🖋মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ
মদীনায় হিজরতের পর ঘটনাবহুল ছয়টি বৎসর অতিবাহিত হলো। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাবাদর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। ঘোষণা দিলেন, যারা ওমরায় যেতে চাও, তারা প্রস্তুত হও। সাজ সাজ রব পড়ে গেলো চারিদিকে। ওমরায় যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলেন প্রায় পনেরো শত সাহাবী।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে নিয়ে ষষ্ঠ হিজরীর জিলকদ মাসে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেন। ইহরাম বেঁধে নিলেন জুল হোলায়ফায়। ‘লাবায়েক লাব্বায়েক’ ধ্বনিতে মুখরিত হলো মরুভূমির মুক্ত আকাশ। কাফেলা এগিয়ে চললো। মক্কা থেকে প্রায় নয় মাইল দূরে হুদায়বিয়ায় যখন কাফেলা পৌঁছলো, তখন সংবাদ পাওয়া গেলো, কাফের কুরায়েশরা ওমরাযাত্রীদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না। কিন্তু যুদ্ধ করার ইচ্ছাও তাদের নেই। তারা সন্ধি করতে চায়। বিভিন্ন শর্ত আরোপ করলো তারা। প্রথম শর্তটি ছিলো, এবার ওমরা করা যাবে না। আগামী বছর আসতে হবে। সন্ধিচুক্তির অন্যান্য শর্তগুলোও ছিলো মুসলমানদের জন্য অপমান জনক। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তবুও সেগুলো মেনে নিলেন কেবল একটি শর্তের দিকে লক্ষ্য রেখে—যুদ্ধ স্থগিত থাকবে দশ বৎসর। চুক্তিবদ্ধ হলে মানুষের রক্তপাত বন্ধ হবে, এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ধর্মপ্রচারের জন্য এরকম শান্তিময় পরিবেশকেই তো স্বাগত জানাতে হয়।
এবার ওমরা করতে পারবেন না বলে সাহাবীগণ দুঃখ পেলেন খুব। কিন্তু আল্লাহপাক এমতো ব্যবস্থাকে বললেন বিজয়— ‘নিশ্চয় তোমাকে আমি প্রকাশ্য বিজয় দান করলাম’। তাই হলো। ইসলামের প্রকৃত বিজয় শুরু হলো হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর থেকে।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় ফিরে এলেন। পরের বৎসর ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে গেলেন। চুক্তি ছিলো মুসলমানদেরকে ওমরা সম্পাদনের জন্য মক্কায় অবস্থান করতে দেওয়া হবে মাত্র তিন দিন। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাই মেনে নিলেন। তখন ইহরাম অবস্থায় তিনি বিবাহ করলেন হজরত মায়মুনাকে। ওমরা সম্পাদন শেষে যখন ইহরাম খুলে ফেললেন, তখন মনস্থ করলেন কমপক্ষে আরো একটি রাত মক্কায় অবস্থান করবেন। বিবাহের ওলীমা করবেন। মক্কাবাসীদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। নতুন স্ত্রীর সঙ্গে বাসর যাপন করবেন। কিন্তু হুয়াইতিব ইবনে আবদুল উয্যা আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিলো, হুদায়বিয়া চুক্তি অনুযায়ী আপনার অবস্থানের মেয়াদ আজই শেষ। সুতরাং আপনি মক্কা ছেড়ে চলে যান। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাকে আর একটু সময় কি দেওয়া যায় না? আমি বিবাহের ওলীমা করতাম। সবাইকে দাওয়াত দিতাম। তারা বললো, দাওয়াতের দরকার নেই। আপনি মক্কা ছাড়ুন। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর দেরী করলেন না। সাহাবীগণকে নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদীনার পথ ধরলেন। প্রায় দশ বারো মাইল দূরে সরফ নামক স্থানে গিয়ে থামলেন। সেখানেই বাসর যাপন করলেন তাঁর নববধূর সঙ্গে।
