প্রিয় নবি (ﷺ) এর আব্বা-আম্মা জাহান্নামী হওয়ার হাদিসটি দূর্বল! এর বিপরীতে শক্তিশালী হাদিস বিদ্যমান

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhtbNbruIXxdGR3k7Mu-BDibndIoh3By0n24e0W0FSUF1iUiqE4pByC6Xac61q11V_OGVZYQaQU6tXkEV9xDrMxIz2diRS-Zh8NRjA3LD2nU7LBW77nbyZuAZruP-bbGk0FmllSJzaZmuc/s1600/IMG_20190210_201358.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="541" data-original-width="903" height="238" loading="lazy" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhtbNbruIXxdGR3k7Mu-BDibndIoh3By0n24e0W0FSUF1iUiqE4pByC6Xac61q11V_OGVZYQaQU6tXkEV9xDrMxIz2diRS-Zh8NRjA3LD2nU7LBW77nbyZuAZruP-bbGk0FmllSJzaZmuc/s400-rw/IMG_20190210_201358.jpg" width="400" /></a></div> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"> <br /></div> <b><span style="color: red;"><br /></span></b> <span style="color: red;"><b>প্রিয় নবি ﷺ এর আব্বা-আম্মা জাহান্নামী হওয়ার হাদিসটি দূর্বল!</b></span><br /> <b><span style="color: red;">আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক</span></b><br /> <b><span style="color: red;">উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসা</span></b><br /> <br /> <br /> <ul style="text-align: left;"> <li><span style="color: #38761d;"><b>হাম্মাদ ইবনে সালামা- সাবিত- আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, একব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জ্ঞিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘আমার বাবা কোথায় আছেন’? বললেন, জাহান্নামে। ঐ ব্যাক্তি ফিরে যাওয়ার সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, “নিশ্চয় তোমার বাবা এবং আমার বাবা জাহান্নামে”।</b></span></li> <li><span style="color: #38761d;"><b>এই হল সহি মুসলিম শরীফের পুরো হাদিসটি। </b></span></li> </ul> <br /> <br /> <span style="color: #b45f06;">এই হাদীসের আলোকে এক শ্রেণীর লোক প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বা ও আম্মার ব্যাপারে ভীষন রকমের অশোভন শব্দ ব্যবহার করে থাকে এবং বলে, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা-বাবা জাহান্নামী। নাউজুবিল্লাহ! তারা একবারও ভাবলো না যে, সাধারণ কোন মানুষকেও যদি বলা হয় ‘তোমার মা-বাবা জাহান্নামী’; অথবা ‘তুমি জাহান্নামীর সন্তান’ তাহলে ঐ ব্যক্তি অনেক অপমানিত হয় ও কষ্ট পায়। অথচ এই শব্দগুলোই তারা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা-বাবা সর্ম্পকে বলে থাকে যা নিশ্চিতভাবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে অপমান করা ও তাঁকে কষ্ট দেয়ার শামিল।</span><br /> <br /> আর সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য তারা এই হাদীসটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তারা বলে, দেখুন এটা সহি মুসলিম শরীফের হাদীস। নবী নিজেই বলেছেন তাঁর বাবা জাহান্নামে আছে। আর আপনারা বলছেন নবীর মা-বাবা জান্নাতী! বেচারা সাধারণ মানুষ মুসলিম শরীফের কথা শুনেই মাথা হেট। মুসলিম বলে কথা!