প্রিয় ভাই ও বোন! নামায পরিত্যাগ করে আমরা কি নিজেদেরকে প্রকৃত মুমিন ও আশিকে রাসূল বলে দাবি করতে পারি?প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোন! ঈমান ও আকীদা বিশুদ্ধ করে নেওয়ার পর সকল ফরয সমূহের মধ্যে নামায কি সর্বাপেক্ষা বড় ফরয নয়? নামায কি ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নয়? নামায পরিত্যাগ করা কি কবীরা গুনাহ নয় ? নামাযকে ফরয বলে অস্বীকারকারী অথবা নামাযের অবমাননাকারী কি ইসলাম থেকে খারিজ নয়?
যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে কেন নামাযের প্রতি আমাদের এত হিম-শীতল ও নির্মম উদাসীনতা?
ঝা চকচকে নয়নাভিরাম মসজিদ সমুহ কেন এরূপ নামাযী শূণ্য? পঞ্চাশ, পঞ্চাশ একশ ওভারের এক দিবসীয় ক্রিকেট ম্যাচগুলো তো আমরা সাত ঘন্টা ধরে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি কিন্তু নামাযের জন্য দশটা মিনিট সময় আমরা বের করতে পারি না কেন?
ষোল-সতের রিলের হিন্দী সিনেমাগুলি তো আমরা আড়াই-তিন ঘন্টা ধরে এক নিঃশ্বাসে গিলি কিন্তু নামাযের জন্য খানিকক্ষণ মাত্র সময় আমরা বের করতে পারি না কেন?
গেমস খেলার জন্য বা পতিতা বিউটি কুইনদের রূপ-সুধা পান করার জন্য বা কথিত নায়ক-নায়িকাদের নাচ-গান উপভোগ করার জন্য তো আমরা দামী মোবাইলের চওড়া রঙ্গীন স্রীনে ঘন্টার পর ঘন্টা চেতনা-শূণ্য হয়ে মুখ ডুবিয়ে থাকি কিন্তু নামাযের জন্য কয়েকটা মিনিট মাত্র মসয় আমরা বের করতে পারি না কেন?
প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোন! আল্লাহ পাক কি বলেন নি যে, ‘‘এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত রাখে। (সূরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫) তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে, ‘‘কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিযী)
তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে, “ব্যক্তি ও কুফর-শিরকের মাঝে ব্যবধান হল সালাত ত্যাগ করা। (মুসলিম) তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে, “সালাতেই আমার চোখ জুড়ানো শীতলতা নিহিত। (নাসাঈ)
তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে, “যেকোন মুসলমানের জন্য যখন ফরয সালাতের সময় উপস্থিত হয়, অতঃপর সে সুন্দর ভাবে ওয়ু করে এবং সুন্দুর ভাবে রুকু সাজদা করে, এতে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি সে কোন কাবিরা গুনাহ না করে, আর এভাবে সর্বদা চলতে থাকে। (মুসলিম) তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে,“ যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দেয়, জাহান্নামীদের তালিকায় তার নাম জাহান্নামের দরজায় লিপিবদ্ধ করে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (আবু নুয়াইম) তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে, “যে ব্যাক্তি নামায ছেড়ে দেয় সে যেন তার পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ ধংস করে দিল (তাবরানী)। তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি বলেন নি যে,“ফরজ নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দিও না। কেননা যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দেয় সে আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে সরে পড়ে। (ইবনে মাজাহ)।
তাহলে আমরা নামাযের প্রতি এত উদাসীন কেন?
প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোন!
আমরা নিজেদের আশিকে রসূল বলে দাবি করি। এই দাবি কি যথার্থ? আসুন, খানিক আত্ম-বিশ্লেষণ করি। কিছু লোক প্রচার করেন যে, কেবল মহানবীর নির্দেশ পালন করার নামই ইশকে রসূল। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, মহানবীর মির্দেশাবলীর প্রতি উদাসীন থেকে কেবল নিজেকে আশিকে রসূল বলে দাবি করলেই ব্যাস হয়ে গেল! প্রকৃতপক্ষে, এই দুটি ধারণাই ভ্রান্ত। মহানবীর প্রতি প্রগাঢ়তম ও নিবিড়তম আন্তরিক টানও থাকতে হবে, মহা নবীর সীরাত এবং নির্দেশাবলীর অনুসরণও করতে হবে, অধিক হারে মহানবীকে স্মরণও করতে হবে, মহানবীর দীদারের জন্য লালায়িতও থাকতে হবে, মহানবীকে সর্বাধিক তাজীমও করতে হবে, মহানবী যাদের যাদের ভালো বাসতেন এবং ভালো বাসার নির্দেশ প্রদান করেছন,
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইতে এবং আউলিয়ায়ে কেরামকে ভালো বাসতে এবং অনুসরণও করতে হবে, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মঙ্গল কামনা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্টও থাকতে হবে, মহানবীকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র আকিদাও পোষণ করতে হবে। এত কিছুর সমষ্টিগতরূপ হোল ইশকে রসূল। যেখানে কঠোর হাদীস রয়েছে যে, “যে ব্যাক্তি ইচ্ছাপূর্বক নামায ত্যাগ করে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের জিম্মা থেকে মুক্ত।” (এহইয়াউল উলুমুদ্দিন),সেখানে নামায পরিত্যাগ করে আমরা নিজেকে আশিকে রসূল বলে দাবি করি কোন মুখে?
প্রিয় ভাই ও প্রিয় বোন! নামায পরিত্যাগ কারীর শান্তি ভয়াবহতা সম্পর্কে একবার ভেবে দেখুন! সুবিখ্যাত “জান্নাতী জেওর” প্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, “যে ব্যাক্তি নামায পড়বে না,
সে ব্যাক্তি বিরাট গোনাহগার এবং জাহান্নামের আজাবের উপযুক্ত হবে। প্রথমতঃ মুসলিম বাদশাহ তাকে সাবধান করবে এবং শাস্তি দিবে। এরপরেও যদি নামায না পড়ে তাহলে তাকে ততদিন পর্যন্ত বন্দী করে রাখবে যতদিন পর্যন্ত তওবা করে নামায পড়া আরম্ভ না করে। বরং ইমাম মালিক, ইমাম শাফিয়ী এবং ইমাম আহমাদ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর নিকটে বাদশাহে ইসলাম তাকে কতল করার আদেশ প্রদান করবে।(জান্নাতী জেওর আল্লামা আব্দুল মুস্তাফা আজমি, পৃষ্ঠা নং:-৩৯)।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সঠিক রূপে নামায কায়েম করার তৌফিক্ব দান করুন।
আমীন..........
লেখক:- মুফতী মুহাম্মাদ আবুল কালাম আজাদ ক্বাদরী