নববিবাহিত পাত্রের ‘ব্যক্তিত্ব্য’র বিষয়টা আসে কোত্থেকে? সাইকোঅ্যানালাইসিস-২
-----
১.জেনেটিক গঠন:
মানুষের জিনের গঠন থেকেই, বলতে হবে। পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে, বেশি লম্বা চওড়াও হয়ে থাকে, তাদের কণ্ঠও বেশি শক্তিমান হয়ে থাকে- এগুলো সবই জেনেটিক্সের বিষয়। অবহেলা করার কোন জায়গা নেই, যেহেতু এগুলো বাস্তব।

২. সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি:
আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি অনুযায়ী একজন পুরুষ মানুষ তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রধান হয়ে থাকেন। অনেকটা অ্যাবসলিউট অথরিটি। সুতরাং, তার মধ্যে ওই সুপিরিয়রিটির ভাইভ টা কাজ করা শুরু করে।

৩. দেখে শেখার বিষয়ও থাকে:
 জন্মের পর থেকে একটা শিশু সবই কিন্তু দেখে, কিন্তু সব অবজার্ভ করে না। অর্থাৎ দেখলেও লক্ষ্য করে না। তবে, অবজার্ভ বা লক্ষ্য না করলেও বিষয়গুলো তার স্মৃতিতে থাকে। এবং যখন উপযুক্ত পরিবেশ আসে, তখন তার অতীতের স্মৃতি ও দেখাগুলোই পর্যবেক্ষণ বা অবজার্ভেশনে রূপ নেয়। সে দেখে এসেছে একজন বাবা বা একজন স্বামী কী ধরনের ব্যক্তিত্ব্য নিয়ে চলে। এই মানুষটা হয় অনেকটাই আইসোলেটেড, অনেকটাই চুপচাপ, অনেকটাই একরোখা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা।

৪. হরমোনের ব্যালান্স:
এইযে সুপিরিয়র বা ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা’- এটা কিন্তু একজন পুরুষের ভেতরে শুধু যে জেনেটিক লেভেলে আছে তাই নয়, এটা আছে হরমোনাল লেভেলেও। পুরুষ মানুষের মধ্যে নারীদের চেয়ে বেশি পরিমাণে ওই হরমোনগুলো থাকে, যেগুলো ঝুঁকি নেয়া, সিদ্ধান্ত নেয়া, একরোখা হওয়া ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেটা জিতে আসার পেছনে মূল উপাদান হিসাবে মস্তিষ্কে ও নার্ভে কাজ করে। এক্ষেত্রে পুরুষরা শ্রেষ্ঠ। অপরদিকে নারীদের মধ্যে আছে মায়া, মমতা, আত্মদান, স্যাক্রিফাইস, প্রিপারেশন এবং আপনজনের জন্য সবচে নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তও অবলীলায় নিয়ে নেয়ার ক্ষমতা ড্রাইভ করে যে হরমোনগুলো, সেগুলোর প্রাবল্য- এক্ষেত্রে নারীরা শ্রেষ্ঠ।

৫. অপ্রত্যাশিত কিছু অবস্থার মুখোমুখি হয়ে:
বিয়ের পরপরই ছেলেরা সাধারণত এমন কিছু অবস্থার মুখোমুখি হয়, যা তারা আগে ভেবে রাখেনি। যেমন,

ক. আয়:
তার আয় করা, আয় বাড়ানো বা আয়কে সিকিউর্ড করার একটা প্রবণতা তৈরি হয় দায়বোধ থেকেই। আয় করা, বাড়ানো বা আয়কে সিকিউর্ড করার অংশ হিসাবে বেশি বেশি সে আয় বিষয়ক চিন্তা ও কাজে ডুবে থাকে। ফলে তার কাছে বিয়ের আগে যে মজাটাকে মজা মনে হত, যে হ্যাঙআউটটাকে ভাল মনে হত, যে হারে গিফট কেনা ও গিফট করাকে ভাল মনে হত, তা আর মনে হয় না। অর্থাৎ অন্যদের চোখে সে যেমন ছিল, আর তেমন নেই। আড্ডা দেয়ার সময়ও সে কাজ নিয়ে চিন্তা করছে বা কাজের পথে আছে। এটা অন্যদের খারাপ লাগতেই পারে। ঠিক একইভাবে পরিবারেও তার একত্রে বসে কথা বলা, পরামর্শ করা বা গল্প করা একেবারে কমে যায়, কারণ তার মনেই ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

