নূরের নবী-ই দুনিয়ায় এসেছেন মানব ছুরতে
🖋সাইয়্যেদ মুহাম্মদ সাকীউল কাউছার (মাঃআঃ)
—————————————————
হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মহান রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টির সর্বপ্রথম নূরানী সত্ত্বা। নিঃসন্দেহে নবী পাক রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে অর্থাৎ (আল্লাহ্ তা’য়ালা কোন মাধ্যম ব্যতীত কুদরতে কামেলা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন) এবং পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন মানব বংশে নূরানী অতুলনীয় বশরিয়তের ছুরত তথা আকৃতিতে। তাই নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম “নূরানী বশর” বা নূরানী মানব। অর্থাৎ ছুরতে বা আকৃতিতে মানুষ হাকীকতে নূরুল্লাহ।
‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ কিতাবে রয়েছে-
باید دانست کہ خلق محمدی صلی اللہ علیہ وسلم دررنگ خلق سائر افراد انسانی نیست بلکہ بخلقے ھیچے فردے از افراد عالم مناسبت نہ دارد کہ اوصلی اللہ علیہ وسلم باوجود نشاء عنصری از نور حق جل واعل مخلوق گشتہ است کما قال علیہ الصلوۃ والسلام خلقت من نور اللہ
অর্থাৎ ‘জেনে রাখা অতীব প্রয়োজন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লামের সৃষ্টি অপরাপর মানুষের মত নয়। এমনকি কুলকায়েনাত বা সমগ্র সৃষ্টি জগতের কেহই সৃষ্টির মধ্যে তাঁর সাথে কোন প্রকার সাদৃশ্য রাখে না। কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়া সাল্লাম) মানবীয় দেহ বিশিষ্ট হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও আল্লাহ জাল্লা শানুহুর নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। আল্লাহর হাবীব নিজেই ইরশাদ করেছেন-আমি আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছি।’ (মুজাদ্দিদে আলফেসানী, মাকতুবাত, মাকতুব নং-১০০)
হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমাদ ইয়ার খান নঈমী এ বিষয়টির সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন-
نبی جنس بشر مين آتے ہین اور انسان ہی ہوتے ہین جن يا فرشتہ نہین ہوتے یہ دنياوی احكام ہین ورنہ بشریت کی ابتداء آدم عليه السلام سے ہوتی کیونکہ وہ ہی ابو البشر ہین اور حضور عليه الصلاة والسلام اس وقت نبی ہین جبکہ آدم عليه السلام آب وگل مین ہین
অর্থাৎ‘নবী মানব জাতীর মধ্যেই এসে থাকেন এবং মানুষই হন জিন কিংবা ফেরেশতা নন। এটাতো দুনিয়াবী একটি বিধান মাত্র। অন্যথায় মানব জাতীর শুরুই হয়েছে আদম আলাইহিস সালাম থেকে। কেননা তিনি আবুল বাশার (মানব জাতীর পিতা)। আর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম তো ঐ সময় থেকেই নবী হিসেবে ছিলেন যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে একাকার ছিলেন।’ (মুফতী আহমাদ ইয়ার খান নঈমী, জা-আল হক, প্রথম খন্ড)।
স্বয়ং হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
من راني فقد راي الحق অর্থাৎ‘যে আমাকে দেখল, সে হককে তথা আল্লাহকেই দেখল।’
ইমাম ওয়াসেতী (রহঃ) বলেন-
أن البشرية في نبيه عارية واضافة لاحقيقة يعني فظاهره مخلوق وباطنه حق
অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর বাশারিয়াত বা মানবত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং তা (পোষাক স্বরূপ) সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটা (বাশারিয়াত) তাঁর মূল নয়। অর্থাৎ বাহ্যত তিনি মাখলুক, আর বাতেনে তিনি হক তথা আল্লাহর তাজাল্লিয়াতের আয়না স্বরূপ।’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী, রুহুল বায়ান: ৯/২১)
