এতিমের ভরণ-পােষণ করার ফযীলত
এপ্সঃ 🔎 উত্তম চরিত্র [মূলঃ ইমাম তাবারানী রহ.]
সূত্রঃ 🌍 সুন্নি-বিশ্বকোষ
▶১০২... হযরত সায়্যিদুনা সুফিয়ান বিন ওয়াইনা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ). শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “আমি এবং এতিমকে ভরণ-পােষণকারী যােক সে এতিমের আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয় জান্নাতে এভাবে থাকবাে।” অতঃপর হযরত সুফিয়ান বিন ওয়াইনা (رضي الله عنه) নিজের হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করেলেন।
(আল আদবুল মুফরাদ, বাবু ফদলি মিন ইয়াউলু ইয়াতিমান বায়না আবওয়ায়হু, হাদীস নং- ১৩৩, ৫৮ পৃষ্ঠা।)
▶১০৩... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন: “মুসলমানদের ঘরগুলাের মধ্যে সর্বোত্তম ঘর সেটি, যাতে এতিমের সাথে সদ্ব্যবহার করা হয় এবং মুসলমানদের ঘরগুলাের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘর সেটি, যাতে এতিমদের সাথে অসদাচরণ করা হয়। অতঃপর নবী করীম, রউফুর রহীম (رضي الله عنه) ইরশাদ করলেন: “আমি এবং এতিমের ভরণ পােষণকারী জান্নাতে এভাবে থাকবাে।” অতঃপর শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় একত্র করলেন।
(আল আদবুল মুফরাদ, হাদীস নং-১৩৭, ৫৮ পৃষ্ঠা।)
▶১০৪... হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (ﷺ). হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে দস্তরখানায় এতিম থাকে শয়তান সেই দস্তরখানার নিকটেও আসে না।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং- ১৩৫১২, ৮/২৯৩।)
▶১০৫... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “সেই সত্তার শপথ, যিনি আমাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন। সেই ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন না, যে এতিমের প্রতি দয়া করলাে এবং তার সাথে কোমল ব্যবহার করলাে আর তার এতিম এবং দুর্বল অবস্থার উপর দয়া করলাে এবং আল্লাহ পাক আপন দয়ায় তাকে যে অঢেল সম্পদ দান করেছেন, সেই কারণে সে প্রতিবেশীদের সাথে অহংকার দেখায় না।”
(আল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং- ৮৮২৮, ৬/২৯৬)
▶১০৬... হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রতিটি চুলের পরিবর্তে একটি করে নেকী দান করেন এবং যার লালন-পালনে এতিম ছেলে বা মেয়ে রয়েছে চাই সেই এতিমের আত্মীয় হােক কিংবা অনাত্মীয়, তবে আমি এবং সে জান্নাতে এভাবে অবস্থান করবাে।” অতঃপর হুযুর (ﷺ) বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদাত আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে দিলেন।
(শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি রেহেমুস সগীর ওয়া তাকীরিল কবীর, হাদীস নং- ১১০৩৬, ৭/৪৮২।)
▶১০৭... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে এসে নিজের পাষাণ হৃদয়ের অভিযােগ করলাে, তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যদি তুমি তােমার হৃদয়কে কোমল করতে চাও, তবে মিসকিনদের আহার করাও এবং এতিমের মাথায় স্নেহভরা হাত বুলিয়ে দাও।”
(শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি রেহেমুস সগীর ওয়া তাণ্ডকীরিল কবীর, হাদীস নং- ১১০৩৪, ৭/৪৮২।)
▶১০৮... হযরত সায়্যিদুনা মালিক বিন আমর কুশাইরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আরবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি কোন মুসলমান এতিমের লালন-পালনের ভার নেয়, এমনকি সেই এতিম অমুখাপেক্ষী হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য করে দিন।”
(আল মু'জামুল কবীর, হাদীস নং- ৬৬৯, ১৯/৩০০।)
▶১০৯... হযরত সায়্যিদুনা জাব্ব আনসারী (رضي الله عنه) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: একটি ছেলে প্রিয় নবী (ﷺ). রাসূলে আরবী (ﷺ) কে। মসজিদে দেখে আরয করলাে: “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হােক। আমি একজন এতিম ও অনাথ ছেলে এবং আমর মা অত্যন্ত গরীব ও অভাবী, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যা কিছু দান করেছেন তা থেকে আপনি আমাকেও কিছু দান করুন! আল্লাহ তায়ালা আপনার সন্তুষ্টি চান এমনকি আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” হুযুর নবীয়ে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “হে বংস! তােমার কথাগুলাে আবার বলল, তােমার মুখ দিয়ে তাে ফিরিশতারা বলছেন।” সে তার কথাগুলাে পুনরায় বললাে। অতঃপর প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “রাসূলের (ﷺ) বংশের ঘরে যা কিছু আছে নিয়ে আসাে।”
অতএব একটি পাত্র (সবজির) আনা হলাে, যা ছিল এক মুষ্টির চেয়ে বেশি এবং দুইটির কম। নবীয়ে পাক (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “হে বৎস! এটি নিয়ে যাও! এতে তােমার এবং তােমার মা ও বােনের দুপুর ও রাতের খাবার রয়েছে। আমি এতে বরকতের জন্য দোয়া করে তােমাদের সাহায্য করতে থাকবাে।” অতঃপর ছেলেটি সেখান থেকে বিদায় নিয়ে যখন মসজিদের দরজা পর্যন্ত এলাে তখন তার সাক্ষাৎ হযরত সায়্যিদুনা সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) এর সাথে হলাে, তিনি তার মাথায় স্নেহভরা হাত বুলিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন: এ কথা জানিনা যে, তিনি তাকে কিছু দিয়েছিলেন কি না? যখন তিনি (رضي الله عنه) হুযুরে পাক (ﷺ) এর দরবারে এসে উপস্থিত হলেন, তখন হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “তুমি যখন এতিমটির সাথে সাক্ষাত করেছে, আমি কি তখন তােমাকে তার মাথায় হাত বুলাতে দেখিনি?” হযরত সায়্যিদুনা সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) আরজ করলেন: “কেন নয়?” প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “যে চুলগুলাের উপর তােমার হাত লেগেছে, তার পরিবর্তে তােমার জন্য নেকী রয়েছে।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
[হযরত সায়্যিদুনা আল্লামা আব্দুর রউফ মুনাভী (رحمة الله) এই হাদীসে পাকের আলােকে বলেন:“এই হাদীসে নিজের সন্তান এবং অপরের এতিম সন্তান ইত্যাদি সবাই অন্তর্ভুক্ত।” ফয়যুল কদীর, ৮৬৯৬ নং হাদীসের পাদটিকা, ৬/১৭৪] হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায় যে, এতিমের মাথায় হাত বুলানাে মুস্তাহাব।