খ. বিয়ে বিষয়ক আলোচনা:
‘বিবাহিত মানেই প্রকারান্তরেতে মৃত’ বলে কে না ঠাট্টা করে? কে না বলে, এখন তোমরা দূরে সরে যাবে...
বিয়ে বিষয়ক যে কোন আলোচনা বা ঠাট্টা তামাশাকেই এমনকি বিয়ের দাওয়াত বা অনুষ্ঠান নিয়ে কথাকেও নববিবাহিত পাত্র তার প্রতি, তার স্ত্রীর প্রতি এবং তার বর্তমান অবস্থার প্রতি বিদ্বেষ বা কঠিন আচরণ হিসাবে ধরে নেয়। বেশিরভাগ অবস্থায় এই ‘বর্তমান অবস্থা’ টা হল আর্থিক। আমরা তো জানিই, যে তরুণ মাত্র বিয়ে করছে, সে বিশালভাবে আর্থিক দিক দিয়ে সেটলড হয় না। তার সাধারণত ক্যারিয়ারের শুরু হয়। তখনো তার ক্রয়সাধ্য ও ব্যয়সাধ্য মাঝবয়সীদের মত হয় না।
ক্রোধও হয়, তার কাছে মনে হয়, এমন আচরণ আপনজন কেন করবে?
ফলে সে আরো দূরে সরে যেতে থাকে।

গ. আচরনের রিফ্লেকশন:
এই জায়গায় এসে সব পেঁচিয়ে যায়। একটা ছেলে যখন বিয়ের পরপর তার বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে আগের মত অতি খোলামেলা থাকে না, অতি নমনীয় থাকে না, তখন তারই আয়নার প্রতিচ্ছবি হিসাবে কাজ করে তার এই আপনজনেরা। যে কোন মুহূর্তে সে সারা জীবন যে রেসপন্স পেয়েছে, যে ভাষায় পেয়েছে বাবা মা ভাইবোন আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে, এখন যখন সে দেখে সেই রেসপন্সটা একটু কঠিন কঠোর হচ্ছে, তখন সে আর এটা বোঝে না যে তার নিজের আচরণই অন্যদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। এটা তার নিজেরই ছবি।

ঘ. স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ি অধিকতর আপন হয়ে ওঠা:
কিন্তু তার বুক ফেটে যাওয়া শুরু করে মায়ের একটু কঠিন রেসপন্সে।
সে তখন দেখে যারা দূরে যায়নি আর কঠিন হয়নি, তারা কারা? তারা হল তর স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবার বা শ্বশুরবাড়ি।
এখন, স্ত্রী তো তাকে সবদিক দিয়ে সাপোর্টই দেয়ার চেষ্টা করছে। যে সাপোর্ট দিচ্ছে তার কাছেই নিজের মনের কথা খুলে বলা যায়। অপরদিকে তার স্ত্রীর বাসায় সে ‘বাড়ির জামাই’। নিজের কন্যা বা বোনের জীবনটা ততটাই সুন্দর হবে যতটা সুন্দর আচরণ করা যাবে বাড়ির জামাইর সাথে- এই সূত্রে শ্বশুরবাড়ি সবচে ভাল রেসপন্সও দিতে থাকে।

ঙ. দূরত্বের দুষ্টচক্র:
ব্যস, এবার এভাবেই, দূরত্ব যার সাথে একবার বেড়েছে তার সাথে আরো বাড়তে থাকে।
ফলে নববিবাহিত পুরুষ আরো বেশি বেশি খোলসের ভিতর ঢুকে যেতে থাকে। এবং তার এই ব্যক্তিত্ব্যটাকে বাকীরা আরো বেশি নেগেটিভভাবে নিতে থাকে এবং এর নেগেটিভ রিফ্লেকশন হয় এটুকুই:

বউ পেয়ে সব ভুলে গেছে।
Top