নবী পাকের সৃষ্টি যে মানব জাতী সৃষ্টিরও অনেক আগে, এমনকি সর্ব প্রথম সৃষ্টি তিনি, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এখন তিনি সৃষ্টি হিসেবে সর্বপ্রথম প্রমাণিত, আর নবী হিসেবে কখন থেকে মনোনীত-এ ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রহঃ) এর পূর্বোক্ত বর্ণানাটিই আমাদের জন্য যথেষ্ট তদুপরি নিম্নে হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ পেশ করা হলো।
হযরত ইবনু আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত রয়েছে, তাঁরা বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য নবুয়্যত কখন অবধারিত হয়েছে? জবাবে নবীজী ইরশাদ করেন-
كنت نبيا وادم بين الروح والجسد
অর্থাৎ‘আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম
আলাইহিস সালাম দেহ ও রূহের মধ্যে ছিলেন।’(ইমাম তিরমিজী, ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর; খতিব তিবরিযী, মিশকাত: ৫১৩, ইমাম সুয়ূতী, খাছায়েছুল কুবরা: ১/৩)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
كنت اول النبيين في الخلق واخرهم في البعث
অর্থাৎ‘আমি হলাম সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে নবীদের শেষ।’ (ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২; ইমাম সুয়ূতী, খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫; ইবনু কাছীর, তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০; ইমাম ইবনে আদি, তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩)।
এ প্রসঙ্গে ‘মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক’ কিতাবে বর্ণিত হাদীছ শরীফকে শারিহে সহীহ বুখারী আল্লামা ইমাম আহমদ কস্তালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘মাওয়াহেবে লাদুনিয়া’ কিতাবে জলিলুল কদর সাহাবী, খাদেমে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু হতে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীছে পাক হতে জাতে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর সৃষ্টির বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে। হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুকে সম্বোধন করে হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ياجابر انّ الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره- الحديث
অর্থাৎ হে জাবির! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা সমুদয় বস্তু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর (আল্লাহর) নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। [আল্ হাদীস]
হাদীছে পাকে উল্লেখিত من نوره এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘শরহে মাওয়াহেবে লাদুনিয়া’য় আল্লামা ইমাম যুরকানী আলাইহির রহমা বলেন,
من نوره اى من نور هو ذاته لا بمعنى إنها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الإرادة به بلا واسطة شىء فى وجوده-
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘য়ালা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামকে স্বীয় নূর হতে সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহর প্রকৃত জাত অর্থাৎ স্বীয় জাত কর্তৃক কোন মাধ্যম ছাড়াই প্রিয় নবীকে সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহর যাত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলায়াহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল ধাতু বরং এ অর্থ যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম-এর নূর মোবারক সৃষ্টি করার মধ্যে আল্লাহ্ তা‘য়ালার এরাদা বা ইচ্ছার সম্পর্ক বেলা ওয়াসেতা বা কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। উল্লেখ্য আল্লাহ তা‘য়ালার নূরের অংশ, টুকরা এবং ভাগ হয় না।
