নাটকীয় পরিবর্তন: আমি কীভাবে বাবা-মায়ের প্রতি মনোযোগী হয়েছিলাম
-----
সব সন্তানই তখন পর্যন্ত অবুঝ থাকে, যখন পর্যন্ত তার মনে বাবা-মায়ের প্রতি নানান অভিমান জমা থাকে।
আমি তালগাছের মত বড় হয়ে গিয়েও বিশেষ করে বাবার প্রতি অনেক অভিমান পুষে রেখেছিলাম। সেটা একদিন বিষ্ফোরণ হতে নিয়েছিল...
আমি তখন দূরে থাকতাম।
বাবা-মা সহ বাকী পরিবার এক জেলায়, আমি আমার সন্তানদের নিয়ে আরেকদিকে, ঢাকায় থাকতাম।
যেদিন আমি ঢাকা থেকে আসি, বাবার প্রতি প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে আসি। আসার আগে ছোট ভাই এবং মা কে অনেক কথা শুনিয়ে আসি। আমার ছোটভাইটা পরে বলেছিল, ভাইয়া, আব্বুকে তুমি যেসব কথা বলার জন্য আসছিলে, তখন আমার হার্টফেইল হওয়ার অবস্থা হচ্ছিল। আব্বু তোমার কথার আঘাত সহ্য করতে পারত না, আমি জানি। আমি তোমাকে আটকাতে পারতাম না বা যেতাম না, সেটাও জানতাম। তখন থেকে কয়েক মাস আমার হার্টের সমস্যা হয়েছিল।
আমি বাসায় ঢুকি, বাসায় ঢুকে দেখি, বাবা মাগরিবের নামাজের পর ওজিফা করছেন। তিনিও আমার মুরশিদের অধীনস্ততা গ্রহণ করেছিলেন। তার হাতে ওজিফার তসবিহ দেখে, তার আর আমার মাঝখানে স্রেফ আমাদের মহামহিম মুরশিদের অস্তিত্ব অনুভব করলাম।
মুরশিদের সেই বাণী: ‘যখন দু’জন পীরভাই পরস্পর থাকে, সেখানে আমার অস্তিত্বও রয়।’
সাথে সাথে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আবার ফিরে গিয়েছিলাম ঢাকায়।
গজগজ করতে করতে নিজেকে নিজে বারবার বলছিলাম, আমার মুরশিদের অধীনস্ততা তিনি পালন করছেন বলে আমি কিছু বললাম না। তাকে কিছু বললাম না স্রেফ ওয়ালীর কারণে।
কিন্তু আমার পরিবর্তনটা হয়ে গেল এর পরপর।
মনোভাব আমার সব সময়েই ছিল গবেষণামূলক। বাবা-মা বিষয়ক কুরআনের আয়াত ও হাদীসগুলো পড়তে শুরু করলাম আমি। যত পড়তে শুরু করলাম, তত বিষ্ফোরিত হতে শুরু করলাম।
এম্নিতে একটা ভাল দিক আছে, যা আল্লাহ্ ও তার রাসূল দ. বলেছেন, এমনকি যা খুলাফা ও আদি আহলে বাইত বলেছেন-
তার সবকিছুই মুহূর্তে মাথা নত করে মেনে নেই।
আমার কাছে ঈমানের সংজ্ঞা এটাই।
আল্লাহ্’র নির্দেশনা বিনাপ্রশ্নে সেকেন্ডের মধ্যে নিজের নৈতিকতায় পরিণত করা (কাজ ফলাতে পারি বা না পারি, নৈতিকভাবে মেনে নেয়া)। রাসূল দ. একটা কথা বলেছেন? ওটাই সব। বাকী সব মিথ্যা। আল্লাহ্- রাসূল দ. তো অনেক দূরের কথা, সবার উপরেরও উপরে...
সাইয়্যিদা ফাতিমা, আবু বকর, উমার, উসমান, আলী, হাসান ও হুসাইন রা.- এঁদের কেউ যদি কিছু বলে থাকেন, সেটা যদি নিশ্চিত করে জানতে পারি, ওটাই আমাদের মনের চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।
সেখানে আর কোন কিছুই ঢুকবে না।
তো, বাবা-মায়ের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি আমার চিরদিনের জন্য বদলে গেল কিছু আয়াত ও কিছু হাদীস পড়ে।
পরের পোস্টে সে আয়াত ও হাদীসগুলোর কিছু কিছু তুলে ধরছি।