প্রতিবেশীর হকের বর্ণনা
এপ্সঃ 🔎 উত্তম চরিত্র [মূলঃ ইমাম তাবারানী রহ.]
সূত্রঃ 🌍 সুন্নি-বিশ্বকোষ
▶১৯৩... বর্ণিত রয়েছে, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেন: “জিব্রাঈল আমীন (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীদের হক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার আদেশ পৌঁছাতে থাকেন, এমনকি আমার ধারণা হলাে যে, অচিরেই প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেওয়া হবে।”
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব, বাবুল ওয়াসাতি বিল জার, হাদীস নং- ৬১০৫, ৪/১০৪।)
▶১৯৪... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) একটি ছাগল জবাই করার নির্দেশ দিলেন তখন তা জবাই করা হলাে। অতঃপর তিনি তাঁর খাদিমকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি তা থেকে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীর নিকট কিছু পাঠিয়েছাে? (২)
(২). যিম্মী কাফিরকে যাকাত ইত্যাদি ওয়াজিব সদকা ব্যতীত নফল সদকা দেওয়া যাবে। অবশ্য হারবী কাফিরকে নফল সদকাও দেওয়া যাবে না আর বর্তমানে দুনিয়ার সকল কাফিরই হারবী। অতএব তাদেরকে কোন ধরনের সদকাই দেওয়া যাবে না। হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আহমদ প্রকাশ মােল্লা "তাফসীরাতে আহমদিয়ায় লিখেন: “বর্তমান সময়ে সকল কাফিরই হারবী, যা আলিমরাই জানেন।” (তাফসীরাতে আহমদিয়া, ১০ম পারা, সূরা তাওবা, ২৯নং আয়াতে পাদটিকা, ৪৫৮ পৃষ্ঠা) তাছাড়া কাফির হারবী হােক কিংবা যিম্মী হােক তাদেরকে কুরবানীর মাংসও দেওয়া যাবে না। যেমনটি প্রিয় নবী (ﷺ) প্রতিবেশীদের হক বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন: “কাফির প্রতিবেশীর হক কেবল একটি আর তা হল প্রতিবেশিত্ব।” সাহাবায়ে কিরামগণ (رضي الله عنه) আরজ করলেন: “আমরা কি তাদেরকে আমাদের কুরবানীর মাংস দিবাে?” তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “মুশরিকদেরকে তােমাদের কুরবানী থেকে কিছুই দিও না।” (শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি আকরামুল জার, হাদীস নং- ৯৫৬০, ৭/৮৩)
কেননা আমি নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, “জিব্রাঈল আমীন (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার আদেশ পৌঁছাতে থাকেন, এমনকি আমার ধারণা হলাে যে, অচিরেই প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেওয়া হবে।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
(আল মুসনাদ লিল হামিদী, আহাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বিন আস, হাদীস নং- ৫৯৩, ২/২৭০।)
▶১৯৫... হযরত সায়্যিদুনা আবু উমামা বাহলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত (ﷺ) তাঁর উষ্ট্রী ‘জাদআ’র উপর আরােহী ছিলেন, আমি তাঁকে ইরশাদ করতে শুনলাম যে, “আমি তােমাদেরকে প্রতিবেশীদের সম্পর্কে ওসীয়ত করছি।” প্রিয় নবী (ﷺ). রাসূলে আরবী (ﷺ) এই উক্তিটি বার বার ইরশাদ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: আমি (মনে মনে ভাবলাম যে, হুযুর (ﷺ) তাদেরকে ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।”
(আল মু'জামুল কবীর, হাদীস নং- ৭৫২৩, ৮/১১১)
▶১৯৬... হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, খাতামুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “সমস্ত সৃষ্টিকুল আল্লাহ তায়ালারই লালিত পালিত এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে তার লালিত পালিতদের (সৃষ্টিকূলের) সাথে সদ্ব্যবহার করে।”
(আল মুসনাদ লি ইবনে আবী ইয়ালাল মাওসুলী, হাদীস নং- ৩৪৬৫, ৩/২৩২।)
▶১৯৭... হযরত সায়্যিদুনা আবু শুরাইহ্ কা’বী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “যেই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তার উচিৎ যে, প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করা।”
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব, হাদীস নং- ৬৫১৯, ৪/১০৫।)
▶১৯৮... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, সায়্যিদে আলম, নূরে মুজাসসাম, হুযুর পুরনুর (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যেই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেনাে প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব, হাদীস নং- ৬০১৮, ৪/১০৫।)
▶১৯৯... হযরত সায়্যিদুনা আবু জুহাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযােগ নিয়ে উপস্থিত হলাে, তখন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “তােমার মালামাল রাস্তায় ফেলে দাও।” সে তার মালামাল রাস্তায় ফেলে দিলাে। লােকজন যখন সেখান দিয়ে যাতায়াত করতাে, তখন তার প্রতিবেশীর উপর অভিশাপ দিতাে। সে প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে এসে আরয করলাে: “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লােকেরা আমার সাথে এ কেমন ব্যবহার করছে?” হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “লােকেরা তােমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করছে?” সে বললাে: “আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে।” রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “লােকদের পূর্বে আল্লাহ তায়ালা তােমাকে অভিশাপ দিয়েছেন।” সে আর করলাে: “আজকের পর আমি আর কখনাে এরূপ করবাে না।” অতএব সেই ব্যক্তি যে প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে অভিযােগ এনেছিলাে সে উপস্থিত হলাে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “তােমার মালামাল গুলাে উঠিয়ে নাও, আল্লাহ তায়ালা তােমার কষ্ট দূর করে দিয়েছেন।”
(আত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং- ৩৯১১, ৩/২৮৭।)
▶২০০... উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সালমা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদিন আমি এবং নবী করীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) একই কম্বলে ছিলাম। এমন সময় প্রতিবেশীর একটি ছাগল ঘরে ঢুকলাে। যখন ছাগলটি রুটি মুখে নিলাে, তখন আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তার মুখ থেকে রুটিটি কেড়ে নিলাম। তা দেখে হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “তােমার তাকে কষ্ট দেয়া নিরাপত্তা দিবে না, কেননা এটাও প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
(জামেয়েল উলুম ওয়াল হিকম, হাদীস নং- ৫৫, ১৭৩ পৃষ্ঠা)