الله الله الله
মূল
মাহবুবুলওলামা হযরত মাওলানা পীর
জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী
অনুবাদ ও সম্পাদনা
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
বিভিন্ন সমাজে নারীর অবস্থান
হামদ ও সালাতের পর!
দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে ইসলামপূর্ব সমাজ-সভ্যতায় নারীদের অবস্থান কী ছিল; তা জানা থাকতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাস সামনে রাখলে একথা চোখ ধাঁধিয়ে পরিস্কার হয়ে ওঠে যে, ইসলামপূর্ব যুগের নারীরা নিজেদের মৌলিক অধিকারটুকুও পেত না। সবদিক থেকেই তারা ছিল লাঞ্চিত ও বঞ্চিত। ফ্রান্সে তাদেরকে ‘অপূর্নাঙ্গ মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করা হত। বলা হত, এরাই সকল সামাজিক অনাচারের মূল। চীনারা মনে করত, এরা শয়তানের অপবিত্র আত্মা। মানুষকে রকমারি অকল্যাণের পথে এরাই নিয়ে যায়। জাপানিদের ধারণা ছিল, নারীরা সৃষ্টিগতভাবেই অপবিত্র। এজন্য উপাসনাগার থেকে তাদেরকে দূরে রাখা হত। হিন্দুধর্মেও নারীরা স্বামীহারা হলে তাদেরকেও স্বামীর লাশের সাথে জীবন্ত পুড়ে মারার জন্য বাধ্য করা হত। কোনো নারী এই আত্মহুতি না দিলে তাকে সমাজচ্যুত করা হত। খ্রিস্টজগতের বিশ্বাস
ছিল, নারীরা আল্লাহপ্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধক। নারীদেরকে শিক্ষা দেয়া হত, তারা (Nuns) সারজীবন চিরকুমারী থাকবে। পক্ষান্তরে পুরুষরা পাদ্রী হওয়াকে গৌরবময় মনে করত। আরববিশ্বে মেয়েশিশু জন্ম নেয়াটাই ছিল অপরাধ। মা-বাবা নিজ হাতে কন্যাসন্তানকে মাটিতে জীবন্ত কবর দিত। সে সমাজে নারীরা এতটাই লাঞ্চিত ছিল যে, পুরুষ মারা গেলে তার অন্যান্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির মত তার স্ত্রী ও তারই সন্তানদের মাঝে বন্টিত হত। পরিণামে নারী আপন সন্তানের বিবাহধীন স্ত্রীর মত মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হত। স্বামী মারা গেলে ন্ত্রীকে মক্কার বাইরে একটি কালো কুঠুরিতে দু’বছর ফেলে রাখা হত। গা-গোসল করার জন্য পানি এবং জীবন চালানের জন্য অন্য সামগ্রী থেকেও তাকে বঞ্চিত রাখা হত। দু’বছর এহেন অমানবিক কষ্ট দেওয়ার পর যদি সে জীবিত থাকত তাহলে তার মুখে চুন-কালি দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া হত।
এবার একটু ভাবুন, বেচারা স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর কী দোষ? কিন্তু অসহায় নারীদের কিছু করার ছিল না। নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহসটুকুও ছিলনা। জুলুম ও অত্যাচারে গিজগিজ করে ওঠা সমাজ তাদেরকে এতটাই দূর্বল করে রেখেছিল। এমনই এক লৌমহর্ষক পরিবেশে মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ-কে পাঠালেন ইসলাম নামক নেয়ামত দিয়ে। নবীজী আসলেন। নারীজাতির মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করলেন। ঘোষণা দিলেন, হে মানব সকল! ‘নারী’ কন্যা হলে তোমার গর্ব, বোন হলে তোমার সম্মান, স্ত্রী হলে তোমার জীবনসাথী। আর মা হলে তার পদতলে তোমার জান্নাত।
ইলামে নারীর মর্যাদা
সুপ্রিয় শ্রোতা!
একটু ভাবুন তো কতটা পাষন্ড হলে নিজের কন্যা সন্তানকে জীবন্ত মাটি চাপা দেওয়া যায়। নিস্পাপ শিশুটি ফুলের মত মেয়েটি নিশ্চয় ওই করুণ সময়ে বাবা-মাকে চিৎকার করে ডাকত। তার কান্নাকাটি ও আহাজারিতে পৃথিবী হয়ত কেঁপে ওঠত, কিন্তু পাষন্ড বাবার হৃদয় একটুও কম্পিত হত না। এমনই এক পরিবেশে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের দুই আঙ্গুল উঠালেন এবং একসাথ করে বললেন, যে মানুষটির ঘরে দুটি মেয়েসন্তান থাকবে, তাদেরকে সে উত্তম লালন-পালন করে বিয়ে শাদি দিবে তাহলে সে লোকটি আমার পাশে জান্নাতে থাকবে, পাশাপাশি এই আঙ্গুল দু’টির মত।
বৈবাহিক জীবনের গুরুত্ব
হযরত রাসূলুল্লাহ ﷺ নারীর মর্যাদা ফিরিয়ে দিলেন। বলে দিলেন لارهبانية فى الإسلام ‘ইসালামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই’। এখানে শব্দশরীরে সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত তাৎপর্যময় এই শব্দমালা দ্বারা তিনি স্পষ্ট করে দিলেন যে, যদি তোমরা নারীদের সাথে দাম্পত্য জীবন-যাপন কর তাহলে আল্লাহকে পাওয়ার পথে এটা প্রতিবন্ধক হবে না; বরং উত্তম সহযোগী হবে। ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে, পাদ্রী সেজে গুহা-জঙ্গঁলে নির্বাসিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আল্লাহর দিকে ধাবমান পথ গুহা-জঙ্গঁলের মধ্য দিয়ে যায় নি; এ পথ গিয়েছে হাটবাজার হয়ে, জনবসতির মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ আল্লাহকে যদি পেতে চাও তাহলে এই মানবসমাজেই বসবাস কর। তারপর নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলোর প্রতি যত্নবান হও। এভাবেই আল্লাহকে পাবে। ইসলাম বৈরাগ্যবাদেন শিক্ষা দেয় না; ইসলাম শিক্ষা দেয় সমাজবদ্ধ জীবন যাপনের। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-النِّكَاحُ من سُنَّتِي ‘বিয়ে-শাদি করা আমার সুন্নাহ বা আদর্শ’। অতপর তিনি বলেন- فمنْ رغِب عَنْ سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى ‘যে লোকটি আমার সুন্নাহ উপেক্ষা করবে, সে আমার উম্মত ভুক্ত নয়’।
বলুন, বিয়ে-শাদির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য এর চাইতে শক্তিশালী কথা আর হতে পারে!
নবীদের সুন্নাত
তিরমীযী শরীফে রয়েছে, চারটি জিনিস সকল নবী-রাসূলের সুন্নাত।
১.الحيا লজ্জাশীলতা। অর্থাৎ সকল নবী লজ্জাশীল ছিলেন।
২.والتعطر সুগন্ধি ব্যবহার। অর্থাৎ সকল নবী সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
৩.والسواك মিসওয়াক করা। অর্থাৎ সকল নবী মিসওয়াক করতেন।
৪.والنكاح বিয়ে-শাদি করা। অর্থাৎ সকল নবী ঘর-সংসার করতেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً
‘হে আমার মাহবুব! আমি আপনা পূর্বে অনেক নবী-রসূল পাঠিয়েছি। তাদেরকে দান করেছি স্ত্রী-সন্তান।’ (সূরা রা’দ ৩৮)
আমরা সকলেই জানি, সকল নবী-রসূল প্রেরিত হয়েছেন দীনের সুমহান দায়িত্ব পালন করার জন্য। তাঁরা স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সর্ম্পক জুড়ে দিতেন। স্ত্রী-সন্তান এক্ষেত্রে কোনো বাধা হত না। সুতরাং নবীদের কর্মপদ্ধতি একথাকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে, ঘর-সংসার ছেড়ে দিয়ে পালানোর কোনো অবকাশ নেই। এমনটি কেউ করলে মূলত এটা হবে সামাজিক দায়দায়িত্ব থেকে পলায়ন করা।
বিয়ে অর্ধেক ঈমান
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- الإيمان النِّكَاحُ نصفُ ‘বিয়ে অর্ধেক ঈমান।’ অবিবাহিত ব্যক্তি নেক কাজের স্তুপ বানালেও ঈমান পরিপূর্ণ করার মর্যাদা লাভ করতে পারে না। বিয়ে-শাদি করে ঘর- সংসার করার দায়-দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত তার ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। এজন্যই হাদীস শরীফে অবিবাহিত যুবককে ‘মিসকিন’ এবং অবিবাহিত মেয়েকে ‘মিসকিনা’ বলা হয়েছে। প্রকারন্তরে এরা দয়ার পাত্র। বেচারা! বিয়ের বয়স হয়েছে তবুও বিয়ে করতে পারে না!
