প্রিয় বন্ধু আমার,
(শাইখ জিলানি রা. ও সূফিত্বকে বুঝতে হলে তার চিঠি পড়তে হবে)
-----

প্রিয় বন্ধু আমার,
তোমার হৃদয় চকচকে আয়না। পলিশ করা। ধূলা পড়ে পড়ে এই আয়নার উপরে পর্দা তৈরি হয়ে যায়। তোমাকে অবশ্যই এ আয়না পরিষ্কার করে রাখতে হবে, কারণ এ আয়নার উদ্দেশ্য হল খোদায়ি রহস্যগুলোকে প্রতিফলিত করা।

“আল্লাহ্ সব আকাশ ও সব জমিনের নূর।(১)” যখন আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে আলো তোমার হৃদয়ের জায়গাগুলোকে ঝকমকিয়ে দিবে, তখনি তোমার হৃদয়ের বাতি উঠবে জ্বলে।

হৃদয়ের বাতি “একটা ফানুসে/ কাচের বাক্সে আছে। আর সেই কাচ যেন জ্বলজ্বলে এক নক্ষত্র(১)”  আর ওই হৃদয়ের ভেতরে ঐশী আবিষ্কারের বজ্র-পথ। এ বজ্র-পথ ধরে বিজলি আছড়ে পড়ে। তোমার এই বজ্র-পথ বিজলি-মেঘের আলোয় ভরপুর হয়ে উঠবে, যখন তুমি বুঝতে পারবে, ওই গাছ আছে “না পূর্বদিকে, না পশ্চিম দিকে, জ্বলে ওঠে বরকতপূর্ণ যাইতুন গাছ(১)” এই আয়াত।
আবিষ্কারের গাছের গায়ে আছড়ে পড়বে তখন বজ্র। এত পরিচ্ছন্ন! এত পবিত্র! এত স্বচ্ছ্ব, যে, “ সেই জ্বালানিকে কোন আগুন স্পর্শ করতে পারে না।(১)”
তখন জ্ঞানের প্রদীপ নিজ থেকে জ্বলে ওঠে।
কীভাবে এটা নিভে থাকবে, যখন আল্লাহ্’র রহস্যগুলোর নূর এর উপর চমকে উঠবে?

যদি শুধু ঐশী রহস্যের আলো ওই বাতির উপর ঝলকে ওঠে, রাতের ওই রহস্য-আকাশ হাজারো তারায় ঝকমকিয়ে উঠবে “এবং তারা দেখে তোমরা পথ খুঁজে পাও (২)” 
শোনো, তারারা আমাদের পথ দেখায় না। পথ দেখায় খোদায়ি আলো। কারণ, আল্লাহ্ নিচের “আসমান তারার সৌন্দর্যে সাজিয়েছেন (৩)”।

যদি শুধু খোদায়ি রহস্যের আলো তোমার হৃদয়ের আয়নায় ঝলকায়, তখনি তোমার ভেতরের সত্ত্বা জ্বলে উঠবে। তারপরই বাকী সবকিছু আসবে। 

আসতে পারে একসাথে পুরোটাই। অথবা আসতে পারে একটু একটু করে। কিন্তু আসবে।

কিছু বিষয় তুমি ইতোমধ্যে জানো। কিছু বিষয় আমি এখানে বলব।

পড়ো,
শোনো, 
বোঝার চেষ্টা করো।

অচেতনতা হল অন্ধকার আকাশ। এই অন্ধকার আকাশ আলোকিত হবে খোদায়ি উপস্থিতিতে। পূর্ণিমার চাঁদে আছে প্রশান্তি আর সৌন্দর্য। এই পূর্ণ চাঁদ দিগন্তের আড়াল থেকে উদিত হবে তোমার আকাশ তারায় আলোকিত হবার পরই। চাঁদ ফেলবে “আলোর উপর আলো (৪)”, উঠতেই থাকবে তোমার আকাশের উপরে, আরো উপরে। ওই চাঁদ তার তাকদিরে লেখা স্তরগুলো পেরিয়ে যেতে থাকবে, যেমনটা আল্লাহ্, “ তার আপন কক্ষপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন (৫)” তারপর সে পূর্ণচন্দ্রই হবে, তোমার মধ্যগগনে প্রতাপের জোছনা ছড়াবে। সরিয়ে দিবে লক্ষ্যহীনতার যত্ত অন্ধকার, তার সবটুকুকে।

“(কসম) রাতের, যখন তা স্থির থাকে (৬)” “(কসম) সকালের প্রতাপশালী আলোর (৭)” তোমার অবচেতনার রাত অবশেষে ভোরের দেখাও পাবে। 

তখন তুমি স্মৃতি মনে পড়ার সুঘ্রাণে বিভোর হবে আর “সকালের প্রথম ক্ষণে তওবা(৮)” করবে। এই তওবা হবে তোমার অতীতের সারাটা জীবন অচেতনতায় কাটানোর আফসোস। সারাটা জীবন ঘুমে কাটানোর আফসোস।

সকাল বেলার বুলবুলির গান শুনবে তখন তুমি। শুনবে, তারা বলছে,  

“তাদের অভ্যাস ছিল রাতে ঘুমানোর কিন্তু অল্প, আর সকালের প্রথম প্রহরে তাদের (পাওয়া যেতো) ক্ষমাপ্রার্থনায়। (৯)”

“আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা আপন আলোর পথ দেখান। (১০)”

তখন তুমি ঐশী কারণের দিগন্তে দেখতে পাবে, ভেতরের জ্ঞানের সূর্য উদিত হচ্ছে। এটা তোমার একান্তই নিজের সূর্য। কারণ তুমিই সে জন, “যাকে আল্লাহ্ পথ দেখান” এবং যারা “আছে সরল সঠিক পথে” এবং তাদের মধ্যে নয় “যারা ভুলে ডুবে আছে। (১১)” 

আর তুমি ওই রহস্য বুঝতে পারবে যে, “ সূর্যকে চাঁদ ধরে ফেলতে দেয়া হয়নি। না রাত পারে দিনকে অতিক্রম করতে। সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তমান।(১২)”

চূড়ান্তে, সবগুলো গিঁট খুলে যাবে। খুলে যাবে জট সেসব নিদর্শনের সহায়তায় “যেসব নিদর্শন আল্লাহ্ মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, আর আল্লাহ্ সবকিছুকে সবচে ভাল জানেন।(১৩)”

উঠে যাবে পর্দা। ভেঙে যাবে খোলস। বেরিয়ে আসবে রুক্ষের অন্তরালে থাকা কোমল। সত্য তার চেহারা থেকে সরাবে অবগুণ্ঠন।

আর এই সব শুরু হবে তোমার হৃদয়ের আয়না পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে। সেই আয়নায় ঠিকরে উঠবে আলো, যদি তুমি চাও।

যদি তুমি চাও তার জন্য। তার কাছে। তার সাথে।

-
টিকা:
১. সূরা নূর, ৩৫
২. সূরা নাহল, ১৬
৩. সূরা সাফফাত, ৬
৪. সূরা নূর, ৩৫
৫. সূরা ইয়া-সিন, ৩৯
৬. সূরা দোহা, ২
৭. সূরা দোহা, ১
৮. সূরা আল ই ইমরান, ১৭
৯. সূরা যারিয়াত, ১৭-১৮
১০. সূরা ‍নূর, ৩৫
১১. সূরা আ’রাফ, ১৭৮
১২. সূরা ইয়া-সিন, ৪০
১৩. সূরা নূর, ৩৫

ইংরেজি করেছেন: শাইখ তোসুন বায়রাক আল-জেররাহি আল-হালভেতি
Top