নবী (ﷺ) এর সৃষ্টিগত গুণাবলীর বিবরণ দাও।
নবী করীম (ﷺ) উঁচু টান মাঝারি আকৃতির ধবধবে উজ্জ্বল শুভ্র বর্ণের, বড় মস্তক ও সুন্দর চুলের অধিকারী ছিলেন। তাঁর চুল ও দাঁড়ি মিলে শুধু সতেরটি সাদা হয়েছিল। প্রশস্ত কপাল, প্রশস্ত চক্ষুদ্বয় খুবই সুন্দর আকৃতির চোখের পুতলি কাল অংশ অধিক কাল, সাদা অংশ অধিক সাদা লাল বর্ণযুক্ত, ঘন চুল, ঘন ব্রু, উঁচু নাক, উঁচু বিহীন মসৃণ গাল, প্রশস্ত মুখ, সামান্য ফাঁক বিশিষ্ট পরস্পরকে পার্থক্য করা যায় এমন দাঁতের অধিকারী ছিলেন।
وَدُفِـنَ بِالْمَدِيْنَةِ الْمُنَوَّرَةِ، وَهُوَ اِبْنُ ثَـلَاثِ وَسِتِّيْنَ سَنَةً بَعْدَ اَنْ تَرَكَ لَـنَا قُرْأٰنًا عَظِيْمًا . لَايَاتِيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْقِه تَنْـزِيْلُ مِنْ حَكِيْمٍ حِمِيْدٍ وَبَيَّنَ لَـنَا الشَّرِيْعَةَ الْمُطَهَّرَةَ بِاَحَادِيْثَ اَحْلٰى مِنَ الشَّهْدِ وَاَصْفٰى مِنَ الزُّلَالِ .
بَيِّنُ لَـنَا بَعْضَ اَوْصَافِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْخَلْقِيَّةِ ؟
كَانَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبَعَةً اِلٰى الطَّوْلِ اَقْرَبَ، اَزْهَرَ الْلَّوْنِ اَىْ صَافِىَ الْبَيَاضِ عَظِيْمَ الرَّاسِ حَسْنَ الشَّعْرِ وَلَمْ يَشِبْ مِنْ رَأْسِه وَلِحْيَتِه اِلَّا سَبْعَ عَشَرَةَ شَعْرَةً، وَاسِعَ الْجَبِيْنِ اَنْجَلَ الْعَيْنَيْنِ اَىْ وَاسِعَ الْعَيْنَيْنِ مَعَ حُسْنٍ فِيْهِمَا اَشْكَلَهُمَا اَىْ فِىْ بَيَاضِ عَيْنَيْهِ حَمْرَةٌ اَدْعَجَهُمَا اَىْ شَدِيْدَ سَوَادِ الْحَدَقَةِ وَشَدِيْدَ بِيَاضِ الْبِيَاضِ
ঘন দাঁড়ি গোলাকার মুখমন্ডল পূর্ণিমার চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল ও চকচক্ করত, রৌপ্যের চেয়েও চকমকে সামান্য লম্বা গর্দানের অধিকারী ছিলেন। যেমন উম্মে মা‘বদের বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবুয়তের মোহর উভয় কাঁধের মাঝে সামান্য বাম দিকে ধাবিত ছিল। ইহা কবুতরের ডিমের তুল্য লাল বর্ণে ধাবিত হালকা পাতলা মাংসের টুকরা। প্রশস্ত কাঁধদ্বয়, প্রশস্ত বক্ষ, উভয় হাতে ও কাঁধে লোম বিশিষ্ট উঁচু বক্ষ তথা ঘন লোম বিশিষ্ট, উভয় হাতের গিড়া লম্বা, অনুভূতি ও অর্থে প্রশস্ত হাতের তালু, লম্বা ও মাঝারি মোটা আঙ্গুল ছিল। পেট ও বক্ষ এক বরাবর-এ অর্থে পেটে স্বল্প মাংস ও হাঁড়ের জোড়াগুলো মোটা আকারের ছিল।
বক্ষের উপরিভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত লোমে আবৃত ছিল। পায়ের পিন্ডলী হালকা স্বল্প মাংস বিশিষ্ট ওপরের সাথে মিলানো ছিল,
أَهْدَبَ الْاَشْفَارِ اَىْ كَثِيْرُ شَعْرِ حَرُوْفِ الْاَجْفَانِ، اَقْنَى الْعَرِنَيْنِ اَىْ مُرْتَفِعَ الْأَنْفِ سَهَلَ الْخَدِّ اَىْ غَيْرَ مُرْتَفِعِ الْوَجْنَتَيْنِ وَاسِعَ الْفَمِ، مُتَفَرِّجَ الْاَسْنَانِ اَىْ مُتَمَيِّزًا بَعْضُهَا عَنْ بَعْضٍ .