হজরত মায়মুনার স্বামী আবু রুহস ওই বৎসরই মারা গিয়েছিলেন। সে তাঁকে বিয়ে করেছিলো তাঁর প্রথম স্বামী মাসউদ ইবন আমরের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর।
বৈধব্যপ্রাপ্তির পর হজরত মায়মুনা তাঁর নিকটজনদের কাছে থেকে পুনঃবিবাহের তাগিদ পেতে থাকেন। তিনি তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার দেন তাঁর বড় বোন উম্মে ফজলকে। আর উম্মে ফজল দায়িত্ব ন্যস্ত করেন তাঁর স্বামী হজরত আব্বাসের উপর। তিনি ছিলেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চাচা। তাঁরই প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও অভিভাবকত্বে সম্পন্ন হয় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এই সর্বশেষ বিবাহ। মোহরানা নির্ধারণ করা হয় চারশত অথবা পাঁচশত দিরহাম। আর তাঁর কাছে বিবাহের পয়গাম নিয়ে গিয়েছিলেন হজরত জাফর ইবনে আবু তালেব। হজরত মায়মুনা তখন ছিলেন উটের পিঠে। শুভ পয়গাম পেয়ে তিনি বলে উঠেছিলেন, উট এবং উটের উপরে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহও তাঁর রসুলের। বলা হয়ে থাকে, তাঁর এমতো মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় এই আয়াতখানি— ‘এবং কোনো মুমিন নারী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সে-ও বৈধ।’ এভাবে আত্মনিবেদিতা কোনো নারীকে মোহরানা ব্যতিরেকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে কেবল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর। তাই এই আয়াতের শেষে একথাটিও বলে দেওয়া হয়েছে যে— ‘এটা বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনের জন্য নয়।’ (সুরা আহযাব, আয়াত-৫০)। কিন্তু দেখা যায়, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আত্মনিবেদনের ঘোষণা দানকারিণী হজরত মায়মুনাকে মোহরানা নির্ধারণ করেই বিবাহ করেছিলেন ।
জননী হজরত মায়মুনা ছিলেন কুরায়েশ বংশের মেয়ে। আরবের অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সঙ্গে ছিলো তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক। তাঁর বৈমাত্রেয় চার বোনের বিবাহ হয় চার বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে। যেমন— বড় বোন ছিলেন হজরত আব্বাসের স্ত্রী, যাঁর ছয় পুত্রও ছিলেন সুবিখ্যাত— ফজল, আবদুল্লাহ, উবায়দুল্লাহ, মা’বাদ, কুসাম ও আবদুর রহমান। তাঁর দ্বিতীয় বোন লুবাবা সোগরা ছিলেন হজরত খালেদ ইবনে ওলীদের মা। তৃতীয় বোন বারযাহ ছিলেন ইয়াজিদ ইবনে আসামের মা। চতুর্থ বোনের নাম হুজালা। তাঁকে ডাকা হতো উম্মে হাফিদ বলে।
তার বৈপিত্রেয় বোনেরাও বিবাহবদ্ধ হয়েছিলেন স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে। যেমন আসমা বিনতে উমাইস ছিলেন হজরত জাফর ইবনে আবু তালেবের পত্নী। মুতার যুদ্ধে তিনি শহীদ হলে তাঁকে বিবাহ করেন হজরত আবু বকর সিদ্দীক। তাঁর পরলোকগমনের পরে তিনি পরিণয়াবদ্ধ হন হজরত আলী (রাঃ) এর সঙ্গে। হজরত মায়মুনার আর এক বোন ছিলেন শহীদশ্রেষ্ঠ হজরত হামযা (রাঃ) এর সহধর্মিণী।