কোন নেকী রয়েছে?” তখন মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার(ﷺ) ইরশাদ করলেন: “আহার করানাে এবং নম্র ভাষায় কথা বলা।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস নং- ১০৩৯, ৫/৪৩০।)


▶১৬৯... হযরত সায়্যিদুনা বুদাইল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আমার নিকট আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আপন ভাইকে এক লােকমা আহার করানাে, দশ দিরহাম সদকা করার চাইতেও অধিক পছন্দনীয় এবং দশ দিরহাম সদকা করা আমার নিকট গােলাম আযাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়।”

 ––––––––––––––––––––––––––––––––

(শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি আকরামুয যাইফ, হাদীস নং- ৯৬২৭, ৭/১০০।)


▶১৭০... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন ইরশাদ করবেন: “হে আদম সন্তান! আমি যখন অসুস্থ ছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে আসােনি কেন?” সে আরয করবে” “হে আমার প্রতিপালক! আমি তােমাকে দেখতে যাই কী করে? তুমি তাে রাব্বল আলামীন (সমস্ত জাহানের প্রতিপালক!)।” আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: “তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দাটি অসুস্থ ছিলাে? তবুও তুমি তাকে দেখতে যাওনি, যদি তুমি তাকে দেখতে যেতে তবে তুমি অবশ্যই আমাকে তার পাশে পেতে।” অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: “হে আদম সন্তান! আমি তােমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে আহার দাওনি কেন?” সে আরয করবে: “হে আল্লাহ তায়ালা! আমি তােমাকে কীভাবে আহার করাতে পারি? তুমি তাে সমস্ত জগতের প্রতিপালনকারী!” আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: “আমার অমুক বান্দা কি তােমার কাছে আহার চাইনি? কিন্তু তুমি তাকে আহার করাওনি, তুমি কি জানতে না যে, তাকে যদি তুমি আহার করিয়ে দিতে, তবে তার প্রতিদান তুমি আমার কাছ থেকে পেতে।” 

অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: “হে আদম সন্তান! আমি তােমার কাছে পানি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে পানি পান করাওনি কেন?” সে আরয করবে: “হে আল্লাহ তায়ালা! আমি কীভাবে তােমাকে পানি পান করাতে পারি? তুমি তাে সমস্ত জগতের প্রতিপালক?” আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন: “আমার অমুক বান্দা কি তােমার কাপছৈ পানি চায়নি? অথচ তুমি তাকে পানি পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে তবে অবশ্যই এর প্রতিদান তুমি আমার কাছে পেতে।”

(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদব, হাদীস নং- ২৫৬৯, ১৩৮৯ পৃষ্ঠা।) 


▶১৭১... আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলীয়ুল মুরতাদ্বা (رضي الله عنه) বলেন: “আমার কাছে আমার বন্ধুদের এক সা' পরিমাণ আহার করাতে একত্র করা, আমি বাজারে গিয়ে একটি বাদী কিনে আযাদ করে দেয়া থেকে বেশি পছন্দনীয়।”

 ––––––––––––––––––––––––––––––––

(কানযুল উম্মাল, কিতাবুল যিয়াফাতি মান কাসমুল আফআল, হাদীস নং- ২৫৯৬৭, ৫/১১৮।) 


▶১৭২... হযরত সায়্যিদুনা আমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, ইমামে আলী মকাম, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (رضي الله عنه) এর সহধর্মিনি তাঁর। কাছে বার্তা পাঠালেন যে, “আমি আপনার জন্য সুস্বাদু খাবার ও সুগন্ধি। প্রস্তুত করেছি। আপনি আপনার সমগােত্রীয় লােকজন নিয়ে আমার কাছে তাশরীফ নিয়ে আসুন।” হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (رضي الله عنه) মসজিদে গেলেন এবং সেখানে যেসব মিসকিন আর ভিক্ষুক ছিলাে, তাদেরকে সাথে নিয়ে তাশরীফ নিলেন। প্রতিবেশী মহিলারাও তাঁর সহধর্মিনির নিকট আসলাে এবং বললাে: “আল্লাহর শপথ, তােমাদের ঘরে তাে মিসকিনরা জমা হয়ে গেছে।” অতঃপর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (رضي الله عنه) তাঁর সহধর্মিনির নিকট তাশরীফ নিয়ে গেলেন এবং বললেন: “আমি তােমাকে আমার সেই অধিকারের শপথ দিচ্ছি, যা তােমার প্রতি আমার রয়েছে, “তুমি খাবার আর সুগন্ধি কিছুই বাঁচিয়ে রাখবে না।” অতএব তিনি তা-ই করলেন। তিনি প্রথমে মিসকিনদের আহার করালেন, অতঃপর তাদের কাপড় পরিধান করালেন এবং সুগন্ধি লাগিয়ে দিলেন। 


▶১৭৩... হযরত সায়্যিদুনা ইসমাঈল বিন আবু খালিদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা আলী ইবনে হােসাইন (رضي الله عنه) বাহনে আরােহী অবস্থায় কিছু মিসকিনদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যারা উচ্ছিষ্ট কিছু টুকরাে আহার করছিলাে। তিনি (رضي الله عنه) তাদের সালাম করলেন। মিসকিনরা তাঁকে তাদের সাথে খাওয়ার জন্য আহ্বান করলাে। তখন তিনি 

নিচের আয়াতে মােবারক তিলাওয়াত করলেন: 

[কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ] যারা দুনিয়ায় অহংকার এবং ফাসাদ চায় না।(পারা ২০, সূরা কিসাস, আয়াত ৮৩) 


অতঃপর বাহন থেকে নেমে আসলেন এবং তাদের সাথে আহার। করলেন। এরপর বললেন: “আমি তােমাদের দাওয়াত গ্রহণ করলাম। এবার তােমরা আমার দাওয়াত কবুল করাে।” অতঃপর তিনি (رضي الله عنه) তাদেরকে ঘরে নিয়ে গেলেন এবং আহার করালেন ও কাপড় আর দিরহাম দান করলেন।”

(তাফসীরে কুরতুবী, সূরা কিসাস, ৮৩নং আয়াতের পাদটিকা, ৭/২৪০।)


▶১৭৪... হযরত সায়্যিদুনা আমর বিন দীনার (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, “হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর দস্তরখানা খুবই প্রশস্ত এবং কথাবাতা অত্যন্ত ভাল ছিল।” 


▶১৭৫... হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর করশী (رضي الله عنه) বলেন: হাজীদের জন্য অনেক বড় একটি মিসরির টুকরাে বানানাে হলাে, যা লােকেরা চতুষ্পদ প্রাণীর উপরও উঠাতে পারতাে না। অতঃপর তা একটি ছকড়া গাড়ি (ছয়টি ঘােড়া দ্বারা টানা গাড়ি) দিয়ে টেনে খলিফা আব্দুল মালিকের নিকট আনা হলাে। তিনি বাইরে আসলেন এবং এর আয়তন দেখে এর অবস্থা অনুমান করলেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, এটি কী করা যায়? কিছুক্ষণ ভেবে নিজের গােলামকে ডাকলেন এবং বললেন: “এটি সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (رضي الله عنه) এর নিকট নিয়ে যাও।” তখন তিনি (رضي الله عنه) খলিফার কাছেই অবস্থান করছিলেন। যখন মিসরির এত বড় টুকরােটি তাঁর নিকট আনা হলাে, তখন তিনি খুবই আশ্চর্য হলেন এবং লােকজন তা দেখার জন্য জমা হয়ে গেলাে। তিনি (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করলেন: “এটি কী?” আরয করা হলাে: “এটি একটি মিসরির টুকরাে, যা খলিফা আপনার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি (رضي الله عنه) বাইরে এসে এমন একটি জিনিস দেখলেন যার মত কোন জিনিস মানুষ পূর্বে দেখেনি, কিছুক্ষণ ভেবে তিনি গােলামকে বললেন: “চামড়ার বিছানা আর কুঠার নিয়ে আসাে।” অতএব তা কাটার জন্য কুঠার নিয়ে আসা হলাে এবং একই সাথে চামড়ার বিছানাও উপস্থাপন করা হলাে। তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “যার হাতে যা আসবে সেটি তার।” অতঃপর তিনি (رضي الله عنه) সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সেই টুকরােটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলা হলাে। যখন খলিফা আব্দুল মালিক এই সংবাদ জানতে পারলেন তখন খুবই বিস্মিত হলেন এবং বললেন: “তিনি এই বিষয়ে আমাদের সবার চেয়ে বেশি জানেন।” 


▶১৭৬... হযরত সায়্যিদুনা উরওয়া (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: আমি হযরত সায়্যিদুনা সা’দ বিন ওবাদা (رضي الله عنه) এর সাথে সাক্ষাত করলাম, তখন একজন ঘােষক মানুষের মাঝে ঘােষণা করছিলাে যে, “কেউ যদি মাংস ও চর্বি খেতে চায় তবে তারা সা’দ বিন ওবাদার ঘরে চলে আসুন।” তিনি বলেন: অতঃপর আমার সাক্ষাত হয় তাঁর পুত্র কায়সের সাথে, তখন তিনিও একই ঘােষণা করছিলেন। হযরত সায়্যিদুনা সা’দ বিন ওবাদা (رضي الله عنه) দোয়া করলেন: “হে আল্লাহ তায়ালা! আমাকে পরিপূর্ণ প্রশংসা করার তৌফিক দান করাে। আমাকে মর্যাদা দান করাে আর মর্যাদা তাে নেক আমলের মধ্যেই নিহিত, নেক আমল করা তাে সম্পদ দ্বারা সম্ভব। হে আল্লাহ তায়ালা! কম সম্পদ আমার জন্য যথেষ্ট নয় এবং আমিও এতে ভরসা করতে পারি না।”

(মুসান্নিফ লি ইবনে আবী শায়বা, কিতাবুল আদব, হাদীস নং- ১৩-১৪, ৬/২৫৪।)


▶১৭৭... হযরত সায়্যিদুনা নাফে (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) রােযা রাখতেন আর হযরত সায়্যিদাতুনা ছফিয়া বিনতে ওবাইদ (رضي الله عنه) তাঁর ইফতারের জন্য কিছু তৈরি করে দিতেন। একদিন তাঁর নিকট উন্নত মানের আনার নিয়ে আসা হলাে, তখন দরজায় একটি ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইলাে। তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “এটি তাকে দিয়ে দাও।” কিন্তু হযরত সায়্যিদাতুনা ছফিয়া (رضي الله عنه) আরয করলেন: “তার জন্য এর চেয়ে ভাল কিছু আছে।” 

অতঃপর হযরত সায়্যিদাতুনা ছফিয়া (رضي الله عنه) আমাকে বললেন: “তাকে। অমুক জিনিসটি দিয়ে দাও।” এরপর যখন সেই আনারটি হযরত আব্দুল্লাহ্। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর সামনে উপস্থাপন করা হলাে, তখন তিনি বললেন: “এটি নিয়ে যাও এবং অন্য কোন ভিক্ষুককে দিয়ে দাও। কেননা, আমি এটি সদকা করার নিয়্যত করেছি।” 


