আসুন, তাসবীহ ও দুআ সমূহের অর্থ বুঝে নামায পাঠ করি!
লেখক:-  মুফতী মুহাম্মাদ আবুল কালাম আজাদ ক্বাদরী
একাগ্রচিত্তে নামায পাঠ করার জন্য নামাযের তাসবীহ ও দুআ সমৃহের অর্থ বুঝা বাঞ্ছনীয়।হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্জালী (রাদিয়াল্লা আনহু) বলেন যে, নামাযে অন্যমনস্কতা দূরীকরণের অন্যতম উপায় হল “নামাযের ভিতর যা পাঠ করা হয় নফসকে বলপূর্বক তা বুঝতে দেওয়া এবং অন্য চিন্তা ত্যাগপূর্বক তাতে লেগে থাকা।” (এহইয়া উল উলুমুদ্দিন)

নিচে নামাযের তাসবীহ ও দুআ সমূহের অর্থ প্রদান করা হল-
(১) জায়নামাযের দুআঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বরস্সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্বী হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
অর্থ:- নিশ্চয় আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্ত বিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

(২) নামাযের আরবীতে নিআতঃ 
নাঅইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা (২ রাকাআত হলে) রাক্য়াতই সালাতিল, (৩ রাকাআত হলে) সালাসা রাক্য়াতই সালাতিল, (৪ রাক্আত হলে) আরবায়া রাকায়াতই সালাতিল, (ওয়াক্তের নাম) ফাজরি/জুহরি/আসরি/মাগরিবি/ইশাই/জুমু য়াতি (কি নামায তার নাম) ফরজ হলে ফারদ্বুল্লাহি/ওয়াজিব হলে ওয়াজিবুল্লাহি/সুন্নাত হলে সুন্নাতু রসূলিল্লাহি/নফল হলে নাফলি। (সমস্ত নামাযেই) তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল ক্বাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা নিআতঃ
 আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বেবলা মুখী হয়ে ফজরের/জোহরের/আসরের/মাগরিবের/ঈশার/জুমআর/বিতরের/তারাবী/তাহাজ্জুদের/ (অথবা যে নামায হয় তার নাম) ২/৩/৪ রাকআত  (যে কয় রাকআত নামায তার নাম) ফরজ/ওয়াজিব/সুন্নাত/নফল নামায পড়ার নিআত করলাম, আল্লাহু আকবার।

(৩) সানা ঃ নাভীর নীচে হাত বাধার পর এই দুআ পড়তে হয়।
উচ্চারণ ঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামাদিকা ওয়াতাবারা কাস্মুকা ওয়াতা আলা জাদ্দুকা ওয়া লাইলাহা গাইরুক।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয়।

(৪) তা’ইয ঃ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম।
অর্থ ঃ বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।
(৫) তাসমিয়া ঃ বিস্মিল্লাহির রহমানির রাহীম।
অর্থ:- আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি পরম দাতা ওদয়ালু।

(৬) রুকুর তাসবীহ ঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম।
অর্থ:- মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্ম ঘোষণা করছি।

(৭) রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়- সামি আল্লাহুলিমান হামিদাহ।
অর্থ:-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন।

(৮) তাহমীদ ঃ রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয় ঃ রব্বানা লাকাল হামদ।
অর্থ:- হে আমাদের প্রভু, সমস্তক প্রশংসা আপনারই।

(৯) সাজাদার তাসবীহ ঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা।
অর্থ:- আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

(১০) তাশহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু ঃ আত্তাহিইয়াতু লিল্লাহি ওয়াসস্বলাওয়াতু ওয়াত্ত্বইয়িবাতু। আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহাননাবিয়ু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিসস্বলিহীন।
আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ:- আমাদের সকল সম্ভাষণ, উপাসনা এবং পবিত্রতা ত্রকমাত্র কআল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহুর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।

(১১)দরূদ শরীফ:  আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়াআলা আলি মুহাম্মাদিন কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা অ আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্তা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মজীদ। 
অর্থ:- হে আল্লাহ! দয়া ও রহমত বর্ষণ করুন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন দয়া ও রহমত বর্ষণ করেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ, বরকত অবতীর্ণ করুন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন বরকত অবতীর্ণ করেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

(১২) দুআয়ে মাসূরা:- আল্লাহুম্মা ইন্নী য্বলামতু নাফসী যুলমান কাসীরাঁও অলা ইয়াগফিরুযয়ুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফুরূর রহীম।
অর্থ:- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আমার নিজের উপর খুব অত্যাচার করেছি এরং আপনি ব্যতীত অন্য কেউ আমার অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না।সুতরাং হে আল্লাহ! অনুগ্রহ পূর্বক আমার অপরাধ ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি সায়ে হোন।
নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল ও করুনাময়।

(১৩) দুআয়ে কুনুত:- বিতরের নামাযে ৩য় রাকআতে সূরা ফাতিহার ও অন্য সূরা পড়ার পর এই দুআ পাঠ করতে হয়।
 উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নুমিনুবিকা ওয়ানাতা ওয়ক্কালু আলাইকা ওয়ানুসনি আলাইকাল খাইর। ওয়ানাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফরুকা, ওয়ানাখ লায়ু ওয়ানাত রুকু মাইয়্যাফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লি ওয়ানাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু ওয়ানারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আযাবাকা ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুল হিক।
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট সাহায্য চাই এবং আপনার কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবলমাত্র আপনার উপরেই ভরসা করি এবং আপনার গুনাবলীর প্রশংসা করি এবং আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি এবং আমরা আপনাকে অবিশ্বীস করি না। যারা আপনার অবাধ্য, তাদেরকে আমরা দূরে রাখি এবং পরিত্যাগ করি।
কেবলমাত্র আপনার জন্য নামায পড়ি এবং সাজদা করি। আমরা আপনার দিকেইদ্রুত ধারিত হই ত্রবং আপনার অনুগ্রহ কামনা করি। আপনার শাস্তিকে আমরা ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার শাস্তি কাফেরদের জন্য অবধারিত।

Top