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে তিনি যে কতো গভীরভাবে ভালোবাসতেন, তাঁর আত্মনিবেদনের স্বতঃস্ফূর্ত এই ঘোষণাটি থেকেই বোঝা যায়— উট এবং উটের উপরে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের। তীব্র নবীপ্রেমের নিদর্শন হিসেবে রয়েছে আর একটি ঘটনা— মদীনার এক মহিলা অসুস্থ অবস্থায় এই মর্মে মানত করলেন যে, সুস্থ হলে তিনি বায়তুল মাকদিস মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। বায়তুল মাকদিসে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে এলেন। জননী মায়মুনা তাঁকে বিভিন্নভাবে বোঝালেন, মসজিদে নববীতে নামাজ যদি পড়ো, তাহলেও তোমার মান্নত আদায় হয়ে যাবে। কারণ এ মসজিদ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুলের।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ও তাঁকে অত্যধিক ভালোবাসতেন নিশ্চয়। কারণ তিনি ছিলেন রূপবতী, দয়াবতী এবং ধর্মনিষ্ঠাবতী। তাঁর ঋতুগ্রস্ত অবস্থাতেও মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতেন। ঋতুবতীদ স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামী কীরূপ আচরণ করবে, সে সম্পর্কে শরীয়তের বিধান আমরা তাঁর কাছ থেকেই জানতে পেরেছি। যেমন— ১. হজরত ইবনে আব্বাস ছিলেন তাঁর বড় বোনের ছেলে। একবার তাকে চুল দাড়ি অবিন্যস্ত অবস্থায় দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার এরকম অবস্থা কেনো বাবা? হজরত ইবনে আব্বাস জবাব দিলেন, আপনার বউমা-ই তো আমাকে পরিপাটি করে রাখে। কিন্তু এখন চলছে তার মাসিক। তিনি বললেন, এ কেমনতরো কথা। রসুলুল্লাহ তো এরকম অবস্থাতেও আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকেন। কোরআন তেলওয়াত করেন। আবার আমরা মাদুর উঠিয়ে মসজিদে রেখে আসি। হাতে কি কিছু লেগে থাকে বাবা?
আর একটি ঘটনা— একবার তাঁর এক দাসী হজরত ইবনে আব্বাসের ঘরে গিয়ে দেখলেন, স্বামী স্ত্রীর বিছানা আলাদা করে পাতানো। দাসী মনে করলেন, দু’জনের মধ্যে বনাবনি হচ্ছে না মনে হয়। জিজ্ঞেস করে জানলেন, তা নয়। বরং ঘটনাটা এরকম— স্ত্রী ঋতুবতী হলে স্বামী পৃথক শয্যায় শয়ন করেন। দাসী ফিরে এসে উম্মুল মুমিনীন হজরত মায়মুনাকে কথাটা জানালেন। তিনি বললেন, যাও, তাদেরকে বলে এসো, রসুলুল্লাহর রীতিপদ্ধতির প্রতি অনীহা প্রদর্শন করছো কেনো? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো সব সময় আমাদের শয্যায় শয়ন করেন।
শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করতেন বিশুদ্ধচিত্ততা ও বলিষ্ঠতার সঙ্গে। এমতোক্ষেত্রে কারো শৈথিল্য প্রদর্শনকে তিনি সহ্যই করতেন না। একবার তাঁর এক নিকটাত্মীয় তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে এলো। তার মুখ থেকে শরাবের গন্ধ বের হচ্ছিলো। তিনি তাকে শক্ত ধমক লাগালেন। বলে দিলেন, আর যেনো সে কখনো তাঁর সামনে না আসে।
দাসমুক্ত করতে ভালোবাসতেন। একবার এক দাসী মুক্ত করে দিলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি অনেক সওয়াব অর্জন করলে। স্বভাবতই ছিলেন দানশীলা। এজন্য ধারকর্জও করতেন। একবার বেশী পরিমাণে ঋণ করে ফেললেন। এক ব্যক্তি বললো, এতো বেশী ঋণ করলেন যে, শোধ দিবেন কীভাবে? তিনি বললেন, রসুলুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তরে ঋণ পরিশোধের বিশুদ্ধ ইচ্ছা পোষণ করে, আল্লাহই তাকে ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য দান করেন।
জননী আয়েশা সিদ্দীকা বলেছেন, হজরত মায়মুনাই সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সর্বাধিক সুসম্পর্ক রক্ষাকারিণী।
