তায়াম্মুমের ২৫টি মাদানী ফুল
(১) যে সমস্ত বস্তু আগুনে পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয় গলেও না, নরমও হয় না তা মাটি জাতীয় এবং তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। বালি, চুনা, সুরমা, গন্ধক, পাথর (মার্বেল) , হলদেহীরা, মুক্তা, ফিরোযা পাথর, আকিক পাথর ইত্যাদি ধাতব পদার্থ দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। চাই ঐগুলোতে ধূলা-বালি থাকুক বা না থাকুক। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা। আল বাহরুর রায়িক্ব, ১ম খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা)
(২) পোড়ানো ইট, চীনামাটি বা কাদামাটির বরতন দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। তবে ঐগুলোতে যদি এমন কোন জিনিসের চিহ্ন থাকে যা মাটি জাতীয় নয় যেমন কাচ ইত্যাদির চিহ্ন (আবরণ) থাকে, তাহলে ঐগুলো দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৮ পৃষ্ঠা) সাধারণত চিনা মাটির প্লেটে কাঁচের কারুকাজ থাকলে এর দ্বারা তায়াম্মুম হবে না।
(৩) যে সমস্ত মাটি, পাথর দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে তা পাক হতে হবে অর্থাৎ তাতে নাপাকীর কোন চিহ্নই থাকতে পারবে না বা পূর্বে নাপাকী ছিলো কিন্তু বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নাপাকীর চিহ্ন নেই এরূপও হতে পারবে না। (প্রাগুক্ত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) (জমিন, দেয়াল এবং ধূলাবালি ইত্যাদিতে নাপাকী পতিত হওয়ার কারণে যদি তা নাপাক হয়ে যায়, অতঃপর রোদের তাপে বা বাতাসে সে নাপাকী শুকিয়ে যাওয়ার পর তাতে নাপাকীর কোন চিহ্ন বিদ্যমান না থাকে, তাহলে তা পবিত্র হয়ে যাবে এবং তাতে নামায আদায় করা জায়েয হবে কিন্তু তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না।)
(৪) যে মাটি বা পাথর দ্বারা তায়াম্মুম করব তাতে যদি কোন সময় নাপাকী ছিলো বলে সন্দেহ সৃষ্টি হয় সে সন্দেহ অমূল্যক ও ভিত্তিহীন। (প্রাগুক্ত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)
(৫) যদি কোন লাকড়ী, কাপড়, মাদুর ইত্যাদিতে এতটুকু পরিমাণ বালি থাকে যে, এতে হাত মারলে আঙ্গুলের চাপ ফুটে উঠবে, তাহলে তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৫৯ পৃষ্ঠা)
(৬) চুনা, মাটি বা ইটের দেয়াল, চাই ঘরের হোক বা মসজিদের হোক তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। কিন্তু তাতে অয়েল প্রিন্ট, প্ল্যাস্টিক প্রিন্ট, মাইট ফিনিস, ওয়াল পেপার ইত্যাদি এমন কোন জিনিস থাকতে পারবে না যা মাটি জাতীয় নয়। দেয়ালে মার্বেল পাথর থাকলে তা দ্বারা তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না।
(৭) যার অযু নেই বা ঘরে গোসল করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কিন্তু সে পানি ব্যবহারে অক্ষম তাহলে সে অযু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নেবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
(৮) রুগ্ন ব্যক্তি পানি দ্বারা অযু বা গোসল করতে গেলে তার রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা দেরীতে সুস্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বা তার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, যখনই সে পানি দ্বারা অযু বা গোসল করেছে তখনই তার রোগ বেড়ে গেছে অথবা কোন মুসলিম অভিজ্ঞ ডাক্তার যিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে ফাসিক নন, তাকে বলে দিয়েছেন যে, সে পানি ব্যবহার করলে তার রোগের প্রচুর ক্ষতি হবে, তাহলে উপরোক্ত অবস্থা সমূহতে সে তায়াম্মুম করতে পারবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দে মুহতার, ১ম খন্ড, ৪৪১-৪৪২ পৃষ্ঠা)
(৯) যদি মাথার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করলে তা ক্ষতিকর হয় তাহলে গলার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে গোসল করবে এবং সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)
(১০) যেখানে চতুর্দিকে এক মাইলের ভিতরে পানি পাওয়া না যায়, সেখানে তায়াম্মুম করা যাবে। (প্রাগুক্ত)
(১১) যদি নিজের কাছে এতটুকু পরিমাণ জমজম শরীফের পানি থাকে যা দ্বারা অযু করা যাবে। তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না। (প্রাগুক্ত)
(১২) এমন শীত যে, পানিতে গোসল করলে মারা যাওয়ার কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং গোসল করার পর শীত নিবারণের কোন উপকরণও নেই তখনও তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৪৮ পৃষ্ঠা)
(১৩) কয়েদী ব্যক্তিকে যদি কারা কর্তৃপক্ষ অযু করতে না দেয় তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেবে কিন্তু পরে অযু করে সে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আর যদি শত্রুরা বা কারা-কর্তৃপক্ষ কয়েদীকে নামাযও আদায় করতে না দেয় তাহলে ইশারার মাধ্যমে নামায আদায় করবে এবং পরে সে নামায পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। (প্রাগুক্ত, ৩৪৯ পৃষ্ঠা)
(১৪) যদি প্রবল ধারণা হয় যে, পানি তালাশ করতে গেলে কাফেলা চলে যাবে, তখনও তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৫০ পৃষ্ঠা)
(১৫) মসজিদে ঘুমানো অবস্থায় গোসল ফরয হয়ে গেলে যেখানেই ছিলো সেখানেই তাড়াতাড়ি তায়াম্মুম করে নেবে। এটিই বাঁচার একমাত্র উপায়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংগ্রহীত) , ৩য় খন্ড, ৪৭৯ পৃষ্ঠা) অতঃপর তাড়াতাড়ি মসজিদের বাইরে চলে আসবে, বের হতে দেরী করা হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা)
(১৬) সময় এতই সংকীর্ণ যে, অযু বা গোসল করতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে। তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেবে। অতঃপর অযু বা গোসল করে নামায পুনরায় আদায় করা আবশ্যক।
(ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংগ্রহীত) , ৩য় খন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা)
(১৭) মহিলা হায়েজ বা নিফাস হতে পবিত্র হলো কিন্তু পানি ব্যবহারে অক্ষম, তাহলে তায়াম্মুম করে নেবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা)
(১৮) যদি কেউ এমন স্থানে আছে, যেখানে অযু করার জন্য পানিও নেই এবং তায়াম্মুম করার জন্য পবিত্র মাটিও নেই তাহলে সে নামাযের সময় নামাযী ব্যক্তির রূপ ধারণ করবে অর্থাৎ নামাযের নিয়্যত না করে নামাযের যাবতীয় কার্যাবলী আদায় করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা) কিন্তু পরে পবিত্র পানি বা মাটি পাওয়া গেলে অযু বা তায়াম্মুম করে তাকে সে নামায পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।
(১৯) অযু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের পদ্ধতি একই রূপ। (জওহারা, ২৮ পৃষ্ঠা)
(২০) যার উপর গোসল ফরয তার জন্য অযু ও গোসল উভয়টির জন্য দুইবার তায়াম্মুম করার প্রয়োজন নেই বরং এক তায়াম্মুমেই অযু ও গোসল উভয়ের নিয়্যত করে নিলে আদায় হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র গোসলে বা শুধুমাত্র অযুর নিয়্যত করলেও চলবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠা)
(২১) যে সমস্ত কারণে অযু ভেঙ্গে যায় বা গোসল ফরয হয় তা দ্বারা তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায় এবং পানি পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে সক্ষম হলেও তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়। (প্রাগুক্ত, ৩৬০ পৃষ্ঠা)
(২২) যদি মহিলারা নাকে নাকফুল ইত্যাদি পরিধান করে থাকে, তবে তায়াম্মুম করার সময় তা খুলে নিতে হবে। অন্যথায় নাক ফুলের স্থানে মাসেহ সম্পাদন হবে না। (প্রাগুক্ত, ৩৫৫ পৃষ্ঠা)
(২৩) ঠোঁটের যে অংশ সচারাচর মুখ বন্ধ থাকা অবস্থায় দেখা যায়, তাতেও মাসেহ করা জরুরী। যদি মুখম-ল মাসেহ করার সময় কেউ জোরে ঠোঁট দাবিয়ে ফেলার কারণে ঠোঁটের কিছু অংশ মাসেহ থেকে বাদ যায়, তবে তায়াম্মুম হবে না। অনুরূপ মাসেহ করার সময় জোরে চোখ বন্ধ করলেও তায়াম্মুম আদায় হবে না। (প্রাগুক্ত)
(২৪) তাতে আংটি, ঘড়ি ইত্যাদি পরিধান করে থাকলে তা খুলে তার নিচে মাসেহ করা ফরয। ইসলামী বোনেরাও হাতের চুড়ি ইত্যাদি সরিয়ে তার নিচে মাসেহ করবেন। তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে অযুর চেয়ে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য্য। (প্রাগুক্ত)
(২৫) রুগ্ন ও হাত-পা বিহীন ব্যক্তি নিজে তায়াম্মুম করতে অক্ষম হলে অন্য ব্যক্তি তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এক্ষেত্রে যে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে তার নিয়্যত গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং যাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে তাকেই নিয়্যত করতে হবে। (প্রাগুক্ত, ৩৫৪ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা)
মাদানী পরামর্শ: অযুর আহকাম শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা “অযুর পদ্ধতি” এবং নামায শিখার জন্য “নামাযের পদ্ধতি” নামক রিসালা অধ্যয়ন করলে বিশেষ উপকার হবে।
ইয়া রব্বে মুস্তফা عَزَّوَجَلَّ! আমাদেরকে বারবার গোসলের মাসয়ালা পড়ার, বুঝার এবং অপরকে বুঝানোর এবং সুন্নাত অনুসারে গোসল করার তাওফীক দান করো। اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم