প্রাচীন গুপ্তসংঘ "সাদা-দাড়িওয়ালা"র আস্তিত্বের সন্ধানে। (১/৪) ১ম পর্ব পরিচয়ঃ
হে আগন্তুক তোমার লক্ষ্য কি?
!! কিজিল ইলমা !! 🍎
এই বাক্যের সাথে এখন অনেকেই সুপরিচিত।
তুর্কি মুভি ও সিরিজগুলো দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে বিশ্ববাসির কাছে, আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই।বিশেষ করে উসমানি সম্রাজ্যের ইতিহাসের উপর নির্মিত ড্রামা সিরিজগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
("দিরিলিস আর্তোগুল", "কুরুলুশ উসমান", পায়িতাথ সুলতান আবদুল হামিদ, কুতলু এমরে, ইউনুস এমরে, কারাথায়, ফাতিহ ১৪৫৩, দেলিলার, তুর্ক গেলিওর, ফিলিন্টা মোস্তফা)।
সিরিজগুলো উসমানি সম্রাজ্যের সুন্দর দিন গুলিতে নিয়ে যায়, ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন অনুভব করায়, শেকড়ের সন্ধান দেয়, দর্শকের মনে আনন্দ আনে।
শান্তিময়, স্বস্তিময় বিনোদন।
যখনই "কিজিল এলমা" শব্দটি উচ্চারিত হয় তখনই এক রহস্যময় পরিবেশ নিয়ে আবির্ভুত হয়,(আকসাকালার )সাদা-দাড়িওয়ালা।
পুরো দৃশ্যপট পাল্টিয়ে যায়, অজানা আতংক ভর করে, নতুন কিছু চমকপ্রদ ঘটার ইঙ্গিত দেয়, উত্তেজনা চরম আকারে বিরাজমান হয়।
কারা এই (আকসাকাল) সাদা-দাড়িওয়ালা??
আসুন আজ তাদের অস্তিত্বের সন্ধানে বের হই, তারা কি বাস্তব নাকি কবির কল্পনা!!
তুর্কি ইতিহাসের অঘুজ অধ্যায়ের পাতায় পাতায় গানে কবিতায় "আকসাকাল" দের উপস্থিতি।
আকসাকাল মানে (Aqsaqal) মানে বয়ষ্ক সাদা-দাড়ি ওয়ালা ব্যক্তি, সমাজের জ্ঞানী , গোত্রের প্রধান (বে) নির্দেশ করে। এখনো অনেক তুর্কমান গোত্রের প্রধানকে "আকসাকাল" বলে ডাকা হয়।
কিন্তু সর্ব প্রথম এই নামের উৎপত্তি হয়,
"দেদে কুরকুত" নামে এক অঘুজ ব্যক্তির মাধ্যমে, তিনি প্রথম "আকসাকাল"।
তিনি জ্ঞানী ছিলেন, তুর্কমেনবাসির সমস্যার সমাধান দিতেন, দার্শনিক ছিলেন, কবি ছিলেন, গল্পকার ছিলেন, গায়ক ছিলেন আরো অনেক গুনের অধিকারি ছিলেন। সকল তুর্কিদের কাছে তিনি আদর্শ। এসব থেকেও তার একটি পরিচয় অনেক বড়, তিনি মদীনায় সফর করেন,
নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ(দুরুদ) এর সাথে সাক্ষাত করেন।
তিনি একটি সুসংবাদ বহন করে নিয়ে আসেন,
"একদিন বাইজেন্টাইন ফাতাহ হবে, দুর্গের উপর ইসলামের পতাকা উড়বে।"
নিজ বসতিতে ফিরে দেদে-কুরকুত এক নতুন আমিতে পরিনত হয়, অঘুজ সর্দার এর সাথে আলোচনা করে, দৃঢ় সংকল্প করে তারা এই অভিযানে অংশ নিবে। সেই থেকে এক মিশন শুরু হয়, মিশন "কিজিল এলমা"।
"কিজিল এলমা" মানে লাল আপেল,
কিন্তু প্রচীন তুর্কীভাষায় "কন্সটান্টিম্পল/রোম" এর নামও "কিজিল এলমা", (এই নাম পরে রোমানরা নিষিদ্ধ করে)।যা তুর্কিস্থান থেকে পশ্চিমে।
এই শহর ফাতাহ করার নিমিত্তে গঠিত গুপ্তসংঘই "আকসাকাল"। যদিও আরো নামে পরিচিত।
আমরা চিনবো সাদা-দাড়িওয়ালা নামে।
যারা বহন করেছিলো, প্রোফেসি (সুসংবাদ)।
হে আগন্তুক (মুসাফির) এই তোমার লক্ষ্য কি?
