নবী করীম (ﷺ) এর নামে নাম রাখা
মহানবী (ﷺ) এর বিশেষত্বের আরেকটি দিক হচ্ছে, তাঁর পবিত্র নামে নাম রাখা বরকতময়, উপকারী, দুনিয়া আখেরাতের হেফাজতের ওসীলা হয়ে থাকে। এমর্মে সাইয়্যেদুনা হজরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্পাকের দরবারে দুই ব্যক্তিকে দ-ায়মান করানো হবে আর আল্লাহ্তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর হুকুম দিবেন। এতে বিস্মিত হয়ে ওই দুই ব্যক্তি আল্লাহ্তায়ালার কাছে নিবেদন করবে, হে আল্লাহ্! কোন জিনিস আমাদেরকে জান্নাতের অধিকারী ও উপযোগী বানালো? তোমার রহমত দ্বারা জান্নাতে যাবো এ ধরনের আশা করা ছাড়া আমরা তো আর কোনো নেক আমল করিনি। তাদের কথা শুনে রব্বুল ইজ্জত বলবেন, যাও তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো। কেননা আমি স্বয়ং জাতের কসম দ্বারা আমার উপর অবশ্যকর্তব্য করে নিয়েছিলাম যে, আমি ব্যক্তিকে কক্ষণও জাহান্নামে পাঠাবো না, যার নাম হবে আহমদ বা মোহাম্মদ। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ্তায়ালা রসুলেপাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের কসম! আমি এমন ব্যক্তিকে আযাব দেবো না যার নাম হবে আপনার নামে।
সাইয়্যেদুনা হজরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, পৃথিবীতে যে কোনো স্থানে মানুষকে খানা খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে দস্তরখান বিছানো হয়, আর সেখানে যদি আহমদ বা মোহাম্মদ নামের কোনো ব্যক্তি হাজির হয়, তাহলে যে ঘরে দস্তরখানা বিছানো হয়েছে, আল্লাহ্তায়ালা সে ঘরকে দৈনিক দু’বার পবিত্র করে দেন। হাদীছটি আবু মনসুর দায়লামী বর্ণনা করেছেন। এরকমও বর্ণিত আছে, এমন কোনো ঘর নেই, যেখানে মোহাম্মদ নামের কোনো ব্যক্তি রয়েছে অথচ আল্লাহ্তায়ালা সেখানে বরকত প্রদান করেননি।
এক হাদীছে আছে, কোনো কওমের পরামর্শ বিনিময় সভায় মোহাম্মদ নামের কেউ উপস্থিত থাকলে নিশ্চয় আল্লাহ্তায়ালা সেখানে বরকত দান করবেন। অপর এক হাদীছে আছে, যার নাম মোহাম্মদ, রসুলেপাক (ﷺ) তার জন্য শাফায়াত করবেন এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। এই কিতাবের রচয়িতা শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী একবার স্বপ্নে দেখলেন, তিনি গাউছুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। উপস্থিত জনতা বলছেন, মোহাম্মদ আবদুল হক আপনার কাছে সালাম নিবেদন করছেন। একথা শুনে গাউছুল আজম (رحمة الله) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুআনাকা করলেন। তিনি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন তোমার উপর দোযখের আগুন হারাম হয়ে গিয়েছে। বাহ্যতঃ দেখা যায়, এই শুভসংবাদ লাভের কারণ নবী করীম (ﷺ) এর নামে নাম রাখা। এ ব্যাপারে উলামা কেরামের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কোনো কোনো আলেম নবী করীম (ﷺ) এর পবিত্র নাম ও পবিত্র উপাধি সহযোগে নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। যে কোনো একটির মাধ্যমে নাম রাখা জায়েয রেখেছেন অর্থাৎ হয় মোহাম্মদ নাম রাখা যাবে, না হয় আবুল কাসেম। দু’টি একত্রিত করে মোহাম্মদ আবুল কাসেম, এরকম নাম রাখা যাবে না। এই মতটি অধিকতর বিশুদ্ধ।
ইমাম নববী বলেন, নবী করীম (ﷺ) এর নাম ও কুনিয়াত একত্র করে নাম রাখার ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মত হচ্ছে, সাধারণত নিষিদ্ধ। ইমাম মালেক (رحمة الله) এর মত, বৈধ। আর তৃতীয় মতটি হচ্ছে, আবুল কাসেম নাম রাখা ওই ব্যক্তির জন্য জায়েয, যার নাম মোহাম্মদ নয়। যে হজরতগণ সাধারণতঃ জায়েযের প্রবক্তা, তারা নিষেধারোপকারী হাদীছগুলোকে নবী করীম (ﷺ) এর পৃথিবীতে বসবাসের সময়ের জন্য নির্দিষ্ট মনে করে থাকেন। আর এই মতটিই সঠিকতার অধিক নিকটবর্তী।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |