নবী-রাসূল সম্পর্কিত আকিদা-১
❏ রাসূলগণকে প্রেরণ করা আল্লাহ তা‘আলার ওপর আবশ্যক কি❓
মূলত: আল্লাহ তা‘আলার ওপর কোন কিছুই আবশ্যক নহে। তবে রাসূলগণকে প্রেরণ করা আল্লাহ তা‘আলার বৈধ ইখতিয়ারের অন্তর্ভূক্ত।
❏ নবী কাকে বলে❓
নবী এমন স্বাধীন মানব যিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত, যাঁর প্রতি আল্লাহ তা‘আলা শরীয়তের ওহী প্রেরণ করেন। যদ্বারা তিনি উহা বাস্তবায়ন করেন।
مَا الدَّلِيْلُ عَلٰى ذٰلِكَ ؟
اَلدَّلِيْلُ عَلٰى ذٰلِكَ الْمُشَاهَدَةُ بِالْعُيُوْنِ لِاَنَّنَا نُشَاهِدُ الْمُمْكِنَاتِ وُجِدَتْ وَاِنْعَدَمَتْ، فَلَوْكَانَتْ وَاجِبَةً لَمَا اِنْعَدَمَتْ، وَلَوْ كَانَتْ مُسْتَحِيْلَةً لَمَا وُجِدَتْ وَقَالَ اللهُ تَعَالٰى: وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ وَيَخْتَارُ.
مَاهِىَ اَسْمَاءُ اللهِ تَعَالٰى ؟
اَسْمَاءُ اللهِ تَعَالٰى كَثِيْرَةٌ، وَاَشْهَرُهَا لَفْظُ الْجَلَالَةِ ، وَهُوَ ্থاللهُ‘ .
هَلْ اِرْسَالُ الرُّسُلِ وَاجِبٌ عَلٰى اللهِ تَعَالٰى ؟
لَايَجِبُ عَلٰى اللهِ تَعَالٰى فِعْلُ شَيْئٍ اَصْلًا فَاِرْسَالُ الرُّسُلِ دَاخِلٌ فِى الْجَائِزِ فِىْ حَقِّ اللهِ تَعَالٰى .
مَنْ هُوَ النَّبِىُّ ؟
اَلنَّبِىُّ هُوَالْاِنْسَانُ الْحُرُّ السَّلِيْمُ
❏ রাসূল কাকে বলে❓
রাসূল হলেন সেই নবী যাঁর প্রতি আল্লাহ ‘প্রত্যাদেশ’ প্রেরণ করেছেন এবং সে প্রত্যাদেশ মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যাপারেও আদিষ্ট হয়েছেন।
❏ সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ রাসূল কে❓
সর্বপ্রথম রাসূল আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) এবং সর্বশেষ রাসূল আমাদের প্রিয়নবী সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ), যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন।
❏ নবীগণের সংখ্যা কত❓
নবীগণের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ তা‘আলাই সমধিক জ্ঞাত। তবে কারো কারো মতে এর সংখ্যা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার।
❏ রাসূলগণের সংখ্যা কত❓
রাসূলগণের সংখ্যা হলো- তিনি শ’ তের বা চৌদ্দ বা পনের জন।
مِنْ كُلِّ عَيْبٍ الَّذِىْ اَوْحٰى اللهُ اِلَيْهِ لِشَرْعٍ يُعْمَلُ بِـه .
مَنْ هُوَ الرَّسُوْلُ ؟
اَلرَّسُوْلُ هُوَ النَّبِىُّ الَّذِىْ اَوْحٰى اللهُ اِلِيْهِ بِتَبْلِيْغٍ مَا اُمِرَبِـه لِلْخَلْقِ .
مَنْ اَوَّلُ الرُّسُلِ، وَمَنْ اٰخَرُهُمْ ؟
اَوَّلُهُمْ اٰدَمُ اَبُو الْبَشْرِ، وَاٰخِرُهُمْ سَيِّدُنَا وَنَبِيُّنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْمُرْسَلُ لِكَافَّةِ الْخَلْقِ .
كَمْ عَدَدُ الْاَنْبِيَاءِ ؟
لَا يَعْلَمُ ذٰلِكَ اِلَّا اللهُ تَعَالٰى وَقِيْلَ عَدَدُهُمْ مِائَةُ اَلْفٍ وَاَرْبَعَةُ وَّ عِشْرُوْنَ اَلْـفًا .
كَمْ عَدَدُ الْمُرْسَلِيْنَ ؟
هُمْ ثَلَاثُ مِائَةٍ وَثَلَاثَةَ عَشَرَ اَوْ اَرْبَعَةَ عَشَرَ، اَوْ خَمْسَةَ عَشَرَ .
❏ রাসূলগণের কতেক সংখ্যা সবিস্তারে জানা আবশ্যক❓
বিস্তারিতভাবে পঁচিশ জন রাসূলের পরিচিতি জানা আবশ্যক। তাঁরা হলেন- সাইয়্যেদুনা হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام), হযরত ইসহাক (عليه السلام), হযরত ইয়াকুব (عليه السلام), হযরত নূহ (عليه السلام), হযরত দাউদ (عليه السلام), হযরত সোলাইমান (عليه السلام), হযরত আইয়ুব (عليه السلام), হযরত ইউসুফ (عليه السلام), হযরত মুসা (عليه السلام), হযরত হারুন (عليه السلام), হযরত জাকারিয়া (عليه السلام), হযরত ইয়াহিয়া (عليه السلام), হযরত ঈসা (عليه السلام), হযরত ইলিয়াছ (عليه السلام), হযরত ইসমাঈল (عليه السلام), হযরত ইয়াসাউ (عليه السلام), হযরত ইউনুস (عليه السلام), হযরত লুত (عليه السلام), হযরত ইদ্রিস (عليه السلام), হযরত হুদ (عليه السلام), হযরত সুয়াইব (عليه السلام), হযরত ছালেহ (عليه السلام), হযরত জুলকিফিল (عليه السلام), হযরত আদম (عليه السلام) ও সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত সাইয়্যেদুনা মুহাম্মদ আলাহিমুস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম।
আমরা অবগত হয়েছি যে, নিশ্চয়ই সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হলেন সাইয়্যেদুনা হযরত মুহাম্মদ আলাইহিস্ সালাতু ওয়াস্সালাম। অতঃপর শ্রেষ্ঠত্বের ধারাবাহিকতায় তাঁর পর কারা?
كَمَ عَدَدُ الْمُرْسَلِيْنَ مَعْرِفَتُهُمْ مِنَ الْوَاجِبِ تَفْصِيْلًا ؟
اَلْوَاجِبُ مَعْرِفَتُهُ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ تَفْصِيْلًا خَمْسَةُ وَّعِشْرُوْنَ، وَهُمْ سَادَاتُنَا سَيَّدُنَا اِبْرَاهِيْمُ وَاِسْحَاقُ وَيَعْقُوْبُ وَنُوْحٌ وَدَاؤدُ وَسُلَيْمَانُ وَاَيُّـوْبُ وَيُوْسُفُ وَمُوْسٰى وَهَارُوْنَ وَزَكَرِيَا وَيَحْىٰ وَعِيْسٰى وَاِلْيَاسُ وَاِسْمَاعِيْلُ وَالْيَسَعُ وَيُوْنُسُ وَلُوْطُ وَاِدْرِيْسُ وَهُوْدٌ وَشُعَيْبٌ وَصَالِحٌ وَذُوالْكِفْلِ وَاَدَمُ وَسَيَّدُنَا مُحَمَّدٌ سَيِّدُ الْجَمِيْعِ عَلَيْهِمُ الصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ.
عَلِمْنَا اَنَّ اَفْضَلَ الْجَمِيْعِ سَيَّدُنَا مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ الصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ، فَمِنَ الَّذِىْ يَلِيْهِ فِى الْاَفْضَلِيَّةِ ؟
يَلِيْهِ فِى الْاَفْضَلِيَّةِ : سَيِّدُنَا اِبْرَاهِيْمُ فَسَيِّدُنَا مُوْسٰى فَسَيِّدُنَا
ধারাবাহিকভাবে শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে রয়েছেন- সাইয়্যেদুনা হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام), সাইয়্যেদুনা হযরত মুসা (عليه السلام), সাইয়্যেদুনা হযরত ঈসা (عليه السلام) ও সাইয়্যেদুনা হযরত নূহ (عليه السلام)। এঁরা সবাই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ।
আমরা অবহিত হলাম, অতঃপর রাসূলগণের (ﷺ) ক্ষেত্রে কি ধারণা পোষণ করা ওয়াজিব বর্ণনা কর।
রাসূলগণের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে নিষ্কলুষ ধারণা পোষণ করা আবশ্যক। সত্যবাদিতা, আমানতদারী, ঐশী প্রত্যাদেশ যথাযথ প্রচার এবং বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা।
❏ সত্যবাদিতা অর্থ কি❓
এর অর্থ- তাঁদের সমস্ত কথোপকথনে মিথ্যার অবতারণা না হওয়া।
❏ তাঁদের (নবী) সত্যবাদিতার ওপর প্রমাণ কি❓
তাঁদের সত্যবাদিতার দলীল- মু’জিযা বা অলৌকিক কর্মকান্ড। যেমন, মৃতকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করা, আঙ্গুলের মাঝখান থেকে ঝরণার ন্যায় পানি প্রবাহিত করা। কেননা তাঁরা সত্যবাদী না হলে, অবশ্যই মিথ্যাবাদী হতেন। আর তাঁরা মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের জন্যে এরূপ
عِيْسٰى فَسَيِّدُنَا نُوْحٌ وَهُمْ اُوْلُوْالْعَزْمِ .
