বিংশ শতাব্দীর এক কিংবদন্তি ইমাম ইউসূফ বিন ঈসমাঈল নাবহানী (রহঃ)'র ওফাত দিবস
৯ রমজান। ১৩৫০ হিজরী (১৯৩২খৃঃ) সনে বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত সুফি ও সুন্নি স্কলার ইমামুল হাদীস, বিখ্যাত ফকীহ, স্বভাব কবি ইমাম কাযী শায়খ ইউসুফ নাবহানী (রহঃ) লেবাননের বৈরুতে ইন্তিকাল করেন।
১২৬৫ হিজরি মোতাবেক ১৮৪৯ খৃঃ উত্তর ফিলিস্তিন এর হাইফাতে বাঈদার ইজজিম গ্রামে আরবীয় বনী নাবহান গোত্রে জন্ম নেন শায়খ ইউসুফ নাবহানী (রহঃ)। পিতা বিশ্বখ্যাত সুফি ও ইমাম হযরত শায়খ ইসমাঈল নাবহানী শৈশবে নিজ দায়িত্বে পাঠদান করে ১৮৬৬ সালের ১৬ মে তাঁর প্রিয় পুত্রকে ১৭ বছর বয়সে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। জগৎ বিখ্যাত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে জ্ঞানার্জন শেষে ১৮৭২ খৃঃ সনে ২৩ বছরে বয়সে শায়খ ইউসুফ নাবহানী গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
১২৮৩ হিজরি থেকে ১২৮৯ হিজরি সন পর্যন্ত বিশ্বসেরা ইসলামিক জ্ঞানের পাদপীঠ জামে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর জেরুজালেমের ফৌজদারি আদালতের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন। পরবর্তীতে তিনি বৈরুত এর Presidency of the Court of Law তে নিযুক্ত হন। কর্মস্থল থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি কিছুদিন মদীনাতুল মুনাওয়ারা কাটান এবং ১৯৩২ সালে ইন্তিকালের পূর্বে ফিরে আসেন।
শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী বিশিষ্ট এই ফকীহ একাধারে কাদেরীয়া, নকশেবন্দী, ইদরিসী, শাযলী, রিফায়ী তরীকায় বায়আত গ্রহণ করে আধ্যাত্মিকতার অমীয় সুধা পান করেন। আধ্যাত্মিকতা তাঁর মাঝে এতো প্রবল হয়েছিলো যে প্রখ্যাত লেখক ও বিচারপতি হয়েও নিজেকে জনসমক্ষে "ফক্বীর" উপাধিতে পরিচয় দিতেন। তাঁর উচ্চমার্গীয় সুফিজমের পরিচয় মেলে তাঁর বিভিন্ন কবিতায়। নিম্নে তাঁর এক বিখ্যাত কবিতা উৎকীর্ণ হলো, যা তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে আওড়াতেন__
" নবীকুল বাদশাহর আমি এক অনুগত গোলাম,
তাঁর আনুগত্যে শুরু থেকে চলি অবিরাম।
শোনো, আমি তাঁর গোলামদেরও গোলাম,
নয় নয়, বরং তাঁদের গোলামেরও গোলাম।"
ইমাম কাযী ইউসুফ নাবহানী (রহঃ) ছিলেন একজন ন্যায়বান আদর্শ বিচারপতি। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে "মুনতাখাব আল সহীহাইন" নামের সহীহ হাদীস এর সংকলন যাতে ৩০১০ টি হাদীস লিপিবদ্ধ করে হাদীস শাস্ত্রের জগতে প্রভূত ভূমিকা পালন করেন। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি রহঃ এঁর সংকলিত জামে আস সাগীর এর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম দিয়েছেন "আল ফাতহুল কাবীর ফি দাম্ম আল জিয়াদাহ ইলা জামে আল সাগীর"। উল্লেখ্য এতে ১৪৪৫০ টি হাদীস সংকলিত।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-
১. সা'দাতুদ দারাইন ফীস সালাতি আলা সায়্যিদিল কাউনাইন
২.হাদিয়ুল মুরীদ ইলা ত্বরীকিল আসানীদ
৩.আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া
৪.জামে কারামাতুল আউলিয়া
৫.খুলাসাতুল কালাম ফী তারজীহি দীনিল ইসলাম
৬.হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন ফী মু'জিযাতি সায়্যিদিল মুরসালীন
৭.ওয়াসায়িলুল উসূল ফী শ্যামায়িলুর রাসূল
৮.রিয়াদ্বুল জান্নাহ ফী আযকারিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ
৯.ফাযায়িলুল মুহাম্মদীয়া
১০.আফযালুস সালাত আলা সায়্যিদিস সাদাত
১১.আন নাজমুল বদী ফী মওলিদিশ শফী'
১২.আল হামাযাত আল আলফিয়্যাহ ফী মাদহি সৈয়্যদিল আম্বিয়া
১৩.জামিউস সানা আলাল্লাহ
১৪.মুফাররিহাল কুরুব ওয়া মুফাররিহাল কুলুব
১৫.দলীলুত তুজ্জার ইলা আখলাকিল আখয়ার
১৬.গাজাওয়াতুর রাসূল
১৭.খুলাসাতুল বয়ান
১৮.আসসালাওয়াতুল আরবা'ঈন লি আউলিয়ায়িল আরবা'ঈন
১৯.খুলাসাতুল ওয়াফিয়া ফী রিজালিল মানযুমাতিন নাবুবিয়্যাহ
২০.আল ক্বসিদাতুর রিওয়ায়াতুল কুবরা ইত্যাদি।
ঊনিশ ও বিশ শতাব্দীর নব্য ফিতনা ওয়াহাবি মতবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম করেন। পাশাপাশি তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ওসমানী খিলাফতের সপক্ষে দৃঢ় অবস্থান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব সুসংহত রাখতে প্রাতঃস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। আমরা মহান এই ইমামকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ইলমি ফুয়ূজাত নসীব করুন।
__________________________