দরূদ শরীফের ফযীলত
মদীনার তাজেদার, মাহবুবে গাফ্ফার, শাহানশাহে আবরার, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামাযের পর হামদ ও সানা অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার প্রশংসা, গুণকীর্তন ও দরূদ শরীফ পাঠকারীকে ইরশাদ করেন: “দোয়া করো কবুল করা হবে, প্রার্থনা করো প্রদান করা হবে।” (সুনানে নাসাঈ, ১ম খন্ড, ১৮৯ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নামায আদায় করার অগণীত ফযীলত এবং নামায বর্জন করার কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত রয়েছে। যেমন-পারা ২৮ ‘সূরা মুনাফিকুন’ এর আয়াত নং ৯ এর মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡہِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ ﴿۹﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন সম্পদ, না তোমাদের সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই যেন তোমাদের আল্লাহর যিকির (স্মরণ) থেকে উদাসীন না করে;এবং যে কেউ তেমন করে তবে ঐ সমস্ত লোক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আহমদ যাহবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন;মুফাস্সিরীনে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰیবলেন: “এই আয়াতে মোবারাকার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার যিকির দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে বুঝানো হয়েছে, সুতরাং যে ব্যক্তি তার ধন সম্পদ অর্থাৎ ব্যবসা বাণিজ্য, জীবিকা ও জীবনযাত্রা, আসবাবপত্র এবং সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং সময়মত নামায আদায় করে না তারা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। (কিতাবুল কাবাইর, ২০ পৃষ্ঠা)
কিয়ামত দিবসের সর্ব প্রথম প্রশ্ন
রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন বান্দার আমল সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। যদি সেটার উত্তর সঠিকভাবে দিতে সক্ষম হয় তবে সে সফলকাম হয়ে গেলো আর যদি এতে ঘাটতি হয় তাহলে সে অপদস্থ হলো এবং সে ক্ষতিগ্রস্থ হলো।” (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮৮৮৩)
নামায আদায়কারীর জন্য নূর
নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি নামাযের হিফাযত করবে, নামায তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাত (বা মুক্তি লাভের উপায়) হবে। আর যে ব্যক্তি এর হিফাযত করবে না, তার জন্য কিয়ামতের দিন না নূর হবে, না দলীল, না নাজাত হবে। আর ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন ফিরআউন, কারুন, হামান এবং উবাই ইবনে খালাফের সঙ্গী হবে।” (মাজমাউয যাওয়াইয়িদ, ২য় খন্ড, ২১ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৬১১)
কার সাথে কার হাশর হবে!
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন আহমদ যাহবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন;“কতিপয় উলামায়ে কিরাম رَحِمَہُمُ اللہُ السَّلَام বলেন: কিয়ামতের দিন নামায বর্জনকারীকে ঐ চার ব্যক্তি অর্থাৎ ফিরআউন, কারুন, হামান ও উবাই ইবনে খালাফ এর সঙ্গে এজন্য উঠানো হবে যে, সাধারণত লোকেরা ধনসম্পদ, রাজত্ব, মন্ত্রীত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে নামায বর্জন করে থাকে। যে ব্যক্তি রাজত্বের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নামায ছেড়ে দেবে, তার হাশর ফিরআউনের সাথে হবে। যে ধনসম্পদ অর্জনে ব্যস্ত থাকার কারণে নামায ছেড়ে দেবে, তার হাশর কারুনের সাথে হবে। আর যদি নামায বর্জন করার কারণ মন্ত্রীত্বের জন্য হয়, তবে ফিরআউনের মন্ত্রী হামানের সাথে তার হাশর হবে। আর যদি ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার কারণে নামায বর্জন করে, তাকে মক্কার অনেক বড় কাফির ব্যবসায়ী উবাই ইবনে খালফের সাথে উঠানো হবে। (কিতাবুল কাবাইর, ২১ পৃষ্ঠা)
প্রচন্ড আহত অবস্থায় নামায
যখন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُرَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ কে হত্যা করার জন্য তাঁর উপর হামলা করা হয়েছিল তখন আরয করা হলো, “হে আমীরুল মু’মিনীন! নামায (এর সময় হয়েছে) ”, বললেন: “জ্বি হ্যাঁ, শুনে নিন! যে ব্যক্তি নামাযকে নষ্ট করে তার জন্য ইসলামে কোন অংশ নেই।” আর হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ প্রচন্ডভাবে আহত হওয়া সত্ত্বেও নামায আদায় করলেন। (প্রাগুক্ত)
নামায নূর বা অন্ধকার হওয়ার কারণ
হযরত সায়্যিদুনা উবাদা ইবনে সামিত رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত;নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, শাহানশাহে নুবুওয়াত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে অতঃপর নামাযের জন্য দন্ডায়মান হয়, এরপর রুকূ, সিজদা ও কিরাত যথাযথভাবে আদায় করে, তখন নামায তাকে বলে: “আল্লাহ তাআলা তোমার হিফাযত করুক, যেভাবে তুমি আমাকে হিফাযত করেছ। অতঃপর এ নামাযকে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় এ নামায নূর হয়ে চমকাতে থাকে, সেটার জন্য আসমানের দরজা খুলে যায়। অতঃপর সেটাকে আল্লাহ্ তাআলার দরবারে পেশ করা হয় এবং ঐ নামায ঐ নামাযীর জন্য সুপারিশ করে। আর যদি সে (নামাযী) সেটার রুকূ, সিজদা এবং কিরাত যথাযথভাবে আদায় না করে, তবে ঐ নামায তাকে বলে, “আল্লাহ তাআলা তোমাকে ছেড়ে দিক যেভাবে তুমি আমাকে নষ্ট করেছ।”অতঃপর ঐ নামাযকে আসমানের দিকে এভাবে নিয়ে যাওয়া হয় যে, সেটার উপর অন্ধকার ছেয়ে যায়, সেটার জন্য আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর সেটাকে পুরানো কাপড়ের মত ভাজ করে ঐ নামাযীর মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয়।” (কানযুল উম্মাল, ৭ম খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৯০৪৯)
মন্দ মৃত্যুর একটি কারণ
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হযরত সায়্যিদুনা হুযায়ফা বিন ইয়ামান رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন, যে নামায আদায়ের সময় রুকূ ও সিজদা যথাযথভাবে আদায় করছে না। তখন তিনি তাকে বললেন:“তুমি যে নামায আদায় করেছ, যদি এ নামাযরত অবস্থায় তুমি মৃত্যুবরণ করো তবে হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর তরিকা অর্থাৎ দ্বীনের উপর তোমার মৃত্যু সংগঠিত হবে না।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ১১২ পৃষ্ঠা) সুনানে নাসাঈর বর্ণনায় এটাও রয়েছে;তিনি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি কতদিন থেকে এভাবে নামায আদায় করে আসছো?”সে বলল: ৪০ বছর যাবত। তিনি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বললেন: “তুমি চল্লিশ বছর পর্যন্ত মোটেই নামায আদায় করনি আর যদি এ অবস্থায় তোমার মৃত্যু এসে যায় তবে তুমি (হযরত) মুহাম্মদ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দ্বীনের উপর মৃত্যুবরণ করবে না।” (সুনানে নাসাঈ, ২য় খন্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা)
নামায চোর
হযরত সায়্যিদুনা আবু কাতাদা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন:“মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে নামাযের মধ্যে চুরি করে।” আরয করা হলো: ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! নামাযের চোর কে? ইরশাদ করলেন: “ (ঐ ব্যক্তি যে নামাযের) রুকূ, সিজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে না।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ৮ম খন্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৭০৫)
চোর দু’প্রকার
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এ হাদীসের আলোকে বলেন:“জানা গেলো, সম্পদের চোরের চাইতে নামাযের চোর সর্বনিকৃষ্ট। কেননা সম্পদের চোর যদি শাস্তিও পায় তবুও কিছু না কিছু চুরিকৃত সম্পদ দ্বারা উপকার অর্জন করে, কিন্তু নামাযের চোর শাস্তি পুরোপুরিই পাবে। অথচ তার জন্য এ ধরণের উপকার অর্জনের কোন সুযোগ নেই। সম্পদের চোর বান্দার হক নষ্ট করে, আর নামাযের চোর আল্লাহ্ তাআলার হক নষ্ট করে। এসব অবস্থা তার জন্য, যে নামায অসম্পূর্ণরূপে আদায় করে। এটা থেকে ঐ সব লোক শিক্ষাগ্রহণ করুন, যারা একেবারে নামায আদায় করে না। (মিরআত, ২য় খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! প্রথমত মানুষ নামায আদায়ই করে না, আর যা-ও অল্প কিছু সংখ্যক আদায় করে তাদের অধিকাংশই সুন্নাতসমূহ শিখার উৎসাহ উদ্দীপনার স্বল্পতার কারণে আজকাল বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে নামায আদায় করা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে নামায আদায় করার পদ্ধতি সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মদীনার দোহাই! খুব গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং নিজের নামাযকে সংশোধন করুন।