ইমানহারা হয়ে মৃত্যুবরণ করার আশঙ্কা
ইফতার মাহফিল, দাওয়াত (ইছালে সাওয়াবের মাহফিল বা ওরস সমূহ) ও না’ত ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কারণে মসজিদের ফরয নামায সমূহের প্রথম জামাআত বর্জন করার অনুমতি শরীয়াতে নেই। যেসব লোক ঘর বা হল রুমে বা বাংলোর কম্পাউন্ড ইত্যাদিতে তারাবীহ এর জামাআতের ব্যবস্থা করে অথচ পাশেই মসজিদ রয়েছে তবে তাদের উপর ওয়াজীব হচ্ছে যে, সর্বপ্রথম ফরয নামায জামাআতে ঊলা অর্থাৎ প্রথম জামাআতের সাথে আদায় করা। যে সব লোক শরীয়াত অনুমোদিত কোন কারণ ব্যতীত শারীরিকভাবে সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ফরয নামায মসজিদের প্রথম জামাআতের সাথে আদায় করে না তাদের ভয় করা উচিত। কেননা, মদীনার তাজেদার, রাসূলদের সরদার, হুযুরে আনওয়ার صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যার এটা পছন্দ হয় যে, কাল কিয়ামাতের ময়দানে আল্লাহ্ তাআলার সাথে মুসলমান অবস্থায় সাক্ষাত করবে, তবে সে যেন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামায (জামাআতের সাথে) সেখানে নিয়মিত আদায় করে, যেখানে আযান দেয়া হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা তোমাদের নবী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর জন্য সুনানে হুদা বৈধ করেছেন আর এই (জামাআত সহকারে) নামায আদায় করাও সুনানে হুদা। আর যদি তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” (মুসলিম শরীফ, ১ম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা) এ হাদীসে পাক থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জামাআতে ঊলা নিয়মিত আদায়কারীর মৃত্যু ঈমানের সাথে হবে আর যে ব্যক্তি শরয়ী অপরাগতা ব্যতীত মসজিদের প্রথম জামাআত বর্জন করে তার জন্য আল্লাহ্র পানাহ্! কুফরির উপর মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা শুধুমাত্র অলসতার কারণে পূর্ণ জামাআতে অংশগ্রহণ করে না তারা মনোযোগ দিন! আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ্ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “বাহরুর রা-ইক” এর মধ্যে রয়েছে: কনিয়াহ এর মধ্যে রয়েছে, যদি আযান শুনার পর মসজিদে প্রবেশ করার জন্য ইকামাতের অপেক্ষা করতে থাকে তবে গুনাহগার হবে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৭ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা। আল বাহরুর রাইক, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠা ৬০৪) ফতোওয়ায়ে রযবীয়া শরীফের একই পৃষ্ঠায় এটাও রয়েছে: “যে ব্যক্তি আযান শুনে ঘরের মধ্যে ইকামাতের জন্য অপেক্ষা করে তার সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হবে না।” (আল বাহরুর রাইক, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫১)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যে ব্যক্তি ইকামাতের আগ পর্যন্ত মসজিদে আসে না অনেক ফুকাহায়ে কিরামগণের (ফিকহবিদ) رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی মতে সে গুনাহগার এবং সাক্ষ্যদানের অনুপযুক্ত। তাহলে যারা বিনা কারণে ঘরে জামাআতের ব্যবস্থা করে অথবা জামাআত ছাড়া নামায আদায় করে কিংবা আল্লাহর পানাহ! নামাযই পড়ে না তাদের কি অবস্থা হবে!
ইয়া রব্বে মুস্তফাعَزَّوَجَلَّ! আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআত সহকারে মসজিদের প্রথম জামাআতের সাথে প্রথম সারিতে তাকবীরে উলার সাথে সবসময় আদায় করার সৌভাগ্য দান করো।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
মাই পাঁচো নামাযে পড়– বা-জামাআত,
হো তওফিক এইছি আতা ইয়া ইলাহী!
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
বিতির নামাযের ৯টি মাদানী ফুল
(১) বিতরের নামায ওয়াজীব। (আল বাহরুর রাইক, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা) (২) যদি এটা ছুটে যায় তবে এর কাযা আদায় করা আবশ্যক। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫৩২ পৃষ্ঠা) (৩) বিতরের নামাযের সময়সীমা ইশার নামাযের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। (তাহতাবীর পাদটিক সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ১৭৮ পৃষ্ঠা) (৪) যে ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠতে সক্ষম তার জন্য উত্তম হচ্ছে, রাতের শেষ ভাগে উঠে প্রথমে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা এরপর বিতরের নামায আদায় করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪০৩ পৃষ্ঠা) (৫) বিতর নামায তিন রাকাত। (তাহতাবীর পাদটিক সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৭৫ পৃষ্ঠা) (৬) এতে কা’দায়ে ঊলা ওয়াজীব। কাদায়ে ঊলা করার পর শুধু তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যাবেন। (৭) তৃতীয় রাকাতে কিরাতের পর কুনূতের তাকবীর বলা ওয়াজীব। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৩৩ পৃষ্ঠা) (৮) যেভাবে তাকবীরে তাহরীমা বলা হয়, সেভাবেই প্রথমে হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন, অতঃপর اَللهُ اَكْبَرُ বলবেন (তাহতাবীর পাদটিকা, ৩৭৬ পৃষ্ঠা) (৯) তারপর হাত বেঁধে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করবেন:
اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْ مِنُ بِكَ وَنَتَوَ كَّلُ عَلَيْكَ وَ نُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَ نَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ وَ نَخْلَعُ وَ نَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ ط اَللّٰهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَ لَكَ نُصَلِّىْ وَ نَسْجُدُ وَ اِلَيْكَ نَسْعٰى وَ نَحْفِدُ وَ نَرْجُوْا رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَا بَكَ اِنَّ عَذَا بَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট সাহায্য চাই এবং তোমার নিকট ক্ষমা চাই এবং তোমার উপর ঈমান রাখি। আর তোমার উপর ভরসা রাখি এবং তোমার খুবই উত্তম প্রশংসা করি এবং তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তোমার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনা এবং আলাদা রাখি ও প্রত্যাখ্যান করি ঐ ব্যক্তিকে, যে তোমার নির্দেশ অমান্য করে। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই জন্য নামায পড়ি, সিজদা করি এবং একমাত্র তোমার প্রতিই দৌড়ে আসি এবং খিদমতের জন্য হাজির হই এবং তোমার রহমতের আশাবাদী এবং তোমার শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই তোমার শাস্তি শুধু কাফিরদের জন্য রয়েছে।
(১০) দোয়ায়ে কুনুতের পর দরূদ শরীফ পড়া উত্তম। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪০২ পৃষ্ঠা) (১১) যারা দোয়ায়ে কুনূত পড়তে পারে না, তারা এটা পড়বে:
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِـى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِـى الْاٰ خِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
অনুবাদ: হে আল্লাহ্! হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতের কল্যাণ দান করো। আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো।
অথবা এটা পড়ুন اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِى অর্থাৎ-হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৮৫ পৃষ্ঠা) (১২) যদি দোয়ায়ে কুনূত পড়তে ভুলে যান ও রুকূতে চলে যান তবে পুনরায় ফিরে আসবেন না বরং সিজদায়ে সাহু করে নিবেন। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা) (৯) বিতর নামায জামাআতের সাথে আদায় করার সময় (যেমন-রমজানুল মোবারকে পড়া হয়) যদি মুক্তাদীর কুনূত পড়া শেষ হয়নি এমতাবস্থায় ইমাম রুকূতে চলে গেলে মুক্তাদীও রুকূতে চলে যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১১০ পৃষ্ঠা। তাবঈনুল হাকাইক, ১ম খন্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা)