বিচ্ছুর বিষ নিবারণের দোয়া
হজরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (ﷺ) মন্ত্র পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। এরপর কিছু সংখ্যক সাহাবী রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমরা একটি মন্ত্র জানি, যা বিচ্ছু দংশন করলে পাঠ করা হয় এবং আমরা এ মন্ত্র পাঠও করে থাকি। তারপর তিনি উক্ত মন্ত্র পাঠ করে শোনালেন। রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, এতে কোনো দোষ নেই, পড়তে পারো। তিনি আরও বললেন, তোমরা যে যতটুকু পারো অপরের উপকার করো।
এই হুকুমের পরিপ্রেক্ষিতে একদল লোক প্রমাণ করেন যে, পরীক্ষিত ও উপকারী মন্ত্র ব্যবহার করা জায়েয, অর্থ বোধগম্য না হলেও। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। যার অর্থ জানা থাকবে না সে মন্ত্র ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়। এই হুকুম হাদীছে উলেি খত দোয়া ছাড়া অন্য কিছুর বেলায়। আর দোয়া বা আমল হাদীছসম্মত হলে নিঃসন্দেহে জায়েয। যেমন বিচ্ছুর দংশনের দোয়া হাদীছ শরীফে উল্লেখিত হয়েছে।
ﺑِﺴْﻢِ اﷲِ وَﺷَﺤْﺒَﺔِ وَﻗَﺮِﯾْﻨَﺔِ ﻟِﻠﱠﺤَﺔِ ﺑَﺤْﺮٍ ﻗَﻔَﺎﻃًﺎ –
হজরত আউফ ইবনে মালেক (رضي الله عنه) এর হাদীছ দ্বারা জানা যায়, যে আমলের মধ্যে শিরিক মিশ্রিত আছে, তার ব্যবহার বা প্রয়োগ নিঃসন্দেহে নাজায়েয। তদ্রুপ সুরইয়ানী ও ইব্রানী ভাষার দোয়াসমূহ যার অর্থ বোধগম্য নয়, তার আমলও না করা উচিত। কোনো এক মাশায়েখ থেকে এরকম একটি ঘটনার কথা উল্লেখ আছে, এক ব্যক্তি একটি দোয়া পড়ছিলো। সেখানে আরেকজন উপস্থিত ছিলো। সে বললো, এ লোকটির কী হলো যে, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল (ﷺ) কে গালি দিয়ে যাচ্ছে। তার দোয়ার অর্থ এরকমই ছিলো। না জানার কারণে সে এ ধরনের কথা আওড়াচ্ছিলো। আল্লাহ্তায়ালা আমাদেরকে এজাতীয় মূর্খতা থেকে রক্ষা করুন।
ইবনে মাজা ও আবু দাউদের হাদীছে এসেছে এবং হাকিম হজরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর বর্ণনার মাধ্যমে তা বিশুদ্ধ বলে প্রত্যয়নও করেছেন যে, হাদীছটি তাতে বর্ণিত হয়েছে।
নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, রূকিয়া তামীমা এবং তাউলা এসতেমাল করা শিরক। রূকিয়া বলা হয় জাহেল যুগের মন্ত্রকে। তামীমা গলার মধ্যে শাদা কালো রঙের দানা ঝুলানোকে বলা হয়। আপদ বালা দূর করার উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করা হয়। তাউনা যাদুটোনা ও টোটকা চিকিৎসাকে বলা হয়, যা সাধারণত নারী পুরুষ একে অপরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য করে থাকে। এ হচ্ছে এক প্রকারের যাদু। দোয়া হেযব বা রূকিয়া কাগজের টুকরাতে লেখা হয়। তাকেই তাবিয বলা হয়, যা গলায় বা বাহুতে ধারণ করা হয়। কোনো কোনো আলেম এটাও নিষেধ করেছেন। তবে যাঁরা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এবং হজরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে দু’খানা হাদীছ জেনেছেন, তাঁরা একে জায়েয মনে করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (ﷺ) ভয়ভীতি, পেরেশানী এবং দুঃস্বপ্ন দূর করার জন্য এই দোয়া শিক্ষা দিতেন।
اَﻋُﻮْذُ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎتِ اﷲِ اﻟﺘﱠﺎﻣﱠﺖِ ﻣِﻦْ ﻏَﻀَﺒِﮫ وَﻋِﻘَﺎﺑِﮫ وَﺷَﺮﱢ ﻋِﺒَﺎدِه ﻣِﻦْ