এ প্রসঙ্গে আল্লামা ফার্সী আলাইহির রহমা তদীয় ‘মাতালিউল মুসাররাত শরহে দালায়িলুল খায়রাত’ কিতাবে উল্লেখ করেন-
قد قال الاشعرى انه تعالى نور ليس كاالانوار والروح النبوة القد سية لمعة من نوره والملئكة شرر تلك الانورا- الخ
অর্থাৎ আহলে সুন্নাতের অন্যতম ইমাম আল্লামা আবুল হাসান আশআরী আলাইহির রহমা বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘য়ালা হলেন নূর যা অন্য কোন নূরের ন্যায় নয় (যার কোন উপমা ও উদাহরণ নেই), হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র রূহ মুবারক সেই নূরের ঝলক এবং ফেরেশতাগণ ঐ ঝলকের জ্যোতি। আর শায়খ মুহাক্কিক আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী আলাইহির রহমা (ওফাত ১০৫২ হিজরী) তাঁর ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের ৭৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
سيد رسل مخلوق ست از ذات حق وظهور حق دروى بالذات ست
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালিন হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হক তা‘য়ালার জাত (সত্তা) কর্তৃক সৃষ্টি করা হয়েছে। আর হক তা‘য়ালা রাব্বুল আলামীনের বহিঃপ্রকাশ বা বিকাশ তাঁর মধ্যে সত্তাগত ভাবে। হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর عين نور باشد তিনি নিজেই নূর ছিলেন। তাঁর (নবীজির) নূর মুবারক দ্বারা আল্লাহ্ তা‘য়ালা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি আল্লাহর জাতী নূর হতে কোন কিছুর মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়েছে। তার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহর জাত অংশ হয়ে গেছে বা ভাগ হয়ে গেছে।
[আল্ মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া কৃত: ইমাম আল্লামা আহমদ কাস্তলানী রহ., মাদারিজুন নবুয়ত: কৃত শায়খ শাহ্ আবদুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী রহঃ]
আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাজেমী রাহমতুল্লাহ আলাইহি তাঁর ميلاد النبى صلى الله عليه وسلم নামক গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন-
اس حدیث میں نور کی اضافت بیانیہ ہے اور نور سے مراد ذات ہے زرقانی جلد اول صفحہ٤٦ حدیث کے معنی یہ ہے کہ اللہ تعالی نے اپنے حبیب صلی اللہ علیہ وسلم کے نور پاک یعنی اپنی ذات مقدسہ سے پیدا فرمایا اس کے یہ معنی نہیں کہ معاذ اللہ اللہ تعالی کی ذات حضور علیہ السلام کی ذات کا مادہ ہے یا نعوذ باللہ حضور کا نور اللہ کے نور کا کوئ حصہ یا ٹکڑا ہے تعالی اللہ عن ذالک علوا کبیرا-
اگر کسی ناواقف شخص کا یہ اعتقاد ہے تو اسے توبہ کرنا فرض ہے- اس لئے کہ ایسا ناپاک عقیدہ خالص کفر و شرک ہے اللہ تعالی اس سے محفوظ رکھے