"কিজিল এলমা" (বিশ্ব/লাল আপেল)
হে আগন্তুক এই পথ কোথায় যায়?
'কিজিল এলমা' (পশ্চিমে)
হে আগন্তুক তোমার ছাদ কি?
আকাশ (সুর্য/পুরোজগত)
হে আগন্তুক তোমার বিছানা কি?
জমিন (পুরো পৃথিবী)
এরকম বিভিন্ন ডায়ালগ আছে যা, এই সংঘের কোড ওয়ার্ড। তাদের লক্ষ্য, দর্শন, কর্মপন্থা নির্দেশ করে।অঘুজ ২৪ গোত্র ছাড়াও অন্যন্য তুর্কিদের ভিতর তাদের কার্যক্রম ছিলো, প্রায় সব গোত্রপ্রধানরা নামে-বেনামে এই সংঘের আয়ত্তে ছিলো। তারা সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলো। তাই 'তাদেরকে ডাকা হতো পবিত্র/মহান সংগঠক"। আর্তোগুল, তার বাবা সুলেমান শাহ, ছেলে উসমান সবাই "আকসাকাল" সদস্য।
"সাদা-দাড়িওয়ালা"রা জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সংস্কৃতি চর্চা করতো, সুফিদের আশ্রয়দিতো,
গুপ্তচর তৈরি করতো, স্পাই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলো, ইন্টেলিজেন্সি সরবরাহ করতো।
নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে, তারা রাজ্যের ভিতর ছায়া রাজ্য বানিয়েছিলো। অন্য রাজ্য তারা ইচ্ছা অনুযায়ী গোপনে পরিচালনা করতে পারতো। বরং সুলতানরা তাদের ইন্টেলিজেন্সির মুখাপেক্ষী থাকতো। নিখুঁত বুদ্ধিমত্তা, চৌকশ গুপ্তচর, চুলচেরা হিসাব দিয়ে তারা যেকোন পরিস্থিতি কন্ট্রোলে নিয়ে আসতো, যুদ্ধের মোড় ঘুড়িয়ে দিতো। তাই বলা যায় স্বেচ্ছাসেবি
"সাদা-দাড়িওয়ালারা" প্রথম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো।
তারা তাদের চিহ্ন "তিনটি নতুন চাঁদ" ছাড়া কিছুই প্রকাশ করতো না। তাদের সংঘে কয়েকটি স্তর ছিলো। একটি দেলুলার:এরা সাহসি বীর যোদ্ধা।
নির্দিষ্ট কাজে এসাসিনের ভুমিকাও পালন করতো, যুদ্ধে তারা ২য়/৩য় ধাপে অংশ নিতো।
একটি গুপ্তচর: এদের ছোট থেকেই আলাদাভাবে গড়ে তোলা হতো। বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও বুদ্ধিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হতো। তারপর বিভিন্ন রাষ্ট্রে পাঠানো হতো, প্রাসাদে, গীর্জায়, সেনাবাহিনিতে মিশে জেতো। অন্য গুপ্তচরদের চেক দিতো।যুদ্ধের সময় এরা ৩য়/৪র্থ ধাপে থাকতো।
তাদের ভিতর সুফিদের একটি গ্রুপ ছিলো, তারা মানুষকে নীতি-নৈতিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, উন্নত চরিত্র গঠন,সৎসাহস ও অন্যায়ের প্রতিবাদ আইনুল ইয়াকিন ও আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা দিতো, সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিকতা বজায় রাখতো।
শায়েখ আহমেদ ঈসাভি, শায়েখ জালালুদ্দিন রুমি, শায়েখ সদরুদ্দিন কুনেভি, শায়েখ আহি এভরান, শায়েখ এদেব আলী প্রমুখ।
একদল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো।
তুর্কিদের অদম্যতা, যুদ্ধ জয়, রাজ্যজয়, শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে ইসলামি সম্রাজ্য রক্ষা, নাইট ও মঙ্গোলদের আগ্রাসন থেকে প্রতিরোধ, পুনরায় রাজ্য সংগঠিত করা এই "সাদা-দাড়িওয়ালাদের" অবদান।তাদের প্রতিষ্ঠাতা "দেদে-কুরকুত" রাঃ।
ঐতিহাসিক রশিদুদ্দিন হামদানির (১৩১৮) ভাষ্যমতে "দেদে-কুরকুত" একজন সাহাবি তাই সম্মান দিয়ে রাদ্বিয়াল্লাহুতায়ালা আনহু বলা শ্রেয়।
২য়পর্বের জন্য আপেক্ষা করুন:
চলবে•• •• •
লেখাটি সংরক্ষিত।
০৯-০৫-২০
নুর হাসনাত শুভ্র