▶১৭৮... হযরত সায়্যিদুনা নাফে (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (رضي الله عنه) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন আমি তাঁর জন্য এক দিরহামের আঙ্গুর কিনলাম। যখন সেই আঙ্গুর তাঁর সামনে উপস্থাপন করলাম, তখন একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইলাে। তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “এগুলাে তাকে দিয়ে দাও।” (আমি দিয়ে দিলাম) অতঃপর আমি সেই ভিক্ষুকটির পেছনে পেছনে একজন লােক পাঠালাম, যেনাে সে ভিক্ষুক থেকে সেই আঙ্গুলগুলাে কিনে নেয়, যাতে হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) জানতে না পারে। যখন আঙ্গুরগুলাে দ্বিতীয়বার তাঁর নিকট উপস্থাপন করা হলাে, তখন ভিক্ষুকটি আবারও চলে এলাে। তিনি (رضي الله عنه) এবারও বললেন: “এগুলাে তাকে দিয়ে দাও।” এভাবে তিন বার হলাে এবং প্রতিবারেই ভিক্ষুক থেকে আঙ্গুরগুলাে কিনে নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থাপন করা হয় আর প্রতিবারেই তিনি (رضي الله عنه) আঙ্গুরগুলাে আগত ভিক্ষুককে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অবশেষে লােকেরা ভিক্ষুকটিকে এমনভাবে বারণ করলাে যে, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) তা জানতেও পারলেন না।” 

[শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফিয যাকাত, হাদীস নং- ৩৪৮১, ৩/২৫৯]


▶১৭৯... হযরত সায়্যিদুনা খাইছামা (رضي الله عنه) বর্ণিত, হযরত সায়্যিদুনা ঈসা ইবনে মরিয়ম (رضي الله عنه) নিজের হাওয়ারীদের (অনুসারীদের) মধ্য থেকে কিছু লােককে ডাকলেন, তাদের আহার করালেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে বললেন: “ইবাদতগুজার বান্দাদের সাথে এরূপ আচরণ করাে।”

(শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফিল ইকরামু যইফ, হাদীস নং- ৯৬৩৮, ৭/১০২।)


▶১৮০... হযরত সায়্যিদুনা আবু কাবীছা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: হযরত খাইছামা (رضي الله عنه) সর্বদা খেজুরের হালুয়ার একটি টুকরি তাঁর আসনের নিচে রাখতেন। যখন তাঁর নিকট কোরআন তিলাওয়াতকারী আসতেন, তখন এই হালুয়াগুলাে তিনি (رضي الله عنه) তাদের খাওয়াতেন।

(হিলইয়াতুল আউলিয়া, নম্বর- ২৫৪, হায়ছামা বিন আব্দুর রহমান, হাদীস নং- ৪৯৭৪, ৪১২১।)


▶১৮১... হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আওন (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: “আমরা যখনই হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন সিরীন (رضي الله عنه) এর নিকট গমন করতাম, তখনই তিনি আমাদেরকে খেজুরের হালুয়া আর ফালুদা খাওয়াতেন।”

(হিলইয়াতুল আউলিয়া, নম্বর- ১৯৩, ইবনে সীরিন, হাদীস নং- ২৩২১, ২/৩০৫।)


▶১৮২... হযরত সায়্যিদুনা আবু (رضي الله عنه) বলেন: আমরা হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন সিরীন (رضي الله عنه) এর নিকট গেলাম, তখন তিনি বললেন: “আমি বুঝতে পারছি না যে, আপনাদেরকে কী উপস্থাপন করবাে? মাংস ও রুটি তাে আপনাদের সকলের ঘরেই আছে।” অতঃপর তিনি 

(رضي الله عنه) বাদীকে ডাক দিলেন এবং মধু নিয়ে আসতে বললেন, অতঃপর তিনি নিজ হাতেই আমাদেরকে খাওয়ার জন্য মধু ঢেলে দিতেন। 

––––––––––––––––––––––––––––––––

(হিলইয়াতুল আউলিয়া, নম্বর- ১৯৩, ইবনে সীরিন, হাদীস নং- ২৩২৩, ২/৩০৫)