<br /> <br /> বুখারী ও মুসলিমের ‘গুডউইল’ ইদানিং কালে সাধারণকে বিভ্রান্ত করার কার্যকর হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও!! ফুলের মধ্যেও কখনো কখনো দাগ থাকে! দীন বিশারদদের কাছে শুধু বুখারী ও মুসলিমে থাকাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল দলীলের মান ও শক্তি। বুখারী মুসলিমের হাদীস থেকে অন্য কিতাবের হাদীস মানগত দিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী হলে সেক্ষেত্রে শুধু বুখারী মুসলিমে উল্লেখ থাকাটাই ঐ হাদীসের গ্রহনযোগ্যতা দিতে পারে না। বরং অন্য কিতাবের ঐ শক্তিশালী হাদীসটা বুখারী মুসলিমের হাদীসের উপর প্রাধান্য পাবে। এটাই হাদীসবিদগনের শেষ কথা। আবার বুখারী মুসলিমের কোন হাদীস যদি কোরআনের অকাট্য দলিলের বিপরীত হয় তাহলেও বুঝতে হবে ঐ হাদীস মানসুখ কিংবা অন্য কোন কারণে সহি হওয়া সত্তেও আমল যোগ্য নয়। আমল হবে পবিত্র কোরআনের নসের উপর। এগুলো মিমাংসিত সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতি। সে কারণে হাদীস সহি হওয়ার পরও নীতিমালার কারণে কখনো কখনো তা আমল যোগ্য হয় না। ঐ নীতিমালা বিশ্লেষণ করেই এক হাদীসের উপর আরেক হাদীসকে প্রাধান্য দিতে হয়। শুধু বুখারী বা মুসলিমে উল্লেখ থাকাই হাদীসের প্রাধান্য পাওয়ার শেষ কথা নয়।<br /> <br /> <span style="color: #cc0000;"><b>সহি মুসলিমের এই হাদিসটিও এই রকমই। কারণ এই হাদীসেটি অন্য সনদেও বর্নিত হয়েছে যেখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাবাজান ‘জাহান্নামী’ হওয়ার কথাটি উল্লেখ নাই। সেখানে ঐ প্রশ্নকারীর জবাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “ যখন তুমি কোন কাফেরের কবরের পাশ দিয়ে যাবে তখন তাকে জাহান্নামের সংবাদ দাও”। </b></span><br /> <span style="color: #cc0000;"><b><br /></b></span> <br /> <ul style="text-align: left;"> <li><b><span style="color: #38761d;">এই হাদীসের সনদঃ</span></b></li> <li><b><span style="color: #38761d;">‘মা’মার➡সাবিত➡আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’।</span></b></li> </ul> <br /> <span style="color: #cc0000;"><b><br /></b></span> <span style="color: #cc0000;"><b> এবং মুসলিম শরীফের হাদীসের সনদ লক্ষ করুন যেখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাবা জাহান্নামী হওয়ার কথা আছে তার বর্ণনাকারী, </b></span><br /> <br /> <ul style="text-align: left;"> <li><b><span style="color: #38761d;">হাদিসটির সনদঃ</span></b></li> <li><b><span style="color: #38761d;">‘হাম্মাদ ইবনে সালামা➡ সাবিত➡আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’</span></b></li> </ul> <br /> <br /> লক্ষ করুন, যেখানে <span style="color: red;"><u>প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাবাজান জাহান্নামী হওয়ার কথা উল্লেখ আছে সেই হাদীসের বর্ণনাকারী ‘হাম্মাদ ইবনে সালামা’। </u></span><u><span style="color: #38761d;">যেখানে প্রিয়  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাবার জাহান্নামী হওয়ার কথা নাই তার বর্ণনাকারী ‘মা’মার’। আর হাদীসবিশারদগণ সবাই জানেন ‘হাম্মাদ বিন সালমা’র তুলনায় ‘মা‘মার’ অনেক বেশী শক্তিশালী রাবী তথা বর্ণনাকারী।</span></u><br /> <br /> কারণ হাম্মাদের স্বরণশক্তি নিয়ে হাদিস বিশারদগন নির্ভরশীল ছিলেন না। তার পক্ষ থেকে এ কারণেই অনেক ‘মুনকার’ হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, যা একজন বর্ণনাকারীর গ্রহনযোগ্যতা নষ্ট করে। <span style="color: purple;">এ সকল কারণে ইমাম বুখারী তার বুখারী শরীফে হাম্মাদের কোন বর্ণনা গ্রহন করেননি। ইমাম মুসলিম সাবিতের বর্ণনা সূত্র ছাড়া হাম্মাদের বর্ণনা মুল হাদীসে গ্রহন করেননি। </span><br /> <br /> <span style="color: red;">তার বিপরীতে ‘মা’মার’। যার বর্ণনায় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বাজান জাহান্নামী হওয়ার কথা নাই। তিনি এ রকম যে কোন ক্রটি থেকে মুক্ত। সে কারনেই ইমাম বুখারী ও মুসলিম ব্যাপকভাবে তাঁর বর্ণনা  গ্রহন করেছেন।</span><br /> সুতরাং হাম্মাদের তুলনায় মা’মার অনেক বেশী শক্তিশালী বিধায় মা’মারের বর্ণনাটি গ্রহনযোগ্য এবং হাম্মাদের হাদীসটি-  সেখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আব্বাজান ‘জাহান্নামী’ হওয়ার কথা আছে-  তা গ্রহনযোগ্য নয়।<br /> <br /> <span style="color: red;">এছাড়াও ইমাম বাজ্জার, তাবরানী, বায়হাকী এই হাদীসটি আরেকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। </span><span style="color: #38761d;">যেখানে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বাজান জাহান্নামী হওয়ার কথার উল্লেখ নাই।</span><span style="color: red;"> </span><br /> <br /> <ul style="text-align: left;"> <li><b style="color: red;">এই বর্ণনার সনদ,</b></li> <li><b style="color: red;"> “ইব্রাহিম ইবনে সাদ➡ জুহরী➡ আমের ইবনে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস➡ সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস”। </b></li> </ul> <br /> <span style="color: #38761d;">এই সনদটিও অনেক শক্তিশালী যা বুখারী ও মুসলিমের গৃহীত নীতিমালার মানের হওয়ার কারণে ‘হাম্মাদ ইবনে সালামা’র বর্ণিত হাদীস থেকে অগ্রগামী।</span><br /> <br /> <span style="color: red;">ইমাম ইবনে মাযাহও এই হাদীসটি আরেকটি সনদে বর্ণনা করেছেন। </span><br /> <br /> <ul style="text-align: left;"> <li><b style="color: red;">এই বর্ণনার সনদ,</b></li> <li><b style="color: #38761d;">“ ইব্রাহিম ইবনে সাদ➡জুহরী➡সালেম➡আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু”। এই সনদটিও অনেক শক্তিশালী। </b></li> </ul> <br /> <span style="color: red;">এই সনদে বর্ণিত হাদীসেও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বাজান জাহান্নামী হওয়ার কথা নাই। </span>সুতরাং দূর্বলতার কারণে এবং তার বিপরীতে অধিকতর শক্তিশালী সনদ থাকার কারণে হাম্মাদ ইবনে সালামার হাদীসটি অগ্রহণযোগ্য।<br /> <br /> <span style="color: red;"><u><b>এই হাদীসটির ‘আমার বাবা এবং তোমার বাবা জাহান্নামী’ অংশটিকে ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতী বর্ণনাকারীর বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্তি নয়।</b></u></span><br /> সুতরাং এই হাদীসের আলোকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বাজানকে  জাহান্নামী বলার কোন সুযোগ নাই। কারণ এই হাদীসটি আমলযোগ্য নয়। বরং আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আব্বাজান ও আম্মাজান উভয়ই কোরআন ও হাদীসের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে জান্নাতি।<br /> <b><u><span style="color: red;">তথ্য সূত্র: মাসালেকুল হুনাফা, কৃত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রাহঃ)</span></u></b></div>

