৩. অন্ধকার পিঠ: আকিদার ইমাম, আকিদার কিতাব বনাম সাহাবীদের মর্যাদার তারতম্য
-----
এ আলোচনায় সাহাবী রা, গণের অবস্থানের বিষয়টা প্রণিধানযোগ্য:

আকিদাতুত তাহাবীতে আমি একটু পড়েছিলাম, তখনো মাথা ঘুরেছিল। এখনো মাথা ঘোরে চিন্তা করলে। সকল সাহাবী রা. কে একই সমান মানি, কারো উপর কারো মর্যাদা দেই না, কারো নিচে কারো মর্যাদা দেই না টাইপ।
হায় খোদা,
আকিদার একজন সম্মানিত স্কলার, আল্লাহ্’র রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, তিনি তখনকার পরিস্থিতির কারণে বা তখনকার হিসাব নিকাশের কারণে একটা আকিদা জন্ম দিলেন। কুরআন সুন্নাহ্’র আলোকেই তো দিয়েছেন অবশ্যই। অনেক স্কলারের আলোকে তো দিয়েছেন অবশ্যই।

এই যুগে এসে আমরা যদি বলি,
সকল সাহাবী এক পাল্লায়। এমনকি তাদের কারো মর্যাদায় তারতম্য করি না- তাহলে কি আম্মা খাদিজাতুল কুবরা, মাওলা আলী, সিদ্দিকে আকবর- এই তিন প্রথম মুসলিম (সরলার্থে) এক হয় বাকী সবার সাথে? এমনকি মর্যাদাতেও?
অসম্ভব, অবাস্তব, কল্পবিজ্ঞান, গল্পবিজ্ঞান, স্বল্পবিজ্ঞান।

কুরআনে আছে,
তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছ আর যারা মক্কা বিজয়ের পরে ইসলাম গ্রহণ করেছ তারা এক নও।

আমরা কি কুরআন অস্বীকার করছি না? এক্কেবারে সরাসরি অস্বীকার করছি না?
(লক্ষ্য করুন, এটা বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, এখানে ইমাম তাহাবি র. কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না, ভুল বলা হচ্ছে না, তিনি অবশ্যই স্কলারলি ওয়েতে কাজটা করেছেন, অবশ্যই ট্র্যাডিশনাল ওয়েতে কাজটা করেছেন, কুরআন সুন্নাহ্’র পথেই কাজটা করেছেন-

কিন্তু,
আমাদের কথা হল, 
মুদ্রার অপর পিঠও আছে। সেই অপর পিঠ কখনো কখনো খোদ কুরআন হয়ে যায়। আর এর বিপরীতে গেলে আমাদের কুফরও হয়ে যেতে পারে!

রাসূল দ. পরবর্তী যুগের এক সাহাবীকে পূববর্তী যুগের এক সাহাবীর বিষয়ে বললেন,

খবরদার! আমার সাহাবীর বিষয়ে সাবধান, তোমরা যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও ব্যয় কর তবে তাদের দুয়েক মুঠ (৩০০ গ্রাম) পরিমাণ দানের সমানও হবে না।

দেখুন,
রাসূল দ. যাকে বলছেন, তিনি কি সাহাবী নন?
যার বিষয়ে বলছেন, তিনি কি সাহাবী নন?
অবশ্যই উভয়ে সাহাবী।

যারাই, যে যুগেই রাসূল দ. কে দেখে ঈমান এনেছেন এবং ঈমানে মৃত্যুবরণ করেছেন- তাদের সবাই সাহাবী।

কিন্তু শুধু মুসলিম হওয়ার সময়কালের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে এক সাহাবীর থেকে আরেক সাহাবীর দূরত্ব এতই বেশি, যে, একজন উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করলেও অপর সাহাবীর দু মুঠ গমের সমান হবে না।

এখন,
আকিদাতুত তাহাবি কি আমরা ছুড়ে ফেলব? কখনোই না।
আকিদাতুত তাহাবির বিরুদ্ধে দাঁড়াব? কখনোই না।

এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও সালাফিস্টদের মতন নয়। তারা ছুঁড়ে ফেলার বা বদলে দেয়ার বা বাতিল সাব্যস্ত করার উসুল গ্রহণ করেছে। আমরা, এর বিপরীতে, তাদের ওই অবস্থায় ওই মাসআলা তুলে আনার পরিপ্রেক্ষিতকে সম্মানের সাথে বিবেচনা করছি এবং সত্যের একটা রূপ হিসাবে উপস্থাপন করছি নিজেদের কাছে।

আমরা শুধু ধরে নিব,
একটা প্রয়োজনের সাপেক্ষে স্কলারদের বিশাল সংখ্যা একেক সময় একেক আলোকে সত্যকে দেখেন।

সময় প্রবহমান, কুরআন ও সুন্নাহ্ স্থির।
প্রবহমান সময়ের আলোকে স্থির কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে আলিমরা মাসআলা বের করেন।
সময় আরো প্রবাহিত হয়, সকল পুরনো মাসআলা পাগলের মত আঁকড়ে থাকলে হবে না। কারণ মাসআলা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলিম দিয়েছেন। কুরআন ও সুন্নাহ্ তখনো স্থির ছিল, এখনো স্থির আছে।
Top