অর্থাৎ উক্ত (হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত) হাদিছে নূর এর এজাফত,এজাফতে বয়ানিয়া (বর্ণনামূলক সম্পৃক্ত) আর নূর দ্বারা ذات (যাত) বা সত্ত্বা বুঝানো হয়েছে। (যুরকানী ১/৪৬ পৃষ্ঠা) এখন হাদীছের অর্থ এ যে, আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নূর মুবারক স্বীয় যাত বা সত্ত্বা হতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তার অর্থ এ নয় যে, (মা’য়াজাল্লাহ) আল্লাহ তা’য়ালার যাত বা সত্ত্বা হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর যাত বা সত্ত্বার মাদ্দা। অথবা এ অর্থও নয় যে, (নাউজুবিল্লাহ) হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মুবারক আল্লাহ তা’য়ালার নূরের অংশ বা টুকরো। আল্লাহ তা’য়ালা তা হতে (অর্থাৎ অংশ, টুকরো এবং হুজুরের নূর সৃষ্টির মাদ্দা) পবিত্র ও মহান।
যদি কোন অজ্ঞ লোকের এ বদ আকিদা থাকে (যেমন নবীজির সৃষ্টির মাদ্দা হল আল্লাহ। আল্লাহ তাঁর যাতের অংশ থেকে নূর নবীকে প্রকাশ করেছেন ইত্যাদি) তবে তার উপর তাওবা করা ফরজ। কেননা এরূপ আকিদা কুফুরি ও শিরক। মহান আল্লাহ তা’য়ালা যেন আমাদেরকে এ ধরনের বাতিল আকিদা থেকে হেফাযত রাখেন।
অতএব, উল্লেখিত উদ্বৃতি সমূহ হতে বুঝা গেল যে, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামই হলেন রবের সর্ব প্রথম সৃষ্টি আর সবকিছু মূলতঃ তাঁর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা হলেন সত্ত্বাগত নূর (সৃষ্টি বা উপমা যোগ্য নয় বরং কাদীমি নূর)। আর সেই যাতী নূরের জ্যোতি হতেই নূরে মুহাম্মদী পয়দা। সাথে তাও বুঝা গেল যে, তখনও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম একটি বিশেষ আকৃতিতে ছিলেন। কারণ হুযুর পাকের সিজদা করা এবং সিজদা থেকে মাথা মুবারক উঠানোর কথা স্পষ্ট এসেছে।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম হলেন মানব জাতীর পিতা এবং সর্ব প্রথম মানুষ। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁরও অনেক পূর্বে সৃষ্টি। এ ব্যাপারে আরও একটি স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ’ সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن علي قال: قال رسول الله: كنت نورا بين يدي ربي عز وجل قبل ان يخلق آدم بأربعة عشر ألف عام
অর্থাৎ‘আমি আদম সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বছর পূর্বে আমার রবের নিকট নূর রূপে ছিলাম।’ (ইমাম কসতালানী, আল-মাওয়াহেব: ১/৭৪; ইমাম যারকানী, শারহুল মাওয়াহেব: ১/৯৫; ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালবীয়া: ১/৩০; ইমাম আযলুনী, কাশফুল খফা: ১/২৩৭; ইবনু কাছির, আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া: ২/৪০২।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন ছুরাতের শান-
—————————————————
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর ছুরাত বা আকৃতির ব্যাপারে শায়খ ইসমাঈল হাক্বী (রহঃ) ‘সূরা মারিয়াম’-এর كهيعص এর ব্যাখ্যায় ইমাম কাশেফীর একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, শায়খ রুকুনুদ্দীন আলাউদ্দৌলা সিমনানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ফরমান-
حضرت رسالت را صلی الله عليه وسلم سہ صورتست يكی بشری كقوله تعالی قل انما انا بشر مثلكم (الكهف: ١١٠)دوم ملكی چناكہ فرمودست (لست كأحد ابيت عندی ربی)سيوم حقی كما قال :(لی مع الله وقت لا يسعنی فيه ملك مقرب ولا نبي مرسل)وازين وروشنتر (من رأنی فقد رأي الحق))
অর্থাৎ ‘রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর তিনটি ছুরাত রয়েছে। একটি, বাশারী বা মানবীয় ছুরাত। যেমন, আল্লাহর বাণী- قل انما انا بشر مثلكم অর্থাৎ আপনি বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদের ন্যায় বাহ্যিক আকৃতিতে একজন মানুষ। দ্বিতীয়টি হলো, ফেরেশতার ছুরাত। যেমন, আল্লাহর হাবীব নিজেই এরশাদ করেন- لست كأحد ابيت عندی ربی
অর্থাৎ আমি তোমাদের কারো মতো নই, আমি আমার রবের নিকট রাত্রি যাপন করি। তৃতীয়টি হলো, ছুরাতে হাক্বী বা প্রকৃত ছুরাত। যেমন, হাদীছ শরীফে রয়েছে, নবীজী ইরশাদ করেন-
لی مع الله وقت لا يسعنی فيه ملك مقرب ولا نبي مرسل
অর্থাৎ আল্লাহর সাথে আমার এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে যাতে নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন ফেরেশতা এবং কোন নবী-রাসূল পৌঁছতে পারেনি। এর চেয়েও স্পষ্ট বর্ণনা হাদীছে রয়েছে যে, নবীজী এরশাদ করেন- من رأنی فقد رأي الحق অর্থাৎ যে আমাকে দেখল, সে যেন হককেই দেখল। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ দেখার আয়না স্বরূপ।’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী, রুহুল বায়ান: ৫/৩১৪) অনূরুপ তাফসীরে হোসাঈনীতে উল্লেখ আছে।
নূরে মুহাম্মদীকে সৃষ্টির পর আকৃতি প্রদানের ব্যাপারে আল্লামা ইমাম যুরকানী (রহঃ) বলেন-
ثم جسم صورته علي شكل اخص من ذلك النور
‘অতঃপর নূরে মুহমাম্মদীকে বিশেষ আকৃতিতে মুজাসসাম (শরীর বিশিষ্ট) করা হয়।’ (ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব: ১/৯৫)
আর আহলে সুন্নাতের সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে হুযুর পাকের যে ছুরাতই হোক, সব ক’টিই নূরের; এমনকি মানব আকৃতিও নূরে মুজাসসাম (নূরের শরীর বিশিষ্ট)।
হাফিজুল হাদীছ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) বর্ণনা করেন-
اخرج الحكيم الترمذى عن ذكوان ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولاقمر قال ابن سبع: من خصائصه ان ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس او القمر لا ينظر له ظل- قال بعضهم: ويشهد له حديث قوله صلى الله عليه فى دعائه- واجعلى نورا-
অর্থাৎ ‘হাকিম তিরমিযী হযরত যাকওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর ছায়া না সূর্যের আলোতে দেখা যেত, আর না চন্দ্রের আলোতে। ইবনু সাবা’ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম এর বৈশিষ্ট্য এ যে, নিশ্চয়ই তাঁর ছায়া জমিনে পতিত হতো না, কেননা তিনি ছিলেন নূর। অতএব, তিনি যখন সূর্যের আলোতে অথবা চন্দ্রের আলোতে চলতেন, তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না। কেউ কেউ বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামার ছায়া না থাকার বিষয়টি ঐ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, যা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু‘আয় বলেছেন- হে আল্লাহ! আমাকে নূর করে দাও।’ (ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা: ১/১১৬)
ইমাম যুরকানী (রহঃ) বলেন-
لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمس ولاقمر لانه كان نورا
অর্থাৎ ‘সূর্য চন্দ্রের আলোতে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেহ মুবারকের ছায়া পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন অপাদমস্তক নূর।’ (ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব: ৪/২২০) অনুরূপ বর্ণনা ইমাম কাদ্বী আয়াদ্ব (রহঃ) তাঁর ‘কিতাবুশ শিফা বি তা‘রীফি হুকুকিল মুস্তফা’য়ও বর্ণনা করেছেন।
তারকা রুপে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম-
—————————————————
عَن اَبِى هُرَيرَةَ رَضِىَ اَللَّهُ تَعَلى عَنهُ آَنَّ رَسُولَ اللَّهٌ عَلَيهِ وَسَلَّمَ سّآَلَ جِبرِبلَ عَلَيهِ السَّلاَمُ فَقَالَ يَا جِبرَايلُ كَم عُمُرَكَ مِنَ السِّنِينَ؟ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ لَستُ آَعلَمُ غَيرِ أَنَّ فِى الحِجُابِ الرَّابِعَ نَجمًا يَّطلَعُ فِي كُلِّ سَبعِينَ آَلفِ سَنَةٍ مَرَّةً رَأَيتُهُ اِثنَينِ وَ سَبعِينَ اَلفِ مَرَّةٍ فَقَالَ يَا جِبرَيِلُ َو عِزَّةُ رَبِّى جَلَّ جَلَا لُه‘ اَنَا ذَالِكَ الكَوكَبُ-
অর্থঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জিবারঈল আলায়হিস সালামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রাঈল! তোমার বয়স কত? উত্তরে জিব্রাঈল বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো সঠিক জানি না। তবে আল্লাহ’র কসম! এতটুকু বলতে পারি (সৃষ্টি জগত সৃষ্টির পূর্বে) আল্লাহ তায়‘লা নূরানী আযমতের পর্দা সমূহের চতুর্খ পর্দায় একটি নূরানী তারকা সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হত। আমি আমার জীবনে সেই নূরানী তারকা বাহাত্তর হাজার বার উদিত হতে দেখেছি। অতঃপর নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন মহান রাববুল আলামীনের ইজ্জতের কসম করে বলছি, সেই অত্যুজ্জ্বল নূরানী তারকা আমিই ছিলাম। (সীরাতে হালাভীয়া পৃষ্ঠা ৪৯, তাফসীরে রুহুল বয়ান, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৪৩) আল্লামা ইউসূফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার: ৭৭৬)।
ময়ূর রূপে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
—————————————————
ইমাম আল গাজ্জালী রহঃ তাঁর রচিত ‘দাকায়েকুল আখবার’ কিতাবে উল্লেখ করেন-¬
عَن مَّعمَر عَن الزُّهرِى عَن السَّائِبِ بنِ يَزيدُ قَلَ اِنَّ اللَّهَ تَعَلَى خَلَقَ شَجَرَةٌ وَّلَهَا اَربَعَةً اَغصَانٍ فَسَمَّاهَا شَجَرَةَ اليَقِينِ- ثًمَّ خَلَقَ نًورَ مًحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ فِى حِحَابٍ مِّن دُرَّةٍ بَيضَاءَ مِثلُهً كَمَثَلِ الطَّاوُوُسِ وَ وَضَعَهُ عَلَى تِلكَ الشَّرَةِ فَسَبَّحَ عَلَيهَا مِقدَارَ سَبعِينَ اَلفِ سَنَةٍ ثُمَّ خَلَقَ مِرأَةُ الحَيَاءِ وَ وَضَعَهَا بِاِستِقبَالِهِ فلَمَّا نَظَرَ الطَّاوُؤسُ فِيهَا رَأَى صُورَتَهُ أَحسَنُ صُورَةِ وَأَرِينَ هَيئةِ فَاستَحىِ مِنَ اللَهِ فَسَجَدَ خَمسَ مَرَّاتٍ فَصَارَتُ عَلَينَا تِلكَ الشَّجَرَاتِ فَرَضًا مُّؤَقَّتًا فَاَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى بِخَمسِ صَلَوَاتِ عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اَللَّهُ عَمَيهِ وَ سَلَّمَ وَاُمَّتِهِ—(الخ)
অর্থাৎ হযরত সায়েব বিন ইয়াযিদ বলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’য়ালা চার শাখা বিশিষ্ঠ একটি বৃক্ষ সৃষ্টি করে এর নাম রাখলেন “শাজারাতুল ইয়াকীন”। অতঃপর নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্বেত মুতির পর্দায় ময়ূররূপে গঠন করলেন। অতঃপর সেখানে সত্তর হাজার বছর পর্যন্ত নূরে মূহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ’র তাসবীহ পাঠরত ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ সুবহানাহু তা’য়ালা লজ্জার আয়না সৃষ্টি করে তাঁর সামনে রাখলেন। যখন ঐ আয়নায় ময়ূররূপী নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আকৃতিতে অত্যধিক সৌ্নদরয্য মন্ডিত দেখলেন,তখন তিনি আল্লাহ’র নিকট লজ্জিত হয়ে পাঁচবার সিজদা করলেন। আর ঐ সিজদা আমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ হয়ে গেল। আল্লাহ্ তা’য়ালা নবী পাক এবং তাঁর উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন (শেষ পর্যন্ত)। (ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, আল মুসান্নাফ,আল জুযাউল মাফকুদঃ ৫১,৫৩-ইমাম গাজ্জালী,দাক্বায়েকুল আখবারঃ৯)।
মাজহারে নূরে খোদা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম-
—————————————————
মূলতঃ নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম হলেন রবের রুবুবিয়াত তথা আল্লাহ্ পাকের জালালী ও জামালী তাজাল্লীর প্রকাশস্থল।
এ ব্যাপারে আল্লামা ইসমাইল হাক্বী (রহঃ) বলেন-
الحاصل ان الله تعالى جعل نبيه صلي الله عليه وسلم مظهرا لكمالاته ومرأة لتجلياته ولذا قال عليه السلام من راني فقد راي الحق
অর্থাৎ‘সারকথা হল, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীয় কামালাতের প্রকাশস্থল এবং তাঁর তাজাল্লিয়াতের আয়না করেছেন। আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে আমাকে দেখল, সে হক বা আল্লাহকেই দেখল।’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী, রুহুল বায়ান: ৯/২১)
তাফসীরে আরাঈসুল বয়ান প্রথম খন্ড ১২০ পৃষ্টায় নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ আছে-
( لَقَد مَنَّ اللَّهُ غَلَى المُؤمِنِىنَ اِذ بَعَثَ فِىهِم رَسُولاً مِّن اَنفُسِهِم ) كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ مِرأَةُ الحَقِّ يَتَجَلَّى بِجَلَالِهِ وَ جَمَالِهِ لِلاُمَنَاءِ وَالصِّدِّبقِبنَ مِنهُ يُرِيدِونَ اللَّهَ بِرُؤيَتِهِ لِقَولِهِ عَلَيهِ السَّلَامُ مَن رَأَنِى فَقَد رَأَى الحَق………………….اِلَّا المَعصُومُونَ-
অর্থাৎ (লাক্বাদ মান্নাল্লাহু আলাল মু’মেনীনা ইজ বা’য়াছা ফীহিম রাসূলাম মিন আনফুসিহিম) এই আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় যা লিখেছেন এর সারমর্ম হলো-নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আল্লাহ্ পাকের আয়না স্বরূপ। আল্লাহ্ পাকের জালাল ও জামাল তাঁর মধ্যে বিকশিত। বিশ্বাসী ও সত্যবাদীরা আল্লাহ’কে দেখেন তাঁকে দেখার মাধ্যমে। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “যে আমাকে দেখলো সে (হক্ব) আল্লাহ’কেই দেখলো”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৃষ্টিই আল্লাহ্ পাকের বান্দাদের জন্য অনূগ্রহ। কেননা যদি আল্লাহ্ তা’য়ালা সর্বপ্রথমই সৃষ্টির প্রতি তাজাল্লী (জ্যুতি) দিতেন, তাহলে তাঁর আযমত তথা মহত্ত্বের প্রথম তাজাল্লীর দ্বারাই সব জ্বলে যেত। সেজন্য আল্লাহ্ অনূগ্রহ করে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামকে তাজাল্লীর মাধ্যম করেছেন।মু’মেনগণের নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় অনুগ্রহ আর কি হতে পারে যে, তিনি হলেন সৃষ্টির জন্য আল্লাহ’র জামাল দেখার স্থল, তাঁর নাম ও গুনাবলী অবগত হওয়ার মাধ্যম, ধ্বংসশীলদের ধ্বংসের কারণ এবং মুক্তি প্রাপ্তদের আশ্রয়স্থল। কতেক মাশায়েখে কেরাম বলেছেন-সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ’র বড় অনুগ্রহ হল যে, তিনি নবী আলাইহিমুস সালাগণকে মধ্যম বানিয়েছেন যেন তাঁরা উম্মতদেরকে আল্লাহ্ পর্যন্ত পোঁছে দিতে পারেন। কেননা তিনি যদি তাঁর গুণের এক অনু পরিমাণও সৃষ্টির প্রতি প্রকাশ করতেন, তাহলে নবীগণ ব্যতীত সব কিছুই জ্বলে যেত ধ্বংস হয়ে যেত। সুবহানআল্লাহ!
এ জন্যই আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবীবের শানে বলেন “রাহমাতাল্লিল আলামিন” বা সমস্ত আলমের (জগতের) জন্য রহমত হলেন হুজুর রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম।
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