(ইবনুল কাইয়্যেমের “ইগাছাতুল লাহফান” অবলম্বনে রচিত)
মিথ্যা যে একটি বদ অভ্যাস তাতে কেউ সন্দেহ করে বলে আমি মনে করি না, কারণ মিথ্যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধ্বংসকর বলে মন্তব্য করেছেন। আরো বলেছেন, মিথ্যা মুনাফেকীর নিদর্শন। মানুষ মিথ্যা বলতে বলতে এক সময় আল্লাহর দরবারে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত হয়। আর সত্য বলা ও সত্য বলার প্রচেষ্টায় রত থাকলে আল্লাহ্ তাকে সত্যবাদী বলে লিখে নেন; এখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীসের ভাষ্যই উদ্ধৃত করলাম।
কথা উঠেছিল আমাদের এক শিক্ষককে নিয়ে যিনি মিথ্যা কথা বলতে ছাত্রদেরকে নিষেধ করতেন। একদা আমরা তার বৈঠকখানায় অবস্থান করছিলাম, এমতাবস্থায় সেখানে এমন এক লোক এসে উপস্থিত যাকে তিনি পছন্দ করতেন না। আসা মাত্রই লোকটি প্রশ্ন করলো: “তোমাদের গুরুমশাই কোথায়”? আমরা জানতাম যে, উস্তাদজী তার সাথে দেখা করতে চান না; অথচ আমাদেরকে মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যকার সর্বকনিষ্ঠ জন সভয়ে বলে ফেললো যে, তিনি পাশের ফ্লাটে আছেন। উস্তাদজীকে তার কথামত ডাকা হলো, তিনি আসলেন এবং তার সাথে জরুরী কথাবার্তা সারলেন। কিছুক্ষণ পর লোকটি বিদায় নিলো। আমরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম। আমাদের অবস্থা দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে, তার অবস্থান বলে দেয়ায় তিনি যে খুশী হননি, এটা আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি, কিন্তু আমরা অপরাগ ছিলাম, কারণ মিথ্যা বলা যাবে না। তিনি ব্যাপারটা সহজ করে নিতে নিতে বললেন, তোমরা এমনটি বললেই পারতে যে, “তিনি এখানে নেই”। আমরা বলে উঠলাম: এটা কি মিথ্যা নয়? তিনি বললেন: না, এটা মিথ্যা নয় বরং বলার কৌশল। সাহাবী ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “বাচনভঙ্গী ও কথার কৌশলের মাধ্যমে মিথ্যা থেকে বাঁচা যায়”।
[বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৮৫৭]
আমরা জানতে চাইলাম: কুরআন, হাদীস বা সালফে সালেহীনের জীবনে এ প্রকার বাচনভঙ্গীর ব্যবহার আছে কি?
তিনি বললেন: তোমাদের এ প্রশ্নটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। আসলে দ্বীনী ব্যাপারে কোন কিছু বলার পূর্বে আমাদের জানা আবশ্যক যে, আমাদের কথাটা কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী হয়েছে কি না। আর যে আয়াত বা হাদীসকে আমি বা আমরা দলীল হিসেবে পেশ করবো, সে আয়াত বা হাদীস দ্বারা আমাদের সালফে সালেহীন তথা সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবেতাবেয়ীনের অনুসারীগণ আমরা যে রকম বুঝেছি সে রকম বুঝেছেন কি না? নাকি আমরা আয়াত ও হাদীসের ব্যাখ্যায় নতুন কোন কথা সংযোজন করেছি? কেননা জগতে যত ফেৎনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়েছে আর যত ফির্কার উৎপত্তি হয়েছে, সবাই দলীল হিসেবে কুরআন ও হাদীসের বাণী উদ্ধৃত করে থাকে, যদি সব ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য হতো তাহলে দ্বীনের অস্তিত্ব টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়ত। তাই সালফে-সালেহীনের ব্যাখ্যা অনুসারেই কুরআন বা হাদীসকে আমাদের বুঝতে হবে।
এখন আসা যাক তোমাদের প্রশ্নের উত্তরে- তোমারা জানতে চেয়েছ কুরআন, সুন্নাহ্ এবং সালফে-সালেহীনের জীবনে এ প্রকারের বাচনভঙ্গির ব্যবহার হয়েছে কি না? আমি বলবো: হাঁ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা ইব্রাহীম ‘আলাইহিস্ সালামের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: “তিনি ক্ষণিকের জন্য তারকারাজির প্রতি দৃষ্টিপাত করে বললেন: ‘আমি অসুস্থ’।” এখানে ইব্রাহীম ‘আলাইহিস্ সালামকে তার জাতির লোকেরা মূর্তিপূজা করতে আহ্বান করেছিল। তাঁকে আহ্বান করেছিল মেলায় মূর্তি বিক্রয় করার জন্য। কিন্তু তিনি এ থেকে বাঁচার জন্য চমৎকার এক বাচনভঙ্গি ব্যবহার করলেন যাতে মিথ্যাও হয়নি আবার শির্কেও লিপ্ত হতে হয়নি। তার জাতির লোকেরা বিশ্বাস করত যে, নক্ষত্ররাজি মানুষের রোগ, শোক, আরোগ্য এসব দিয়ে থাকে। তাই ইব্রাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম তাদেরকে বোকা বানানোর জন্য তারকারাজির দিকে ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন, তারপর বললেন যে, “আমি অসুস্থ হয়ে যাবো”, তাঁর জাতির লোকেরা বুঝলো যে, ইব্রাহীম তারকার অবস্থান দেখে বুঝেছে সে অসুস্থ হয়ে যাবে তাই সে মেলায় যাচ্ছে না। অথচ ইব্রাহীম ‘আলাইহিস্ সালামের উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে বোকা বানানো আর “আমি রোগগ্রস্ত” কথার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি মানসিক ভাবে তোমাদের কর্মকাণ্ডে খুশী নই।
অনুরূপভাবে আইয়ূব ‘আলাইহিস্ সালাম তাঁর স্ত্রীকে একশ’ বেত্রাঘাত করার শপথ করেছিলেন। আল্লাহ্ তাঁকে সে শপথ পূর্ণ করার কৌশল এভাবে বাতলে দিয়েছিলেন যে: “তুমি তোমার হাতে (একশ’) ছড়ির এক আঁটি বানিয়ে তা দিয়ে এক বেত্রাঘাত করো, শপথ ভঙ্গ করো না।”
[সূরা সদ: ৪৪]
তদ্রূপ ইউসুফ ‘আলাইহিস্ সালামও তাঁর ভাইকে আটকে রাখার জন্য এক প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা সে ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেন: “তখন সে তার ভাইয়ের ভাণ্ডের আগে অন্যদের ভাণ্ডে খোঁজা শুরু করল। এভাবে আমি ইউসুফের জন্য কৌশল করেছি, নতুবা সে কোনভাবেই আল্লাহ না চাইলে রাষ্ট্রীয় আইন মোতাবেক তার ভাইকে আটকে রাখতে পারে না।”
[সূরা ইউসুফ: ৭৬]
রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসেও এসেছে, বদরের যুদ্ধে তিনি (সা) কাফেরদের অবস্থান বুঝার জন্য অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর সেখানকার লোকদের কাছ থেকে তাদের অবস্থান জানার পর লোকেরা প্রশ্ন করেছিল: তোমরা কোথা থেকে এসেছ? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন: “আমরা পানি হতে”। লোকেরা বুঝে নিল যে, তারা কোন পানির কুপের কাছে থাকে, সেখান থেকে এসেছে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য ছিল একথা বলা যে, আমরা পানি থেকে সৃষ্ট; কারণ সব সৃষ্টির মূলেই রয়েছে পানি।
তদ্রূপ আমাদের সালফে-সালেহীনের জীবনেও এ প্রকার ব্যবহারের নজির রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমি কয়েকটি ঘটনা উদ্ধৃত করছি- প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একবার তাঁর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার ক্রিতদাসীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়। তাঁর স্ত্রী হঠাৎ তাদেরকে ঐ অবস্থায় দেখে ফেলেন এবং রাগের মাথায় দা নিয়ে কোপাতে আসে। কিন্তু ইত্যবসরে তিনি তাঁর কর্ম সম্পাদন করে ফেলেছেন। তাঁর স্ত্রী এসে বললেন যে, যদি আমি তোমাদেরকে ঐ অবস্থায় পেতাম তাহলে তোমার মাথা কেটে ফেলতাম। তিনি বললেন: আমি কি করেছি? তাঁর স্ত্রী বললেন: যদি সত্যিই তুমি কিছু না করে থাক, তাহলে এখন এ অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে পারবে কি? আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা সাথে সাথে পড়া শুরু করলেন:
মূলতঃ এটা ছিল একটি কবিতার কিছু অংশ। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এর মাঝে আর কুরআনের মাঝে পার্থক্য বুঝতেন না। বরং যখন তিনি পড়ছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী মনে করেছিলেন যে, কুরআন পড়ছে। আর যদি সে এ অবস্থায় কুরআন পড়তে পারে তাহলে নিশ্চয় সে কাউকে স্পর্শ করে নি। অবশেষে তাঁর স্ত্রী বললেন যে, আমি আল্লাহর কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আমার দেখাটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলাম। এরপর সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ভাবে হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দৃস্টিগোচর হয়েছিল।
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করা হয়, তিনি বলেছেন যে, আমি আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, “কোন ব্যক্তি معاريض বা কথা বলার কৌশল জানার পরেও মিথ্যা বলার দিকে ধাবিত হয় কি করে?” [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে একবার খাবার খেতে ডাকা হলো, সেখানে তিনি কোনো কারণে খাওয়া অপছন্দ করলেন, তাই তিনি বললেন: ‘আমি রোযাদার’। তারপর তারা তাকে খেতে দেখলো। তারা বললো: ‘আপনি কি বলেন নি যে, আপনি রোযাদার? তিনি জবাবে বললেন: ‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা রাখা মানে চিরদিন রোযা রাখা?’ (অর্থাৎ ‘সে অনুসারে আমি রোযাদার’। কারণ তিনি প্রত্যেক মাসের ১৪, ১৫, ১৬ এ তিনদিন রোযা রাখতেন।)
