হাদিস পর্যালোচনাঃ দুটি ভারী বস্তু আঁকড়ে ধরার নির্দেশঃ আল-কুরআন ও আহলে বাইয়াত।
❏ হাদিস ১:
ইমাম আহমদ, আবু ই'য়ালা প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে,
أخرج أحمد وأبو يعلى، عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إنی أوشك أن أدعى فأجيب، وإني تارك فيكم الثقلين كتاب الله و عترتی أهل بیتی. وإن اللطيف الخبير خبرنی، أنهما لن يتفرقا حتى یردا على الحوض، فانظروا كيف تخلفونی فيهما؛
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমি এটা কামনা করি যে, আমাকে (আল্লাহর পক্ষ হতে) আহ্বান করা হবে আর আমিও সাড়া দেব (ইন্তিকাল করব)। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দুটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি, (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবার পরিজন তথা আহলে বায়ত। আর সুক্ষ্ম দ্রষ্টা (আল্লাহ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তারা উভয়ে (কুরআন এবং আমার আহলে বায়ত) কখনাে পৃথক হবেনা যতক্ষণ না উভয়ে আমার নিকট হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত হয়। সুতরাং আমার পরে তােমরা তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করছ তা লক্ষ্য রেখ।
➠বর্ণনাসূত্রঃ
১. ইমাম আহমদঃ আল মুসনাদ- ৩: ৩৯৩ (১০৭৪৭)।
২. আবু ইয়ালা-২:৬ (১০১৭)/ ৯:(১০২৩)/ ৪৭:(১১৩৫)।
❏ হাদিস ২:
ইমাম বাযযার হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
أخرج البزار عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني خلفت فيكم اثنين لن تضلوا بعدهما أبدأ: كتاب الله، ونسبی. ولن يتفرقا، حتی یردا على الحوض -
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি তােমাদের জন্য দুটি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি, (তােমরা এদের আঁকড়ে ধরলে) এরপর তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার বংশধর (আহলে বাইত)। আর আমার কাছে হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এঁরা উভয়ে (কুরআন এবং আমার বংশধর) পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা।
➠বর্ণনাসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার- হাইছামী, ৩:২২৩ (২৬১৭),
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৯:১৬৩।
❏ হাদিস ৩:
ইমাম বাযযার হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন,
أخرج البزار عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إنی مقبوض، وإني قد ترکت فیکم الثقلين: كتاب الله، وأهل بیتی، وإنكم لن تضلوا بعدهما۔
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি ইন্তিকাল করব। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দু'টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় তােমরা এ দু’টা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পর কখনাে গােমরাহ হবেনা।
➠বর্ণনাসূত্রঃ
১. কাশফুল আসতার - হাইছামী-৩:২২১ (২৬১২)।
২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ - ৯:১৬৩।
এই হাদিসটির কতিপয় সূত্রঃ
➠সূত্র ১:
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) সূত্রেঃ
১.ইমাম আহমদঃ আল মুসনাদ- ৩: ৩৯৩ (১০৭৪৭)।
২.আবু ইয়ালা-২:৬ (১০১৭)/ ৯:(১০২৩)/ ৪৭:(১১৩৫)।
৩.ইবনে আবি শাইবাহ, ইবনে সা'দ।
৪.ইমাম মুত্তাকি আল হিন্দীঃ কাঞ্জুল উম্মাল ১ম খন্ডের ৪৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৯৪৫।
➠সূত্র ২:
হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) সূত্রে।
১.হায়সামীঃ কাশফুল আসতার, ৩:২২৩ (২৬১৭),
২.হায়সামীঃ মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৯:১৬৩।
৩.ইমাম বাযযারঃ মুসনাদে বাযযার।
➠সূত্র ৩:
হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন।
১.হায়সামীঃ কাশফুল আসতার-৩:২২১ (২৬১২)।
২.হায়সামীঃ মাজমাউজ জাওয়ায়েদ - ৯:১৬৩।
৩.ইমাম বাযযারঃ মুসনাদে বাযযার।
➠সূত্র ৪:
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (رضي الله عنه) সূত্রে।
১.মুসলিম শরীফ হাদিস নং- ৬০০৯
২.কাঞ্জুল উম্মালঃ ১ম খন্ড ৪৪ পৃষ্ঠা।
৩.সূনান আত তিরমিজী, অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা। হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮৮ | পরিচ্ছদঃ ৩২. আহলে বাইত-এর মর্যাদা।
৪.সহীহঃ মিশকাত (৬১৪৪),
৫.রাওযুন নায়ীর (৯৭৭, ৯৭৮),
৬.সহীহাহ (৪/৩৫৬-৩৫৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।
➠সূত্র ৫:
হযরত ইয়জিদ বিন হাইয়্যান (رضي الله عنه) সূত্রে।
১.সহিহ মুসলিম : ২য় খন্ড, পৃ. ৩৭৯, ৭ম খণ্ড,পৃ. ১২২; হাদিস নং ৫৯২০, ৫৯২৩। অধ্যায়ঃ হযরত আলী (رضي الله عنه) এর জ্ঞান।
২.সুনানে দারেমীঃ ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।
৩.মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪,১৭,২৬,৫৯; ৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,৩৭১; ৫ম খণ্ড,পৃ: ১৮২,১৮৯;
৪.মুসতাদরাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৯,১৪৮,৫৩৩
➠সূত্র ৬:
যায়দ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) সূত্রে।
১. মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল: ১ম খন্ড, ৫ম অধ্যায়, হাদিস-২, পৃষ্টা-১৫৬, ৫ খন্ডের ১৮২ পৃষ্ঠা, ৫ খন্ডের ১৮৯ পৃষ্ঠা, ১৭তম খ-, পৃ. ২১১, হাদীস ১১১৩১।
২. তিরমিজি ; আস সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৩৭৮৬, ৩৭৮৮।
৩. মুসলিম; আস-সহীহ, ৬ খন্ড, হাদিস নং-৬০০৭, ৬০১০।
৪. নাসাঈঃ আল-খাসায়িস, পৃ. ১১২, হাদীস ৭৮;
৫. মিশকাত, ১১ খন্ড, হাদিস নং-৫৮৯২, ৫৮৯৩ ।
৬. আবু ইয়ালাঃ আল-মুসনাদ, ২য় খ-, পৃ. ২৯৭, হাদীস ১০২১;
৭. ইবনে আবি আসিম, কিতাবুস সুন্নাহ, পৃ. ৬৩০, হাদীস ১৫৫৫;
৮. তাবারানী, সুলাইমান, ৫ম খ-, পৃ. ১৬৯, হাদীস ৯৮০ ও ৪৯৮১।
৯. ইমাম হাকিম নিশাপুরিঃ মুস্তাদরাক আল হাকিমঃ ৩য় খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা। ইমাম হাকিম বলেন,''বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
ইমাম যাহাবিও তাঁর তালখিসে মুস্তাদরাক' গ্রন্থে তা স্বীকার করেছেন।
১০. কাঞ্জুল উম্মাল, হাদিস নম্বর-৮৭৩।
নাসায়ী,
১১. ইবনে মাগাযিলী, মানাকিব, পৃ. ২৩০, হাদীস ২৮৩;
১২. ইমাম সুয়ূতীঃ আল জামেউস সাগীরঃ ৩য় খন্ডঃ ১৪ পৃ। (সহিহ বলেছেন)
১৩. ইমাম হায়তামীঃ মাজমাউয-যাওয়াঈদঃ ৯ম খন্ড, ১৬৫ পৃ। (বর্ণনাকারীগণ বিশ্বাসযোগ্য)
১৪. মাদারেজুন নাবুয়াত: আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, ৩খন্ড, পৃঃ-১০৫ ।
১৫. ইযাযাতুল খিফাঃ শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, খঃ-১, পৃঃ-৫৬৬।
➠সূত্র ৭:
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আল আনসারী (رضي الله عنه) সূত্রে।
১.সূনান আত তিরমিজী / অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা।পরিচ্ছদঃ ৩২. আহলে বাইআত-এর মর্যাদা,
হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮৬।
২.মিশকাত শরীফ - ৫৬৫ পৃঃ
৩.সুনানে নাসায়ী।
৪.ইমাম মুত্তাকী হিন্দীঃ কাঞ্জুল উম্মাল, ১ম খন্ড ৪৪ পৃষ্ঠা।
এই হাদিসকে সাপোর্ট দেয় এমন হাদিসঃ
❏ হাদিস ৪:
ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علی رضی الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ لكل شيء أساس، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول اللهﷺ وحب أهل بيته؛
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'কে ভালবাসা”।
বর্ণনাসূত্র:
‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।
❏ হাদিস ৫:
হযরত ইবনে আবিশ শায়বা এবং মুসাদ্দাদ উভয়ে তাদের ‘মুসনাদ'-এ হাকীম তিরমিজী ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী প্রমূখ হযরত সালমা ইবনে আকওয়া' (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
أخرج ابن أبي شيبة، ومسدد فی مسنديهما، والحكيم الترمذي في نوادر الأصول، وأبو يعلى، والطبراني عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه قال: قال رسول الله ﷺ النجوم أمان لأهل السماء وأهل بیتی أمان لأمتی؛
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তারকারজি হচ্ছে আসমানের অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) হচ্ছে, আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা।
➠বর্ণনাসূত্রঃ
১.আল-মাতালিবুল আলিয়া-ইবনে হাজর আল আসকালানী - ৪:২৬২ (৩৯৭২)।
২. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাদাতিল মাহরা-বুসিরী-৫:২১০ (৭৫৩৬)।
৩. নাওয়াদিরুল উসূল, ২:১৯৯।
৪. আল মু'জামুল কাবীর- তাবরানী ৭:২২ (৬২৬০)।
৫. আল মারিফাতু ওয়াত তারীখু-আল ফাসভী- ১:৫৩৮।
৬. যাবায়েরুল উকবা- আত্বাবারী, পৃষ্ঠা- ৪৯।
৭. কানযুল উম্মাল- আল মুত্তাকি আল হিন্দ-১২:১০১।
৮.আল-মসনদ-আর রুয়ানী -২:২৫৩ (১১৫২)/২৫৮(১১৬৪/১১৬৫)।