পাঁচটি অসিয়ত
আলী রাযি. বলতেন, আমাকে আমার প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ ﷺ পাঁচটি ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর স্বভাব অবলম্বন করার অসিয়ত করেছেন।
عَجِّلُوا بِالصَّلاةِ قَبْلَ الْفَوْتِ
এক. নামায ছুটে যাওয়ার পূর্বে আদায় করে নাও।
وَعَجِّلُوا بِالتَّوْبَةِ قَبْلَ الْمَوْتِ
দুই. মরনের আগেই তাওবা কর।
তিন. মৃতব্যক্তির কাফন-দাফনের ব্যবস্থা দ্রæত করবে।
চার. ঋণ থাকলে তাড়াতাড়ি পরিশোধ করে দাও।
পাঁচ. বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়ের জন্য উপযুক্ত সম্বন্ধ পেয়ে গেলে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দাও।
খোশনসিব মানুষ
ভালো জীবনসাথী যিনি পেয়েছেন, তিনি আসলেই ভাগ্যবান। এই সত্য কেউই অস্বীকার করে না। এজন্যই আলী (রাযি.) বলতেন, পাঁচটি জিনিস যদি পেয়ে যাও তাহলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে কর।
এক. শোকরগুযার যবান।
এটি মুসহান আল্লাহর মহান নেয়ামত। অথচ বত্যমানের অধিকাংশ মানুষের অবস্থা হল, আল্লাহর নেয়ামতরাজি খেতে-খেতে দাঁত পড়ে যায়। কিন্তু শোকর আদায়ের জন্য যবানও নড়ে না। প্রবাদ আছে, ‘নুন খাও যার, গুণ গাও তার।’ আমাদেরও উচিত আল্লাহর শোকর আদায় করা।
দুই. যিকিরকারী অন্তর। অর্থাৎ যে অন্তরে মহান আল্লাহর যিকির আছে, সে সৌভাগ্যবান। এটা অতুলনীয় নেয়ামত।
তিন. পরিশ্রমকারী শরীর।
প্রবাদ আছে, ‘সুস্থ শরীওে সুস্থ বৃদ্ধি বাস করে।’
চার. দেশের জীবিকা।
এটাও বিশাল নেয়ামত। প্রবাদ আছে, দেশের মাটিতে আধা, বিদেশের মাটিতে পুরা। তবুও সমান হয় না।’
পাঁচ. পূ্ণ্যবতী স্ত্রী। অর্থাৎ যে লোকটি সতী- সাধবী- বুদ্ধিমতী স্ত্রী পেল, সে জীবনের অফুরন্ত সুখ ও অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সক্ষম হল। এটি মহান আল্লাহর দানকৃত একটি সুবিশাল নেয়ামত।
বিয়ের গুরুত্ব
শতভাগ তিক্ত সত্য কথা হল, বিয়েহীন সমাজ মানে ব্যভিচারপূর্ণ সমাজ। এজন্যই ইসলামী শরীয়ত পরিষ্কার ভাষায় বিয়ে- শাদির প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অধুনা যেসব সমাজ বিয়ে-শাদি থেকে পলায়নের পথ বেছে নিয়েছে, বিয়ে যেখানে উপেক্ষা করা হয়; দেখবেন, সেসব সমােজে যৌনতা থৈ থৈ করে। পাপাচারে ডুবে যাওয়া জীবন পবিত্র শরীয়তে কাম্য নয়। এজন্য ইসলামী শরীয়াহ স্পষ্টভাবে বলে, তুমি বিয়ে-শাদি কর। এতে তোমার জীবন পবিত্র রাখতে পারবে। বিয়ের বিধান না থাকলে পুরুষরা নারীদেরকে খেলনাসামগ্রী মনে করত। সমাজে নারীর কোনো মর্যাদা থাকতো না। নারীর দায়িত্বভার কেউ নিত না। ইসলামী শরীয়াহ এজন্যই পুরুষদেরকে বলে, যদি তুমি নারীসঙ্গ পেতে চাও তাহলে তার দায়িত্বভার পরিপূর্ণভাবে তোমাকেই নিতে হবে্ল
দেনমহরের গুরুত্ব
বিয়ে মানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এই চুক্তিতে স্ত্রী চাইলে নিজের পক্ষ থেকে শর্ত জুড়ে দিতে পারে। পবিত্র শরীয়তে নারীকে এই সুযোগ দান করা হয়েছে। যেমন সে বলতে পারবে যে, আমার বসবাসের জন্য উন্নত ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতি মাসে আমাকে এত টাকা হাত-খরচ হিসাবে দিতে হবে। এমনকি সে ইচ্ছা করলে এই শর্তও জুড়ে দিতে পারবে যে, আমাকে তালাকের অধিকার দিলে আমি বিয়েতে সম্মত আছি; অন্যথায় নয়। অর্থাৎ বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে স্ত্রী ইচ্ছা করলে যে, কোনো বৈধ শর্ত আরোপের মাধ্যমে তার দাবি আদায় করে দিতে পারে। পবিত্র শরীয়ত তাকে এই সুযোগ দান করেছে। কারণ, শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি চুক্তি। অথচ আফসোস! আমরা এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নই। ফলে সরলতার কারণে অনেক সময় কনেপক্ষ ঠকে যায়। দেনমোহর নির্ধারণ করার সময় ‘বোকা’ সেজে বসে থাকে। মাঝখান থেকে কেউ একজন ‘পাঁচশ’ কিংবা ‘পঞ্চাশ’ জাতীয় কিছু একটা ধার্য্য করে দিলেই তা মেনে নেয়। আল্লাহর বান্দা! এমনটি করবেন না। এটা একটি অবলা মেয়ের অধিকার। এই অধিকার আদায় করে নেয়াটাকে দোষের মনে করবেন না। শরীয়ত তো এই অধিকার আপনার মেয়েকে দিয়েছে। সরলতার আবরণে একটি মেয়ের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কোনো মানে হয় না। সুতরাং বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার আগেই সব বিষয়, বিশেষ কনে দেনমহরের বিষয়টি পাকাপাকি করে ফেলা উচিত। আজকাল তো ছেলেপক্ষ যেন মহর ধার্য্য না করতে পারলেই বেঁচে যায়। এমনটি অনুচিত। এরকম কেন হবে!
তিন ধরণের মহর সুন্নাত
শুনুন, অন্তরের কান দিয়ে শুনুন, তিন ধরণের মহর সুন্নাত। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় কনে যে কোনো একটি সুন্নাত বেছে নিন।
১. মহরে ফাতেমী। অর্থাৎ হযরত ফাতেমা রাযি.-এর জন্য ধার্য্যকৃত দেনমহর। কিংবা রাসূলুল্লাহ ﷺআমাদের আম্মাজান আয়েশার রাযি.-কে যে পরিমাণ মহর দিয়েছিলেন। তা-ও গ্রহণ করা যেতে পারে। এটাও সুন্নাত।
২. মহরে মেসেল। কনের নিকটাত্বীয়দের মাঝে সাধারণত মহরের যে পরিমাণ পূর্ব থেকে চলে আসছে, তাকে ‘মহরে মেসেল’ বলা হয়। এটাও সুন্নাত।
৩. কনের বুদ্ধিমত্তা, ভদ্রতা, সততা ইত্যকার বিষয়কে সামনে রেখে মহর ধার্য্য করা। এটাও সুন্নাত।
শরীয়ত উক্ত তিনটি (Options) অপশন দিয়েছে। এখান থেকে একটি বেছে নিন। সুন্নাতের সাওয়াব পেয়ে যাবেন। মহর ঠিক করার সময় বলা হয়, নগদ মহর (مهر معجل) কিংবা বাকি মহর (مهر مؤجل)। ‘নগদ’ অর্থাৎ যে মহর স্বামী-স্ত্রীর বাসররাত যাপনের পূর্বেই পরিশোধ করে দেয়া হয়। যদি স্বামী ধার্য্যকৃত ‘নগদ-মহর’ (مهر معجل) বাস্তবে নগদ পরিশোধ না করে তাহল সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার হল, ‘বাকি-মহর’ (مهر مؤجل)। অর্থাৎ পরবর্তীতে যখনই এ মহরের দাবি করবে, স্বামী পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। কোনো অবস্থাতেই স্বামী স্ত্রীকে মহর মাফ করে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, স্বামী স্ত্রীকে মহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়ার পর যদি স্ত্রী পুনরায় সে মহরের টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেয় তাহলে স্বামী তা গ্রহণ করতে পারে। পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে এই টাকাগুলো বরকতময়। পবিত্র কুরআনের ভাষায়-
فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا
‘সন্তুষ্টচিত্তে তারা মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা সানন্দে, স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পার।’ (সূরা নিসা ৪)
এজাতীয় টাকা দিয়ে হযরত আলী রাযি. মধু ক্রয় করতেন এবং অসুস্থদেরকে পানির সাথে মিশিয়ে পান করাতেন।
বিয়ের প্রচার
বিয়ের কথা প্রচার করার নির্দেশও শরীয়ত দিয়েছে। بَيْنَكُمْالنِّكَاحَ أفشوا ‘নিজেদের মধ্যে বিয়ের প্রচার কর।’ এজন্য সুন্নাত হল, জুমআর দিন, জুমআর মজলিসে কিংবা যেখানে লোকজনের উপস্থিতি বেশি হয় এমন কোনো মজলিসে বিয়ের কার্যক্রম সম্পাদন করা। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে উপস্থিত থাকার কথা বলবেন। যেন সবাই জানতে পারে যে, অমুক ছেলে এবং অমুক মেয়ে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করার বুনিয়াদ রেখেছে।
বিবাহিতরা ইবাদতে বেশি সাওয়াব পায়
মানুষ যখন বিয়ে করে ফেলে তখন মহান আল্লাহ তার ইবাদতের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! ওলামায়েকেরাম লিখেছেন, বিবাহিত নারী পুরুষ প্রতি নামাযের সাওয়াব একুশগুণ বেশি পায়। প্রশ্ন হল, এমনটি কেন হয়? আসলে এর কারণ হল, লোকটি তো বিয়ের আগ থেকেই আল্লাহর হক আদায় করে আসছিল। বিয়ে করার পর পাশাপাশি বান্দার হকও আদায় করছে। এজন্যও তার ইবাদতের সাওয়াব বা প্রতিদানও বৃদ্ধি করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
বিয়ের আগে ছেলে পক্ষ মেয়ের মাঝে কিছু গুন খোঁজে, অনুরূপভবে মেয়েপক্ষ ছেলের মাঝে কিছু গুণ খোঁজে। এ পর্যায়ে আসুন, এদিকটাও একটু পর্যালোচনা করি।
উত্তম স্ত্রী কে?
এমর্মে ইমাম বোখারী রহ. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺবলেছেন-
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ চারটি বিষয় দেখে মেয়েকে বিয়ে করা হয়।
لِمَالِهَا ، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
১. সম্পদ দেখে বিয়ে করা হয়। অর্থাৎ সাধারণত সম্পদশালী পরিবারের মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। মনে করা হয়, এই ফ্যামিলিতে আত্মীয়তা ঘটাতে পারলে উপহার উপঢৌকন ভালো পাওয়া যাবে। সমাদর ও কদর পাওয়া যাবে। যৌতুক নিয়ে ঘর তোলা যাবে।
২. বংশ দেখে বিয়ে করা হয়। জাত-বংশ ভালো সাধারণত ওই পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়।
৩. রূপ-লাবন্যের কারণে বিয়ে করা হয়।
৪. দীনদারি দেখে বিয়ে করা হয়।
এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা নিজেদের আত্মীয়তার ভিত্তি দীনদারির ওপর রেখো। ধার্মিক আত্মীয় খুঁজে নাও। রূপ-লাবন্য কয়দিনের! যৌবনও সারা জীবন ধরে রাখ যায় না। সুতরাং এসবের ওপর আত্মীয়তার ভিত্তি গড়ে তোলা যায় না।
جو شاخِ نازک پہ آشیانہ بنے گا، ناپائدار ہو گا
‘ভঙ্গুর ঢালের ওপর নির্মিত বাসা দুর্বল হয় বৈকি!’
সততা ও ভদ্রতা এমন জিনিস যা ক্রমাগত বেড়েই চলে। এর ভিত্তিতে নির্মিত ঘর-সংসার অবশ্যই দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এজন্য নেককার ও দীনদার স্ত্রী খোঁজ করুন। রূপবতী স্ত্রীকে দেখলে স্বামীর চোখ খুশিতে হয়ত নেচে ওঠে। পক্ষান্তরে গুনবতী স্ত্রীকে দেখলে স্বামীর অন্তর প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। চোখের আনন্দ আর অন্তরের প্রশান্তি এক নয়। সুতরাং চোখ নয়, বরং অন্তর খুশি করুন। সহীহ মুসলিমের হাদীস, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
‘দুনিয়াটা সুখের উপকরণ। সুখের সবচে’ উত্তম উপকরণ হল নেককার স্ত্রী।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি নেককার স্ত্রী পেয়েছে, সে পৃথিবীর সবচে’ দামি নেয়ামত পেয়েছে।
‘হাদীসে আছে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-إنَّما الأَعمالُ بالنِّيَّات‘নিয়তের ওপর সকল কাজ নির্ভরশীল।’ নিয়তে যদি সম্পদ থাকে তাহলে আপনার সংসার জীবনে নিশ্চিত ঝগড়া হবে। যদি কেবল রূপ-সৌন্দর্য থাকে তাহলেও বিবাদ নিশ্চিত। জাত-বংশ থাকলে তখনও ঝগড়া-বিবাদ এড়াতে পারবেন না। এজন্যই শরীয়ত শিক্ষা দিয়েছে, বিয়ে শাদিতে এসব যেন নিয়তে না থাকে, বরং নিয়তে থাকবে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করা। এভাবে নিয়ত সাফ থাকলে ‘ইনশা আল্লাহ’ ঘর-সংসার অর্থবহ হবে। সুনানে ইবনু মাজাহর হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
مَا اسْتَفَادَ الْمُؤْمِنُ بَعْدَ تَقْوَى اللَّهِ خَيْرًا لَهُ مِنْ زَوْجَةٍ صَالِحَةٍ إِنْ أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَإِنْ أَقْسَمَ عَلَيْهَا أَبَرَّتْهُ وَإِنْ غَابَ عَنْهَا نَصَحَتْهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهِ
‘একজন মুমিন তাকওয়া অর্জনের পর সবচে’ বেশি উপকৃত হয় সতীসাধবী স্ত্রী দ্বারা। যদি স্বামী তাকে আদেশ করে, তবে সে মেনে নেয়। যদি সে তার জন্য শপথ করে, তবে তা পূর্ণ করে এবং স্বামী যদি তার কাছে থেকে অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে তার নিজের ও স্বামীর সম্পদের হেফাজত করে।’
হাদীসে বর্ণিত গুণগুলো একজন সতীসাধবী নেককার স্ত্রীর গুণ।
দুনিয়ার সবচে’ উত্তম স্ত্রী
একবারের ঘটনা। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর একটি মাহফিলে আলোচন চলছিল যে, দুনিয়ার নারীদের মধ্যে সর্বোত্তম নারী কে? একেকজন একেক গুণ-বৈশিষ্টের কথা বলছিলেন। ইত্যবসরে হযরত আলী রাযি. এক কাজে বাড়ি যান এবং ফাতেমা রাযি.-কে মাহফিলে আলোচনার কথা শোনালেন। এও শোনালেন যে, এ বিষয়ে এখনও কোনো ফয়সালা হয় নি। একথা শোনে ফাতেমা রাযি. বললেন, আমি কী বলব যে, দুনিয়ার মধ্যে সবচে’ উত্তম নারী কে? আলী রাযি. বললেন, বলো। ফাতেমা রাযি. বললেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচে’ উত্তম নারী সেই, যার দিকে কোনো পরপুরুষ তাকায় নি এবং সে নিজেও কোনো পরপুরুষের দিকে তাকায় নি। এরপর আলী রাযি. পুনরায় মাহফিলে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ফাতেমা রাযি. এর উত্তরের কথা শোনালেন। উত্তর শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন-فَاطِمَةُبَضْعَةٌ مِنِّي ‘ফাতেমা তো আমার কলিজার টুকরো।’
উত্তম স্ত্রীর গুণাবলি
আল্লাহওয়ালাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মাঝে চারটি গুন অবশ্যই থাকতে হয়।
প্রথমগুণ : চেহারায় লাজুকতা থাকা। এটা একজন নারীর মৌলিক গুণ। চেহারার লাজুকতা অন্তরের লজ্জাকে অনেকটা নিশ্চিত করে। প্রবাদ আছে, অর্থাৎ Face is the index of minde ‘চেহারা মনের আয়না।’
আবুবকর রাযি. বলতেন, পুরুষদের জন্য লজ্জা উত্তম, যা নারীদের জন্য অতি উত্তম।
দ্বিতীয় গুণ : সুমধুর ভাষা। যার কথা শ্রুতিমধুর হবে। স্বামীকে কটু কথা বলবে না। বাচ্চাদের সাথে ধমকের সুরে বলবে না।
তৃতীয় গুণ : অন্তর সৎ হওয়া।
চতুর্থ গুণ : হাত সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকা।
উক্ত গুণগুলো যে নারীর মাঝে থাকবে, সে অবশ্যই উত্তম স্ত্রী হিসাবে জীবন যাপন করতে পারবে।
উত্তম স্বামীর গুণাবলি
এপর্যায়ে আসুন, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে স্বামীর গুণগুলো সম্পর্কেও জানিয়ে দিচ্ছি- মনে রাখবেন, আপনি যখন আপনার মেয়ের জন্য সুপাত্র খুঁজবেন তখন আপনার জন্য রয়েছে এমন দু’টি পরিপূর্ণ ও সম্পন্ন দৃষ্টান্ত, যেগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র জীবনে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের মেয়ের জন্য যেমন পাত্র বেছে নিয়েছেন, আপনিও আপনার মেয়ের জন্য তেমন পাত্র সন্ধান করুন। তন্মধ্যে একজন হলেন, হযরত আলী রাযি.। তিনি ছেলেন নবীজীর নিকটাত্মীয়। সুপুরুষ ছিলেন। সাহসে ছিলেন অদ্বিতীয়। কর্মঠ ছিলেন। দায়িত্ব-সচেতন ছিলেন। সবচে’ বড় বিষয় হল, আল্লাহ তাঁকে ইলমের সাগর দান করেছিলেন। বোঝা গেল, মেয়ের বর খোঁজার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এরচে’ উত্তম দৃষ্টান্ত দ্বিতীয়টি হতে পারে না।
দ্বিতীয় উদাহরণ ছিলেন হযরত উসমান রাযি. তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সমাজের দামি মানুষ। ইসলামপূর্ব সমাজেও তিনি ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, উসমানের লাজুকতা দেখে আল্লাহর ফেরেশতারাও লজ্জা পায়। সুতরাং মেয়ের জন্য কেমন পাত্র নির্বাচন করবেন, এর দৃষ্টান্ত স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সামনে রেখে গিয়েছেন। এর চেয়ে উত্তম নমুনা গোটা দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না।
স্বামীর অন্যতম গুণ হল, সহনশীল হওয়া। কারণ, স্বামী হন পরিবারের প্রধান। কোনো প্রতিষ্ঠান-প্রধান কথায় কথায় যদি রেগে বসেন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের তো বারটা বাজবেই! তাই আল্লাহ তা’আলা বলেন- وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ‘নারীদের ওপর পুরুষদের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা’। (সূরা বাকারা ২২৮)
পুরুষরা অভিভাবক। পরিবারের কর্তা। পুরুষ মানে সংসারের রাজা। নারী সে সংসারের রাণী। এজন্যই পুরুষদেরকে সহনশীল হতে হয়। ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতে হয়। আশা করি আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন যে, পুরুষদের মাঝে এগুলোর অভাব থাকলে খুঁটিনাটি বিষয়ে ঝগড়া লাগে। যেমন তরকারিতে লবন কম কেন, খাবার ঠান্ডা কেন, পানি গরম নয় কেন, অমুক কাজটি এমন হল কেন- এজাতীয় সাধারণ বিষয় নিয়েও সব মাথা খুলে ফেলবে। বেচারি স্ত্রী সারাদিন ঘরকন্নার কাজ করে ক্লান্ত, শ্রান্ত। এজন্য একটু মিষ্টি প্রশংসা নেই। উপরন্তু সব ঝেড়ে দিচ্ছে। এর কারণ হল, সহনশীলতার অভাব। যে স্বামীর মাঝে এগুণের অভাব থাকে, তার বৈবাহিক জীবনের পাড়ি পথের মাঝখানে কোথাও না কোথাও আটকা পড়ে। এমন পুরুষ তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করেও স্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ ‘তালাক-তালাক-তালাক’ নামক গুলি ছুঁড়ে।
গত বছরের কথা। ফকীর সুইডেনে ছিলাম। সেখানে এক দম্পত্তির তালাকের সমাচার শুনলাম। স্বামী কিচেনের বেসিনে এসে ব্রাশ করে। স্ত্রী তাকে নিষেধ করে। বাথরূমে যেহেতু বেসিন আছে তাই স্ত্রী তাকে সেখানে গিয়ে ব্রাশ করার কথা বলে। স্বামী তা শোনে না। মাথায় জেদ চেপে বসে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্বামী ‘তালাক-তালাক-তালাক’ বলে যবানের তীর ছুঁড়ে মারে। যে-ই ঘটনাটি শুনেছে, হতভম্ব হয়েছে। অথচ উভয় যদি একটু বুদ্ধি খরচ করত, তাহলে সাজানো সংসারটার ভাঙ্গন ঠেকানো যেত।
پار اترنے کے لۓ تو خیر بلکل چاہۓ
بیچ دریا ڈوبنا ہو توبہی اک پل چاہۓ
‘দরিয়ার ওপাড়ে ওঠতে হলে প্রয়োজন ‘কল্যাণ’ সাথী হওয়া, দরিয়ার মাঝখানে ডুবতে হলেও প্রয়োজন হয় একটি পোলের।’
ধৈর্য্য-সহনশীলতার অভাবে মানুষ কখনও সফলতার নাগাল পায় না। একত্রে বসবাস করলে কিছুটা ঝগড়া-ঝাটি হবেই। কখনও ছেলে-মেয়ে মায়ের কথা শুনবে না। মা সন্তানদের ওপর মাঝে-মাঝে রাগ করবে। এসব স্বাভাবিক সমস্যা। এসমস্যগুলোর সমাধান সে নিজে করতে পারবে। যার কাছে সহনশীলতা ও ধৈর্য্যগুণ থাকবে।
স্বামীর আরেকিট গুণ হল, পরিবারের দায়িত্ব পালন করা। ‘কামচোর’ না হওয়া। এক্ষেত্রে আমাদে্র জন্য উত্তম আদর্শ রাসূলুল্লাহ ﷺ। তিনি যুগের নবী হয়েও সংসারের কাজ করতেন। স্ত্রীদেরকে সাহায্য করতেন। হযরত মূসা আ.-ও এক্ষেত্রে চমৎকার দৃষ্টান্ত। সে যুগের নবী ছিলেন তিনি। সফরে বের হয়েছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে। পথিমধ্যে স্ত্রীর ব্যথা ওঠে । তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকেন নি। বরং স্ত্রীকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর, আমি আগুন নিয়ে আসছি। পবিত্র কুরআনের ভাষায়-
فَقَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارًا
‘মূসা আ. পরিবারবর্গকে বললেন, তোমরা এখানে অবস্থান কর আমি আগুন খুঁজে আনছি।’(সূরা ত্বহা ১০)
মূসা আ. একজন নবী হয়েও স্ত্রীর আরামের জন্য আগুনের খোঁজে বের হয়েছেন। বোঝা গেল, এটা মহান ইবাদত। সুতরাং সংসারের কাজ দেখে পলায়ন করা উচিত নয়। ছোট ছোট পাথর একসাথে হয়ে পাহাড় হয়, ছোট ছোট সমস্যা একসাথে হয়ে বিশাল সমস্যা তৈরি হয়। দুই অন্তরের মাঝে বিবাদের দেয়াল খাড়া হয়ে যায়। পরিণামে ঘর বিরান হয়, সংসার টুকরো-টুকরো হয়ে যায়। অনেক সময় ত্রিশ-পয়ত্রিশ বছরের সাজানো সংসারও ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। যদি স্বামী চায় স্ত্রী তার সেবিকা হয়ে থাকবে, তাহলে স্বামীর দায়িত্ব হল, স্ত্রীর সকল প্রয়োজনের প্রতি যত্নবান হওয়া। সমতা-ব্যালেন্স তখনই রক্ষা করতে পারে যখন স্বামী এবং স্ত্রী নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে। শরীয়ত উভয়ের মাঝে একটি মানদন্ড নির্ধাারণ করে দিয়েছে। স্বামীর দায়িত্ব হল, স্ত্রীর অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর দায়িত্ব হল, স্বামীর অধিকার পূরণ করা। উভয় দায়িত্ব সচেতন হলে সংসার সুখি হবে। এটাই দাম্পত্য জীবনের প্রধান লক্ষ্য। পবিত্র কুরআনের ভাষায়- وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا‘আল্লাহর নিদর্শনসমূহ থেকে একটি নিদর্শন হল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেও মধ্যে থেকে তোমাদের জীবনসাথী সৃষ্টি করেছেন।’لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا ‘যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক।’وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً‘এবং তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ‘নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সূরা রুম ২১)
পবিত্র কুরআনের আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রমানিত হয় যে, দাম্পত্য জীবনের প্রধান লক্ষ্য হল, প্রেম-ভালোবাসা পূর্ণ ও সুখময় সংসার করা। ভাবুন, যদি আমরা নিজেরাই সুখের সোনালী খাঁচা ভেঙ্গে ফেলি তাহলে দাম্পত্য জীবন সুখময় হবে কিভাবে! উত্তম ও সফল জীবন সেটাই। যেখানে স্বামী সুখে থাকবে, স্ত্রী থাকবে শান্তিতে। যাপিত জীবনে একজন অসুখি হলে জীবনকে ‘সফল জীবন’ বলা যায় না। বর্তমানে তো সংসার জীবনে ‘সুখ-শান্তি’ যেন সোনার হরিণ। প্রতিটি সংসারে প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ঝগড়া লাগে। এসবই আমাদের মূর্খতা ও আমলহীনতার অনিবার্য পরিণাম। আমরা দাম্পত্যজীবনের আসল উদ্দেশ্য ভুলে বসেছি। তুচ্ছ বিষয় নিয়েও তুলকালামকাণ্ড করি। এটা ভুল। এ ব্যপারে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
দাম্পত্যজীবনের অনুপম ধারণা
পবিত্র কুরআন স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে যে অনুপম (Concept) ধারণা পেশ করেছে, আজ পর্যন্ত তার অন্য ধর্ম বা সমাজ ব্যবস্থা পেশ করতে পারি নি। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের বক্তব্য হল-
هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ
‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ (সূরা বাকারা ১৮৭)
পোশাকের সাথে তুলনা করার কারণ দু’টি। প্রথমত, পোশাক মানুষের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে, দোষ-ক্রটি গোপন করে। দ্বিতীয়ত, মানবদেহের সবচে’ ঘনিষ্ঠবস্তুর নাম পোশাক। স্ত্রীকে স্বামীর পোশাক বলা হয়েছে। স্বামীকে স্ত্রীর পোশাক বলা হয়েছে। কেননা, তারা একজন আরেকজনের সবচে, কাছের মানুষ। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা বোঝানোর জন্য এর চেয়ে উত্তম বক্তব্য আর কী হতে পারে! আল্লাহু আকবার!
হাদীসে আছে, যহরত আদম আ. এর পাঁজর থেকে হাওয়া আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছ। প্রশ্ন হল, মাথা কিংবা পা থেকে সৃষ্টি করা হয় নি কেন? মাথা থেকে সৃষ্টি করা হয় নি যাতে স্ত্রী স্বামীর মাথায় চড়ে না বসে। পা থেকে সৃষ্টি করা হয় নি, যেন স্বামী স্ত্রীকে পায়ের নীচে ফেলে না রাখে। পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে স্ত্রীকে ‘জীবনসাথী’ করে রাখে। পবিত্র কুরআনে এটা বলা হয় নি যে, তোমরা জীবন যাপন কর। বরং বলা হয়েছে- وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তমরূপে জীবন যাপন কর।’ (সূরা নিসা ১৯)
তাফরীর বিশারদগণ লিখেছেন, মহান আল্লাহ স্ত্রীদের পক্ষ থেকে স্বামীদের কাছে সুপারিশ করেছেন- এটা স্ত্রীদের ওপর মহান আল্লাহর অসীম দয়ার বহি:প্রকাশ। হে স্বামীরা! স্ত্রীদের ব্যাপারে তোমাদের রব তোমাদের কাছে সুপারিশ করেছেন- এর চেয়ে বড় কথা আর কী হতে পারে! যদি তোমরা এজগতে আল্লাহর সুপারিশ রক্ষা কর তাহলে ওঠ জগতে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ আকবার কাবীরা…।
সবচে’ ভালো স্বামী কে?
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي
‘তোমাদের মধ্যে সবচে, ভালো সে লোকটি, যে তার পরিবারের নিকট ভালো। আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের মধ্যে সবচে’ ভালো মানুষ।’
আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজের জীবনকে আদর্শ হিসাবে পেশ করেছেন। কোনো ব্যক্তির ‘ভালোমানুষি’ বন্ধু-বান্ধব দ্বারা বোঝা যাবে না। তার কাজ-কারবার দ্বারাও অনুমান করা যাবে না। বুঝা যাবে তার স্ত্রীর কথা দ্বারা। যদি সে স্বামীকে ভালো মানুষ বলে তবে সে সমাজের ভালো মানুষ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন-
أَكْمَلُ المُؤمِنِينَ إِيمَاناً أَحسَنُهُم خُلُقاً‘মুমিনদের মধ্যে পরির্পূণ মুমিন সেই যার চরিত্র উত্তম।’
একবারের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এক মহিলা এসে অভিযোগ করলো যে, আমার স্বামী কথায়-কথায় রাগ করে। মারধোরও করে। (বাকি সব কথা এক কান দ্বারা শুনলেও চলবে, তবে স্বামীদেরকে বলছি, অন্তত একথাটা দু’কান খুলে শুনুন,) এক মহিলা প্রিয় নবী ﷺ-এর দরবারে এসে নিজ স্বামী সম্পর্কে অভিযোগ করছে, আমার স্বামী কথায় কথায় চটে যায়, এমনকি আমার গায়েও হাত উঠায়। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন-
يَظَلُّ أَحَدُكُمْ يَضْرِبُ امْرَأَتَهُ ضَرْبَ الْعَبْدِ ، ثُمَّ يَظَلُّ يُعَانِقُهَا وَلا يَسْتَحْيِي
‘তোমাদের মধ্য থেকে ওই লোকটির চেহারা ধূসরিত হোক! স্ত্রীকে দাসীর মত মারধোর করে আবার সেই স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে। লজ্জা করে না?
