শবে মিরাজ পর্বঃ১০ এবং শেষ

♥মি'রাজের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পর্ব (১০) শেষ পর্ব♥<br /> <br /> প্রিয় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে পত্যাবর্তনকালে আল্লাহ তা'আলা তার একনিষ্ঠ ইবাদত ও অনুগত্য হিসেবে মু'মিনদের মি'রাজস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রদান করেন। আর পরবর্তী সময়ে তথা মদিনায় হিজরতের পর ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে গেলে পরিচলানার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন হবে তার প্রতি নির্দেশ করতঃ তিনি চৌদ্দদফা নীতিমালা পেশ করেন। তা এমন যে, ঐ মৌলিক নীতিগুলোর উপর সামুষ্টিকভাবে মানবজীবনের প্রাসাদের ভিত্তি গড়ে তোলা ইসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।<br /> অর্থাৎ মদিনায় যে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠবে তার ভিত্তি কোন সব আদর্শের উপর হবে, কোন নৈতিক, তামাদ্দুনিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক আইনের উপর হবে তা দুনিয়ার মানুষকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা বনী ইসরাইলের পরবর্তী কয়েকটি আয়াতের মধ্যে।<br /> (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩-৩৭)।<br /> <br /> সে চৌদ্দ দফা মূলনীতি এই-<br /> (১) এক আল্লাহরই ইবাদত ও আনুগত্য করাঃ-<br /> আল্লাহ বলেন* আপনার রবের নির্দেশ, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না।"<br /> (সূরা বনী ইসরাইল ২৩)<br />  অর্থাৎ আল্লাহর আদেশকেই একমাত্র আদেশ এবং তার আইনকেই একমাত্র আইন স্বীকার করে নিবে।<br /> <br /> (২) পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করাঃ<br /> পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের নিকট যদি তাদের কোন একজন কিংবা উভয়জন বৃদ্ধ্যবস্থায় থাকে, তবে তুমি তাদেরকে 'উহ' পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দেবে না। বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদা সহকারে কথা বলবে এবং বিনয়ভাবে তাদের সম্মুখে নত হয়ে থাকবে। আর এ দোয়া করবে-হে প্রভু! ওদের প্রতি রহমত কর, যেমনি তারা স্নেহ ভরে বাল্যকালে আমাদেরকে লালনপালন করিছেলেন।<br /> (সূরা বনী ইসরাইল- ২৩,২৪)<br /> <br /> অর্থাৎ আল্লাহর পর সকল মানুষের উপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিতামাতার অধীকার। সন্তানকে যে কোন অবস্থায় পিতামাতার অবশ্যই অনুগত, সেবা শুশ্রুকারীও আদব রক্ষাকারী হতে হবে।<br /> <br /> (৩) নিকট আত্মীয় ও অভাবীদের অধিকার দেওয়াঃ আর নিকট আত্মীয়দের তাদের অধিকার দাও, মিসকিন সম্বলহীন পথিককে তার অধিকার দাও।<br /> (সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৬)<br />  অর্থাৎ তোমার উপার্জিত দন<br /> <br /> সম্পদকে কেবল নিজের জন্যই সংরক্ষিত রাখবে না। বরং এর দ্বারা নিজের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ও অন্যান্য অভাবী লোকদের অধিকারও যতাযত আদায় করতে হবে।<br /> <br /> (৪) অপব্যয় থেকে বিরত থাকবেঃ<br /> তোমরা অপব্যয় অপচয় করবে না। অপব্যয়কারী লোক শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের অকৃতজ্ঞ<br /> ( সূরা বনী ইসরাইল ২৬'২৯)<br /> <br /> অর্থাৎ প্রয়োজনে তোমার উপার্জিত সম্পদ নিজের কাজে ব্যয় কর। এর পর আত্মীয়স্বজন ও অভাবীদের মধ্যে তাদের অভাব মোছনের জন্য দান কর, কিন্তু বিলাসিতা ও বেহুদা কাজে অপব্যয় করবে না। কারণ, এতে তোমার নিজের কোন লাভ হল না। আর সমাজ এবং জাতীরও কোন লাভ হলো না। বরং এ অপব্যয় শেষ পর্যন্ত তোমাকে অভাবগ্রস্ত করে তুলবে যেটা শয়তানরাই এক মাত্র কামনা করে।<br /> <br /> (৫) সায়েল-অভাবীদের সাথে সুন্দর আচরণ করাঃ<br /> তোমারা যদি অভাবীদের হতে পাশ কেটে থাকতে চাও, এ কারণে যে, তোমারা তোমাদের রবের রহমত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষী। তবে তাদেরকে বিনয়সূচক জবাব দাও।<br /> ( সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৮)<br /> <br /> অর্থাৎ কোন আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও সম্বলহীনদের কিছু দিতে না পারলে তাদের সুন্দর কথা দিয়ে বিদায় দিবে। এটাও এক প্রকার দান বিশেষ।