আযানের ১৪টি মাদানী ফুল
(১) জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যখন মসজিদে সময় মত জামাআতে ঊলার (প্রথম জামাআত) সাথে আদায় করা হয় তখন এর জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যার হুকুম ওয়াজিবের মতই। যদি আযান দেয়া না হয় তাহলে ঐ এলাকার সকল মানুষ গুনাহগার হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
(২) যদি কোন লোক শহরের মধ্যে ঘরে নামায আদায় করে তাহলে ঐ এলাকার মসজিদের আযান তার জন্য যথেষ্ট, তবে আযান দেয়া মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬২৭৮ পৃষ্ঠা)
(৩) যদি কোন ব্যক্তি শহরের বাহিরে বা গ্রামে, বাগান বা ক্ষেত ইত্যাদিতে থাকে এবং ঐ স্থানটি যদি নিকটবর্তী হয় তাহলে শহর বা গ্রামের আযান যথেষ্ট হবে, এরপরও আযান দেয়াটা উত্তম আর যদি নিকটবর্তী না হয় তার জন্য ঐ আযান যথেষ্ট নয়। নিকটবর্তী হওয়ার সীমা হচ্ছে, ঐ আযানের শব্দ ঐ স্থানে পৌঁছা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা)
(৪) মুসাফির যদি আযান ও ইকামাত উভয়টা ছেড়ে দেয় অথবা ইকামাত না দেয় তাহলে মাকরূহ হবে। আর যদি শুধু ইকামাত দেয় তবে মাকরূহ হবে না কিন্তু উত্তম হচ্ছে যে, আযানও দেয়া। চাই সে একা হোক বা অন্যান্য সহযাত্রীরা সেখানে উপস্থিত থাকুক। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)
(৫) সময় শুরু হওয়ার পরই আযান দিবে। যদি সময়ের পূর্বেই আযান দিয়ে দেয় অথবা সময় হওয়ার পূর্বে আযান শুরু করেছে আর আযানের মাঝখানে সময় হয়ে গেলো উভয় অবস্থায় আযান পুনরায় দিতে হবে। (আল হিদায়া, ১ম খন্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা) মুয়াজ্জিন সাহেবদের উচিত যে, তারা যেন সর্বদা সময়সূচীর ক্যালেন্ডার দেখতে থাকেন। কোন কোন স্থানে মুয়াজ্জিন সাহেবগণ সময়ের পূর্বেই আযান শুরু করে দেয়। ইমাম সাহেব ও কমিটির নিকটও মাদানী অনুরোধ থাকবে যে, তারাও যেন এ মাসআলার প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখে।
(৬) মহিলাগণ নির্দিষ্ট সময়ানুসারে নামায পড়ুক বা কাযা নামায আদায় করুক তাদের জন্য আযান ও ইকামাত দেয়া মাকরূহ। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭২ পৃষ্ঠা)
(৭) মহিলাদের জন্য জামাআতের সাথে নামায আদায় করা না জায়েয তথা অবৈধ। (প্রাগুক্ত, ৩৬৭ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা)
(৮) বিবেকবান ছোট ছেলেরাও আযান দিতে পারবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা)
(৯) বিনা অযুতে আযান দিলে শুদ্ধ হবে তবে বিনা অযুতে আযান দেয়া মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। মারাকিউল ফালাহ, ৪৬ পৃষ্ঠা)
(১০) হিজড়া, ফাসিক যদিও আলিম হোক, নেশাখোর, পাগল গোসল বিহীন এবং অবুঝ বাচ্চাদের আযান দেয়া মাকরূহ। এসকল ব্যক্তিরা আযান দিলে তাদের সবার আযানের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৬ পৃষ্ঠা। দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৭৫ পৃষ্ঠা)
(১১) যদি মুয়াজ্জিনই ইমাম হন তাহলে তা উত্তম। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা)
(১২) মসজিদের বাহিরে কিবলামূখী হয়ে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে উচ্চ আওয়াজে আযান দিতে হবে, তবে শক্তির অধিক আওয়াজ উঁচু করা মাকরূহ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৬৮-৩৬৯ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা) আযানে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করানো সুন্নাত এবং মুস্তাহাব। কিন্তু (আঙ্গুল) হেলানো এবং ঘুরানো অনর্থক কাজ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৫ম খন্ড, ৩৭৩ পৃষ্ঠা)
(১৩) حَیَّ عَلَی الصَّلٰوۃ ডান দিকে মুখ করে বলবে এবং حَیَّ عَلَی الفَلَاح বাম দিকে মুখ করে বলবে। যদিও আযান নামাযের জন্য না হয়। যেমন (ভূমিষ্ট হওয়ার পর) ছোট বাচ্চার কানে আযান দেয়া হয়। এ ফেরানোটা শুধু মুখের, পুরো শরীর ফিরাবেন না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৪৬৯ পৃষ্ঠা) অনেক মুয়াজ্জিন “صَلٰوۃ” ও “فَلَاح” বলার সময় চেহারাকে হালকাভাবে ডানে ও বামে একটু করে ফিরিয়ে নেয়, এটা ভুল পদ্ধতি। সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, প্রথমেই চেহারাকে ভালভাবে ডানে ও বামে ফিরাতে হবে এরপর حَیَّ বলা শুরু করতে হবে।
(১৪) ফজরের আযানে حَیَّ عَلَی الفَلَاح এর পরে اَلصَّلٰوۃُ خَیْرٌ مِّنَ النَّوْم বলা মুস্তাহাব। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৭ পৃষ্ঠা) যদি নাও বলে তবুও আযান হয়ে যাবে। (কানুনে শরীয়াত, ৮৯ পৃষ্ঠা)