প্রিয় নবি (ﷺ) এর আব্বা-আম্মা জাহান্নামী হওয়ার হাদিসটি দূর্বল! এর বিপরীতে শক্তিশালী হাদিস বিদ্যমান

প্রিয় নবি ﷺ এর আব্বা-আম্মা জাহান্নামী হওয়ার হাদিসটি দূর্বল! আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রা...

Read more »

ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত বিজ্ঞানী নবী হজরত ইদ্রিস (আ.)

<p dir="ltr">ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত বিজ্ঞানী নবী হজরত ইদ্রিস (আ.)</p><p dir="ltr">হজরত ইদ্রিস (আ.) এর নামে বহু উপকথা তফসিরের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। যে কারণে জনসাধারণে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। সেসব উপকথা পরে অধিকাংশই রূপকথায় রূপ নিয়েছে, কিছু অতিরঞ্জিত হয়ে গোনাহের পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ নবী ইদ্রিস (আ.) যে পৃথিবীতে বসবাসের নিমিত্তে অনেক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূচনা করেছিলেন, সে ব্যাপারে আমরা অনেকেই অজ্ঞ। ইদ্রিস (আ.) হজরত নুহ (আ.) এর আগের নবী ছিলেন, না পরের নবী ছিলেন- এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।<br>অনেক সাহাবির মতে, তিনি নুহ (আ.) এর পরের নবী ছিলেন। আবার অনেক সাহাবি, ইতিহাসবিদ এবং তফসিরকাররা তাকে ইসলামের তৃতীয় নবী এবং হজরত আদম (আ.) এর তৃতীয় প্রজন্ম বলে মত প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর প্রাথমিক পর্যায়ের মানুষ হিসেবে তিনিই ছিলেন ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত ব্যক্তি। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাকেই প্রথম অক্ষরজ্ঞান শিক্ষা দেন।<br>তফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসির ও মাআরেফুল কোরআন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইদ্রিস (আ.) প্রথম মানব যাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণনাপদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। তিনি গ্রহ-উপগ্রহের গতিবিধি লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণ করার জন্য বেশ কিছু মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন বলেও জানা যায়। তিনিই সর্বপ্রথম মানব যিনি বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন বলে বলা হয়। তার আগে মানুষ সাধারণত পোশাক হিসেবে জীবজন্তুর চামড়া ব্যবহার করত। ওজন ও পরিমাপের পদ্ধতি তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন।<br>তার আমলেই সর্বপ্রথম নগরসভ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি তার ব্যক্তিগত সংস্পর্শে রেখে বেশ কিছুসংখ্যক লোককে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। তারাই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে একেকটি শহর নির্মাণ করে। এভাবে তিনি বেঁচে থাকতেই ১৮৮টি শহর বা সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন। লোহা দ্বারা অস্ত্রশস্ত্র তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার ও তার ব্যবহার ইদ্রিস (আ.) এর আমল থেকেই শুরু হয়। তিনি নিজস্ব পদ্ধতিতে অস্ত্র নির্মাণ করে কাবিল গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। সর্বপ্রথম এসব নির্মাণগত উৎকর্ষ সাধনের কারণে তাকে ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে।<br>ইদ্রিস (আ.) এর বর্ণনা কোরআনের দুই স্থানে এসেছে : ‘আপনি এই কিতাবে ইদ্রিসের কথা আলোচনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী। আমি তাকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম। (সূরা মরিয়াম : ৫৬-৫৭)। ‘এবং ইসমাঈল, ইদ্রিস ও জুুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তারা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী।’ (সূরা আম্বিয়া : ৮৫)।