ھَﻤَﺬَاتِ اﻟﺸﱠﯿَﺎﻃِﯿْﻦِ وَاَنْ ﯾﱡﺤْﻀَﺮُوْنَ -
হজরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)থেকে বর্ণিত হয়েছে, জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদেরকে রসুলেপাক (ﷺ) উক্ত দোয়া শিখিয়ে দিতেন। আর যাদের জ্ঞান বুদ্ধি হয়নি, এমন বাচ্চাদের বেলায় তিনি কাগজের টুকরায় উক্ত দোয়া লিখিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। তাবীয শব্দ হাদীছ শরীফে এসেছে যেমন তা’বিজুত্তিফলি বি কালিমাতিল্লাহি উম্মাতি। আবার হাদীছ শরীফে তাবিযাতুন্নবী- এরকম শব্দও এসেছে। তাবীয শব্দের অর্থ ভয়ভীতি ও অমঙ্গল থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য চাওয়া।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর স্ত্রী হজরত যয়নব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ আমার গলায় ঝুলন্ত একটি সুতা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটি কী? আমি বললাম, এটি একটি গুণ্ডি বা পড়া সুতা। কিছু পাঠ করে এর উপর দম করে দেয়া হয়েছে। তখন তিনি এটি আমার কাছ থেকে নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিয়ে বললেন, আমার পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। এখানে এসবের প্রয়োজন নেই। কেনোনা আমি রসুল করীম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তন্ত্র, মন্ত্র, গুণ্ডি, টোনা- এসবকিছুই শিরক।
হজরত যয়নব (رضي الله عنه) বললেন, আপনি এ রকম বলছেন কেনো? আমার চোখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়েছিলো। ব্যথার চোটে কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছিলো। পুরো চোখ পানি ও ময়লা দ্বারা ভরে যাচ্ছিলো। তখন আমি অনন্যোপায় হয়ে অমুক ইহুদীর কাছে গেলাম। তিনি কিছু পাঠ করে আমার চোখে ফুঁক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের ব্যথা দূর হয়ে গেলো। আমি শান্তি লাভ করলাম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বললেন, তোমার চোখের ব্যথা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। সে তোমার চোখের উপর চোখ মেরেছিলো। ইহুদী মন্ত্র পাঠ করায় সে এ থেকে বিরত হয়েছে। এ কাজ না করে বরং তোমার উচিত ছিলো ওই দোয়া পড়া, যা রসুলেপাক (ﷺ) শিখিয়েছেন।
اَذْھِﺐِ اﻟْﺒَﺄْسَ رَبﱡ اﻟﻨﱠﺎسِ وَاﺷْﻒِ اَﻧْﺖَ اﻟﺸﱠﺎﻓِﻲْ ﻟَﺎ ﺷِﻔَﺎءَ اِﻟﱠﺎ
ﺷِﻔَﺎءُكَ ﺷِﻔَﺎءً ﻟﱠﺎ ﯾُﻐَﺎدِرُﺳُﻘُﻤًﺎ –
বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ। গুণ্ডি বা পড়া সুতা গলায় ঝুলানোকে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) শিরিকতুল্য মনে করেছেন। তার কারণ এই যে, জাহেলী যুগে এ জাতীয় বিশ্বাস রাখা হতো যে, এগুলোই তাদের মধ্যে কাজ করে থাকে। আল্লাহর উপর কোনোরূপ ভরসা রাখা হতো না এবং আল্লাহ্র নাম নেয়া হতো না। সুতরাং যা আল্লাহর কালাম বা আল্লাহর নামের মাধ্যমে হবে, তা ব্যবহার করার মধ্যে শিরিক নেই। আর তা শিরিক হয় কেমন করে? যেহেতু বহু সহীহ্ হাদীছে তার প্রমাণ আছে। আল্লাহ্তায়ালার কাছে পানা চাওয়া, কাকুতি মিনতি করা যে বৈধ, এ ব্যাপারে তো মতানৈক্য হতে পারে না। তা যে কোনো রূপেই বা যে কোনো স্থানেই হোক না কেনো? কেউ কেউ বলেন, যে সকল মন্ত্র জ্বীন সাধনাকারী ও ওঝারা পড়ে থাকে তা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। ওগুলোতে হক ও বাতিলমিশ্রিত