দাম্পত্য জীবন


এখন আলােচনায় আসা যাক হুজুর আকরম (ﷺ) তাঁর পূতপবিত্র স্ত্রীগণের সঙ্গে কি রকম আচরণ করতেন, এই প্রসংগে। যদিও এ বিষয়টির আলােচনা বাহ্যতঃ পেট পিঠ ও বক্ষ মুবারকের আলােচনার সাথে সংশ্লিষ্ট বলে মনে হয়। আমার নিকট কিন্তু এ স্থানটিই এই বিষয়ে আলােচনার প্রকৃত স্থান হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে। 

বিবাহে বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম উপকার হলাে প্রজনন সংরক্ষণ বা বংশধারা রক্ষা করা। এছাড়াও আনন্দ উপভােগ করা, আল্লাহর দেয়া নেয়ামত থেকে উপকৃত হওয়া এবং স্বাস্থ্য রক্ষা করা ইত্যাদি অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রজননের মূল পদার্থ বীর্য দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত দেহের ভিতরে সংরক্ষিত করে রাখা এবং সহবাস না করার কারণে কঠিন ব্যাধি সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। শারীরিক শক্তির মধ্যে স্থবিরতা আসে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। স্ত্রীগণকে মহব্বত করা এবং (শর্ত ও ক্ষমতা অনুসারে) একাধিক বিবাহ করাও এক প্রকারের পূর্ণতা। এ গুণটি এমন এক মাকামের ব্যাপার যার কামালিয়াতের হাকীকত সম্পর্কে অবহিত হতে অক্ষম লোকের জ্ঞান আচ্ছাদিত হয়ে আছে। এহেন অজ্ঞ মূর্খরা স্ত্রীগণের সঙ্গে সহবাস ও মেলামেশা করাটাকে অপরিণামদর্শীতা, ক্ষতি, দোষ ও নিছক আমােদ স্ফুর্তি অন্তর্ভুক্ত কাজ বলে মনে করে থাকে। জ্ঞানের অভাব, বুদ্ধির স্বল্পতা এবং বৈরাগ্যের দিকে কারও রুচি আকর্ষিত থাকলে এরকম মন্তব্য করা সম্ভব। এই সৃষ্টি জগতের হাকীকত, এর যাবতীয় বস্তুর একিভূতি, সৃষ্টিকরা, সৃষ্টি হওয়া, প্রতিক্রিয়া করা, প্রতিক্রিয়া হওয়া, তথা সৃষ্টজগতের বহিঃপ্রকাশ হওয়া - এসব কিছুরই চূড়ান্ত কারণ যতটুকু তার মধ্যে বিদ্যমান আছে অন্য কারও মধ্যে তা নেই। হুজুর আকরম (ﷺ) এর পরিচ্ছন্ন কাজ ও আমল এজগতের কার্যাবলীর বিশুদ্ধতার জন্য প্রত্যায়ন এবং প্রমাণ। এ কিতাবের শেষাংশে আযওয়াজে মুতাহহারা শিরোনামে এ প্রসংগের অবশিষ্ট আলােচনা করা হবে। ইন-শা আল্লাহ্!


সাইয়্যেদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আছে, হুজুর আনওয়ার (ﷺ) এক রাত্রিতে তাঁর এগারজন স্ত্রীর নিকট গমন করতে পারতেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি হজরত আনাস (رضي الله عنه) কে সবিষ্ময়ে প্রশ্ন করলাম, হুজুর কি এতই শক্তি রাখেন? তখন হযরত আনাস (رضي الله عنه) বললেন, আমরা পরস্পরে বলাবলি করতাম, হুজুর (ﷺ) কে আল্লাহতায়ালা ত্রিশ জন পুরুষের শক্তি প্রদান করেছেন। হাদীস খানা ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। অন্য এক বর্ণনায় হুজুর (ﷺ) এর জান্নাতী চল্লিশজন পুরুষের শক্তি ছিলাে বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট বর্ণনা এরকম এসেছে যে, জান্নাতী একজন পুরুষ দুনিয়ার একশ’ পুরুষের সমান শক্তির অধিকারী হবে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন একদা জিব্রাইল (عليه السلام) খাবার ভর্তি একটি ডেক আমার কাছে নিয়ে এলেন। আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম। তাতে আমার ভিতরে চল্লিশজন পুরুষের সমান পুরুষত্ব শক্তি এসে গেলে।


কাজী আয়াজ (رحمة الله) শেফা' নামক গ্রন্থে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূলে খোদা (ﷺ) এর লজ্জাস্থান কখনো দর্শন দেখান না। আরেক বিবরণ আছে, হুজুর (ﷺ) কখনও হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) এর লজ্জাস্থান দেখেননি এবং হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) ও হুজুর (ﷺ) এর লজ্জাস্থান দেখেননি। হুজুর আকরাম (ﷺ) হযরত আলী মর্তুজা (رضي الله عنه) কে ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন যে, (আমার ওফাতের পর) তুমি ব্যতীত অন্য কেউ যেন আমাকে গোসল না দেয় এবং কারও নযর যেনাে আমার লজ্জাস্থানের দিকে না পড়ে। কেননা আমার লজ্জাস্থানের দিকে যদি কারো নজর পড়ে তবে তার দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি ছিল তার শারীরিক পূর্ণতার প্রমাণ। আর তার রূহানী শক্তিতে এমন ছিল যে নভো মন্ডলের গতিকে তিনি থামিয়ে দিতে পারেন। বরং নভোমন্ডল তার নিজস্ব গতিতে অনুকূলে কখনও কখনও চলতে পারেনা। অস্তমিত সূর্য পুনরায় উদিত করে দেয়ার ঘটনাকে তার জাজ্জবল্য প্রমাণ,যার বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। এটা সম্মান অর্জন এবং শিক্ষা গ্রহণ করার মাকাম। কেননা হুজুর পাক (ﷺ) এর জীবন- যাপন ও পানাহারের অবস্থা এ রকম ছিলো যে, কখনও তিনি উদরপূর্তি করে পরিতৃপ্তির সাথে খাদ্য গ্রহণ করেন নি। শুধুমাত্র যবের রুটিই যথেষ্ট মনে করতেন। পানাহারের অবস্থা এরকম হওয়া সত্বেও হুজুর আকরম (ﷺ) এর পবিত্র দৈহিক শক্তি ও সামর্থ্য উপরোক্ত অবস্থাবলী মোজেজার ভিতরে গণ্য হয়ে থাকে।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী] 

© | সেনানী এপ্স |

Top