<br>ইদ্রিস (আ.) কে নিয়ে রূপকথা : ইদ্রিস (আ.) কে নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল উপকথার মধ্যে একটি হলো- আল্লাহর নবী ইদ্রিস (আ.) ছিলেন মালাকুল মউতের (আজরাঈল) বন্ধু। ইদ্রিস (আ.) তার কাছে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানোর আবদার জানালেন। তিনি তাকে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে জাহান্নাম দেখালেন। জাহান্নাম দেখে ইদ্রিস (আ.) এত বেশি ভয় পেলেন যে, বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম হলেন। তখন মালাকুল মউত আপন ডানা দিয়ে তাকে আগলে নিলেন। তারপর তাকে জান্নাত দেখাতে নিয়ে গেলেন। জান্নাত দেখা শেষ হলে মালাকুল মউত বললেন, দেখা হয়েছে? এবার চলুন। তিনি বললেন, কোথায় যাব? বললেন, যেখান থেকে এসেছেন। তখন ইদ্রিস (আ.) বললেন, না, জান্নাতে প্রবেশ যখন করেছি, এখান থেকে আর বের হবো না। তখন মালাকুল মউতকে গায়েব থেকে বলা হলো, তুমি কি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাওনি? জান্নাতে একবার যে প্রবেশ করে সে আর বের হয় না বা তাকে আর বের করা হয় না। এরপর তিনি সেখানেই বসবাস করতে লাগলেন।<br>এ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন। এ বর্ণনার সনদে ইবরাহিম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খালেদ আলমিসসিসি রয়েছে। ইমাম জাহাবি (রহ.) এ বর্ণনাকারী সম্পর্কে বলেন, এ ব্যক্তি একজন চরম মিথ্যাবাদী। হাকিম (রহ.) বলেছেন, তার বর্ণনাগুলো মওজু ও বানোয়াট। (সূত্র : মিজানুল ইতিদাল, তরজমা নং ১২৪; লিসানুল মিজান, তরজমা নং ১৭৮।)<br>ইদ্রিস (আ.) কে নিয়ে প্রাচ্যের দার্শনিকদের ভুল বিদ্যা : আল্লামা জামালুদ্দিন কাতফি (রহ.) তার রচিত ‘তারিখুল হুকামা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘মুফাসসির ও ইতিহাসবিদরা যেসব কথা লিখেছেন সেগুলো খুবই প্রসিদ্ধ কথা। অবশ্য বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা তার সম্পর্কে বিশেষভাবে যা কিছু বর্ণনা করেছেন তা-ই নিচে উদ্ধৃত করা হলো। হজরত ইদ্রিস (আ.) এর জন্মস্থান ও তার প্রতিপালিত হওয়ার স্থান কোথায় এবং তিনি নবুয়তপ্রাপ্তির আগে কার কাছ থেকে বিদ্যা অর্জন করেছেন এ সম্পর্কে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মত বিভিন্ন। একদলের মতে, হজরত ইদ্রিস (আ.) এর নাম ছিল ‘হারমাসুল হারামিসা’। তিনি মিসরের ‘মানাফ’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রিকরা ‘হারমাস’কে ‘আরমিস’ বলে। আরমিস শব্দের অর্থ বুধ গ্রহ। (আরমিস অথবা হারমিস গ্রিসের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও জ্যোতিষশাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন। এ কারণেই তাকে আরমিস বলা হতো। গ্রিকরা আরমিস ও ইদ্রিসকে একই ব্যক্তি মনে করে। অথচ এটা একটি প্রকাশ্য ভুল। এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।)<br>অপর দল মনে করে, তার নাম গ্রিক ভাষায় ‘তিরমিস’; হিব্রু ভাষায় ‘খানুখ’ এবং আরবি ভাষায় ‘আখনুখ’। আর কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা তার নাম ইদ্রিস বলেছেন। আবার একই দল বলে, তার শিক্ষকের নাম ছিল ‘গুসা জাইমুন’ বা ‘আগুসা জাইমুন’ (মিসরি)। ‘গুসা জাইমুন’ সম্পর্কে এই দলের চেয়ে বেশি আর কিছুই বলে না যে, তিনি মিসরের অথবা গ্রিসের নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) মধ্য থেকে একজন নবী ছিলেন কিনা। আবার এই দলই গুসা জাইমুনকে দ্বিতীয় ইদ্রিস এবং হজরত ইদ্রিস (আ.) কে তৃতীয় ইদ্রিস উপাধি দিয়ে থাকে। গুসা জাইমুন শব্দের অর্থ অত্যন্ত সৎকর্মপরায়ণ। তারা এটাও বলেন যে, হারমাস মিসর থেকে বের হয়ে গোটা ভূমন্ডল ভ্রমণ ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরপর তিনি মিসরে প্রত্যাবর্তন করলে ৮২ বছর বয়সে আল্লাহপাক তাকে নিজের সানি্নধ্যে উঠিয়ে নেন।<br>তৃতীয় আরেকটি দল বলে, ইদ্রিস (আ.) বাবেলে (ব্যাবিলনে) জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে তিনি প্রতিপালিত হন ও বেড়ে ওঠেন। প্রথম জীবনে তিনি হজরত শিশ বিন আদম (আ.) থেকে বিদ্যা অর্জন করেন। আকায়িদ শাস্ত্রের বিখ্যাত আলেম আল্লামা শাহারাস্তানি বলেন, আগুসা জাইমুন হজরত শিশ (আ.) এরই নাম। সূত্র : কাসাসুল কোরআন, তাফসিরে ইবনে কাসির, নবীদের কাহিনী</p>

ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত বিজ্ঞানী নবী হজরত ইদ্রিস (আ.)

ইতিহাসের প্রথম শিক্ষিত বিজ্ঞানী নবী হজরত ইদ্রিস (আ.) হজরত ইদ্রিস (আ.) এর নামে বহু উপকথা তফসিরের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। যে কারণে জনসাধারণে তার ...

Read more »