বাক্য পাঠ করা হয়। আল্লাহ্র নাম ও সিফতের সাথে শয়তানের নামও উল্লেখ করা হয়। উভয়ের কাছ থেকেই নিরাপত্তা চাওয়া হয়। এর যৌক্তিকতা হিসেবে তারা বলে যে, জ্বীন স্বভাবগতভাবে মানুষের সাথে দুশমনি রাখে আর শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব রাখে। তাই শয়তানের নামে মন্ত্র পাঠ করা হলে জ্বীনেরা খুশি হয় এবং তার আছরকৃত জায়গা থেকে সরে যায়। বিভিন্ন প্রাণী যে দংশন করে, তার অবস্থাও তদ্রুপ। কেনোনা জানোয়ারের দংশনও জ্বীনের আছর থেকেই হয়ে থাকে।
জ্বীনেরা সাপ বিচ্ছুর আকৃতি ধারণ করে। এ অবস্থায় শয়তানের নামে মন্ত্র পাঠ করা হলে সকল জানোয়ারের বিষ তাদের গায়ে মিশ্রিত হয়ে যায়। এভাবে মন্ত্র পাঠের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির উপকার সাধিত হয়। এ সকল কথা যাদু মন্ত্র করা ব্যক্তি বা ওঝারা তাদের আমলের সমর্থনে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে উলামা কেরামের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, যে মন্ত্র কিতাবুল্লাহ্ বা আল্লাহ তায়ালার নাম ও সিফত বহির্ভূত, তার আমল করা মাকরুহ। মন্ত্র সম্পর্কে হাদীছ ও ফেকাহ শাস্ত্রের বিখ্যাত আলেম আলা মা কুরতুবী (رحمة الله) বলেছেন, মন্ত্র তিন প্রকার।
১. ওই মন্ত্র, যা জাহেলী যুগে পাঠ করা হতো এবং যার অর্থ বোধগম্য নয়। এ জাতীয় মন্ত্র থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। এর দ্বারা শিরিক বা শিরিকের কাছাকাছি গোনাহ্ হয়ে যেতে পারে।
২. যে দোয়া কোরআন মজীদ থেকে নেয়া হয়েছে অথবা আল্লাহ্তায়ালার নাম ও সিফত দ্বারা তৈরী হয়েছে। সাধারণত এগুলোকে আমরা মন্ত্র বলি না। এ জাতীয় আমল বা দোয়া এবং দোয়া মাছুরা যা হাদীছ থেকে প্রাপ্ত, তার ব্যবহার মোস্তাহাব।
৩. ওই আমল, যা আল্লাহ্র নাম দ্বারা নয়, বরং ফেরেশতা বা আল্লাহর কোনো নেককার বান্দার নাম অথবা আল্লাহর কোনো সম্মানিত সৃষ্টি যেমন আরশ কুরসী ইত্যাদির নাম দ্বারা তৈরী হয়েছে। এ জাতীয় আমল বর্জন করা উত্তম। তার কারণ হচ্ছে হয়তোবা এর দ্বারা গায়রুলা হর কাছে পানা চাওয়া হয়ে যেতে পারে। গায়রুল্লাহর নামে কসম করাও যেমন জায়েয নেই, তেমনি গায়রুল্লাহর কাছে পানা চাওয়াও জায়েয নেই।
বান্দা মিসকীন শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী বলেন, আল্লাহ্তায়ালার প্রিয় ব্যক্তিগণের এবং আল্লাহ্র নামসমূহের দ্বারা ওসিলা করা জায়েয। কেনোনা আল্লাহ তায়ালার প্রিয়জন যাঁরা তাঁরা তো আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের দরবারে নৈকট্য এবং মর্যাদা লাভ করেছেন। আমরা যদি এঁদেরকে তাবীযও করি তবে তাতো এ কারণে যে, তাঁরা আলাহর বন্দেগী এবং রসুলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণে সীমাহীন সাধনা করেছেন। সুতরাং তাকে গায়রুলা হর নামে কসম করার সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না। এঁদেরকে ওসীলা করা হয়, এঁদের মাধ্যমে শেফা চাওয়া হয়। আলাহ্তায়ালার সঙ্গে তো এঁদেরকে শরীক করা হয় না। আল্লাহুম্মা সল্লিআলা মোহাম্মদ ওয়া আলা আলি মোহাম্মদ ওয়া বারিক ওয়া সালিম ।
হজরত রবী (رحمة الله) থেকে কথিত আছে, তিনি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে দোয়ার আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাতে কোনো দোষ নেই, যদি তা কিতাবুল্লাহ থেকে হয়। অথবা আল্লাহ্তায়ালার নামসম্বলিত কোনো কিছু হয়, যার অর্থ বোধগম্য। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কোনো মুসলমান আহলে কিতাবের কাছ থেকে কোনো দোয়া বা মন্ত্রের আমল গ্রহণ করলে জায়েয হবে কি? তিনি বলেছিলেন, হাঁ, জায়েয হবে, যদি তার বাক্যসমূহ চেনা জানা হয় এবং কিতাবুল্লাহ বা আলাহর নাম সম্পর্কিত হয়।
এখানে জেনে রাখা দরকার, কিতাবুল্লাহ বলতে কোরআন মজীদকেই বুঝতে হবে। অন্যান্য আসমানী কিতাবও আল্লাহ্র কিতাব। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং রূপান্তর সাধিত হয়েছে। এখন ওই সকল কিতাব থেকে
দোয়ার আমল গ্রহণ করা যাবে না। তবে হাঁ, যদি তা কোরআনের মুত্তায়াফেক এবং হকের অনুকূলে হয়, তবে দোষ নেই। ইমাম মালেক তাঁর হাদীছগ্রন্থ মুওয়াত্তায় সাইয়্যেদুনা হজরত আবুবকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি একদা এক ইহুদী মহিলাকে হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর জন্য তাদের কিতাব থেকে দোয়ার আমল এনে দেয়ার জন্য বলেছিলেন। ইমাম নববী বলেন, মুসলমানের জন্য ইহুদী বা নাসারা থেকে দোয়া আমল নেয়ার ব্যাপারে ইমাম মালেক (رحمة الله) এর বর্ণনাটির প্রসঙ্গে উলামা কেরামের মতানৈক্য আছে। ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর বৈধতার পক্ষে মত পোষণ করেছেন। ইবনে ওহাব ইমাম মালেক (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেছেন, লৌহজাতীয় কোনো জিনিস, লবণ এবং সুতাতে গুণ্ডি দিয়ে যে তাবিজের আমল দেয়া হয়, তা মাকরুহ। আর হজরত সুলায়মান (عليه السلام) এর আংটি সম্পর্কিত তাবিজের আমল বেদাত।
অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যে আছে। তারা বাহ্যত দেখতে পায়, তন্ত্রমন্ত্র যাদু ইত্যাদি জাহেলী কর্মকাণ্ডের প্রভাব আছে। তারা এদেখে বিস্মিত হয়। মনে করে, শরীয়তসম্মত রাকিয়া বা শেফার আমলের মধ্যে এরকম প্রতিক্রিয়া নেই। এরকম পরিস্থিতিতে সর্বসাধারণের মধ্যে এক ধরনের অস্বীকৃতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন হয়েছিলো হজরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর স্ত্রী হজরত জয়নব (رضي الله عنه) এর বেলায়। তিনি বলেছিলেন, আমার চোখ যন্ত্রণায় ঠিকরে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো, তখন আমি দিশেহারা হয়ে ইহুদী ওঝার কাছে যেয়ে মন্ত্র পড়িয়ে নিয়েছি এবং তাতে ফলও লাভ করেছি।
সাধারণের এতটুকুও জানা নেই যে, ওই মন্ত্রতন্ত্র নিষেধ করা হয়েছে হাদীছের বিভিন্ন বক্তব্যের দ্বারা। আর সেগুলোকে বাতিল ও অসার বলার কারণ হচ্ছে, মানুষকে শিরিক ও কুফুরীর গর্ত থেকে বের করে নিয়ে আসা।
সুতরাং যাঁর কদম সত্য ও ইমানের উপর সুদৃঢ়, সুপ্রতিষ্ঠিত- তিনি কখনও ওই জাতীয় আমলের শরণাপন্ন হতে পারেন না, পার্থিব জীবনে তিনি যতই বিপন্ন হোন না কেনো। তিনি সর্বদাই এই একীনের উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকতে সক্ষম যে, চিরস্থায়ী জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করা সম্ভব কেবল রসুলেপাক (ﷺ) এর হুকুম পালনের মাধ্যমেই। আর যাদের দৃষ্টি দুনিয়াবী জীবনেই সীমাবদ্ধ, তারা দৃঢ়তার মাকাম থেকে সরে যায় এবং কুফুরী ও গোনাহর গর্তে পতিত হয়। নাউযুবিলা হি মিন যালিক।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |