কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য না করার মাসয়ালা


আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'হে নবী! আপনি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন এবং কাফের ও মুনাফেকদের আনুগত্য করবেন না।— আয়াতে কারীমা থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা যায়, যেন রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে তাকওয়াহীনতা রয়েছে। যেহেতু اتق الله ‘ইত্তাকিল্লাহ' বলে আদেশ করা হয়েছে। আবার কাফের ও মুনাফেকদের আনুগত্য না করার কথা বলা হয়েছে। তা থেকে এরকম ধারণার সূত্রপাত হয় যে, হয়ে রাসূল করীম (ﷺ) এর মধ্যে কাফের ও মুনাফেকদের আনুগত্য করার দুর্বলতা রয়েছে। না হয় لا تطع الكافرين والمنافقين 'লাতুতিইল কাফিরীনা ওয়াল মুনাফিকীন' বলা হতো না। উক্ত দুটি আদেশ ও নিষেধ সূচক ক্রিয়া দূষ্টে বাহ্যিকভাবে মনে হয়, ঐ কাজ দুটি রসূলপাক (ﷺ) এর মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। আয়াতখানার তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য দুটি উদাহরণ দেয়া হলাে যেমন উপবেশনকারীকে বলা হয়, বসে থাকো, আমি তোমাদের কাছে এখনই আসছি। অথবা কোন নীরবতা অবলম্বন কারী বলা হয়, 'চুপ থাকো! আশা পুরা করে দেয়া হবে। এখানে বসে থাকো আর চুপ থাকো—দুটি দেশের মধ্যে দৃঢ়তা ও তাকলীদ বোঝানো হয়েছে। সুতরাং বুঝা গেলাে ব্যাপারটা এরকম নয় যে, রাসূল কারীম (ﷺ) এর মধ্যে তাকওয়া হীনতা ও কাফের মুনাফিকদের প্রতি আনুগত্য রয়েছে।


উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলেন, হুজুর পাক (ﷺ) এর মর্যাদা সর্বদা বর্ধিষ্ণু অবস্থায় থাকে। এমনকি তার পূর্বের অবস্থা এবং বর্তমান অবস্থার মাজাজা ও তরকে আউলা এবং আফযলিওয়াতের হুকুম রাখে। কাজেই তার এলেম ও মর্তবা প্রতিনিয়তঃ উন্নততর ও বর্ধিষ্ণু অবস্থায় থাকে। তার তাকওয়া নিত্য সজীবতার ভঙ্গিতে আত্মপ্রকাশ করতে।


কেউ কেউ আবার এরকম বলেছেন, আয়াতের বাহ্যিক ভাবে হুজুর পাক (ﷺ) কে সম্বোধন করা হলেও প্রকৃতপ্রস্তাবে সম্বোধন করা হয়েছে তার উম্মতকে। সে কারণেই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে আর আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল সম্পর্কে খবর রাখেন আয়াতে তোমরা যা আমল করে' বলা হয়েছে। 'তুমি যা আমল করছো' বলা হয়নি। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই অন্য আয়াতে বলা হয়েছে 'আপনি মিথ্যা প্রতিপাদনকারী এর আনুগত্য করবে না। (অর্থাৎ উম্মতেরা যেন না করে)। প্রকৃতপক্ষে এই আয়াতে কারীমার মাধ্যমে হুজুর পাক (ﷺ) এর পবিত্র হৃদয়কে দৃঢ়তা প্রদান করা হয়েছে ও তাই সমস্ত লােকদের প্রতি আল্লাহতায়ালার যে অসন্তুষ্টি রয়েছে তা প্রকাশ করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে তা বুঝানাে হয়েছে। এটা বিলকুল প্রকাশিত ও সুস্পষ্ট কথা। বিক্মিত হতে হয় ঐ সমস্ত নির্বোধদের প্রতি লক্ষ্য করে, যারা এ জাতীয় আয়াতের শাব্দিক অর্থের উপর প্রতিষ্ঠিত করে নবী করিম (ﷺ) এর সম্মানের পর্বত সৃষ্টি করে এবং তার থেকে গুনাহ হওয়া সম্পর্কে অপবিত্র ধারণা সৃষ্টি করে থাকে। অথচ তিনি এসমস্ত থেকে পবিত্র।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 


© | সেনানী এপ্স |

Top