পরিবারে শান্তির সাইকোলজিক্যাল রহস্য:
সাইকো-অ্যানালাইসিস ও ধর্মগ্রন্থের নৈতিকতা কেন অতি গুরুত্বপূর্ণ?
-----
[ এই সিরিজের লেখাগুলো বিবাহিত-অবিবাহিত-নারী-পুরুষ-বয়স্ক সবার পড়া উচিত। আমিতো মনে করি এগুলো পড়লেই উপকার হবে, হবেই। এমনকি হয়তো জীবনও বদলে যেতে পারে, বদলে যেতে পারে পরবর্তী প্রজন্মের জীবনও। ]
(সাম্প্রতিক বেশ কিছু কোয়েরির কারণে এ লেখাগুলো প্রস্তুত করতে হচ্ছে। অনেকেই এ ধরনের সমস্যা ফেইস করছেন এবং করণীয় নিয়ে চিন্তিত আছেন।)
আজকাল আর আগের যুগের মত পারিবারিক শান্তি নেই? আজকাল ‘প্রতিটা পরিবার হয়ে উঠেছে নরক’? পরিবার থেকে যে যত দূরে সে তত শান্তিতে আছে?
সময় বদলেছে, সময় বদলে যাবে, এটাই নিয়ম।
কিন্তু যাই হোক, পরিবারে অশান্তি হওয়া যাবে না, আর অশান্তি হলেও সেটাই মূল হওয়া যাবে না। তখন আমাদের সন্তানরা আর সুখে বিশ্বাস রাখবে না। তারা আর মনুষ্যত্বে বিশ্বাস রাখবে না। তারা তখন সুখকে মনে করবে অনেক দূর দিয়ে যাওয়া কোন নৌকা।
পারিবারিক শান্তি নষ্ট হওয়ার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা মারাত্মক। তার পাশাপাশি আছে সোশ্যাল ভ্যালুজে পরিবর্তন।
এ যুগে মানুষের ফোকাস গেছে কমে, ব্যস্ত থাকার এবং ‘আনন্দ পাবার’ মাধ্যম গেছে বেড়ে। মানুষ এখন আর সমাজ থেকে, বা ধর্মীয় স্ক্রিপচার থেকে (তা ইসলাম ধর্মের হোক বা নিজ নিজ যে ধর্মেরই হোক) নৈতিকতা ও প্রায়োরিটি নির্ধারণ করে না।
আমরা যখন কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক- তা সমাজ বা পরিবার বা কুরআন হাদীস থেকে নিই না, তখন আমরা কী থেকে নিই? কোনটাকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে কোনটাকে পরে গুরুত্ব দিতে হবে তা কীভাবে নির্ণয় করি?
১. আত্মভাবনা থেকে, আত্মকেন্দ্রীকতা থেকে, ইগো থেকে, স্বার্থ বা নার্সিসিজম থেকে।
২. আমাদের স্বপ্নের সোসাইটি থেকে, অর্থাৎ ইউরোপ আমেরিকার পরিবার স্ট্রাকচার থেকে।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে।
৪. নায়ক-গায়ক-খেলোয়াড়-সোশ্যাল মেন্টর বা পূজিত আইডল থেকে।
৫. সমমনা সমভাবনার বন্ধুর কাছ থেকে।
দেখুন, পাঁচটাই মহা-মস্ত ফেইলিওর।
এই পাঁচটাই সংসারের আগুনকে নরক বানিয়ে ফেলবে, এবং নরককে হাবিয়া বানিয়ে ফেলবে।
অথচ আমাদের নৈতিক অবস্থান ও প্রায়োরিটি বেছে নেয়ার জন্য সেইফ হয় কোথা থেকে?
১. কুরআন-সুন্নাহ্ বা নিজ ধর্মের নৈতিকতা থেকে:
আমার জানা মতে পৃথিবীর প্রতিটা মেজর ধর্ম পারিবারিক বন্ধন এবং পারিবারিক সেবা ও বিশ্বস্ততাকে খুব বেশি প্রায়োরিটি দেয়।
একটা মজার তথ্য হোক- মেজর ধর্মগুলো আজো মেজর ধর্ম আছে শুধু এই কারণে যে, তাদের শিক্ষার মধ্যে মৌলিক কিছু ক্ষেত্রে এমন উপকারী কিছু বিষয় আছে, যে উপকার মানুষ পায় বলেই সে ধর্মগুলো আঁকড়ে রাখে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত করে।
এখন, ইসলাম-বৌদ্ধ-ইহুদি-খ্রিস্ট বা হিন্দু ধর্ম যদি বলতো, বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে যাবার পর তাদের বারবিকিউ করে পুড়িয়ে খেয়ে ফেলো, ওই ধর্মটা কি থাকতো? বাবা মা তার সন্তানকে ধর্মটা শিক্ষা দিয়েছে কারণ এটায় আছে পারিবারিক সেইফটি।
এভাবেই ধর্ম টিঁকে যায় এবং কালক্রমে পপুলার ধর্মে পরিণত হয়।
তাই পৃথিবীর প্রতিটা মেজর ধর্মে আছে নূনতম পারিবারিক কল্যাণকর ভ্যালু।
আমরা কুরআন সুন্নাহ্ থেকে কিছু কিছু তথ্য আলোচনা করব এই লেখাগুলোয়, এমনকি প্রয়োজনবোধে অপরাপর ধর্মসমূহের গ্রন্থর বিষয়েও আলোচনা করব।
২. পারিবারিক ঐতিহ্য ও সংস্কার থেকে:
এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। দেখে শেখা, ধরে শেখানো।
৩. সাইকো-অ্যানালাইসিস থেকে:
সাইকো-অ্যানালাইসিসের চেয়ে মজার কিছু এই পৃথিবীতে আছে কি? আমার জানা নেই। মানুষের চেয়ে মূল্যবান কিছু যেহেতু দুনিয়ায় নেই, সেহেতু মানুষের মনের চেয়ে জটিল ও রহস্যময় কিছু দুনিয়ায় নেই, সেহেতু মানুষের মনের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করার মত মজার কিছুও দুনিয়ায় নেই।
কেউ যদি ভালভাবে মনোবিশ্লেষণ করতে জানে, বা অন্তত অন্য কেউ মনোবিশ্লেষণ করে দিলে সেটাকে ফলো করতে পারে, তাহলে সে মানুষের মনের উপর সাসটেইনেবল পজিটিভ প্রভাব ফেলতে পারবে, আর যে মানুষের মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণপ্রভা ফেলতে পারবে, তার পরিবারে সুখ হবে না তো সুখ হবে কার পরিবারে?
পরিবার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে, পরিবারের অবিশ্বাস-অনাস্থা দূর করতে এবং পরিবারের অদৃশ্য অত্যাচার নির্যাতন সরাতে সাইকো অ্যানালাইসিসের সহজ বিকল্প তাই নেই।
আমরা এ লেখাগুলোয় সে কাজটাই করব। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সাইকো-অ্যানালাইসিস করব।