অর্থাৎ একবার তাকে খুব আপন করে নাও, আবার তাকে দূরে ঠেলে দাও। তাঁকে দাসির মত মারো। লজ্জা করা উচিত! হাদীসটি আমাদেরকে এ বার্তা দিচ্ছে যে, স্ত্রী ঘরের চাকরানি নয়; বরং জীবনসাথী। হ্যাঁ যদি সে কবিরাগুনাহ করে বসে প্রথমে তাকে বোঝাতে হবে। বুঝ না মানলে শরীয়তের সীমানার মধ্য থেকে তাকে শাসানো, প্রয়োজনে একটু-আধটু মারার অনুমতি রয়েছে। প্রবাদ আছে, ‘লাঠি-তাড়িয়ে ভূত কথায় নামেনা।’
দু’টি কথা বেশ প্রসিদ্ধ। ১. মহিলাদের জিহ্বা আয়ত্তে আসে না এবং ২. পুরুষের হাত নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
নারীদের ভাষা
বন্ধুগণ! মনে রাখবেন, বদযবান স্ত্রী নিজের স্বামীকে কবর পর্যন্ত পৌছানোর ক্ষেত্রে পিয়নের ঘোড়ার মত দ্রুতগামী হয়। ভাষা-ব্যবহার খারাপ এমন স্ত্রীর স্বামী সারা জীবনে শান্তির পায়রা ধরতে পারে না। এজন্য নারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন ভাষার নম্রতা ও মিষ্টতা তৈরি করে। ভদ্র ভাষায় কথা বলে। এটা অবশ্য সত্য, মিষ্টি মেয়ের যবানও একটু হলেও তিক্ত হয়। আসলে বৈবাহিক সর্ম্পকটা এমনই। তবু স্ত্রীর ভাষা ব্যবহার শালীন হতে হবে। শরীয়তের নির্দেশ হল, স্বামীর সাথে কথা বলবে নরম সুরে, পরপুরুষের সাথে কথা বলবে তিক্ত ভাষায়। যাতে করে পরপুরুষ দ্বিতীয় বার কথা বলার সাহস না পায়। অথচ বর্তমানের নারীদের ফ্যাশন চলেছে এর বিপরীত স্রোতে। স্বামীর সাথে কথা বলার সময় যেন রাজ্যের তিক্ততা ঝরে পড়ে। আর পরপুরুষের সাথে কথা বলার সময় যেন রাজ্যের উগলে ওঠে। অথচ তিক্ত সত্য হল, আত্মীয়তার যেসব বন্ধন তরবারি কাটতে পারে না, তিক্তভাষা সেগুলো ছিঁড়ে কেটে ফেলে। মনে রাখবেন, মহিলাদের যবান ওই তরবারির মত যেখানে কোনো জং ধরে না। কিছু কিছু মেয়ের কথা তো এতই গোশতকাটা হয়, শুধু ‘নারী’ দেখে চুপ মেরে বসে থাকতে হয়। এমন নারীও আছে, যাদের বদযবান ও বদধারণার কারণে সোনার সংসারেও আগুন ধরে যায়। এজন্যই পবিত্র শরীয়তের নির্দেশ হল, স্বামীর সাথে কথা বলবে উত্তম পদ্ধতিতে এবং পরপুরুষের সাথে কথা বলবে ভদ্রতার খোলস ছাড়িয়ে।
জনৈক ইংরেজ দার্শনিক যথার্থ বলেছেন যে, একজন নারী যাপিত জীবনে প্রতিবেশী পুরুষের সাথে কথ বলার সময় যে পরিমাণ ভদ্রতার অনুশীলন করে, তা যদি অন্তত দিনে একবার নিজের স্বামীর সাথে করত তাহলে কোনো দিনই তার সংসার ভাঙ্গতো না। পক্ষান্তরে স্বামী প্রতিবেশী মহিলাকে যে পরিমাণ প্রেমময় চাহনি উপহার দেয় তা যদি অন্তত দিনে একবার স্ত্রীকে দিত তাহলে তার সংসার নষ্ট হতো না।
সালফে-সালেহীনের কর্মপদ্ধতি
মহান আল্লাহ সূরা নিসাতে দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করেছেন। এ সম্পর্কে বিবিবিধানের বিবরণ দিয়েছেন। সালফেসালেহীন তথা পূর্বের মনীষীরা নিজেরদের মেয়েদেরকে বিয়ে দেয়ার আগে সূরা নিসা ও সূরা নূরের তরজমা পড়িয়ে দিতেন। আমাদেরর উচিত, পুরা কুরআন মাজিদের অর্থ শেখাতে না পারলেও অন্তত মেয়েদেরকে এ দুটি সূরার অর্থ শিখানো। যাতে করে তারা দাম্পত্যজীবন সুন্দরভাবে কাটাতে পারে। কোনো কোনো সালফেসালেহীনের আমল ছিলো আরো বিস্ময়কর। ওই যুগে প্রিন্টিং ছিল না। তাই তারা নিজেদের অবিবাহিত মেয়েদেরকে গোটা কুরআন মাজিদ লেখার দায়িত্ব দিতেন। লেখা শেষ হলে বাবা মেয়ের বিয়ের সময় ওই কপিটা সোনালী চামড়ায় বাঁধাই করে উপঢৌকন হিসাবে মেয়েকে উপহার দিতেন। এটা ছিলো তখনকার দিনে উপঢৌকন। মেয়ের অভিভাবক এভাবে বর পক্ষকে জানিয়ে দিত যে, আমার মেয়ে আমার বাড়িতে অবসর সময়ে কুরআন মাজিদ লিপিবদ্ধ করেছে।
স্বামীর অধিকার
রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বামী-স্ত্রীর অধিকারসমূহ সম্পর্কে আলাকপাত করতে গিয়ে স্ত্রীদেরকে বলেছেন, ইসলামী-শরীয়াহ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিত, তাহলে আমি স্ত্রীদেরকে বলতাম তারা যেন নিজেদের স্বামীকে সিজদা করে। হাদীস শরীফে আছে , যে নারী নিজের ওপর অর্পিত কর্তব্যসমূহ পালনাবস্থায় মারা যায় এবং ওই অবস্থায় তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেন। যাতে সে হিসাব-নিকাশ ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। হাদীসে আরো বলা হয়েছে, কোনো স্ত্রীর ওপর যদি তার স্বামী ন্যায়সঙ্গত কারণে অসন্তুষ্ট হয়। আর স্ত্রী জেদ ধরে থাকে, স্বামীর কামনা পূরণ না করে এবং সে অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ে তাহলে ফেরেশতাগণ সারা রাত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। এসব হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়, স্বামীর সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করে। স্বামী খুশি তো আল্লাহ খুশি।
এক মহিলা সাহাবীর ঘটনা
স্বামীর আনুগত্যের ব্যাপারে মহিলা সাহাবীদের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন এক মহিলা সাহাবীর ঘটনা। আল্লাহ তাকে একটি ছেলে সন্তান দান করেছেন। তখন স্বামী ছিলেন জিহাদের ময়দানে। স্বামী যেদিন জিহাদের ময়দান থেকে বাড়িতে আসেন, ওই দিনই তার আসার কিছুক্ষণ আগে ছেলেটা মারা যায়। মহিলা সাহাবী ভাবলেন, স্বামী আমার কতদিন পরে আসছেন। এসেই যদি এই বেদনাদায়ক বিষয়টি জানতে পারেন তাহলে তো তিনি দু:খ পাবেন, পেরেশান হবেন। তাই তিনি নিজে নিজের সন্তানকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে সাজিয়ে রাখলেন। এদিকে স্বামী বাড়িতে এসে জানতে চায়, তখন জিহাদে গিয়েছিলাম, তখন তো দেখে গিয়েছিলাম যে, আমাদের কোলজুড়ে নতুন অতিথির আগমন ঘটবে। তো কী খবর? বিবি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, আল্লাহ আপনাকে একটি ছেলেসন্তান দান করেছিলেন। স্বামী ব্যকুলমরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায়? আমার বাবু কোথায়? বিবি উত্তর দেন, সে শান্তিতে আছে। স্ত্রীর উত্তর শুনে স্বামী ভেবেছে তার বাবু ঘুমিয়ে আছে। স্বামী খাওয়া-দাওয়া করে ক্লান্ত দেহ নিয়ে বিশ্রাম করে। ইতোমধ্যে রাত নেমে আসে। দু’জনই কিছু খোশ-গল্পও করে। সফর সম্পর্কে নানা গল্প হয়। ভেবে দেখুন, ওই মা যার ফুলের মত শিশু সামনের চৌকিতেই লাশ হয়ে শায়িত, তার মাতৃহৃদয়ে তখন কেমন ঝড় বয়ে যাচ্ছিল! কিন্তু স্বামী কষ্ট পাবেন- শুধু এ চিন্তা করে এখনও কষ্টের জগদ্দল পাথরটা নিজের বুকের ভেতর ধরে রেখেছেন। তিনি জানেন, স্বামী আসল ঘটনা আচমকাভাবে শুনলে খাবার তার গলায় ঢুকবে না। স্বামী দীর্ঘ সফর করে এসেছেন, তাই আরামের প্রয়োজন। এ ভেবে স্বামীকে কিছুই বুঝতে দেন নি। বুকের উপচানো কষ্টটা বাইরে আসতে দেন নি। উপরন্তু স্বামীকে রাতের খোশ-গল্প শুনিয়েছেন। এভাবেই তাদের রাত সকাল হল। সকালে যখন চারিদিক আলোকিত হয়ে ওঠল, বিবি স্বামীর কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে আপ্লুত ও ব্যথিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। স্বামী উত্তর দেন, বলো। স্ত্রী বললেন। কেউ যদি কোনো আমানত দেন, তারপর কয়েকদিন পর তা ফেরত নেন, তাহলে তা-কি হাসিমুখে দিয়ে দেয়া উচিত না কষ্ট পাওয়া উচিত? স্বামী উত্তর দিলেন, হাসিমুখে ফেরত দেয়া উচিত। এবার স্ত্রী শোনালেন, মহান আল্লাহ আপনাকেও একটি আমানত দান করেছিলেন। আপনি বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ আগে তিনি তার আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন। এখন চলুন, আমরা হাসিমুখে আমানতটাকে মালিকের কাছে রেখে আসি। এঘটনার পর স্বামী যিনি নিজেও একজন সাহাবী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর দরবারে হাজির হয়ে সবিস্তারে সব বললেন। সব শোনার পর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের জন্য দোয়া করলেন। ফলে আল্লাহ ওই রাতেই বরকত দান করলেন। মহিলা-সাহাবী পুনয় গর্ভবতী হলেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে আরেকটি ছেলেসন্তান দান করলেন। যে ছেলে পরবর্তীতে কুরআনের হাফেয হয়েছিল। হাদীসেরও হাফেজ হয়েছিল।