মাতা মহোদয়া হজরত মায়মুনা অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। সর্বমোট ৪৬টি, অথবা ৭৬টি। তাঁর কোনো কোনো বর্ণনার মাধ্যমে ঐ বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে যে, তিনি ছিলেন শরীয়তের অনেক গূঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত। তাঁর কাছ থেকে যাঁরা হাদিস শুনেছেন ও বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হজরত ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ, ইয়াজিদ ইবনে আসাম (এঁরা সবাই তাঁর বোনের ছেলে), উবায়দুল্লাহ আল খাওলানী, সুলায়মান ইবনে ইয়াসার, আতা ইবনে ইয়াসার, নাদবা, কুরাইব, উবায়দা ইবনে সিবাক, উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা, আলীয়া বিনতে সুবায় প্রমুখ।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন হজরত মায়মুনাকে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করেন, হজরত খালেদ ইবনে ওলীদ তখনও অমুসলিম। বলা হয়ে থাকে, এই বিবাহ তাঁর উপরে প্রভাব বিস্তার করে এবং তাঁর ইসলাম গ্রহণের পথ সুগম করে দেয়। এই বিবাহের ফলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হন তিনি। আর নিকটাত্মীয়তার প্রশান্তিময় প্রভাবে তাঁর হৃদয় থেকে অতি দ্রুত নিভে যেতে থাকে শশ্রুতার আগুন। এরকম আরো কিছু সংখ্যক কারণে একথা সকলকে স্বীকার করে নিতে হয় যে, মহাসম্মানিতা ও মহাপুণ্যবতী মাতা হজরত মায়মুনার বিবাহ ছিলো অত্যন্তখায়ের ও বরকতে ভরা।
একবার মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজরত মায়মুনার গৃহে গিয়ে দেখলেন, সেখানে বসে আছেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং হজরত খালেদ ইবনে ওলীদ। তাঁদের সামনে আনা হলো গুঁই সাপের গোশত। হজরত মায়মুনা বললেন, এগুলো পাঠিয়েছে আমার বোন হুযায়লা বিনতে হারেছ। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গুঁই সাপের গোশত খাবেন না জানালেন। কিন্তু বললেন, তোমরা খেতে পারো। অন্যরা খেলেন। কিন্তু হজরত মায়মুনা অনুকরণ করলেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর। তিনিও খেলেন না। এ ঘটনাটিও একথা প্রমাণ করে যে, তিনি ছিলেন সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একনিষ্ঠ অনুসরণকারিণী।
মাত্র তিন বৎসর চার মাস তিনি মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পবিত্র রূপ-রস-গন্ধে ভরা প্রকাশ্য ও গোপন সন্নিধানে ছিলেন। হয়েছিলেন প্রিয়তম জীবনসঙ্গিনী। এই সর্বশেষ নবীপ্রিয়া যখন নবীগৃহে আসেন, তখন তাঁর বয়স ছিলো ৩৬ বৎসর। আর পৃথিবী পরিত্যাগ করে তিনি চলে যান ৫১ হিজরী সনে ৮০ বৎসর বয়সে।
হজ্বে গিয়েছিলেন। হজ্ব সমাপনের পর সেখানেই ইন্তেকাল করলেন। হজরত ইবনে আব্বাসের নির্দেশে তাঁকে সরফে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাধিস্থ করা হয় ঠিক ওই স্থানটিতে, যেখানে তিনি তাঁর প্রিয়তম স্বামী শেষতম নবীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলেন। বাসর যাপন করেছিলেন। হজরত ইবনে আব্বাস তাঁর জানাযার নামাজ পড়ালেন। খাটিয়া বহনকারীদের উদ্দেশে বললেন, সাবধান! ধীরে ধীরে নিয়ে চলো। মনে রেখো, ইনি ছিলেন নবীপ্রিয়া, তাঁর সহধর্মিণী। খবরদার! ঝাঁকি যেনো না লাগে। আদবের সাথে চলো। মনে রেখো ইনি তোমাদের মা।
তাঁকে কবরে নামালেন হজরত ইবনে আব্বাস, আবদুর রহমান ইবনে খালেদ ইবনে ওলীদ, আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদ, আবদুল্লাহ ইবনে খাওলানী ও ইয়াজিদ ইবনে আসাম্ম।