‘জুমাতুল বিদা’য় কাযায়ে ওমরী
রমযানুল মুবারকের শেষ জুমাতে কিছু লোক জামাআত সহকারে কাযায়ে ওমরীর নামায আদায় করে থাকে এবং এই ধারণা পোষণ করে থাকে যে, সারা জীবনের কাযা নামায এই এক নামাযের মাধ্যমে আদায় হয়ে গেলো। এটা ভুল ধারণা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৭০৮ পৃষ্ঠা)
সারা জীবনের কাযা নামাযের হিসাব
যে ব্যক্তি জীবনে কখনো নামায আদায় করেনি। এখন তাওফীক হয়েছে সে ‘কাযায়ে ওমরী’ পড়ে দেয়ার ইচ্ছা করছে। তাহলে সে বালিগ হওয়ার সময় থেকে নামায হিসাব করে নিবে। আর যদি বালিগ হওয়ার দিন, তারিখ জানা না থাকে, তাহলে সাধারণতঃ মহিলারা যেহেতু ০৯ বছরে আর পুরুষেরা ১২ বছরে বালিগ হয়, সেহেতু ঐ সময় হতে হিসাব করে কাযা নামায আদায় করবে।
কাযা নামাযে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
কাযায়ে ওমরী আদায় করার সময় এই নিয়মও পালন করা যায় যে, প্রথমে ফযরের সকল নামায আদায় করে নিবে। অতঃপর যোহরের সকল নামায আদায় করে নিবে, অতঃপর আছরের, তারপর মাগরিবের, তারপর ইশার নামায আদায় করে নিবে।
কাযায়ে ওমরী আদায় করার নিয়ম (হানাফী)
প্রত্যেক দিনের কাযা হয় মাত্র ২০ রাকাত। ফজরের ২ রাকাত, জোহরের ৪ রাকাত, আছরের ৪ রাকাত, মাগরিবের ৩ রাকাত, ইশার ৪ রাকাত এবং বিতরের ৩ রাকাত মিলে মোট ২০ রাকাত। আর এভাবেই নিয়্যত করবে যে; “সর্বপ্রথম ফযরের যে নামায আমার উপর কাযা রয়েছে তা আমি আদায় করে দিচ্ছি।” প্রত্যেক নামাযে এভাবেই নিয়্যত করবে। আর যার যিম্মায় অধিক নামায কাযা রয়েছে সে সহজের জন্য এভাবে পড়লেও জায়েয হবে যে, প্রত্যেক রুকু ও সিজদাতে ৩+৩ বার سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْعَظِيْم, سُبْحٰنَ رَبِّىَ الْاَ عْلٰى পড়ার পরিবর্তে মাত্র ১+১ বার পড়বে। কিন্তু সর্বদা এবং সব ধরণের নামাযে এটা খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয় যে, রুকুতে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছার পরেই “سُبْحٰنَ”এর সীন শুরু করবে (এর আগে নয়।) এবং “عَظِيْم” শব্দের মীম পড়া শেষ করেই রুকু থেকে মাথা উঠাবে। এরূপ সিজদাতেও করতে হবে। সহজতার এক পদ্ধতিতো এটা হলো। আর “দ্বিতীয় পদ্ধতি” এই যে, ফরয নামায সমূহের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতের মধ্যে اَلْحَمْدُ পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ৩ বার সুবহানাল্লাহ পড়ে রুকুতে চলে যাবে। কিন্তু বিতরের প্রত্যেক রাকাতেই اَلْحَمْدُ এবং সুরা অবশ্যই পড়তে হবে। আর “তৃতীয় সহজতর পদ্ধতি” এই যে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাত এর পরে উভয় দরূদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরার পরিবর্তে শুধু اَللّٰہُمَّ صَلِّ عَلٰی مُحَمَّدٍ وَّاٰلِهٖ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিবে। আর “চতুর্থ সহজতর পদ্ধতি হলো, বিতরের ৩য় রাকাতের মধ্যে দোয়ায়ে কুনুত এর পরিবর্তে “اَللهُ اَکْبَرُ” বলে মাত্র একবার কিংবা তিনবার رَبِّ اغْفِرْ لِىْ পড়ে নিবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংগৃহীত, ৮ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা)
মনে রাখবেন! সহজতার এই পদ্ধতির অভ্যাস কখনো বানাবেন না। সামগ্রিক নামায সুন্নাত মোতাবেক আদায় করবেন এবং তাতে ফরয, ওয়াজীব সমূহের সাথে সাথে সুন্নাত ও মুস্তাহাব সমূহের ও খেয়াল রাখবেন।
কসর নামাযের কাযা
যদি সফর অবস্থায় কাযাকৃত নামায ইকামত (স্থায়ী বসবাসকালীন) অবস্থায় পড়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন তাহলে কসরই পড়তে হবে। আর ইকামত অবস্থায় কাযাকৃত নামায সফরকালীন সময়ে আদায় করলে সম্পূর্ণ নামাযই পড়তে হবে। কসর পড়া যাবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
ধর্মদ্রোহীতা কালীন নামায
যে ব্যক্তি (আল্লাহর পানাহ) ধর্মদ্রোহী হয়ে গেছে অতঃপর পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তার উপর ধর্মদ্রোহীতা কালীন নামায সমূহ কাযা আদায় করা আবশ্যক নয়। তবে মুরতাদ হওয়ার পূর্বে ইসলাম ধর্মে থাকাকালীন সময়ে যে নামাযগুলো সে পড়েনি, তা (ওয়াজীব) অবশ্যই তাকে কাযা আদায় করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)
সন্তান প্রসবকালীন সময়ের নামায
ধাত্রী নামায আদায় করতে গেলে যদি সন্তান মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ধাত্রীর জন্য সে ওয়াক্তের নামায কাযা করা জায়িজ হবে এবং এটা তার জন্য নামায কাযা করার একটি গ্রহণযোগ্য কারণ হিসাবে বিবেচ্য হবে। সন্তানের মাথা বেরিয়ে আসল কিন্তু নিফাসের পূর্বেই নামাযের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে সন্তানের মাতার উপর সে ওয়াক্তের নামায আদায় করা ফরয হবে। নামায না পড়লে গুনাহগার হবে। এমতাবস্থায় সে কোন পাত্রে সন্তানের মাথা রেখে যাতে তার ক্ষতি না হয় নামায আদায় করে নিবে। আর যদি এ পদ্ধতিতেও সন্তান মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার জন্য নামায দেরী করে আদায় ক্ষমাযোগ্য হবে। নিফাস থেকে পবিত্র হয়ে সে উক্ত নামায কাযা পড়ে দিবে। (প্রাগুক্ত, ৬২৭ পৃষ্ঠা)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নামায কখন ক্ষমাযোগ্য
এমন অসুস্থ ব্যক্তি যে ইশারায় নামায আদায় করতে পারছে না। তার এ অবস্থা যদি একাধারে ছয় ওয়াক্ত নামাযের সময় পর্যন্ত থাকে, তাহলে এমন অসুস্থ অবস্থায় তার যে সব নামায ছুটে গিয়েছে তার কাযা ওয়াজীব হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)
সারা জীবনের নামায পূনরায় আদায় করা
যার আদায়কৃত নামাযে ঘাটতি, অপূর্ণতা থাকে বলে ধারণা হয় সে যদি সারা জীবনের নামাযকে পূনরায় আদায় করে নেয়, তাহলে ভাল কথা। আর যদি কোন রকমের অপূর্ণতা না থাকে তাহলে এমন করার প্রয়োজন নেই। আর যদি ঐ নামায পূনরায় আদায় করে দিতে চায়, তাহলে ফযর ও আছরের পরে পড়বে না। আর সকল রাকাতগুলোতে (সূরা ফাতিহা’র সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বে) আদায় করবে এবং বিতর নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে তৃতীয় রাকাতের পরে কা’দা করে (বৈঠকে বসে) এর সাথে আরো অপর একটি রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পরিপূর্ণ করে নামায শেষ করবে (আর নামায কবুল হয়ে থাকলে যেন এ নামায নফল নামায হিসেবে গণ্য হয়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা)
কাযা শব্দ উচ্চারণ করতে ভুলে যায় তখন কি করবে?
আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: আমাদের মাযহাবের ওলামায়ে কিরাম স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন: ‘কাযা’ নামায ‘আদা’ নামাযের নিয়্যত দ্বারা, অনুরূপ ‘আদা’ নামায ‘কাযা’ নামাযের নিয়্যত দ্বারা আদায় করলে উভয়ই সহীহ ও বিশুদ্ধ হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংশোধিত) , ৮ম খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা)
কাযা নামায (আদায় করা) নফল নামায আদায় করা থেকে উত্তম
ফতোওয়ায়ে শামীতে বর্ণিত আছে: কাযা নামায আদায় করা নফল নামায আদায় করা থেকে উত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, চাশতের নামায, সালাতুত তাসবীহ এবং ঐ নামায যেগুলোর ব্যাপারে হাদীসে মোবারকায় বর্ণিত আছে।যেমন- তাহাইয়াতুল মসজিদ, আসরের প্রথম চার রাকাত (সুন্নাতে গাইর মুয়াক্কাদা) এবং মাগরিবের পরে ছয় রাকাত আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৪৬ পৃষ্ঠা) মনে রাখবেন! অবশ্য সুন্নাতে গাইর মুয়াক্কাদা এবং হাদীস সমূহের মধ্যে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল সমূহ পড়লে, সাওয়াবের হকদার হবে কিন্তু ঐ সব নামায না পড়ার কারণে কোন গুনাহ নেই। চাই তার দায়িত্বে কাযা নামায থাকুক বা না থাকুক।