আমিরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম'আতের আকিদা

❏ প্রমাণ ১ :

وفي رواية للبخاري عن ابن عباس رضي الله عنه قال:
انه اي معاوية رضي الله عنه فقيه.
ইমাম বুখারি (رحمة الله)'র বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) হযরত মোয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে ফকিহ বলেছেন। [ইমাম বুখারিঃ বুখারি শরিফ]

❏ প্রমাণ ২ :

قال رسول الله صلی الله عليه وسلم : لا تسبوا اصحابي.رواه البخاري
প্রিয়নবি (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: তোমরা আমার সাহাবিদের গালি দিয়ো না। [ইমাম বুখারিঃ বুখারি শরিফ]

❏ প্রমাণ ৩ :

١.قال الامام ابو حنيفة في الفقه الاكبر:ولا نذكر الصحابة
الا بخير-
ইমাম আযম, ফিকহুল আকবর গ্রন্থে বলেন: আমরা (আহলে সুন্নত) শুধুই সাহাবিদের গুণাবলিই বর্ণনা করব।
[ইমাম আজমঃ ফিকহুল আকবর]

❏ প্রমাণ ৪ :

٢.قال ملا علي قاري في شرح الفقه الاكبر:وان صدر من بعدهم بعض ما صدر في صورة شرّ فانه كان عن اجتهاد ولم يكن علي وجه فساد.

(ইমাম আযমের কথার ব্যাখ্যায়) মোল্লা আলি ক্বারি, শরহে ফিকহুল আকবর গ্রন্থে বলেন: যদিওবা কোন কোন সাহাবি থেকে এমন কোন বিষয় প্রকাশ পেয়েছে যা বাহ্যত দেখতে মন্দ মনে হয়; কিন্তু এইগুলো ইজতিহাদের কারণে ছিল, ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণে ছিল না।
[মোল্লা আলি ক্বারি (رحمة الله),শরহে ফিকহুল আকবর]

❏ প্রমাণ ৫ :

٣.وفي غنية الطالبين:واما قتاله لطلحة والزبير وعاءشة ومعاوية فقد نص الامام احمد علي الامساك عن ذالك وجميع ما شجر بينهم من منازعة ومنافرة وخصومة.

গুনিয়াতুত তালিবিন কিতাবে বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) উল্লেখ করেন: হযরত আলি (رضي الله عنه)'র সাথে হযরত তালহা, যোবাইর, আয়েশা সিদ্দিকা, মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র মধ্যকার যুদ্ধ সম্পর্কে ইমাম আহমদ (رحمة الله) ব্যাখ্যা দিয়েেছন যে, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যকার যুদ্ধ, বিরোধিতা ইত্যাদি নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
[গুনিয়াতুত তালেবীন ও মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.]

❏ প্রমাণ ৬ :

٤.قال الغوث الاعظم في غنية الطالبين: اتفق اهل السنة علي وجوب الكف عما شجر بينهم والامساك عن مساويهم واظهار فضاءلهم ومحاسنهم وتسليم امرهم الي الله تعالی علي ما كان وجری من اختلاف علي وعاءشة ومعاوية وطلحة والزبير رضي الله عنهم علي ما قدمناه واعطاء كل ذي فضل فضله.

হুজুর গাউসে পাক (رحمة الله) বলেন: আহলে সুন্নাতের সবাই একমত যে, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যকার যুদ্ধের ব্যাপারে বাদানুবাদ করা ও তাদেরকে মন্দ বলা থেকে বিরত থাকা ,তাদের ফযিলত সমূহ ও গুণাবলি প্রকাশ করা ওয়াজিব। তাদের বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা হবে। বিশেষত যা ঘটেছে হযরত আলি এবং হযরত আয়েশা, মুয়াবিয়া, ত্বালহা, যোবায়র (رضي الله عنه)'র মধ্যে যা আমি ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি। আর প্রত্যেক সম্মানিত ব্যাক্তিকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত।
[হুজুর গাউসে পাক (رحمة الله), গুনিয়াতুত ত্বালিবিন]

❏ প্রমাণ ৭ :

٥.قال الامام الغزالي في احياء علوم الدين: واعتقاد اهل السنة تزكية جميع الصحابة والثناء عليهم كما اثنی الله سبحانه وتعالی ورسوله ﷺ وما جری بين معاوية وعليّ رضي الله عنهما كان مبنيا علي الاجتهاد لا منازعة من معاوية في الامامة.