<br /> <br /> (৬) অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্যতা রক্ষা করে চলবেঃ<br /> নিজের হাত গলায় বেঁধে রাখবে না, আর একেবারে খোলাও ছেড়ে দেবে না। তা করলে তুমি তিরস্কৃত ও অক্ষম হয়ে যাবে।<br /> ( সূরা বনী ইসরাইল ২৯)<br /> <br /> অর্থাৎ এটি একটা রূপক কথা। গলায় হাত বাঁধা বলতে কার্পণ্য আর খোলা ছেড়ে দেওয়া বলতে অপচয় ও বেহুদা খরচ করা বুঝিয়েছে। এক কথায়, তোমরা না কৃপণ হয়ে ধনসম্পদ স্তুপিত করে রাখবে, আর না অপচয়কারী হয়ে নিজের অর্থ নৈতিক শক্তি বিনষ্ট করবে, বরং এ ব্যপারে মধ্যম নীতি গ্রহণ করবে।<br /> <br /> (৭) দরিদ্রতার আশংকায় সন্তান হত্যা করবে নাঃ<br /> নিজের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার আশাংকায় হত্যা করবে না। আমি তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি। আর তোমাদেরকেও। বস্তুত তাদের হত্যা করা একটি অতি বড় ভুল কাজ।<br /> ( সূরা বনী ইসরাইল -৩১)<br /> <br /> (৮) যেনা ব্যভিচারের নিকটও যাবে নাঃ<br /> যেনার নিকটে যেয়েও না, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ, আর অতিব নিকৃষ্ট পথ।<br /> (সূরা বনী ইসরাইলঃ ৩৩)<br /> <br /> অর্থাৎ তারা যে কেবল যেনা ব্যভিচার থেকে কার্য থেকে বিরত থাকবে শুধু তা নয়, বরং যেনার উদ্বোধক ও প্রেরণাদায়ক অন্যান্য সকল কাজ হতেও দূরে থাকবে। আর তা হলো বেপর্দা, নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা, মদ্যপান, গান বাজনা, নাচ, ছবি-চিত্র প্রভৃতি।<br /> <br /> (৯) প্রাণ হত্যা করবে নাঃ<br /> আর প্রাণ হত্যার অপরাধ করবে না -যাকে আল্লাহ হারাম করে দিয়েছে সত্য বিধান ব্যতীত। আর যে ব্যক্তি অন্যায় ভাবে নিহত হয়েছে তার অলীকে আমি কিসাস দাবীর অধিকার দিয়েছি। অতএব, সে যেন এব্যাপারে সীমালঙ্ঘন না করে। এ ব্যাপারে অবশ্যই তাকে সাহায্য করা হবে<br /> (সূরা বনী ইসরাইলঃ৩৩)<br /> <br /> অর্থাৎ মানুষের প্রাণের মালিক মানুষ নয়,আল্লাহ তা'আলা। তাই প্রাণকে ধংশ করার অধিকারও মানুষের নেই। তবে হ্যাঁ ইসলামি আইনে সত্যতা যাচাই করে পাঁচটি ক্ষেত্রে হত্যা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।<br /> <br /> (১০) এতিমের ধনমাল ভক্ষন না করাঃ<br /> তোমরা এতিমের মালের নিকটেও যেওনা, তবে হ্যাঁ তারা বুদ্ধি বিবেকে পৌঁছা পর্যন্ত উত্তম পন্থায় প্রয়োজনীয় অর্থ গ্রহণ করতে পারবে।<br /> ( সূরা বনী ইসরাইল ৩৪)<br /> <br /> (১২) মাপ-ওজন সঠিকভাবে করবেঃ<br /> মাপের পাত্র দিয়ে দিলে পুরাপুরি ভর্তি করে দিবে, আর ওজনে দিলে ক্রুটিহীন পাল্লা দ্বারা মেপে দিবে। এটা খুব ভালনীতি আর পরিনামে উত্তম।<br /> (বনী ইসরাইল ৩৫)<br />  অর্থাৎ সঠিক মাপ এবং ওজন দ্বারা পারস্পপরিক আস্থা হবে।<br /> <br /> (১৩)ভিত্তিহীন ধারনার পিছনে না পড়াঃ এমন কোন জিনিসের পেছনে লেগে যাবে না যার জ্ঞান তোমার নেই। নিশ্চয় জানবে যে, চক্ষু, কান ও অন্তর সব কিছুরি জন্য জবাব দিহি করতে হবে<br /> ( সূরা বনী ইসরাইল ৩৬)<br /> <br /> অর্থাৎ জ্ঞানের পরিবর্তে অমুলক ধারণা অনুমানের অনুসরণ করবে না। কারণ এর ফলে মানব জীবনের অনেক মারাত্মক ব্যাধি দেখা দিতে পারে। কোন ব্যক্তি বা দলের উপর প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত দোষারোপ করা উচিৎ নয়। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।<br /> <br /> (১৪) জমিনে বাহাদুরি করে চলবে নাঃ<br /> জমিনে বাহাদুরি করে চলবে না, তুমি না জমিনকে দীর্ণ, আর না পর্বতের ন্যায় উচ্চতা লাভ করতে পারবে।<br /> (সুরা বনী ইসরাইল-৩৭)<br /> <br /> এটা ব্যক্তিগত ও জাতীয় আদর্শ উভয় দিকের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ হেদায়তের বদৌলতে মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক, পরিচালক, গভর্নর ও সেনাপতিদের জীবনে অহংকার ও গর্ভের নামগন্ধ খুঁজে পাওয়া যেত না।<br /> <br /> ওয়া আখেরি দাওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামিন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা'আলি সাইয়েদিনা মুহাম্মদিন ওয়া বারিক ওয়াসাল্লিম। আসসালামু. আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

শবে মিরাজ পর্বঃ১০ এবং শেষ

♥মি'রাজের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পর্ব (১০) শেষ পর্ব♥ প্রিয় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে পত্যাবর্তনকালে আল্...

Read more »

শবে মিরাজ পর্বঃ৯

♥পবিত্র মি'রাজ পর্ব (৯)<br /> বিজ্ঞানময় আল কোরআন।<br /> ♥অবিশ্বাসীদের জবাব।<br /> <br /> ১) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)<br /> মি'রাজ থেকে-মক্কার কাবা ঘরে ফিরে আসার পর এসে<br /> দেখনে, পৃথিবীর যাবতীয় কার্যক্রম ঠিক আগের মত<br /> চলেছে। গতি বিজ্ঞান (Dynamic) এটা স্থির করেছে যে,<br /> পৃথিবী হতে যদি কোন বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ৬.৯০<br /> অর্থাৎ মোটামুটি ৭ মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুড়ে<br /> দেওয়া হয় তবে তা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে চলে<br /> যেতে পারবে।<br /> <br /> 'A bullet fired from the earth surface with a spced of 6.9 miles a second or more with fly into space' ( The Universe Around US By. jeans p. 216.)<br /> <br /> কাজেই আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক প্রেরিত বাহন আরো অধিকতর গতি সম্পন্ন ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।<br /> <br /> ২) হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী নবী করিম (সাল্লাহু<br /> আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে ফিরে এসে দেখতে পান তাঁর বিছানায় তখনো উষ্ণতা বিরাজ<br /> করেছে এবং অজুর পানি গড়িয়ে পড়ছে। এ বাস্তবতা<br /> বিশ্বাস করতে পারেনি তখন কাফেররা। কিন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সময় নিয়ে আবিষ্কৃত তত্ত্ব 'থিওরি অব রিলেটিভিটি' প্রচারের পর বিজ্ঞান এ নিয়ে আর প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বিখ্যাত থিওরি বা সময় নিয়ে দর্শনের আলোকে মি'রাজকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।<br /> <br /> "মওলানা মুহাম্মদ আখতার ফারুক" 'সময়, দর্শন' নিয়ে<br /> বিশ্লেষণ করেছেন।<br /> <br /> বস্তুত 'সময় কী' এবং এর 'চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য কী'- এই<br /> প্রশ্ন মানুষকে যুগ যুগ ধরে আলোড়িত করেছে। এমন<br /> কোনো জ্ঞানী, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী নেই যারা সময় নিয়ে কোনো চিন্তা-গবেষণা করেন নি। সৃষ্টির শুরু থেকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং সময়ের প্রবাহ শুরু হয়েছে। যা আদি বস্তুপিণ্ডের (Primeval Atom) ভেতর একীভূত ছিল। তখন থেকেই সময় প্রবাহিত ধারায় বিরাজ করছে।<br /> <br /> সময়ের প্রবহমান বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একে তিন শ্রেণীতে<br /> ভাগ করা হয়েছে, যথা- বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকাল। কালের এই তিনটি বিভাজন স্থানীয় ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যসব স্থানের সঙ্গে এর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য যেমন জটিল, তেমনি দুর্বোধ্য। সময়ের এই বৈচিত্র্যময় চরিত্র উদঘাটন করতে গিয়ে এ যাবতকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বিস্ময়কর সফলতা লাভ করেন।