হুজুর আকরাম (ﷺ) এর শানে আল্লাহতায়ালার কসম করা প্রসঙ্গে
হুজুর আকরম (ﷺ) এর মহিমান্বিত মর্যাদার মধ্যে এটি অন্যতম যে, আল্লাহতায়ালা তার বন্ধুর মর্যাদা, শান ও মহত্বের স্মরণে কসম করেছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আপনার জীবনের কসম, নিশ্চয়ই এরা আপন আপন নেশায় মত্ত। এই আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত তাফসীরকারকদের মত এই যে, আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত দ্বারা হুজুর আকরম (ﷺ) এর জীবদ্দশার শপথ করেছেন। এই কসমের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা তার বন্ধুর প্রতি সীমাহীন সম্মান ও চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুগ্রহ ও বুজুগীঁ প্রকাশ করেছেন। ব্যাপারটা এরকম, যে কোন প্রেমিক তার প্রেমাস্পদের কসম দিয়ে বলে থাকে তোমার মাথার কসম, তোমার জিন্দেগী কসম ইত্যাদি।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ তায়ালা হুজুর আকরম (ﷺ) এর চেয়ে অধিক মর্যাদাবান কাউকে সৃষ্টি করেননি। তিনি হলেন তার নিকট সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। কেননা, আল্লাহ তায়ালা তার বন্ধুর পবিত্র হায়াত কসম দিয়েছে। অন্য কারো নামে আল্লাহ পাক কসম প্রদান করেননি।
আবুল হাওয়ায়, তিনি বুজুর্গ তম তাবেয়ীগণের অন্যতম ছিলেন। তিনি বলেন, হকতায়ালা সাইয়্যেদে আলম মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সত্তা ব্যতীত অন্য কারও শানে কসম করেছেন এমনটি ঘটেনি। কেননা, তার সত্তা আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত। আল্লামা কুরতুবী (رحمة الله) বলেন, হুজুর আকরম (ﷺ) এর পবিত্র হায়াতের শানে আল্লাহ তায়ালার কসম প্রদান করাটা সহীহ বর্ণনায় এসেছে। কাজে তার হায়াতের শানে আমাদের কসম করা কি জায়েয হতে পারে?
ইমাম আহমাদ (رحمة الله) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি হুজুর আকরাম (ﷺ) এর হায়াত মুবারকের কসম করে, তাহলে তা পুরা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর এ ধরনের কসম ভঙ্গ করলে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হবে। কেননা, হুজুর পাক (ﷺ) এর সত্তা ইমানের শাহাদতের দু'টি রুকনের অন্যতম। (শাহাদতের দু’টি রুকন বা অংশ আছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আর অপরটি হচ্ছে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। আবার কেউ কেউ এরকম বলেন, হুজুর আকরাম (ﷺ) এর মহিমান্বিত সত্তার কসম দেয়ার প্রচলন অতীতকাল থেকে চালু হয়ে এখনো চলমান। মদীনাবাসীরা সর্বদাই হুজুর আকরম (ﷺ) এর কসম করতাে। তাদের কসমের ধরন ছিলাে এরকম— ঐ মহান সত্তার কসম যিনি এহেন রওজায়ে আনওয়ারে শায়িত আছেন। ঐ মহান সত্তার কসম যিনি এই জ্যোর্তিময় সমাধিতে আড়াল গ্রহণ করেছেন। এই সমস্ত বাক্য দ্বারা তারা হুজুর আকরাম (ﷺ) কে বুঝাতেন।
আল্লাহ তায়ালা এক জায়গায় তার রবুবিয়াত হুজুর আকরাম (ﷺ) এর দিকে সম্পর্কিত করে কসম করেছেন। যেমন বলেছেন, আপনার রবের কসম।
‘বিজ্ঞানময় কুরআনের কসম' এ আয়াতের তফসীর সম্পর্কে মুফাসসির গণের মধ্যে মতানৈক্য আছে। অধিকাংশের মত 'ইয়াসিন' হুজুর আকরম (ﷺ) এর মহিমান্বিত নাম সমূহের মধ্যে অন্যতম নাম। যেমন ‘তাহা’ ও একটি নাম।
সাইয়্যেদুনা ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে, 'ইয়াসিন' শব্দ দ্বারা হুজুর আকরম (ﷺ) কে সম্বােধন করা হয়েছে। অর্থাৎ হে সরদার। কারও কারও মতে 'বনী তাই' এর লুগাত অনুসারে "ইয়াসীন এর অর্থ হচ্ছে (হে ব্যক্তি বা হে মানুষ।) যাই হােক এদ্বারা হুজুর আকরম (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। হয়তাে কসম হিসাবে আর না হয় না বা সম্বোধন হিসাবে। এটা তার উচ্চ মর্যাদা ও বিরাট সম্মানের পরিচায়ক। ইয়াসীন’ এর পরে ওয়ালকুরআনিল হাকীম আয়াতে কুরআনে কারিমের কসম করা হয়েছে। তাছাড়া হুজুর আকরাম (ﷺ) এর রেসালত উপর সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে, তাকে সুদৃঢ় করা হয়েছে এবং তার হেদায়েতের উপর পূর্ণ স্বীকৃতি ও সাক্ষ্য পেশ করা হয়েছে। এই আয়াত দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, তিনি নিঃসন্দেহে সরল সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত আছেন। পথে কোনাে বক্রতা এবং আবিলতা নেই। এ পথ সত্য। স্খলন মুক্ত।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]
© | সেনানী এপ্স |