১.অন্তরের কঠেরতার একটি কারণ দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা।কেননা যখন দুনিয়ার ভালবাসা মানুষের অন্তরে ছেয়ে যায়,তখন অন্তর সেই দিকে মনযােগী হতে থাকে অতঃপর যিকিরুল্লাহ এবং ইবাদতে মন বসে না আর মানুষ দুনিয়ার খেল-তামাশায় এবং এর নশ্বর ঝাঁকজমকের মাঝে শান্তি খুঁজে বেড়ানাের চেষ্টা করে।প্রথমে অযথা ও গুনাহের কাজে দুনিয়াকে ধ্বংস করে অতঃপর আখিরাতেও অপমান ও অপদস্থতা তার পরিনতি হতে পারে।

২.অন্তরের কঠোরতার আর একটি কারণ,অহেতুক কথাবার্তা! বেশী কথা বলা বা চিন্তা ভাবনা না করে বলা,অন্যান্য আপদের পাশাপাশি অন্তরের কঠোরতার কারণও,কেননা মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলাে এই মুখ,এই মুখই মনের দরজা,যখনই মুখ চলবে মন ও সেই দিকেই আকর্ষিত হয়,ফালতু এবং অকাজের কথাবার্তায় ব্যস্ততার কারণে মন ও আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সমূহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার,নিজের আখিরাত সাজানাের,মৃত্যু ও তার পরের অবস্থা সম্পর্কে ভাবার দিকে মনযােগ দিতে পারে না।এভাবেই অন্তর এমনিতেই কঠিন হতে শুরু করে।সুতরাং আল্লাহর হাবীব ﷺ এর ফরমান হচ্ছে : “ হে লােকেরা! যিকিরুল্লাহ ছাড়া অন্য বাক্য অধিকহারে বলাে না।কেননা অধিকহারে কথাবার্তা বলা অন্তর কঠিন হওয়ার কারণ এবং নিশ্চয় লােকদের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার দূরবর্তী সেই,যার অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছে।” (তিরমীযি,কিতাবুয যুহুদ,মাজা ফি হিফযুল লিসাম,৪/১৮৪,হাদীস নং-২৪১৯)

৩.অন্তরের কঠোরতার আর একটি কারণ,অধিকহারে হাসা।হুযূরে আকরাম,নূরে মুজাসসাম ﷺ এর উপদেশ মূলক ফরমান হচ্ছে :
 “অধিহারে হাসিও না! কেননা অধিক হাসি অন্তরকে মৃত(অর্থাৎ কঠোর)বানিয়ে দেয়।” (ইবনে মাজাহ,কিতাবুয যুহুদ,৪/৪৬৫,হাদীস নং-৪১৯৩)

অত্যধিক হাসির ক্ষতি বর্ণনা করতে গিয়ে নবী করীম,রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন : “ অত্যাধিক হাসি থেকে বেঁচে থেকো কেননা হাসি চেহারার নুরানিয়্যতকে দূর করে দেয়।” (আত তারগীব ওয়াত তারহিব,কিতাবুল আদব,৩/৩৪০,হাদীস নং-২৭,সংক্ষেপ)

৪.অন্তরের কঠোরতার চতুর্থ কারণ,আল্লাহ্ তাআলার স্মরণে অমনােযােগী হওয়া,কেননা প্রতিটি অন্তরের চারটি অবস্থা থাকে : ★উচ্চতা,★প্রশস্ততা,★হীনতা,★কঠোরতা।আর অন্তরের উচ্চতা যিকিরুল্লাহর মধ্যে,এর প্রশস্ততা আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার মধ্যে,এর হীনতা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের প্রতি ব্যস্ত হওয়ার মধ্যে এবং এর কঠোরতা আল্লাহ তা'আলার স্মরণ থেকে উদাসীনতার মধ্যে। (শাহেরা আউলিয়া,১০ম পৃষ্ঠা)

৫.অন্তরের কঠোরতার আর একটি কারণ,পেট ভরে খাওয়া।জি হ্যাঁ! পেট ভরে খাওয়াতে যেমনি ইবাদতে অলসতা এবং স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়,তেমনি এর আরাে একটি ক্ষতি হলাে যে,পেট ভরে খাওয়া অন্তরকে কঠিন বানিয়ে দেয়।
হযরত সায়্যিদুনা বশর বিন হারেস (রহ.) বলেন: “যেই অভ্যাস অন্তরকে কঠিন বানিয়ে দেয়,তার মধ্যে অধিক আহারও রয়েছে।” (হিলইয়াতুল আউলিয়া, বশর বিন হারেস,৮/৩৯২,সংক্ষেপ)

হযরত সায়্যিদুনা মারুফ কারখী (রহ.) বলেন : “অধিক আহার অন্তর কঠোর হওয়ার কারণ।” (হিকায়াতে আউর নসিহতে,৩৫০ পৃষ্ঠা)।

#প্রিয়_ইসলামী_ভাইয়েরা!
জানা গেলাে,অন্তরের কঠোরতার একটি কারণ দুনিয়ার ভালবাসা এবং ফরমানে মুস্তফা ﷺ অনুসারে দুনিয়ার ভালবাসা সকল রােগের মূল।অন্তরের কঠোরতার দ্বিতীয় কারণ আমরা শুনলাম যে,অহেতুক কথাবার্তা বলাও অন্তরকে কঠোর করে দেয়।আফসােস! আমাদের অধিকাংশেরই সর্বদা অহেতুক কথাবার্তা এমনকি অশ্লীল কথাবার্তাও থামতে চায় না। নবী করীম,রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন : “ অশ্লীল কথাবার্তা কঠিন হৃদয় থেকে এবং কঠিন হৃদয় আগুন থেকে।” (তিরমীযি,কিতাবুস সবর ওয়াস সিলাহ,বাবু মা'যা ফিল হায়া,৩/৪০৬,হাদীস নং-২০১৬)

অন্তরের কঠোরতার একটি কারণ অত্যাধিক হাসতে থাকা।আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুক (রাদ্বী.) বলেন : “যে ব্যক্তি অধিক হাসে,তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি চলে যায় এবং যে ব্যক্তি অধিক কৌতুক করে,সে অন্যদের নজরে ছােট হয়ে যায়।” (ইহইয়াউল উলুম,৩/১৩৭)

তাছাড়া আল্লাহ তা'আলার যিকিরে অমনােযােগী এবং অত্যাধিক গুনাহ ছাড়াও পেট ভরে আহার করাও অন্তরের কঠোরতার কারণ,অথচ খাবারের মহান সুন্নাত হলাে যে,যখন ক্ষুধা লাগবে তখনই আহার করবে,নয়তাে ক্ষুধা ছাড়া খাবার খেলে শক্তি কি অর্জিত হবে? বরং স্বাস্থ্য খারাপ এবং অন্তরও কঠোর হয়ে যাবে।

🌏ইসলামী বিশ্বকো. 
Top