আদি সূফিদের ‘পদস্খলন’ ও বর্তমান সূফিদের ‘বিদআত’ তত্ত্ব
-----
আল্লাহ্ কুরআনে নবীজী দ. কে ডাকলেন:
রউফ নামে
রহিম নামে
করিম নামে
চাইলে আমরা কুরআন এডিট করে এই কথাগুলো আউট করে দিতে পারি, চাইলে আমরা বলতে পারি, কুরআনে এই কথাগুলো ভুল এসেছে, রাসূল দ. রউফ নন, করিম নন, রহিম নন। রউফ রহিম ও করিম শুধু আল্লাহ্। আবার চাইলে বিষয়টাকে খুব সহজে বুঝে ফেলতে পারি।
পৃথিবীতে এক সেকেন্ডও কাটলো না, অপরদিকে রাসূল দ. ২৭ বছর মি’রাজ করে সেই একই সেকেন্ডে ফিরে এলেন, তাও আবার আলোয় চড়ে, নিজে আলোতে পরিণত হয়ে- এটাকে আমরা কেউ বলতে পারি পদস্খলন, কেউ বলতে পারি, আরে উপমা বোঝ না, উপমা। কেউ বলতে পারি স্বপ্ন। আবার কেউ বলতে পারি তার অবস্থানের বাস্তবতা।
তিনি দ. বললেন, আমাকে বারবার প্রশ্ন করো না। আমি যদি বলে ফেলি তোমাদের উপর প্রতি বছর হজ ফরজ তবে প্রতি বছর হজ ফরজ হয়ে যাবে। চাইলে কেউ এটাকে খোদার উপর খোদকারি হিসাবে দেখতে পারে, চাইলে কেউ অন্যভাবে দেখতে পারে।
রাসূল দ. উপস্থিত উম্মতকে বললেন, ‘ইয়া ইবাদি! হে আমার দাস!’ আমরা চাইলে কেউ এটাকে রাসূল দ.’র পদস্খলনও বলতে পারি, চাইলে রেওয়ায়েত টেনে ডিনাইও করতে পারি, চাইলে সঠিকও জানতে পারি।
কেউ বললো আমি তো সালাতও করতে পারি না, সাওমও না, সাদাকাও করি না। কিন্তু আপনাকে ভালবাসি।
তিনি দ. বললেন, যে যাকে ভালবাসে সে তার সাথে থাকবে।
চাইলে রাসূল দ.’র এ কথাকে আমরা পদস্খলন বলতে পারি। বলতে পারি, এইসব ফালতু কথা তিনি কেন বললেন? নামাজ কারো মিস হলে, রোযা কেউ রাখতে না পারলে জাহান্নামে যাবে, রাসূল দ.’র কাছে কেন যাবে? আবার চাইলে আমরা অন্য কিছুও বলতে পারি।
ইবনু উমার রা. কে বলা হল, প্রিয়তমর নাম ডাকুন, তিনি বললেন, ইয়া মুহাম্মাদা দ.! রাসূল দ. তো তখন পবিত্র কবরের ভেতরে, আমরা চাইলে এটাকে শিরকও বলতে পারি, চাইলে পদস্খলনও বলতে পারি, চাইলে এক্কেবারে সঠিকও বলতে পারি। নির্ভর তো আসলে আমাদের উপরে করছে, অন্য কারো উপর নয়। এমনকি ঘটনাটার উপরও নয়।
এক সাহাবি উমার রা.’র কাছে এসে বললেন, কুরআন একত্র করে সংকলন করা জরুরি। উমার রা. বললেন, তুমি কি আমাকে তা করতে বল, যা রাসূল দ. করেননি? তারপর তিনি গ্রহণ করলেন বিষয়টা। এরপর তিনি গেলেন আবু বকর রা.’র কাছে। আবু বকর রা. বললেন, কী বলেন! আপনি কি আমাকে তা করতে বলেন, যা রাসূল দ. করেননি? তারপর তিনিও বিষয়টাকে আলোচনাসাপেক্ষে গ্রহণ করলেন। তিনিও কুরআনকে সংকলন করার সিদ্ধান্ত জানালেন, যা রাসূল দ. করেনও নি, করতে বলেনও নি।
উমার রা. মদিনায় বসে বললেন, ইয়া সারিয়া আল জাবাল! এটাকে আমরা কেউ বলতে পারি দুর্বল রেওয়ায়েত আবার কেউ বলতে পারি উমার রা.’র বাস্তবতা।
আলী রা. বললেন, আমাকে কুরআন দেখিও না, আনা কুরআনিন নাতিক্ব। আমি জ্যান্ত বলন্ত কুরআন। এটাকে আমরা কেউ বলতে পারি প্রকৃত বাস্তব কথা, কেউ বলতে পারি পদস্খলন।
উমার রা. চিঠি লিখে নদীর বুকে বাহক মারফত পাঠিয়ে দিলেন, লিখলেনও নদীকে অ্যাড্রেস করে, আমরা কেউ এটাকে বুলশিট বলতে পারি, বলতে পারি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.’র একজন খলিফাকে এমন করা মানায় না। এসব বাচ্চার মত কাজকর্ম। হাস্যকর। আবার কেউ বলতে পারি উমার রা.’র বাস্তবতা।
রাসূল দ. বললেন, হে হাসান ও হুসাইন রা.! তোমাদের প্রতি আমার পিতামাতা কুরবান হোন, চাইলে এটাকেও যেভাবে খুশি দেখতে পারি। তিনি দ. বললেন, হে আলী! আমার সন্তানদের দেখাশোনা করুন। বললেন, হাসান ও হুসাইন আমার ও ফাতিমার সন্তান।
আরব সাহাবিরা তাবেয়িরা ইমাম হাসান রা. কে ডাকেন ইয়া ইবনুর রাসূল দ.!
হুসাইন রা. কে ডাকেন ইয়া ইবনুর রাসূল দ.!
আলী যাইনুল আবিদিন রা. কে ডাকেন ইয়া ইবনুর রাসূল দ.!
জা’ফর আস সাদিক্ব রা. কে ডাকেন ইয়া ইবনুর রাসূল দ.!
মূসা কাযিম রা. কে ডাকেন ইয়া ইবনুর রাসূল দ.!
কীভাবে দেখবে বিষয়টা দেখনেওয়ালার উপর।
সাহাবিরা রাসূল দ.’র চুল-দাঁড়ি-কাপড় মাথায় টুপিতে সেলাই করে জিহাদে যেতেনে, কবরেও যেতেন সাথে নিয়ে- আমরা কীভাবে দেখব, এটা আমাদের বাস্তবতা।
উসমান রা. টিকাসম্পণ্ণ কুরআন, হাদিস যুক্ত করা কুরআন এবং উল্টাপাল্টা করে একত্র করা কুরআন সারা আরব থেকে যোগাড় করলেন। এরপর সেগুলো পুড়িয়ে ফেললেন।
এখন কেউ চাইলে বলতে পারে উসমান রা. কুরআন পুড়িয়েছেন। ছি, কুরআন পোড়ানো কী যে মন্দ কাজ! আবার চাইলে সে কুরআনের বিশুদ্ধতার সংকলক হিসাবে আজীবন উসমান রা. কে মাথায় করে রাখতে পারে। চয়েস নিজের কাছে, ঘটনা একই।
উমার রা. তারাবিতে জামাতের সাথে ২০ রাকাত নামাজের প্রচলন করলেন যদিও রাসূল দ. জামাতের সাথে তারাবিতে বিশ রাকাত পড়াননি। বলা হল, এটা বিদআত। তিনি বললেন, আহ, কতই না সুন্দর বিদআত হয়েছে। চাইলে এটাকে আমরা সহিহ পদ্ধতি মনে করে জীবনযাপন করতে পারি, চাইলে উমার রা.’র পদস্খলন মনে করতে পারি, চাইলে উমার রা. কে বিদআতের বিশ্বজনকও আখ্যা দিতে পারি- নির্ভর করছে আমাদের উপর। ভাল বিদআত আবার কী? এসব কোথায় পেলেন উমার রা. বলতেই তো পারি। সব বিদআত জাহান্নাম। সোজা দেখিয়ে দিতে পারি, রাসূল দ. বলেছেন কুল্লু বিদআতিন দ্বলালা, ওয়া কুল্লু দ্বলালাতিন ফিন্ না’র। এই হাদিসের আলোকে উমার রা.’র বিদআতকে জাহান্নামের কাজ এবং উমার রা. কে জাহান্নামি বলে দিতে পারি। বলতে তো আর পয়সা খরচ হবে না।
ঘটনার উপর কিছু নির্ভর করছে না। নির্ভর করছে কোন আকিদার উপর, কোন ডকট্রিনের উপর, কোন প্রি সেট ভাবনার উপর আমি পরিচালিত হই, কোন আলোয় আমি সবকিছু দেখি তার উপর।
এখানেই তো চিন্তার পার্থক্য। আদি সূফিদেরটা পদস্খলন নয়, বরং হালের বাস্তবতা, যা হালের বাইরে আবার অবাস্তব। বিশেষ করে হা’লাতের খোঁজ যে গবেষকরা পাননি, তাঁরা আন্তরিক হলেও এই হা’লাতের বিপরীত প্রমাণই খুঁজে বের করবেন।
‘পদস্খলন’ মতবাদের আলোকে ফিল্টার হয়ে আসে। প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল, সেটা যেভাবে ঘটেছিল, সেভাবেই থাকে।