فَهِمْنَا ذٰلِكَ، فَمَا هُوَالْوَاجِبُ فِىْ حَقِّ الرُّسُلِ عَلَيْهِمُ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ؟
اَلْوَاجِبُ فِىْ حَقِّ الرُّسُلِ عَلَيْهِمُ الصَّلوٰةُ وَالسَّلَامُ اَرْبَعَةٌ: اَلصِّدْقُ وَالْاَمَانَةُ وَالتَّبْلِيْغُ وَالْفَطَانَةُ .
مَا مَعْنَى الصِّدْقُ ؟
مَعْنَاهُ اَنَّهُمْ لَايَكْذِبُوْنَ فِىْ جَمِيْعِ اَقْوَالِهِمْ .
مَا الدَّلِيْلُ عَلٰى صِدْقِهِمْ ؟
اَلدَّلِيْلُ عَلٰى ذٰلِكَ-থ الْمُعْجِزَةُ مِثْلُ اِحْيَاءِ الْمَوْتٰى وَاِبْرَاءِ الْأَكْمَهِ وَالْاَبْرَصِ وَنَبِعِ الْمَاءِ مِنْ بَيْنِ الْاَصَابِـعِ .
لِاَنَّهُمْ لَوْلَمْ يَكُوْنُوْا صَادِقِيْنَ لَكَانُوْا كَاذِبِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا كَاذِبِيْنَ
অলৌকিক মু’জিযার অবতারণা করতেন না। যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন- ‘আমার বান্দা আমার পক্ষ থেকে তাবলীগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সব বিষয়ে কথা বলেছেন সত্যই বলেছেন।’
❏ আমানত অর্থ কি❓
এর অর্থ- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাঁদের (নবীগণের) প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শিশুকাল থেকে নিষিদ্ধ বিষয় তথা পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকেই হিফাযত ও নিরাপত্তার বিধান করেছেন।
❏ তাঁদের (নবীগণের) আমানতদারীর উপর দলীল কি❓
এর দলীল- তাঁদের আনুগত্যের প্রতি আমরা নির্দেশিত। কেননা তাঁরা আমানতদার না হলে অবশ্যই খেয়ানতকারী হতো। আর তাঁরা খেয়ানতকারী হলে আল্লাহ তা’আলা তাঁদের আনুগত্যের নির্দেশ দিতেন না।
❏ তাবলীগ অর্থ কি❓
এর অর্থ, নিশ্চয় তাঁদের (নবীগণের) প্রতি তাবলীগের (পৌঁছায়ে দেয়ার) যে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে বান্দাদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া।
لَمْ يَخْلُقِ اللهُ لَهُمُ الْمُعْجِزَةَ النَّازِلَةَ مَنْزِلَةَ قَوْلِه سُبْحَانَهُ وَتَعَالٰى: صَدَقَ عَبْدِىْ فِىْ كُلِّ مَايُبَلِّغُ عَنِّـىْ .
مَا مَعْنَى الْاَمَانَةُ ؟
مَعْنَاهَا اَنَّ اللهَ حَفِظَ ظَوَاهِرَهُمْ وَبَـوَاطِنَهُمْ وَلَوْ فِىْ حَالِ الصِّغَرِ مِنَ التَّلَبُّسِ بِمُنْهٰى عَنْهُ .
مَا الدَّلِيْلُ عَلٰى اَمَانَتِهِمْ ؟
اَلدَّلِيْلُ عَلٰى ذٰلِكَ اُمِرْنَا بِاِتِّبَاعِهِمْ لِاَنَّهُمْ لَوْلَمْ يَكُوْنُوْا اُمَنَاءَ لَكَانُوْا خَائِنِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا خَائِنِيْنَ مَا اَمَرَنَا اللهُ تَعَالٰى بِاِتِّبَاعِهِمْ .
مَا مَعْنٰى التُّبْلِيْـغِ ؟
مَعْنَاهُ اَنَّهُمْ يُبَلِّغُوْنَ الْخَلْقَ مَا اُمِرُوْا بِتَبْلِيْغِـه .
❏ তাঁদের তাবলীগের ওপর দলীল কি❓
এর দলীল হচ্ছে- আমাদেরকে তাঁদের প্রতি আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁরা যদি যথাযথভাবে প্রত্যাদেশ পৌঁছিয়ে না দিতেন? তাহলে গোপনকারী হতেন। আর গোপনকারী হলে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁদের আনুগত্যের নির্দেশ দিতেন না।
❏ বুদ্ধিমত্তা অর্থ কি❓
এর অর্থ- নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় অকাট্য ও প্রকাশ্য প্রমাণাদি পেশ করার এবং তাঁদের অন্তরে বিরাজমান বিষয়াদি স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করার শক্তি ও ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
❏ তাঁদের বুদ্ধিমত্তার দলীল কি❓
এর দলীল- নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা তাঁদেরকে এ মহান পদের জন্য নির্বাচিত করেছেন। বুদ্ধিমান, যোগ্য ও সূক্ষ্মজ্ঞানী ব্যতীত অন্য কাউকে তিনি এ পদে নির্বাচিত করেন না।