করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দিনের চিকিৎসা সেবা নিয়ে এখন সর্বত্রই চলছে প্রশংসা আর প্রশংসা। কিছু জিনিষ গোপন ছিলো, তা এখন লোক মুখে বের হচ্ছে। এরমধ্যে ছিলো প্রতি শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে ফ্রি রোগী দেখা।
এমনকি ওই দিন কোন স্বজন বা বন্ধু বান্ধবদের বিয়ে থাকলেও সেথায় যাইতে না তিনি। তাঁর কাছে ফ্রি রোগী দেখা আর মানব সেবা করাটাই ছিলো সবচেয়ে বড়। ছাতকের নাদামপুর গ্রামের মুসলমান বলেন আর হিন্দু বলেন সবাই এখন তাঁর মৃত্যুতে মর্মাহত ও শোকাহত। মৃত্যু সংবাদ শুনে কেঁদেছেন অনেকেই।তিনি ছিলেন গরীবের ডাক্তার।
সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাতক হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে প্রমোশন পেয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন।
এছাড়া তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস, কার্ডিওলজি বিষয়ে এমডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
ডাঃ মঈন উদ্দিন চিকিৎসা সেবায় যোগদানের পর থেকে প্রতি শুক্রবার তার গ্রামের বাড়ি নাদামপুরে এলাকার রোগীদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবা চালু করেন। এছাড়া সিলেটে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতেন সেখানেও এলাকার লোকজনকে অনেকটা ফ্রিতেই চিকিৎসা সেবা দিতেন। ফলে সবার কাছে ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসাবে পরিচয় লাভ করেন।
মঈন উদ্দিনের পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তার একমাত্র ছেলে সন্তান ছিলেন ডা. মঈন। তিন বোন রয়েছে ডাক্তারের। তার স্ত্রীও একজন ডাক্তার। ডা. মঈন উদ্দিনের দম্পত্তির দুই সন্তানও রয়েছে। ডাক্তারি পেশায় যোগদানের পর তিনি এলাকার মানুষদের ভুলে যাননি।
পল্লী চিকিৎসক পিতা মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন ছেলে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পল্লী চিকিৎসক বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে এলাকায় ছুটে আসতেন। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানুষ মানুষের সেবা করতে গিয়েই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে মারা গেছেন।
এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া বলেন, ‘এলাকার অসহায় হিন্দু-মুসলিম সবাই ডা. মইনুদ্দিনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সেবা পেয়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এসে তিনি এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দিতেন। বিনা ফিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কম্পানি প্রদত্ত ওষুধও বিলিয়ে দিতেন।’
এলাকার মুরুব্বী সোহেল আহমদ বলেন, ‘ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোন রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন। মানুষের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার করতেন যাতে রোগীর রোগ অধেক কমে যেতো। মানুষের সেবা করতে গিয়েই মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। এমন মানুষের মৃত্যু নেই। তার কর্মেই তিনি বেচে থাকবেন।’
ডাক্তার মঈন উদ্দিনের গ্রামের বাসিন্দা গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি বিনামূল্যে সেবা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে মানুষ কাঁদছে।’
Source: surmardak24.com