كَتَّ الْلِّحْيَةِ أَىْ غَلِيْظَهَا وَمُدَوَّرَ الْوَجْهِ يَتَلَالَأُ وَجْهُهٗ كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدَرِ عُنُقَهُ مِنْ صَفَاءِ الْفِضَّةِ اَزْهَرَ، وَفِيْهِ طُوْلٌ مُفْرَطٌ، كَمَا جَاءَ عَنْ اُمِّ مَعْبَدٍ فِى الْخَبْرِ وَكَانَ خَاتَمُ النَّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ لَكِنَّهُ اِلَى الْأَيْسَرِ اقْرَبُ، وَهُوَ مِنْ لَحْمٍ بَارِدٍ قَدَرَ بَيْضِ الْحَمَامَةِ يَمِيْلُ اِلٰى الْحُمْرَةِ عَظِيْمَ الْمِنْكَبَيْنِ، عَرِيْضَ الصَّدْرِ اَشْعَرَ الذِّرَاعَيْنِ وَالْمِنْكَبَيْنِ وَعَالِىَ الصَّدْرِ بِمَعْنٰى اَنَّ هٰذِه كَانَتْ كَثِيْرَةَ الشَّعْرِ طَوِيْلَ الزَّنْدَيْنِ وَاسِعَ الْكَفِّ حِسًّا وَمَعْنًى مُمْتَدَّ الْاَصَابِعِ غَلِيْظَهَا مِنْ غَيْـرِ اِفْرَاطٍ، بَـطْـنُـهُ
গোলাকৃতি মোটাসোটা ছিল না। নবী (ﷺ) এর দৈহিক গুণাবলী মধ্যম পন্থার ছিল। তিনি শক্তভাবে চলতেন যেন কোন উঁচু জায়গা থেকে নামতেছেন। এতদসত্তেও তাঁর চলাতে ধীরস্থিরতার ও ভদ্রতার অনুপম দৃষ্টান্ত ছিল। পা দ্বারা মাটিতে আঘাত করে চলতেন না। কোন দিকে ফিরলে পরিপূর্ণভাবে ফিরতেন। তিনি সর্বদা উভয় পার্শ্বকে নিম্মগামী রাখতেন। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে নম্র, ভদ্র ভাব পরিলক্ষিত হত। আকাশের চেয়েও জমিনের দিকে বেশী বেশী দৃষ্টি রাখতেন। কেননা নিম্মগামী চিন্তা-ভাবনা, সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে অধিক সাহায্য করে। তিনি সর্বদা মুচকি হাসতেন। সদা চিন্তামগ্ন থাকতেন। তিনি বাহ্যিক চক্ষুদৃষ্টির চেয়েও অন্তর দৃষ্টিতে নিমগ্ন থাকতেন। লোভী ব্যক্তির লোভনীয় দৃষ্টির ন্যায় তাঁর দৃষ্টি ছিল না। যখন কথা বলতেন তাঁর সানায় দাঁতের ফাঁক দিয়ে জ্যোতি বের হত।
وَصَدْرُهُ سَوَاءٌ أَىْ مُسْتَوِيَانِ وَذٰلِكَ كِنَايَةٌ عَنْ ضُمُوْرِ بَطْنِه ضَخْمَ الْكَرَادِيْسِ أَىْ عَظَيْمَ عِظَامَ الْمَفَاصِلِ لَهُ شَعْرَاتُ مِنْ لَبَّتِه اِلٰى سُرَّتِه وَكَانَ فِىْ سَاقَيْهِ حُمُوْشَةٌ اَىْ دِقَّةٌ مَسِيْحَ الْقَدَمَيْنِ مُنْحَوِسَ الْعَقِبٍ: أَىْ قَلِيْلَ لَحْمِ مُؤَخَّرَ الْقَدَمِ، مُعْتَدِلَ الْخَلْقِ فِىْ جَمِيْعِ صِفَاتِ ذَاتِه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ اِذَا مَشٰى تَقَلَّعَ أَىْ مَشٰئ بِقُوَّةٍ كَاَنَّمَا يَنْحَطُّ مِنْ صَبَبِ أَىْ مَكَانٍ مُنْحَدِرٍ وَمَعَ ذٰلِكَ فَكَانَ مَشْيُهُ هَوْنًا أَىْ بِسَكِيْنَةٍ وَوَقَارٍ وَلَا يَضْرِبُ بِقَدَمِه الْاَرْضَ وَاِذَا اِلْتَفَتَ الْتَفَتَ جَمِيْعًا وَكَانَ خَافِضَ الطَّرْفِ وَهُوَ كِنَايَةٌ عَنْ لَيْنِ جَانِبِه، وَشِدَّةِ خِيَاثَةِ نَظَرِه اِلٰى الْاَرْضِ اَقْرَبَ مِنْ نَظَرِه اِلٰى السَّمَاءِ لِاَنَّهُ اَجْمَعُ لِلْفِكْرِ وَاَوْسَعُ لِلْاِعْتِبَارِ وَكَانَ ضَحِكُهُ تَبَسُّمًا مَتَوَاصِلَ
তাঁর আঙ্গুলগুলো রূপার ডালের ন্যায় ছিল। হাতের তালু রেশমী সুতার চেয়েও অধিক নরম, এত সুগন্ধিময় মনে হত যেন এ হাত আঁতর দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। কোন শিশুর মাথায় হাত বুলালে ঐ শিশু অন্যান্য শিশুদের মাঝে হাতের সুগন্ধির কারণে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ হয়ে যেত। তাঁর ঘাম মুক্তার ন্যায় সাদা ও মিশকের ন্যায় সুগন্ধিময় ছিল। তাঁর গুণকীর্তন বর্ণনাকারীর ভাষায়- আমি তাঁর আগে-পরে কখনো সৃষ্টিকুলে তাঁর উপমা দেখিনি।
হে মাওলা! সদা-সর্বদা রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন সৃষ্টিকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ আপনার হাবীবের ওপর।