উত্তম আচরণের ফযীলত
এপ্সঃ 🔎 উত্তম চরিত্র [মূলঃ ইমাম তাবারানী রহ.]
সূত্রঃ 🌍 সুন্নি-বিশ্বকোষ
▶১১১... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ইয়াজিদ খিতমী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “প্রত্যেক নেক আমলই হলাে সদকা।”
(আল মুসনাদ লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হাদীস আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ খাতমী আনসারী, হাদীস নং-১৮৭৬৬, ৬/৪৫৪ ।)
▶১১২... হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “প্রত্যেক নেক আমলই হলাে সদকা। তা ধনীর সাথে হােক কিংবা গরীবের সাথে।”
(আল মু'জামুল কবীর, হাদীস নং- ১০০৪৭, ১০/৯০।)
▶১১৩... হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ). শাহে বনী আদম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “নেকী এবং গুনাহকে মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন তাদের দাঁড় করানাে হবে। যারা নেক আমল করেছে নেকীসমূহ তাদেরকে সুসংবাদ দিবে এবং তাদের সাথে মঙ্গলের ওয়াদা করবে, পক্ষান্তরে গুনাহ বলবে দূর হয়ে যাও, কিন্তু সে এর সামর্থ্য রাখবে না, বরং গুনাহের সাথে জড়িয়ে যাবে।”
(আল মুসনাদ লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হাদীস আবু মুসা আশআরী, হাদীস নং-১৯৫০৪, ৭/১২৩।)
▶১১৪... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত (ﷺ) ইরশাদ করেন: “দুনিয়ায় নেক আমলকারী আখিরাতেও নেকীসমৃদ্ধ হবে এবং দুনিয়ায় মন্দ আমলকারী আখিরাতেও গুনাহ সমৃদ্ধ হবে।”
(আল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং-১৫৬, ১/১৫৬।)
▶১১৫. হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুযুর নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমরা কি জানাে যে, সিংহ গর্জন করার সময় কী বলে?” সাহাবায়ে কিরামগণ (رضي الله عنه) আরয করলেন: “আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-ই ভাল জানেন।” নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “সিংহ বলে: হে আল্লাহ তায়ালা! আমাকে তােমার কোন নেককার বান্দার উপর চড়াও করিও না।
(আল ফিরদাউস বিমাসুরিল খাত্তাব, বাবুত তা, হাদীস নং- ২১৫৫, ১/২৯৭।)
▶১১৬... হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তাজেদারে মদীনা, হুযুর পুরনুর (ﷺ) উক্ত ইরশাদ করেন: “সদকা যদিও ৭০ হাজার হাত ঘুরে আসে তবুও সর্বশেষ লােকটির প্রতিদান সর্বপ্রথম সদকাকারীর সমান হবে।”
––––––––––––––––––––––––––––––––
(আল ফিরদাউস বিমাসুরিল খাত্তাব, বাবুল লাম, হাদীস নং- ৫১২৮, ২/১৯৯।)
▶১১৭... হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, প্রিয়। আক্বা, মক্কী মাদানী মুস্তফা (ﷺ) ইরশাদ করেন: “প্রতিদিন। সূর্যোদয়ের পর মানুষের প্রতিটি জোড়ার সদকা রয়েছে। যদি তােমরা দুজন বান্দার মাঝে ন্যায় বিচার করে দাও, তবে তাও সদকা। যদি তােমরা কাউকে বাহনে উঠতে সাহায্য করাে, তবে তাও সদকা। যদি কারাে সরঞ্জাম বাহনে উঠিয়ে দাও, তবে তাও সদকা। ভাল কথা বলাও সদকা। নামাযের জন্য প্রদত্ত প্রত্যেকটি পদক্ষেপও সদকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াও সদকা।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যাকাত, হাদীস নং- ১০০৯, ৫০৪ পৃষ্ঠা।)
▶১১৮... হযরত সায়্যিদুনা ওবাই বিন কা'ব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) আমার পাশ দিয়ে গমন করলেন, তখন আমার সাথে একজন লােক ছিলাে। নবীয়ে পাক (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন: “হে ওবাই! সে কে?” আমি উত্তর দিলাম: “সে হচ্ছে আমার কাছ থেকে ঋণ গ্রহিতা। আমি তার কাছ থেকে ঋণ পরিশােধের দাবী করছি।” হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “হে ওবাই! তার সাথে সদ্ব্যবহার করাে।” এ কথাটি বলার পর হুযুর (ﷺ) নিজের কোন কাজে চলে গেলেন। যখন দ্বিতীয়বার আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঐ লােকটি আমার সাথে ছিলাে না। জিজ্ঞাসা করলেন: “হে ওবাই! তুমি তােমার ঋণগ্রহীতা ভাইটির সাথে কেমন আচরণ করেছাে?” আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! সে ঋণ পরিশােধ করতে পারছিলাে না। সুতরাং আমি ঋণের এক তৃতীয়াংশ আল্লাহ তায়ালার ওয়াস্তে, এক তৃতীয়াংশ আপনার (ﷺ) ওয়াস্তে এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাওহীদের আকীদা অর্জন করার সৌভাগ্য লাভের জন্য ক্ষমা করে
দিয়েছি।” তখন নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) (আনন্দিত। হয়ে) তিনবার ইরশাদ করলেন: “আল্লাহ তায়ালা তােমাকে দয়া করুক, আমাকে এই বিষয়েরই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”
অতঃপর ইরশাদ করলেন: “হে ওবাই! নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আপন সৃষ্টি থেকে কিছু লােককে কল্যাণের মাধ্যম বানিয়েছেন। কল্যাণ ও কল্যাণের কাজকে তাদের প্রিয় বানিয়ে দিয়েছেন। কল্যাণের প্রতি আগ্রহীদেরকে কল্যাণ অন্বেষণ করা সহজ করে দিয়েছেন এবং তাদের উপর বৃষ্টি দানের বর্ষণ করেছেন। সুতরাং কল্যাণ কামনাকারীদের উপমা সেই বৃষ্টির ন্যায়, যা আল্লাহ তায়ালা অনুর্বরভূমি ও অনাবৃষ্টির কারণে শুকিয়ে যাওয়া ভূমির উপর বর্ষণ করেন, সেই কারণে ভূমিতে এবং ভূমির অধিবাসীদের জীবন দান করেন এবং নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির মধ্যে ভালর বিরুদ্ধে শত্রুও সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ভাল এবং ভাল কাজগুলাে তাদের জন্য অপছন্দনীয় বানিয়ে দিয়েছেন আর তাদেরকে কল্যাণ কামনা করা থেকে বাধাগ্রস্থ করে দিয়েছেন, তাদের উপমা ঐ বৃষ্টির ন্যায়, যা আল্লাহ তায়ালা খরায় শুকনাে ভূমির উপর বর্ষণ হওয়া থেকে বারণ করে দিয়েছেন এবং সেই কারণে ভূমি ও ভূমির অধিবাসীদের জীবন বিপন্ন করে
দিয়েছেন।”
(আল মওসুআতু লি ইবনে আবিদ দুনিয়া, কিতাবু কাযায়িল হাওয়ায়িজ, হাদীস নং- ৪, ৪/১৪১।)