<br /> <br /> এ বিষয়ে তিনি যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, তার নাম 'থিওরি রিলেটিভিটি' তার এ তত্ত্বের মূল কথা হলো সময়ের চরম ও পরম (Absolute) কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মতে, Time is relative in respect of Duration- সময় একটি আপেক্ষিক বিষয় যা স্থানীয় সচেতনতায় বিরাজমান। আমদের বলয়ে পৃথিবী, মিনিট, ঘন্টা এবং দিন, মাস, বছর ইত্যাদি সময়ের<br /> একেকগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।<br /> <br /> পবিত্র আল কোরআন সময়ের একক নির্ধারণী ধারণাও<br /> উপস্থাপন হয়েছে এভাবেঃ 'হে মাহবুব! ওরা আপনাকে<br /> চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে। আপনি<br /> বলে দিন, চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে সময় নির্দেশের জন্য।<br /> (সূরা আল বাকারাহ:১১৯)<br /> <br />  অন্য আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ 'নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো।' (সূরা আত তাওবা: ৩৬)।<br /> <br /> একই পৃথিবীর অধীনে আমাদের বাংলাদেশে যখন দিন,<br /> আমেরিকায় তখন রাত। একই সৌরজগতে আমাদের<br /> পৃথিবীতে বছর হয় যেখানে ৩৬৫ দিনে, সেখানে বুধ<br /> (mercury) গ্রহে বছর হয় মাত্র ৮৮ দিনে, শুক্র(Venus) গ্রহে ২২৫ দিনে, মঙ্গলে (Mars) ৬৮৭ দিনে, বৃহস্পতি (Jupiter) ৪,৩৮০ দিনে। এসব গ্রহের সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা কখনো পৃথিবীর অনুরূপ হবে না। কিংবা এক গ্রহের সময়ের একক অন্য গ্রহ থেকে অবশ্যই কম-বেশি হবে। অর্থাৎ A long time in one planet is no time in another. আবার ছায়াপথ গ্যালাক্সির একদিন পৃথিবীর হিসেবে ২২০ মিলিয়ন বছের সমান। তাহলে মহাবিশ্বে সময়ের সুনির্দিষ্ট অস্তিত্ব কোথাও নেই।<br /> <br /> বিজ্ঞানী আইনস্টাইন 4th Dimention Theory-তে সময়কে চতুর্থ মাত্রা হিসেবে প্রদর্শন করেছেন। অর্থাৎ কোনো বস্তু প্রথম মাত্রা (দৈর্ঘ্য), দ্বিতীয় মাত্রা (বিস্তার) এবং তৃতীয় মাত্রা (ভেদ) সম্বয়ে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু চতুর্থ মাত্রা (সময়) ব্যাতিরেকে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে<br /> যায়। তাই আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তু যখন আলোর<br /> গতিতে চলে, সময় তখন স্থির হয়ে যায়।<br /> <br /> আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী এ সত্য প্রতিভাত হয়েছে যে,<br /> সপ্তম আকাশ ঊর্ধ্বে যার দূরত্ব ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ, সেখানকার লাখ লাখ বছর পৃথিবীর জন্য Zero Time কারণ সেখানে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের অস্তিত্ব নেই। আদি-অন্তহীন অঞ্চলজুড়ে একটি মাত্র কাল বিদ্যমান, তা হচ্ছে বর্তমান কাল ।<br /> <br /> তাই সেখান থেকে গ্রহ উপগ্রহগুলোর ঘূর্ণন গতি যেমন<br /> প্রত্যক্ষ করা যায়, তেমনি পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও<br /> ভবিষ্যৎকাল অবলোকন করা যায়।<br /> <br /> সময়ের আপেক্ষিকতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের স্পষ্ট বক্তব্য -<br /> ﻭَﻋۡﺪَﻩٗؕ ﻭَﺍِﻥَّ ﻳَﻮۡﻣًﺎ ﻋِﻨۡﺪَ ﺭَﺑِّﻚَ ﻛَﺎَﻟۡﻒِ ﺳَﻨَﺔٍ ﻣِّﻤَّﺎ ﺗَﻌُﺪُّﻭۡﻥَ<br /> তোমার প্রভুর দরবারে একদিন তোমাদের গণনায় ১ হাজার বছরের সমান।<br /> (সূরা আল হাজ্জ-৪৭)।<br /> <br /> অতএব এ হিসেব মতে আল্লাহর দরবারে নবী করীম<br /> (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মি'রাজের ২৭ বছর আমাদের পৃথিবীর হিসেবে ৩৮ মিনিট (প্রায়)।<br /> (সুত্র বিজ্ঞানময় আল কোরআন-মুহাম্মদ আবু তালেব।)<br /> <br /> আল-কোরআনে আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেছেন, 'ফেরেশতাগণ ও রূহ আল্লাহর কাছে পৌছে একদিনে। এ একদিনের পরিমাণ হলো পৃথিবীর হিসেবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।' (সূরা আল মা'আরিজ -৪)<br /> <br /> তাহলে পৃথক এ হিসেব অনুযায়ী ২৭ বছর সমান হয় ৪৬ সেকেন্ড।<br /> (সূত্র: প্রাগুক্ত)<br /> যা হোক, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এরমিরাজের স্থিতিকাল ছিল ৩৮ মিনিট বা ৪৬ সেকেন্ড।<br /> <br /> তাছাড়া কোন বস্তুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো, যে বস্তু আমরা দেখি তার থেকে আলোর বিকিরণ আমাদের চোখে এসে পড়ে। অর্থাৎ কোন বস্তুর উপর আলো ফেললেওই বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে  পড়লেই আমরা সেটি দেখতে পাই।<br /> <br /> অতএব, আলোর গতি যখন প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার, তখন দূরের কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমারা কিন্তু তা দেখতে পাই না।<br /> <br /> বরং এটা নির্ভর করে বস্তুটির বা স্থানের দূরত্বের উপর। অর্থাৎ বস্তু বা ঘটানার স্থানটি যদি ৩ লাখকিলোমিটার দূরে হয়, তা হলে আমারা দেখব ১ সেকে্ডপরে। এভাবে ১৮ লাখ কিলোমিটার দূরে ঘটলে ১ মিনিট এবং ১০ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরে ঘটলে আমরা তা দেখতে পাব ১ ঘন্টা পরে। একটি উদাহরণ দ্বারা বিষিয়টি আরো স্পষ্ট করা যাক। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসর ঘটনাটি ঘটেছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেব অনুযায়ী আজ থেকে ৪ বছর ৪ মাস ২৬ দিন আগে।  (দূর্ঘটনার ৪ বছর পরের হিসেব) আমাদের কাছে এ সময়টা অতীতকাল।<br /> <br /> কিন্তু আলোর গতি অনুযায়ী এ মূহর্তে আলোকচিত্রটি যেখানে পৌঁছেছে, তার জন্য কাজটি এখন ঘটেছে অর্থাৎ বর্তমান কাল এবং পৃথিবী থেকে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরের যেসব জায়গায় প্রতিফলিত আলো এখনো পৌঁছেনি, সেসব গ্রহ বা নক্ষত্রের জন্য ঘটানাটি এখনো ভবিষ্যৎকাল। তার মানে ঘটানাটি এখনো ঘটেনি। তাই সময় একটি আপেক্ষিক ধারণা মাত্র।<br /> <br /> অতএব, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- সৃষ্টিজগত পরিদর্শনে যে ১৭ বছর কেটেছিল এবং এর পরও তিনি যদি তাঁর বিছানা উষ্ণ দেখতে পান অথবা অজুর পানি গড়িয়ে পড়তে দেখেন, তাতে অসম্ভব কিছুই নেই।<br /> <br /> চলবে-----------

শবে মিরাজ পর্বঃ৯

♥পবিত্র মি'রাজ পর্ব (৯) বিজ্ঞানময় আল কোরআন। ♥অবিশ্বাসীদের জবাব। ১) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে-মক্কার...

Read more »