প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবন সিরীন রাহিমাহুল্লাহর নিকট যদি কোন ঋণদাতা তার ঋণ চাইত এবং তার কাছে দেওয়ার মত কিছু না থাকত, তবে তিনি বলতেন: ‘তোমাকে আমি দু’দিনের একদিনে পরিশোধ করব। ঋণদাতা মনে করত যে, আজ বা কাল দিয়ে দিবে অথচ তাঁর উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার দিনে বা আখেরাতের দিনে আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করে দেব’।
ইবনে সিরীন থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, কোন এক লোকের ভীষণ চোখ লাগতো (নযর লাগা)। কাজী সুরাইহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ তার খচ্চরটি নিয়ে ঐ লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, লোকটি খচ্চরটির উপর চোখ লাগাতে চাইল। কাজী সুরাইহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ সবকিছু বুঝতে পেরে সাথে সাথে বললেন: ‘আমার এই খচ্চরটা এমন বাজে যে, একবার বসে পড়লে আবার দাঁড় করিয়ে না দেয়া পর্যন্ত উঠবে না’। লোকটি বলল: ‘ধ্যাৎ, এমন বাজে জিনিস?’ এভাবে সুরাইহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ লোকটির চোখ লাগানো থেকে তাঁর খচ্চরটাকে হেফাযত করলেন। অথচ কাজী সুরাইহ্-এর কথা ‘বসে পড়লে উঠিয়ে না দেয়া পর্যন্ত উঠে না’-এর অর্থ এ নয় যে, সত্যি সত্যিই সেটি উঠে না; বরং উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ্ যতক্ষণ না উঠান ততক্ষণ সেটি উঠতে পারে না।
ইব্রাহীম নাখয়ী রাহিমাহুল্লাহ্ থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার তার স্ত্রী তাকে কোন একটা কিছু দেয়ার বিষয়ে খুব পীড়াপীড়ি করছিল, তখন তার হাতে একটা পাখা ছিল। তিনি পীড়াপীড়িতে অতিষ্ট হয়ে বলে উঠলেন: ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি এটা তোমার!’ তার স্ত্রী শান্ত হলে তিনি তার শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন: ‘তোমরা কি বুঝলে?’ তারা বলল: ‘আপনি আপনার স্ত্রীকে ঐ বস্তুটা দিয়ে দিলেন’। তিনি বললেন: ‘কখখনো নয়! তোমরা কি দেখনি যে, আমি পাখাটির দিকেই ইঙ্গিত করছিলাম? আমার উদ্দেশ্য ছিল পাখাটা দেয়া।’
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাম্মাদ বিন যায়েদ রাহিমাহুল্লাহ্-এর কাছে যদি এমন কোন লোক আসত যার সাথে তিনি সাক্ষাৎ করতে চাইতেন না, সাথে সাথে তিনি তাঁর হাতটা মাড়ির দাঁতের উপর রেখে বলতেন: ’হায় আমার দাঁত! হায় আমার দাঁত! এভাবে বলতে থাকতেন। লোকটি মনে করত তাঁর বুঝি দাঁতে ব্যাথা তাই কথা বলবেন না, অথচ তিনি দাঁতে ব্যাথা হয়েছে এমন কথা বলেন নি।’
ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ্-এর নিকট তাঁর শিষ্য মাররূযী রাহিমাহুল্লাহ্ বসেছিলেন, ইত্যবসরে সেখানে এক লোক এসে জিজ্ঞাসা করল: ‘এখানে মাররূযী আছে?’ ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ্ চাইলেন যে, মাররূযী লোকটির সাথে বের না হোক, তাই তিনি সাথে সাথে তাঁর আঙ্গুলকে হাতের কব্জির উপর রাখলেন এবং বললেন: ‘মাররূযী এখানে নেই, সে এখানে কি করবে?’
এ প্রকারের শত শত معاريض বা কথা বলার কৌশলের মাধ্যমে উপস্থিত পরিস্থিতিতে সুন্দর সমাধানের নজীর সাফলে সালেহীনের জীবনে রয়েছে। এ পর্যন্ত বলে উস্তাদজী চুপ করলেন; আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম: উস্তাদজী! এটা কি হিলা বা বাহানা করা নয়? আর হিলা বা বাহানা করা তো হারাম। তিনি জবাবে বললেন: এটা যে এক প্রকার হিলা বা বাহানা তাতে সন্দেহ নেই। তবে জগতে যতপ্রকার গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়েছে তার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ‘কোন কিছুকে বিচার-বিশ্লেষণ না করে তার ব্যাপারে তড়িৎ হুকুম প্রদান করা’।