▶১৮৩... হযরত সায়্যিদুনা ইবরাহীম বিন আবি উবলা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি বাইতুল মুকাদ্দাসের “বাবুল আসবাতে” হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে দরদা (رضي الله عنه) এর নিকট উপস্থিত হতাম, তখন তিনি আমাকে হাদীস বর্ণনা করতেন। যখন আমি তাঁর নিকট থেকে চলে আসতে চাইতাম, তখন তিনি আমার জন্য হালুয়া এবং অন্যান্য খাবার জিনিস নিয়ে আসতে বলতেন।” 

 

▶১৮৪... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমাদের সামনে মিষ্টি দ্রব্য উপস্থাপন করা হলে, তবে তা থেকে অবশ্যই কিছু নাও আর যখন তােমাদের সামনে সুগন্ধি উপস্থাপন করা হয়, তবে তা থেকেও অবশ্যই কিছু লাগিয়ে নাও।”

(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুল আইম্মা, বাবু ফিল হালুয়া, হাদীস নং- ৭৯৯১, ৫/৪৬।) 


▶১৮৫... হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম জামহী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: এক গ্রাম্য লােক হযরত সায়্যিদুনা আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) এর ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর ঘরের এক দিকে বসে হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ফতােয়া দেওয়ার কাজ করতেন, তাঁকে যে প্রশ্ন করা হতাে তার উত্তর দিতেন আর ঘরের অপর দিকে হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) প্রত্যেক আগত ব্যক্তিকে আহার করাতেন। তা দেখে সেই গ্রাম্য লােকটি বললাে: “যেই ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল কামনা করে সে যেনাে হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের ঘরে অবশ্যই আসে, কেননা তিনি ফতােয়া দেন, লােকজনকে ফিকাহ শিখান এবং আহারও করান।”

(তারিখে মদীনা দামেশক লি ইবনে আসাকির, নম্বর - ৪৪৫৬, ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস, ৩৭/৪৮০।)


▶১৮৬... হযরত সায়্যিদুনা জুবাইর (رضي الله عنه) বলেন, হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) কুরবানী করার স্থানে পশু জবাই করিয়ে সেখানেই মানুষের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। সেই কারণে মক্কা মুকাররামার বাজারে সেই স্থানটি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর কুরবানী করার স্থান নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়। 

––––––––––––––––––––––––––––––––

(তারিখে মদীনা দামেশক লি ইবনে আসাকির, নম্বর – ৪৪৫৬, ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস, ৩৭/৪৭২।)


▶১৮৭... হযরত সায়্যিদুনা আলী বিন মুহাম্মদ মাদায়েনী (ﷺ) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস এর জন্য প্রতিদিন একটি উট কিংবা উটের মাংসের সমপরিমাণ ছাগল জবাই করা হতাে।”(১)

(তারিখে মদীনা দামেশক লি ইবনে আসাকির, নম্বর - ৪৪৫৬, ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস, ৩৭/৪৭১।)


▶১৮৮... হযরত সায়্যিদুনা আব্বান বিন ওসমান (رضي الله عنه), বলেন: এক ব্যক্তি হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) কে অপমান করার ফন্দি করলাে এবং মানুষের সামনে গিয়ে সে বলতে লাগলাে: “ওবাইদুল্লাহ্ বিন আব্বাস তােমাদেরকে ডেকেছে যে, আজ দুপুরের খাবার তার সাথে খাবে।” এই কথা শুনে লােকেরা দলে দলে আসতে লাগলাে এমনকি তাঁর ঘর লােকে ভরে গেলাে। হযরত সায়্যিদুনা ওবাইদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করলেন: “মানুষের কি হয়ে গেলাে?” আর করা হলাে: “হুযুর! আপনার পাঠানাে লােকটি আমাদের নিকট এসেছিলাে (সে আমাদেরকে এভাবে বলেছে)।” তিনি এ  ঘটনা বুঝে গেলেন এবং বললেন: “দরজা বন্ধ করে দাও।” অতঃপর খাদেমকে বললেন: “বাজারে গিয়ে যথেষ্ট ফল নিয়ে এসাে।” (ফল যখন নিয়ে আসা হলাে, তখন) লােকেরা ফলসমূহ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলাে। তিনি পুনরায় তাঁর কয়েকজন খাদিমকে বললেন: “ভুনা মাংস ও রুটি নিয়ে এসাে।” খাদিমরা রুটি নিয়ে এলে তাও লােকদেরকে উপস্থাপন করে দেয়া হলাে। যখন সবাই আহার শেষ করলাে, তখন তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “আমি কি যা ইচ্ছা (অর্থাৎ ঘােষনা) করেছিলাম তা কি পূর্ণ করতে পেরেছি?” তখন সবাই আরয করলাে: “জি, হা।” অতঃপর তিনি (رضي الله عنه) বললেন: “যদি আরাে লােক আসে তাতেও আমি কোন তােয়াক্কা করিনা।”

––––––––––––––––––––––––––––––––

(তারিখে মদীনা দামেশক লি ইবনে আসাকির, নম্বর – ৪৪৫৬, ওবাইদুল্লাহ বিন আব্বাস, ৩৭/৪৭২।)


▶১৮৯... হযরত সায়্যিদুনা ইমাম শাআবী (رحمة الله) বলেন: “হযরত সায়্যিদুনা আশআছ বিন কায়েস (رضي الله عنه) এক ব্যক্তিকে হযরত সায়্যিদুনা আদী বিন হাতিম (رضي الله عنه) এর নিকট পাতিল ধার নেওয়ার জন্য পাঠালেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা আদী বিন হাতিম (رضي الله عنه) বললেন: “পাতিল পূর্ণ করে দাও।” অতঃপর তা হযরত সায়্যিদুনা আশআছ বিন কায়েস (رضي الله عنه) এর নিকট পাঠানাে হলাে। হযরত সায়্যিদুনা আশআছ বিন কায়েস (رضي الله عنه) তা পুনরায় ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন: “আমি তাে খালি পাতিল চেয়েছিলাম।” হযরত সায়্যিদুনা আদী বিন হাতিম (رضي الله عنه) এই বলে পাতিলটি পুনরায় পাঠিয়ে দিলেন যে, “আমি খালি পাত্র দিই না।”

(আসাদুল গাবাতি ফি মা'রিফাতিস সাহাবা লিইবনে আসির, নম্বর- ৩৬০৪, আদী বিন হাতিম, ৪/১২।)


▶১৯০... হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: তিনজন ব্যক্তি এমন, যাদের সমতা রাখার যােগ্যতা আমার নাই এবং চতুর্থ ব্যক্তি হলাে সেই, যার সাহায্য আমাকে দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই করাতে পারেন। সেই তিনজন ব্যক্তি যাদের সমতা রাখার যােগ্যতা আমার নাই তারা হলাে: এক. সেই ব্যক্তি যে নিজের মজলিসে আমার জন্য জায়গা করে দেয়। দুই. সেই ব্যক্তি যে প্রচন্ড পিপাসায় আমাকে পানি পান করায়। তিন. সেই ব্যক্তি যার পা আমার ঘরে আসা যাওয়ার কারণে ধুলিময় হয়ে যায় এবং চতুর্থ সেই ব্যক্তি যার সাহায্য আল্লাহ তায়ালাই আমাকে দিয়ে করাতে পারেন, যার কোন প্রয়ােজন দেখা দেয় এবং সে সারা রাত এই চিন্তায় জেগে কাটিয়ে দেয় যে, আমার চাহিদা কে পূরণ করবে? যখন ভাের হয় তখন আমাকে তার চাহিদা পূরণকারী রূপে পায়, তিনিই সেই ব্যক্তি যার সাহায্য আমাকে দিয়ে কেবল আল্লাহ তায়ালাই করাতে পারেন এবং আমার এই বিষয়ে লজ্জা হয় যে কেউ (চাহিদা পূরণের জন্য) তিনবার আমার ঘরে আসলাে অথচ আমি তার চাহিদা পূরণ করব না।”

Top