ইমাম গাযালি (رحمة الله) বলেন: আহলে সুন্নত ওয়াল জাম'আতের আকিদা হল, সাহাবায়ে কেরামের পবিত্রতা ও গুণাগুণ বর্ণনা করা যেভাবে আল্লাহ ও তার রাসুল (ﷺ) বর্ণনা করেছেন। আর আমিরে মোয়াবিয়া (رضي الله عنه) ও মওলা আলি (رضي الله عنه) মধ্যে দ্বন্দ্ব ইজতেহাদি ছিল। মোয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র পক্ষ থেকে নেতৃত্বের জন্য ছিল না। (ইমাম গাযালি (رحمة الله), ইহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন)

❏ প্রমাণ ৮ :

٦.قال الامام الطحاويّ في عقيدته: لا نذكر الصحابة الا بجميل وحبهم دين وايمان واحسان وبغضهم كفر ونفاق وطغيان ومن ذكرهم بسوء فهم علي غير السبيل.

ইমাম ত্বহাবি (رحمة الله) বলেন: আমরা (আহলে সুন্নত) শুধু সাহাবিদের গুণাবলি বর্ণনা করব। তাদেরকে ভালবাসাই হল দ্বীন, ঈমান, ইহসান। আর তাদেরকে ঘৃণা করা হল কুফরি, মোনাফেকি ও সীমালঙ্ঘন করা। যে তাদের দোষ বর্ণনা করে সে পথভ্রষ্ট।
(ইমাম ত্বহাবি (رحمة الله) আকিদাতুত ত্বহাবি)

❏ প্রমাণ ৯ :

٧.ابن حجر العسقلاني عن ابي زرعة الرازي انه قال: اذا رايت الرجل انه ينقّص احدا من اصحاب رسول الله صلی الله عليه وسلم فاعلم انه زنديق.

ইমাম ইবনে হাজর আসকালানি (رحمة الله) ইমাম আবু জুরআ আর্ রাজি (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন তুমি দেখবে কোন লোক কোন সাহাবির শান কমাচ্ছে তাহলে জেনে রাখ সে একজন যিনদিক। (ইমাম ইবনে হাজর (رحمة الله), আল-ইসাবাহ)

❏ প্রমাণ ১০ :

٨.نقل ابن همام قول السبكي رحمه الله انه قال: نبرا الي الله تعالی من يطعن في الصحابة ونعتقد ان الطاعن علي ضلال مهين وخسران مبين.وهذه كلمات من اعتقد خلافها كان علي زلل و بدعة.

ইমাম ইবনুল হুম্মাম (رحمة الله) ইমাম সুবকি (رحمة الله)'র কথা নকল করেছেন, তিনি বলেন, যারা সাহাবিদের সমালোচনা করে তাদের থেকে আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ চাই এবং আমরা বিশ্বাস করি যে নিশ্চয় সমালোচনা কারি স্পষ্ট পথভ্রষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত। আর যে এর বিপরীত আকিদা রাখে সে গোমরাহ ও বিদআতি।
(ইমাম ইবনুল হুম্মাম, তাহরিরুল উসুল)

❏ প্রমাণ ১১ :

٩.قال الامام القاضي عياض رحمه الله في الشفاء: الامساك عمن شجر بين الصحابة ومعاداة من عاداهم ولا يذكر احدا منهم بسوء بل يذكر حسناتهم وفضاءلهم وحميد سيرهم.

ইমাম ক্বাযি আয়ায (رحمة الله) বলেন: সাহাবিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা এবং তাদের সাথে শত্রতা করা যারা সাহাবিদের সাথে শত্রুতা রাখে। আর কেউ সাহাবিদের দোষ বর্ণনা করবে না বরং তাদের গুণাবলি, ফযিলত ও প্রশংসনীয় দিকগুলি বর্ণনা করবে। (ইমাম ক্বাযি আয়ায (رحمة الله), আশ-শিফা)

❏ প্রমাণ ১২ :

١٠.قال الامام مالك بن انس رحمه الله : من ابغض
الصحابة وسبّهم فليس له في فيء المسلمين حق.