স্ত্রীর হক
আসুন, এ পর্যায়ে স্বামীর ওপর স্ত্রীর যেসব হক রয়েছে- সেগুলো সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি। স্বামীর কাছে স্ত্রীর প্রথম প্রাপ্য হল, ভরণপোষণ। নারীর ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হয় নি। মেয়ে হলে ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার ওপর। বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব ভাইয়ের ওপর। স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর এবং মায়ের ভরণপোষণ বহন করতে হয় তার সন্তানরা। মেয়ে থেকে শুরু করে মা হওয়া পর্যন্ত জীবনের কোনো অংশেই নারী নিজের ভরণপোষণের ব্যবস্থা নিজেকে করতে হয় না। যাই হোক, স্বামীর দায়িত্ব হল, স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা।
এ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, স্বামী আপন সঙ্গতি অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণপোষাণ নির্ধারণ করবে। কারো একশ’ ডলার দেওয়ার সামর্থ্য থাকবে, কারো সামর্থ্য থাকবে দুই শ’ ডলার দেওয়ার কিংবা কেউ বা নিজ সামর্থ্য অনুপাতে মাত্র দশ ডলার দিবে। এ ক্ষেত্রে অংক মূল বিষয় নয়। ঘরের তরি-তরকারির খরচ আলাদা। এটা স্ত্রীর ভরণপোষণের সাথে হিসাব হবে না। শরীয়তের বক্তব্য হল, স্ত্রী তার ঘর-বাড়ি ত্যাগ তোমার জীবনসাথী হয়ে থাকার মানসে তোমার ঘরে এসেছে। সুতরাং তাকে ব্যক্তিগত হাত খরচের জন্য কিছু টাকা-পয়সা দাও। ওই টাকা কোথায় খরচ করবে এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই। এমনও হতে পারে স্ত্রী ওই টাকা তার গরিব ভাই-বোনকে দিবে কিংবা কোনো অসহায় মহিলাকে দান করবে। সে যেখানে ইচ্ছা খরচ করতে পারবে। তুমি কিছু বলতে পারবে না। স্ত্রীর আরেকটি হক হল, স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রবাদ আছে নিজের ঘর- কাঁচা কিংবা পাকা- তা নিজেরই। এজন্য স্ত্রীকে এমন একটি স্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যেখানে মাথা গুজাতে পারবে। তবে হ্যাঁ, যদি পরিবারের সবাই একসঙ্গেঁ বসবাস করার কারণে স্বামী এরূপ কোনো ব্যবস্থা না করতে পারে তাহলে কমপক্ষে তার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। যাতে সে তার নিজের জিনিসপত্র রাখতে পারে। এমন যেন না হয় যে স্ত্রীকে যে রুম দেওয়া হয়েছে, সেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা অন্য কারো সামানপত্রও রাখা হয়। এটা সত্য যে, সকল স্বামী স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারবে না, কিন্তু কমপক্ষে একটা রুমের ব্যবস্থা তো করে দিতে হবে। তৃতীয় হক হল, স্বামী যেহেতু পরিবারের প্রধান, সুতরাং সে অধীনস্তদের সাথে সদাচরণ দেখাবে। হাদীসে এসেছে-
ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ
‘তোমরা জমিনের বাসিন্দাদের সাথে সদাচরণ কর, তাহলে আসমানবাসীরা তেমাদের সাথে কোমল ব্যবহার দেখাবে।’
এজন্যই বলা হয়েছে যে ব্যক্তি অন্যদের সাথে দয়ার আচরণ করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তার সাথে কোমল আচরণ দেখাবেন। যে ব্যক্তি অন্যকে তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে কেয়ামতের দিন তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিবেন। যে ব্যক্তি অপরের দোষ গোপন করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তার দোষ গোপন করবেন।’ ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী মানে বাঁদি নয়; বরং জীবনসাথী, উত্তম বন্ধু, স্বামীর গোপন বিষয় গোপনকারী।
পবিত্র কুরআনে দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে যেখানে আলোচনা করা হয়েছে, সেখানেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- وَاتَّقُوا اللَّهَ ‘আল্লাহকে ভয় কর।’ কেন? এর উত্তরও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন- وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ ‘মনে রেখ’ আল্লাহর সাথে তোমাদের সাক্ষাত হবে।’ (সূরা বাকারা ২২৩)
মানবজীবনে এমন অনেক বিষয় এমন আছে, লজ্জায় স্বামী কাউকে কিছু বলতে পারে না, স্ত্রীও কাউকে কিছু বলতে পারে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঠিকই জ্বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা একজন আরেকজনের অন্তর জ্বালাবে না। মনে রেখ, একদিন তোমাদেরকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। আজ যদি একজন আরেকজনকে শান্তি না দাও, তাহলে কিয়ামতের দিন কী উত্তর দিবে আল্লাহর সামনে?
একটি চমৎকার মূলনীতি
এ ক্ষেত্রে সুন্দর একটি মূলনীতি রয়েছে। স্ত্রীর যদি ভুল হয় তাহলে সাথে সাথে স্বামীর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং স্বামীর ভুল হলে সাথে সাথে তা স্বীকার করে নেওয়া। ক্ষমা চাওয়া দ্বারা কিংবা ভুল স্বীকার করে নেয়া দ্বারা সম্মান কমে না; বরং বাড়ে। এ সুবাদে আমার পীর ও মুরশিদের একটি কথা মনে পড়ল। একজন মানুষ কী পরিমাণ ইসলামসমৃদ্ধ হলে নিজের জীবনের ঘটনা এভাবে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে পারেন! তিনি বলেন, একদিনের ঘটনা। আমি অজু করছিলাম। বিবি অজুর পানি ঢেলে দিচ্ছিল। কিন্তু সে ঠিক মত পানি ঢালতে পারছিল না। আমি একটু কড়া ভাষায় বললাম, কী হল ঠিক মত পানি ঢালছ না কেন? কিন্তু সে কিছু বলল না। চুপ থাকল। এবার আমার ইচ্ছামাফিক পানি ঢালছিল। অজু শেষে বাসা থেকে বেরিয়ে আসি। পরক্ষণেই মনে হল, যাচ্ছি নামাজে অথচ আল্লাহর এক মাখলুকের সাথে অন্যায় আচরণ করে এসেছি! আমার নামাজ কবুল হবে কীভাবে? এই ভেবে আমি পুনরায় বাসায় আসলাম। স্ত্রীর কাছে ভুল স্বীকার করে নিলাম। সে আমাকে ক্ষমা করে দিল। তারপর আমি নামাজ আদায় করলাম।
প্রাচ্যের সমাজে দাম্পত্যজীবন
শ্রোতা বন্ধুগণ! আলহামদুলিল্লাহ, প্রাচ্যের সমাজে দাম্পত্যজীবনে এখনও অনেক সুখ আছে, শান্তি আছে। আমাদের সমাজে শতকরা নিরানব্বই ভাগ মেয়েই স্বামীর বাড়িতে যায় সংসার করার ইচ্ছা নিয়ে। এই মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রাচ্যের মেয়েদের মাঝেই আছে যে, আমাদের মেয়েরা বাবার বাড়ি ত্যাগ করে স্বামীর সাথে জীবন যাপনের নিয়তে। তারপর বাকিটা থাকে স্বামীর কাছে। যদি সে সঠিকভাবে পরিচালনা (Handle) করতে পারে তহেলে সোনার সংসার গড়ে ওঠে। আর যদি পরিচালনায় ত্রুটি (Mishandle) হয় তাহলে ওই সংসারে আগুন জ্বলে। প্রাচ্যে এমন মেয়েও আছে, শালীনতার দিক থেকে তাদের মাঝে হুরদের গুণাবলীর ঝলক থাকে। যেমন তারা (عربا) তথা স্বামীভক্ত হয় এবং (قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ) তথা আয়তলোচন হয়- পরপুরুষের প্রতি ভুলেও তাকায় না। এমন মেয়েও আছে, যারা এতটাই নিষ্পাপ মনের অধিকারী যে, বাসা-বাড়ি্ থেকে বের হলে তাদের অন্তরে পরপুরুষের ছায়াও প্রবেশ করতে পারে না। এসবই ইসলামের বরকত। এমন মেয়েও আছে, স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকিয়ে নিজেদের যৌবন-জীবন কুরবানি করে দেয়। হাদীসে এসেছে, ‘কোনো বিধবা মেয়ে যদি নিজের ছেলে-মেয়ের দেখ-ভাল করতে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে না বসে এবং নিজে এই পথটা পসন্দ করে তাহলে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জিহাদ করার সওয়াব দান করবেন।’ যে মেয়েটির স্বামী মারা যায়, তার যাপিত জীবনের আনন্দ-বাগানে এমনিতইে পরিবর্তন এসে পড়ে। কিন্তু সে নিজের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকে। এভাবেই জীবন কাটাতে থাকে। আল্লাহু আকবার!
