করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে কি কি আমল করবেন? 
সম্মানিত মুসলিম সমাজ!
বর্তমান সারা বিশ্বের বিস্ময়কর অবস্থা আপনার কাছে গোপনীয় নয়। আপনারা সবাই অবগত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে আল্লাহতালা তরফ থেকে একটি গজব ও মুসিবত। এই মুসিবত থেকে রক্ষার্থে বহু মানুষ বহু রকম পরিকল্পনা করছেন তবে আমাদের জানা উচিত আমাদের প্রতি মুসিবত কেন আসে??

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কোরানুল মাজিদ সূরা শূরা আয়াত নং ৩০ এ বলেন,
وَمَا أَصَابَکُم مَّن مُّصِیبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتْ أَیٔدِ یکُمْ وَیَعْفُو عَن کَثِیر
অর্থাৎ: তোমাদের প্রতি যা মুসিবত আসে তা তোমাদের গুনাহের কারণেই আসে।

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কোরানুল মাজিদ সূরা রুম আয়াত নং ৪১ এ বলেন,
ظَھَرَ الٔفَسَادُ فِي الٔبَرِّ وَ الٔبَحْرِ بِمَا کَسَبَتْ أَیٔدِی
النَّاسِ لِیُذِ یقَھُم بَعْضَ الَّذِی عَمِلُوالَعَلَّھُمْ یَرْ جِعُونَ
অর্থাৎ: ছড়িয়ে পড়েছে অশান্তি ও ব্যাধি-স্থলে ও জলে ওই সব কুকর্মের  কারণে যেগুলো মানুষের    হাতগুলো অর্জন   করেছে,    যাতে    তাদেরকে    তাদের    কোন  কোন কর্মের  স্বাদ গ্রহণ  করান, যাতে  তারা  ফিরে আসে।
পূর্ববর্তী ইতিহাস জানলে আপনি বুঝতে পারবেন, যখন যখন এই পৃথিবীতে গুনাহ বেশি হয়েছে তখনই আল্লাহর তরফ থেকে কোনো না কোনো মুসিবত এসেছে।।
তাই আমাদের এখন কর্তব্য হলো: আল্লাহর দরবারে নিজেকে নত করা এবং পূর্বের সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহ তাআলা এবং তার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তার প্রতি আমল করা। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজকে সঠিক মত আদায় করা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামাজ পরিত্যাগ করে সে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের যিমমা থেকে বের হয়ে যায়। (হুলিয়াতুল আউলিয়া, তারগীব ওয়া তারহীব)  অতঃপর আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোয়া প্রার্থনা করা। সমস্ত ফরজ ও জরুরী আমল সম্পন্ন করার পর বাকি সময়টুকু তার প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাট করা। কারণ, আল্লাহ তাআলার এবাদত এর পর আমরা যদি বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি তাহলে তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে। বালা মুসিবতের সময় সর্বাধিক দরুদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ আমাদেরকে আজ থেকে প্রায় 15 শত বছর পূর্বে নাবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম দিয়ে গেছেন। এবং এটাও বলেছেন যে, যারা সবচেয়ে বেশি আমার প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত মুসিবত এবং চিন্তা দূর করবেন। আসুন এই প্রসঙ্গে আমরা একটি হাদিস পাঠ করি।।
হযরত উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে দাড়িয়ে বলতেনঃ হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা'আলাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহ্ তা'আলাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরূদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরূদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর।
আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরূদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার উপর দরূদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তাহলে তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।
হাদীসটি বিভিন্ন গ্রন্থে হাসান ও সহীহ সনদে বর্ণিত।
((তিরমিযী, মিশকাত ও মুস্তাদরাক))
তাই সমস্ত মুসলিমদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো এই করোনা ভাইরাস কে দূরে সরানোর উদ্দেশ্যে ও বালা মুসিবত দূর করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন এবং পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ সঠিক মত আদায় করুন ও বসে বসে কোন খারাপ কাজে মগ্ন না হয়ে নাবিয়ে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করুন ইনশাআল্লাহ আমাদের উপর থেকে বালা মুসিবত দূর হয়ে যাবে।
 ইতি
মুফতী আমজাদ হোসেন সিমনানী
Top