ইমাম মালেক বিন আনাস (رحمة الله)বলেন, যে সাহাবিদের ঘৃণা করে ও গালি দেয় ইসলামে তার কোন অংশ নাই। (ইমাম মালেক (رحمة الله), আশ-শিফা থেকে)

❏ প্রমাণ ১৩ :

١١.قال الامام القسطلاني رحمه الله في شرح البخاري:
معاوية رضي الله عنه ذو المناقب الجمة

ইমাম ক্বাসতুলানি (رحمة الله) বলেন, হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) প্রশংসনীয় গুণের অধিকারী।
(ইমাম ক্বাসতুলানি (رحمة الله), শরহে বুখারি)

❏ প্রমাণ ১৪ :

١٢.قال الامام اليافعي رحمه الله: كان معاوية رضي الله
عنه حليما كريما ساءسا عاقلا. كتاب الناهية

ইমাম ইয়াফেয়ি (رحمة الله) বলেন: হযরত আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) ভদ্র, দয়ালু, বুদ্ধিমান ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। (ইমাম ইয়াফেয়ি (رحمة الله), কিতাবুন্নাহিয়াহ)

❏ প্রমাণ ১৫ :

মুজাদ্দিদে আলফে সানি (رحمة الله) বলেন, সাহাবিদের মধ্যে যে যুদ্ধ কিংবা ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে তা মনের কুপ্রবৃত্তির কারণে ছিলনা। কারণ সাহাবায়ে কেরামের আত্মাসমূহ রাসুল (ﷺ)'র পবিত্র সংশ্রবের বরকতে পবিত্র হয়ে গিয়েছিল এবং জুলুম-উৎপীড়ন থেকে মুক্ত ছিল। আমি এতটুকু জানি যে, ঐসব যুদ্ধে মওলা আলি (رضي الله عنه) হক্বের উপর ছিলেন ও তার বিরোধীগণ ভুল ধারণায় ছিলেন। কিন্তু এ ভুল ইজতিহাদি ছিল যা গুণাহের পর্যায়ে পড়ে না। তাছাড়া এখানে দোষারোপ করারও কোন অবকাশ নেই। কেননা মুজতাহিদ তার ভুলের জন্যও একটা সওয়াব পান।
(মুজাদ্দিদে আলফে সানি (رحمة الله), মকতুব শরিফ)

❏ প্রমাণ ১৬ :

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (رحمة الله) হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র অনেক প্রশংসা করেছেন এবং হযরত মোয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে সমস্ত মোমিনের মামা বলেছেন। (মাওলানা রুমি (رحمة الله), মসনবি শরিফ)

❏ প্রমাণ ১৭ : (একটা ঘটনা)

عن عمر بن عبد العزيز قال: رايت رسول الله ﷺ في المنام وابو بكر وعمر جالسان عنده فسلمت وجلست فبينا انا جالس اتي علي ؓومعاوية ؓ فادخلا بيتا واجيف عليهما الباب وانا انظر فما كان باسرع من ان خرج علي وهو يقول : قضي لي ورب الكعبة .وما كان باسرع من ان خرج معاوية وهو يقول : غفر لي ورب الكعبة.
٭٭٭اخرجه ابن ابي الدنيا في المنامات 
٭٭٭ابن عساكر في  تاريخ دمشق
٭٭٭ابن القيم الزوجي في كتاب الروح

হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসুল (ﷺ)কে সপ্নে দেখলাম। পাশে আবু বকর (رضي الله عنه) ও ওমর (رضي الله عنه) বসা ছিলেন। অতঃপর আমি সালাম দিলাম ও বসে পড়লাম। হঠাৎ মওলা আলি (رضي الله عنه) ও হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) আসলো। তাদেরকে রাসুল (ﷺ) একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। কিছুক্ষণ পর মওলা আলি বের হলেন এবং বলতে লাগলেন: কাবার রবের শপথ আমার পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে। আবার হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) বের হলেন এবং বলতে লাগলেন: কাবার রবের শপথ আমাকে ক্ষমা করা হয়েছে।
●ইবনে আবিদ্দুনয়া, আল-মানামাত
●ইবনে আসাকির, তারিখে দামেস্ক
●ইবনে কায়্যিম জওযি, কিতাবুর রুহ

                      ۝শেষ কথা۝
হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)'র প্রশংসা করার কারণে কেউ যদি ইমামে আহলে সুন্নত আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা (رحمة الله)'র বিরুদ্ধাচরণ করে সে মূলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সকল ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধাচরণ করে। কেননা আ'লা হযরত (رحمة الله) আকাবিরের অনুসরণ করেছেন মাত্র। তবে আমরা এটা বিশ্বাস করি যে শেরে খোদা মওলা আলি (رضي الله عنه)'র মর্যাদা হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) থেকে অনেক অনেক বেশি। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه) ও হযরত ওসমান (رضي الله عنه)'র পর মাওলা আলী (رضي الله عنه)'র মর্যাদা।

           মসলকে আ'লা হযরত জিন্দাবাদ। 
Top