چمن کارنگ گو تو نے سراسر اے خزان! بدلا
نہ ہم نے شاخ گل چھوڑی،نہ ہم نے آشیانہ بدلا
‘যদিও ফুল বাগানের রঙ বদলে গেছে হেমন্তের ঝাপটায়,
কিন্তু আমরা ফুলের শাখা ছাড়ি নি, এর পরিচয়ও পাল্টে দেই নি।’
সুখময় দাম্পত্য জীবন
দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে আরেকটি বিষয়, মনে রাখতে হবে, ভালোবাসা যেখানে কমতে থাকে, দোষ-ত্রুটি সেখানে বড় হয়ে দেখা দিতে থাকে। তখন তিলও ‘তাল’ হয়ে সামনে আসতে থাকে। এজন্য শরীয়ত বলেছে, তোমরা পরস্পর হৃদ্যতা ও ভালোবাসাপূর্ণ জীবন যাপন কর। এজন্য দরকার বিশাল অন্তর। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে- To run a big show one should have a heart ‘বড় নেতৃত্ব পরিচালনা করতে হলে বড় মন লাগবে।’ এজন্য সংসারে যাবতীয় সমস্যা ধৈর্য্যরে সাথে সামাল দিতে হয়। আশ্চর্য! স্ত্রী ওই স্বামীর সাথে ঝগড়া করে যার জন্য সে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। স্বামী ওই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে যারই কারণে তার জীবনে ছন্দ এসেছে।
شنیدم که مردان راه خدای دل دشمنان را نکردند تنگ
ترا کی میسر شود این مقام که با دوستانت خلافست و جنگ
‘শুনেছি আল্লার প্রিয় বান্দারা শত্রুর অন্তরেও দুঃখ দেয় না।
তোমরা এ নীতি কোথায় পেলে যে বন্ধুকেও কষ্ট দাও।’
অনেক সময় ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে কিংবা অহমিকার কারণে শিক্ষিত দম্পত্তির মাঝেও ঝগড়া-বিবাদ হয়ে থাকে। পরস্পর পরস্পরের প্রতি এতটাই বিদ্বেষী হয়ে ওঠে যে, একে অপরের দোষ খুঁজে বেড়ায়। দেহ পরস্পরের কাছে অথচ হৃদয় কত দূরে!
زندگی بیت رہی ہے دانش
ایک بے جرم سزا ہو جیسے
‘বিদ্বান লোকটি জীবন যাপন করছে; যেন নিস্পাপ সাজা ভোগ করছে।’
অনেক সময় ঝগড়াটা হয় তৃতীয় কারও জন্য। আমার একথা হৃদয়ে গেঁথে নিন, স্বামী-স্ত্রী সাধারণত নিজের জন্য ঝগড়া করে না। তাদের ঝগড়া হয় শশুর-শাশুরী কিংবা স্ত্রীর বাবার বাড়ির কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে। এজন্য শরীয়ত একটি বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছে, মেয়েকে বলেছে, দেখো বিয়ের আগে তোমার মা ছিল একজন, এখন হয়েছে দু’জন। বাবা ছিল একজন এখন হয়েছে দু’জন। অনুরূপভাবে ছেলেকেও বলে দিয়েছে বিয়ের পর থেকে তোমার বাবা-মা দু’জন মনে করবে। আল্লাহ তা’য়ালা শশুর-শাশুড়িকে বাবা মায়ের মর্যাদা দান করেছেন। একটি মৌলিক বিষয় মনে রাখবেন, বিয়ের পর উচিত মেয়ে তার শশুর-শাশুড়িকে সন্তুষ্ট রাখা এবং ছেলের উচিত তার শশুরালয়ের লোকজনকে সমীহ করে চলা। এটা মেনে চললে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আর বিবাদ হয় না। একজন রাগ করলে অপরজন সহিঞ্চুতা দেখাতে হবে। উভয় একই সাথে রাগ করলে বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ে। হাদীস শরীফে আছে, স্ত্রী যদি স্বামীর রাগের বিপরীতে ধৈর্যধারণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে আইয়ুব আ. এর ধৈর্যের সওয়াব দান করেন। অনুরূপভাবে স্ত্রীর রাগের মোকাবিলা স্বামী ধৈর্য্য ধারণ করলে মহান আল্লাহ তাকে একই প্রতিদান দেন।’ ধৈর্যের ফল যেহেতু এতটাই মিষ্টি, সুতরাং এজাতীয় ক্ষেত্রে একটু চুপ থাকবেন।
নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই নেতিবাচক চিন্তা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। পাঞ্জাবী ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, ‘যাকে দেখতে পারি তার সবই সোজা। যাকে দেখতে পারিনা তার চলন বাঁকা।’ দাম্পত্যজীবনে এই প্রবাদটা শতভাগ সত্য। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা লালন করলে তাহলে তার প্রতিটি বিষয় বাঁকা মনে হবে, অসৈহ্য লাগবে।
এ সম্পর্কে একটি গল্প আছে, এক বুযুর্গের স্ত্রী সব সময় তার সময় ঝগড়া করত। বুযুর্গ একদিন দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমাকে এমন একটা কারামত দান করুন, যা দেখে আমার স্ত্রী আমার ভক্ত হয়ে যায়।’ আল্লাহ বুযুর্গের দোয়া কবুল করলেন। ইলহামের মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেয়া হল, যদি তুমি আকাশে উড়তে চাও তাহলে পারবে।’ এটা শুনে বুযুর্গ অনেক খুশি হলেন। তিনি পাখির মত উড়তে উড়তে তার বাড়ির ওপর দিয়ে চলে গেলেন। সন্ধ্যায় যখন তিনি বাড়িতে আসলেন তখন স্ত্রী বলল, ‘রাখো তোমার বুযুুর্গি। বুযুর্গ দেখেছো; আকাশ দিয়ে উড়ে গেল। একেই বলে আসল বুযুর্গ।’ স্ত্রীর কথা শুনে বুযুর্গ বললেন, ‘আরে আমিই তো সেই বুযুর্গ। আমিই আজ উড়েছি।’ স্ত্রী যেহেতু স্বামীর ব্যপারে নেতিবাচক ধারণা লালন করত, তাই সে আচমকা উত্তর দিল, ‘তাই তো বলি, বাঁকা-ত্যাড়া হয়ে ওড়লো কেন?’ দেখলেন তো, নেতিবাচক চিন্তা কত জঘন্য জিনিস! এজন্য স্বামী-স্ত্রীর উচিত পরস্পরের প্রতি সুধারণা পোষণ করা। প্রতিটি কথা বলার আগে ভেবে নেয়া যে,আমি কী বলতে যাচ্ছি। কী প্রভাব হতে পারে। প্রতিটি পদক্ষেপ খুব চিন্তা করে নেয়া উচিত। মনে রাখবেন, যে স্বামী নিজের স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করবে, নিশ্চিত সে তার মন জয় করে নিতে সক্ষম হবে। এজন্য জোরাজুরির প্রয়োজন নেই। ভালোবাসা ও উত্তম চরিত্র দিয়ে মন জয় করা সহজ। এ চেষ্টাই করুন। নেতিবাচক চিন্তা ছাড়ুন। দেখুন, ফুলের সঙ্গেঁ কাঁটা থাকে। কেউ বলতে পারে, কাঁটার সঁঙ্গে ফুল থকে। দু’টো কথাই এক। তবে দৃষ্টি আলাদা। এটাই ইতিবাচক ও নেতিবাচক চিন্তার মাঝে পার্থক্য। কারো নজর ফুলের ওপর। কারো নজর কাঁটার ওপর। একথা সত্য, প্রত্যেকের দৃষ্টি ভঙ্গি যেমন আলাদা হয়। পছন্দও আলাদা হয়। সুতরাং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।
মুসকি হাসির সওয়াব
হাদীস শরীফে এসেছে, ‘কোনো স্ত্রী যখন স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুসকি হাসি দেয়, স্বামীও স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুসকি হাসি দেয়, তখন আল্লাহ তা’আলা উভয়কে দেখে মুসকি হাসি দেন।’ আল্লাহ! আল্লাহ!
আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন ঘরে প্রবেশ করতেন, হাসিমুখে প্রবেশ করতেন। স্বামীর জন্য উচিত অফিসের ঝগড়াঝাটি অফিসেই রেখে আসা। বাসায় প্রবেশের সময় হাসিমাখা মুখ নিয়ে প্রবেশ করা। এতে সুন্নাতের সওয়াব পাওয়া যাবে, এবং উত্তরে আরেকটি মুসকি হাসি উপহার পাওয়া যাবে।
A SMILE!
A smile is something nice to see, It doesn’t cost a cent.
A smile is something all your own, It never can be spent.
A smile is welcome anywhere, It does away with frowns.
A smile is good for everyone,To ease life’s ups and downs.
