সিজদায়ে সাহুর পদ্ধতি
শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিয়াত’পাঠ করে বরং উত্তম হলো, দরূদ শরীফও পাঠ করে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা করা। অতঃপর পুনরায় তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া পড়ে সালাম ফিরাবে। (আলমগিরী সম্বলিত ফতোওয়ায়ে কাজী খান, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে গেলে তখন....
সিজদায়ে সাহু করার কথা ছিলো কিন্তু ভুলে তা না করে সালাম ফিরিয়ে নিলো, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত মসজিদ থেকে বের না হবেন এ সময়ের মধ্যে করে নিতে পারবেন। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৫৬ পৃষ্ঠা) মাঠে হলে যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সমূহ অতিক্রম না করেন বা সামনের দিকে সিজদা এর স্থান অতিক্রম না করে থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদায়ে সাহু করতে পারবেন। তবে যদি যে সমস্ত বিষয় নামায ভঙ্গের কারণ সে সব কিছু (যেমন- কথাবার্তা বলা বা নামাযের পরিপন্থী অন্য কোন কাজ করা) সালামের পর পাওয়া যায় তবে এখন আর সিজদায়ে সাহু করলে হবে না। (নামায পুনরায় পড়তে হবে) । (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৫৬ পৃষ্ঠা)
তিলাওয়াতের সিজদা ও শয়তানের দূর্ভাগ্য
প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী, মক্কী মাদানী হাশেমী صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “ মানুষ যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদা করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায় এবং কান্না করে বলতে থাকে: হায়! আমার ধ্বংস! আদম সন্তানকে সিজদার আদেশ দেয়া হয়েছে, সে সিজদা করেছে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল, আমি অস্বীকার করেছি, যার ফলে আমার জন্য জাহান্নাম রয়েছে। (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা)
اِنْ شَآءَ الله عَزَّوَجَلَّ উদ্দেশ্য পূরণ হবে
যে কোন উদ্দেশ্যে একই মজলিসে সিজদার সবগুলো (অর্থাৎ-১৪টি) আয়াত পড়ে সিজদা করলে আল্লাহ্ তাআলা তার উদ্দেশ্য পূরণ করে দিবেন। চাই একটি একটি আয়াত পাঠ করার পর একটি একটি সিজদা করবে কিংবা সবগুলো পাঠ করে সবশেষে ১৪টি সিজদা করবে। (গুনিয়াহ, দুররে মুখতার ইত্যাদি)
তিলাওয়াতে সিজদার ৮টি মাদানী ফুল
(১) সিজদার আয়াত পড়া বা শুনার দ্বারা সিজদা ওয়াজীব হয়ে যায়। পড়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, এতটুকু আওয়াজে পড়া যেন কোন অক্ষমতা বা প্রতিবন্ধকতা না থাকলে নিজে শুনতে পায়। শ্রবণকারীর জন্য এটি আবশ্যক নয় যে, ইচ্ছাকৃত ভাবে শ্রবণ করুক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে, উভয় অবস্থায় তার উপর সিজদা ওয়াজীব হয়ে যায়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা) (২) যে কোন ভাষায় সিজদার আয়াতের অনুবাদ পাঠকারী এবং শ্রবণকারী উভয়ের উপর সিজদা ওয়াজীব হয়ে যায়। শ্রবণকারী এটা বুঝতে পারুক বা না পারুক যে, আয়াতে সিজদার অনুবাদ পাঠ করা হয়েছে। অবশ্য এটা জরুরী যে, তার জানা না থাকলে জানিয়ে দেয়া যে, এটা সিজদার আয়াতের তরজুমা ছিলো। আর (সিজদার) আয়াত পড়া হলে এটা জরুরী নয় যে, শ্রবণকারীকে আয়াতে সিজদা সম্পর্কে অবগত করিয়ে দেয়া। (আলমগিরী, খন্ড ১ম, ১৩৩ পৃষ্ঠা) (৩) সিজদা ওয়াজীব হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ আয়াতটি পড়া আবশ্যক কিন্তু পরবর্তী ওলামাগণের رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی মতে, যে শব্দটিতে সিজদার মূল অংশটি পাওয়া যায় তার সাথে পূর্বের বা পরের কোন শব্দ মিলিয়ে পাঠ করলে তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজীব হয়ে যাবে।তাই সাবধানতা হলো, উভয় অবস্থায় তিলাওয়াতে সিজদা করা। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ২২৩, ২৩৩ পৃষ্ঠা) (৪) সিজদার আয়াত নামাযের বাইরে পড়া হলে তৎক্ষণাৎ সিজদা দেওয়া ওয়াজীব নয়। অবশ্য অযু থাকলে দেরী করা মাকরূহে তানযীহী। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ৫৮৩ পৃষ্ঠা) (৫) নামায রত অবস্থায় তিলাওয়াতে সিজদা তৎক্ষণিক আদায় করা ওয়াজীব। যদি দেরী করে অর্থাৎ তিন আয়াতের অতিরিক্ত পড়ে নেয় তবে গুনাহগার হবে আর যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযে থাকবে ঐ সময়ের মধ্যে মনে পড়লে কিংবা সালাম ফিরানোর পর নামাযের পরিপন্থী কোন কাজ না করে থাকলে তবে তিলাওয়াতে সিজদা করে সিজদায়ে সাহু আদায় করবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা)
সাবধান! হুশিয়ার!
