আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযি.) বলেন, প্রত্যেক বিপদেই ৩টি নেয়ামত আছে:
.
(১) বিপদ আরও কঠিন হতে পারত
(২) বিপদ দুনিয়াতেই মিটে গেছে
(৩) দুনিয়াবি বিষয়ের ওপর এসেছে
.
এগুলো কীভাবে নেয়ামত?
.
(১) বিপদ আরও কঠিন হতে পারত
প্রত্যেকটি বিপদেরই দুটো অবস্থা আছে। একটি কম, আরেকটি বেশি। যার একটি হাত কাঁটা পড়েছে, তার দুটো হাতই যেতে পারত। যার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, তার দুটো চোখই নষ্ট হতে পারত। যার পরিবারের একজন মারা গেছে, তার পরিবারের সকলেই মারা যেতে পারত। নিজের ওপর আসা বিপদকে আমরা যত বড় করেই দেখি না কেন, বিপদের আরও খারাপ অবস্থা আছে। কাজেই জীবনে যত বিপদ আপদই আসুক, এই কথাগুলো মনে রাখুন। বিপদকালে অভিযোগ না করে বরং বিপদের মাত্রা নিয়ে ভাবুন। এটি আপনাকে ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর প্রতি শোকর আদায়ে উদ্বুদ্ধ করবে।
.
(২) বিপদ দুনিয়াতেই মিটে গেছে
ইমাম ইবনুল-জাওযী (রহ.) বলেন, 'আমাদের জীবনে অধিকাংশ বিপদ আপদ আমাদের পাপের কারণে আসে।' [সাইদুল খাতির]
কেন আসে? আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেন,
'একজন মুসলিম যে কোনো কষ্ট-ক্লেশ, দুশ্চিন্তা, পেরেশানি ও নির্যাতনের সম্মুখীন হোক না কেন, এমনকি সামান্য কাঁটাবিদ্ধ হলেও আল্লাহ তার বিনিময়ে তার পাপ মোচন করে দেন।' [সহীহ বুখারী, ৫৬৪১]
.
আমরা প্রত্যহ পাপ করি। সকাল বিকাল, উঠতে বসতে গুনাহ হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাওবাহ না করি, ততক্ষণ পর্যন্ত এই পাপ আমাদের জন্য লাঞ্ছনা হয়ে থাকে। এগুলো আমাদের রূহের অপবিত্রতা। অপরদিকে জান্নাত পবিত্র স্থান। সেখানে অপবিত্রতার লেশ মাত্র নেই। আর তাই প্রত্যেক পাপ থেকে ব্যক্তিকে দুইভাবে পরিশুদ্ধ করা হয়: (ক) দুনিয়াতেই বিপদ আপদ বান্দাকে গ্রাস করবে। ফলে আখিরাতের জীবনে বান্দা একদম পরিশুদ্ধ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে; অথবা (খ) আখিরাতের জন্য জমা রাখা হবে। ফলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে পরিশুদ্ধ হয়ে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
কাজেই দুনিয়াতে বান্দার ওপর যত বিপদ আসে, সেটা আল্লাহর দয়ার সাক্ষ্য হয়েই আসে। কারণ, আখিরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার এই ক্ষণিকের বিপদ অত্যন্ত ঠুকনো।
.
(৩) দুনিয়াবি বিষয়ের ওপর এসেছে
আমাদের ওপর আসা বিপদগুলোকে যদি আমরা ভালো করে দেখি, তাহলে অধিকাংশ বিপদই দুনিয়াবি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত পাবো। আসলে এগুলো প্রকৃত অর্থে বড় বিপদ নয়। বরং একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় এবং ধ্বংসাত্মক বিপদ হলো, তার দ্বীনের ওপর আসা বিপদ। যখন দ্বীন ফিতনার সম্মুখীন হয়, তখন ব্যক্তি মুমিন থেকে মুনাফিকের স্তরে নেমে যায়। মুসলিম থেকে মুরতাদ কাফিরে পরিণত হয়। মুহসিন থেকে যালেমের কাতারে চলে যায়। ফলে দুনিয়াতে হয় লাঞ্ছিত, অভিশপ্ত, আর আখিরাতে চিরস্থায়ী আযাব তো অপেক্ষমাণ আছেই।
.
তাই বলে কি আমরা বিপদ কামনা করব? না, বরং সুসময়, দুঃসময় প্রত্যেক অবস্থাতেই নবীজির শেখানো এই দুআটি বেশি বেশি পড়ব:
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
'ও আল্লাহ, আমি আপনার কাছে মাফ চাই, দুনিয়া এবং আখিরাত—উভয় জাহানেই আফিয়াহ(নিরাপত্তা) চাই।'