‘মুসকিহাসি দেখতে চমৎকার যদিও তা ছড়িয়ে পড়ে না।
মুসকিহাসি কিছুটা মনমাতানো কিন্তু তা খরচ হয় না।
মুসকিহাসি সবখানেই স্বাগত হয় যদিও দৃষ্টি কাড়ে না।
মুসকিহাসি সকলের কাছেই প্রিয় যদিও জীবনের উথান-পতনে ভূমিকা রাখে না।’
এমন যেন না হয় স্বামী মুসকিহাসি দিয়ে ঘরে ঢুকল, কিন্তু স্ত্রী মুখ গোমরা করে বসে রইল। স্বামীর মুসকিহাসির উত্তর নিম্নের ছন্দের মত করে দেয়া চাই-
معیت گرنه ہوتیری توگهبراوں گلستان مین
رہے توساتھ صحرا میں گلشن کا مزہ پاون
‘যদি তুমি সঙ্গঁ না দাও ফুল বাগানেও আমি ভয় পাব,
যদি তুমি হও সাথী, মরুভূমিতেও ফুলবাগানের মজা নিব।’
লিখে ঝুলিয়ে রাখুন
একটি ইংরেজি উক্তি। চমৎকার। মুখস্থ করে নিন। বরং লিখে ঘরের কোথাও ঝুলিয়ে রাখুন-
house is built by hands but home is built by hearts
‘ঘর তৈরি হয় হাত দ্বারা আর সংসার গড়তে হয় হৃদয় দ্বারা।’
ইটের সাথে ইটের গাঁথুনি দিয়ে ঘর তৈরি হয় আর হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের জোড়া লাগলে গড়ে ওঠে সংসার।
বন্ধুগণ! আসুন, কথাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেই এবং দাম্পত্যজীবনে তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। ছোট-ছোট এ বিষয় গুলোর প্রতি যত্নবান হয়ে সংসারটা সুখময় করে তুলি। আমরা ভিনদেশে আছি। ছোট-ছোট বিষয়গুলো নিয়েও যদি আমরা বিবাদের ঝড় তুলি এবং তা যদি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে তাহলে তারা আমাদেরকে নিয়ে হাসবে। তারা ইসলাম নিয়ে ঠাট্রা-বিদ্রুপ করবে। নববী-শিক্ষার দিকে আঙ্গুঁল তুলবে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য দূর্ভাগ্যের কারণ হবে। অমুসলিমরা যেন আমাদের আচার-আচরণ কমিউনিটিতে টক অব দ্যা টাউনে (talk of the town) পরিণত করতে না পারে। এজাতীয় খোলস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। মুসলমানের দূর্ণামের পরিবর্তে সুনামের ‘কারণ’ হওয়ার চেষ্টা করুন। আজকাল এজাতীয় চিন্তা লালনকারীর সংখ্যা এতটাই বিরল যে, বাতি দিয়ে খুঁজে বের করতে হয়।
ايک هجوم اولادآدم کاجدهرديکهئے
ڈھونڈئےتوہر طرف اللہ کے بندوں کا کال
‘যে দিকে তাকাবে আদমসন্তানের ভীড় দেখবে,
কিন্তু যাচিয়ে দেখলে সব দিকেই আল্লাহর বান্দাদের অকাল দেখবে।’
অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী তুচ্ছ বিষয় নিয়ে লড়াই করে। কিন্তু ওই অবস্থাতেই যদি স্বামীকে হারিয়ে বসে তখন স্ত্রী এই স্বামীর জন্যই সারাজীবন কেঁদে বুক ভাসায়। তেমনি স্বামী স্ত্রীকে হারালে সেও অস্থিরতার ভেতর দিয়ে কাটায়। তখন গুণ-গাণের বাহার তাদের মুখ থেকে যেন ঝরে পড়ে। সে এমন ছিল, এই করেছে, ওই করেছে-জাতীয় কথাগুলো নিজেদের জীবনকে আরো হাহাকারময় করে তোলে। এমনও অনেক দেখেছি, ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে তালাক পর্যন্ত হয়ে যায়। পরক্ষণেই যখন হুঁশ আসে তখন স্বামী নিজের জায়গায় এবং স্ত্রী আপন স্থানে পাগলপারা হয়ে ওঠে। কিন্তু যা ঘটার তা-তো ঘটে গেছে। এবার দৌড়ে আসে আমাদের কাছে। বলে, ‘হুজুর! একটা ব্যবস্থা করে দিন। আবার স্বামী স্ত্রী হয়ে থাকতে চাই।’ এজাতীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেয়া কখনই উচিত নয়। ধৈর্য্য, সহিঞ্চুতা ও হুঁশের সাথে কাজ করা উচিত। একজনের মাথা গরম হয়ে গেলে অপরজন তা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা উচিত। ক্ষমার নীতি অবলম্বন করা উচিত।
ﺍﺗﻨﮯ ﺍﭼﮭﮯ ﻣﻮﺳﻢ ﻣﯿﮟ
ﺭﻭﭨﮭﻨﺎ ﻧﮩﯿﮟ ﺍﭼﮭﺎ
ﮬﺎﺭ ﺟﯿﺖ ﮐﯽ ﺑﺎﺗﯿﮟ
ﮐﻞ ﭘﮧ ﮬﻢ ﺍﭨﮭﺎ ﺭﮐﮭﯿﮟ
ﺍًٍﺝ ﺩﻭﺳﺘﯽ ﮐﺮ ﻟﯿﮟ
‘এমন স্নিগ্ধ মৌসুমে রাগ-ক্রোধ ভালো নয়,
হার-জিতের বিষয়টা আগামীতে দেখা যাবে,
আসো, আজ বন্ধুত্ব হয়ে যাক।’
এ বিষয়টিকেই অন্য কবি এভাবে সাজিয়েছেন-
زندگی یوں ہی بہت کم ہے محبت کے لیے
روٹھ کر وقت گنوانے کی ضرورت کیا ہے
ভালবাসার জন্য জীবনটা এমনিতেই ছোট; অভিমান করে সময় নষ্ট করার দরকার কী!
চমৎকার ঘটনা
ওলামায়েকেরাম একটি ঘটনা লিখেছেন। একলোকের স্ত্রী ছিলো দারুণ সুন্দরী। স্বামী বেচারা ছিলো নিদারুণ কুশ্রী। এভাবেই তাদের জীবন সুখেই চলে যাচ্ছিলো। একবার স্বামী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুসকি হাসে। তখন স্ত্রী বলে ওঠে, আমরা দু’জনই জান্নাতি। স্বামী জিজ্ঞেস করে, কিভাবে? স্ত্রী উত্তর দেয়, আপনি যখন আমার দিকে তাকান, আপনার অন্তর আনন্দে নেচে ওঠে। তাই মুসকি হাসেন। আল্লাহর শোকর আদায় করেন। আর আমি যখন আপনার দিকে তাকাই তখন ধৈর্য্য ধরি। ইসলাম বলেছে, সবরকারী জান্নাতে যাবে, শোকরকারীও জান্নাতে যাবে। এজন্যই বললাম, আমরা দু’জনই জান্নাতি।
LOVE AFTER MARRIGE
এ সুবাদে আরকেটি বিষয়ের প্রতি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। আশা করি অপ্রাসঙ্গিক হবে না। তাহলো, ইসলাম love before marriage তথা বিবাহপূর্ব ভালোবাসার অনুমতি দেয় না। ইসলাম love after marriage তথা বিবাহত্তোর ভালোবাসার কথা বলে। লাভ-ম্যারেজের ওপর স্থাপিত দাম্পত্যজীবন নড়বড়ে হবে। যার বাস্তব পরিণতি পাশ্চাত্য সমাজে চোক ধাঁধিয়ে পড়ে আছে। বিবাহত্তোর ভালোবাসার অর্থ হলো, মা-বাবা ছেলে-মেয়ের পক্ষ থেকে সুপাত্রী কিংবা সুপাত্র খুঁজে বের করবে। তারপর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে। এরপর তারা আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে অর্থবহ জীবন যাপন করতে থাকবে। তখন তারা পরস্পরকে যে পরিমাণ ভালোবাসবে, সে হিসাবে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিদান ও সাওয়াব দিতে থাকবেন।
প্রেমে ভরা জীবন
আসুন, সুখময় দাম্পত্যজীবনের একটি খণ্ডচিত্র আমাদের প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যাপিত জীবন থেকে তুলে ধরছি। একবার তিনি ঘরে ঢুকলেন। আয়েশা রাযি. তখন আঙ্গিনায় বসে পানি পান করছিলেন। নবীজী তাকে ডাক দিলেন, ‘হুমায়রা!’ (এই ডাকের ভেতরেও শিক্ষার বিষয় আছে। নবীজী আয়শা রাযি. কে আদর করে যখন ডাক দিতেন, তখন ‘হুমায়রা’ বলে ডাক দিতেন।) নবীজী দূর থেকে ডাক দিলেন, ‘হুমায়রা!’ আয়েশা রাযি. ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, বলুন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ!’ নবীজী বললেন, ‘আমার জন্যও একটু পানি রেখে দিও।’ লক্ষণীয় বিষয় হল, আয়েশা রাযি. ছিলেন স্ত্রী এবং উম্মত-জননী। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্বামী ছিলেন, সাইয়েদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আ’লামীন। সুতরাং বরকতের বিষয় তো ছিলো এই, আয়েশা রাযি. গ্রহণ করবেন নবীজী থেকে। কিন্তু ভালোবাসার বিষয়টি ভিন্ন। তাই আয়েশা রাযি.-কে নবীজী ﷺ আদরের স্বরে ডেকে বললেন, ‘আমার জন্য একটু পানি রেখে দিও।’ আয়েশা রাযি. কিছু পানি রেখে দেন। তারপর নবীজী ﷺ আয়েশা রাযি.-এর কাছে আসলেন। পেয়ালা হাতে নিলেন। পান করার জন্য মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর আচমকা থেমে গেলেন। প্রেমময় কন্ঠে বললেন, ‘আয়েশা! পেয়ালাটির কোন জায়গায় তোমার ঠোঁটটা লেগেছিল? আয়েশা রাযি. কাছে এসে দেখিয়ে দিলেন। নবীজী ﷺ পেয়ালাটা ঘুরিয়ে নিলেন। তারপর ঠিক ওই জায়গায় ঠোঁট রেখে পান করলেন, যেখানে ঠোঁট রেখে আয়েশা রাযি. পান করেছিলেন। আল্লাহ …. আল্লাহ….।
বন্ধুগণ! যদি কোনো স্বামী স্ত্রীকে এরকম ভালোবাসা দেয়, তবে স্ত্রীর তো মাথা খারাপ হয়নি যে, সে সংসার সুন্দর করবে না। বরং পারলে সে জীবনবাজি দিবে, তবুও সংসার সোনালী করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তখন সে ভালোবাসার জবাব ভালেবাসা দিয়ে, প্রেমের জবাব প্রেম দান করে দিবে এবং কৃতজ্ঞতার জবাবে কৃতজ্ঞতা দেখাবে। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা সে হৃদয়-পাতালে সযত্নে আলগে রাখবে। স্বামীর ছবি অন্তরে ক্যানভাস করবে। এটাই হলো, দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে ইসলামের মিষ্টি দৃষ্টিভঙ্গি। আসুন, আর নয় ঘৃণা বিদ্বেষ। প্রেমময় জীবন শুরু করুন। ভালোবাসাপূর্ণ পবিত্র জীবনের সূচনা করুন। কবি যথার্থ বলেছেন-
فرصت زندگی کم ہے محبتوں کے لیے
لاتے کہاں سے ہیں وقت لوگ نفرتوں کے لیے
‘ভালোবাসার জন্য জীবনের আয়ু স্বল্প, তবুও মানুষ হিংসা-বিদ্বেষের সময় পায় বিভাবে!’
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুখময় দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
وأخردعوانا ان الحمد لله رب العالمين