(৬) রমজানুল মোবারকে তারাবীহ বা শাবীনাহ (অর্থাৎ রাতে পুরো কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করার মাহফিল) এর মধ্যে অংশগ্রহণ করেননি, নিজে আলাদাভাবে নামাযে লিপ্ত আছেন এ অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনে নিলে আপনার উপরও তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজীব হয়ে যাবে। কাফির বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছ থেকে সিজদার আয়াত শ্রবণ করলে তবুও তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজীব হয়ে যাবে। বালিগ হওয়ার পর থেকে যতবারই সিজদার আয়াত শুনে আসছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সিজদা করেননি, এ অবস্থায় মনের প্রবল ধারণানুযায়ী হিসাব করে অযু অবস্থায় সবগুলো তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করে নেয়া উচিত।
তিলাওয়াতে সিজদার পদ্ধতি
(৭) দাঁড়িয়ে اَللهُ اَكْبَرُ বলতে বলতে সিজদাতে চলে যাবেন এবং কমপক্ষে তিনবার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى বলবেন, অতঃপর اَللهُ اَكْبَرُ বলতে বলতে দাঁড়িয়ে যাবেন। প্রথম ও শেষে উভয়বার اَللهُ اَكْبَرُ বলা সুন্নাত এবং দাঁড়ানো থেকে সিজদাতে যাওয়া ও সিজদা হতে দাঁড়ানো উভয়বার কিয়াম করা মুস্তাহাব। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা) (৮) তিলাওয়াতে সিজদার জন্য اَللهُ اَكْبَرُ বলার সময় হাত উঠাতে হবে না। এতে তাশাহহুদও নাই সালামও নাই। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত তানবীরুল আবছার, ২য় খন্ড, ৫৮০ পৃষ্ঠা)
সিজদায়ে শোকর এর বর্ণনা
সন্তান ভূমিষ্ট হলে বা ধন-সম্পদ অর্জিত হলে কিংবা হারানো বস্তু ফিরে পাওয়া গেলে অথবা রোগী সুস্থতা লাভ করলে বা মুসাফির বাড়ী ফিরে আসলে, মোটকথা এ ধরণের সকল নেয়ামত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শুকরিয়া স্বরূপ সিজদা করা মুস্তাহাব। এর পদ্ধতি ওটাই যা তিলাওয়াতে সিজদার মধ্যে রয়েছে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা) এভাবে যখনই কোন সুসংবাদ বা নেয়ামত অর্জন হয় তখন সিজদায়ে শোকর করা সাওয়াবের কাজ। যেমন-মদীনা মুনাওয়ারার ভিসা পাওয়া গেলে ইনফিরাদী কৌশিশ করে তাতে সফল হলে অর্থাৎ যাকে ইনফিরাদী কৌশিশ করলেন সে সুন্নাতের প্রশিক্ষণের জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাফেলাতে সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে, কোন সুন্নী আমলদার আলিমের সাক্ষাৎ হয়ে গেলে, বরকতময় স্বপ্ন দেখলে, ইলমে দ্বীন অর্জনকারী ছাত্র পরীক্ষাতে সফলকাম হলে, বিপদ দূর হয়ে গেলে বা কোন ইসলামের শত্রুর মৃত্যু হলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিজদায়ে শোকর করা মুস্তাহাব।