বিনয়, শিষ্টাচার ও সদাচার


এই অনুচ্ছেদে হুজুর আকরাম (ﷺ) তাঁর পরিবার পরিজন, খাদেম ও সাহাবীগণের প্রতি কি রকম বিনয়ী ছিলেন, তাদের প্রতি কিরূপ শিষ্টাচার ও সদাচরণ করতেন এ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হবে। সারাহ' নামক গ্রন্থে تواضع ‘তাওয়াযু' শব্দের অর্থ করা হয়েছে এনকেসারী বা বিনয় প্রকাশ করা, কাঁধ অবনত করা। অভিধান গ্রন্থে তাওয়াযু' এর অর্থ লাঞ্ছিত অবস্থার কাজ।


আরবের লোকেরা এ শব্দটি ব্যবহার করে যখন তারা উটের স্কন্ধ নীচু করে তার উপর তাদের পা স্থাপন করে। تواضع 'তাওয়াযু' শব্দটি وضع ‘ওয়াযউন' মূল ধাতু থেকে নির্গত । ‘ওয়াযউন' শব্দের অর্থ নীচে রাখা। মুতাওয়াযে (বিনয়ী) ব্যক্তি যেহেতু নিজেকে তার যথাযথ মাকাম ও মর্যাদার নীচে মনে করে কাজেই এক্ষেত্রে 'ওয়াযউন' শব্দ প্রযােজ্য হয়। আর বিপরীত শব্দ হচ্ছে ‘তাকাব্বুর'। মুতাকাববির (অহংকারী) ব্যক্তি নিজেকে তার যথাযথ মাকাম ও মর্যাদার ঊর্ধে মনে করে। তাই এক্ষেত্রে তাকাববুর শব্দ ব্যবহৃত হয়। আর কেউ যদি নিজকে স্বীয় মাকাম ও মর্যাদার নীচে মনে করে বলে জাহির করে, তবে সেক্ষেত্রে -تصنع  ‘তাসান্নু’ (ভনিতা) শব্দ ব্যবহৃত হয়। তাকাব্বর ও তাসা এ দুটির মধ্যবর্তী এক অবস্থার নাম হচ্ছে 'তাওয়াযু' কিন্তু মানুষের যেহেতু তাকাব্বুরী করার কোনোরূপ অবকাশই নেই, তাই ‘তাকে কখনো ‘তাওয়াযু' এর স্তরে মনে করে নেয়া হয়।


হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (رحمة الله) কে কেউ জিজ্ঞেস করেছিলাম "তাওয়াযু' কাকে বলে?" তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন 'তাওয়ায়ু হচ্ছে— স্কন্ধ দ্বয়কে নত করে এবং পার্শ্ব দেশের প্রতি ঝুঁকে থাকা। এমর্মে তিনি আরও বলেছিলেন, 'তাওয়াযু' হচ্ছে তুমি হকের সামনে অবনত হয়ে যাবে। তার প্রতি অনুগত হয়ে যাবে। যে হক বলবে তাকে তুমি কবুল করবে এবং তার পক্ষ থেকে যা বলা হবে তা মেনে নিবে। তিনি আরও বলেন, যে নিজেকে মূল্যবান মনে করবে তার 'তাওয়াযু' (বিনয়) এর কোনাে আশা নেই। আরেফগণ বলে থাকেন, কোনাে বান্দা ঐ সময় পর্যন্ত توذ ‘তাওয়াযু' এর হাকীকতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ তার অন্তরে নূরে মুশাহাদার ঔজ্জ্বল্য বিকিরণ না হবে। কেননা উক্ত মুশাহাদা নফসকে বিগলিত এবং নম্র করে। নফসের এই বিগলন তাকাব্বুর বা অহংকার নাপাকী থেকে নফসকে পবিত্র করে দেয়। কাজেই নফস তখন শান্ত হয়ে যায়। নফস তখন জামায়ে হকের দর্পন তুল্য হয়ে যায়। কবি বা অহংকারের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ময়লা ও ধূলাবালি দূরীভূত হয়ে যায়। توذ 'তাওয়াযু' বা বিনয়ের পূর্ণতা এবং বুলন্দ মরতবা ছিলে সাইয়্যেদুল আম্বিয়া জনাব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মধ্যে। তিনি সার্বিক পূর্ণতার উচ্চতম শিখরে উন্নীত হওয়া সত্ত্বেও তাওয়াযু বা বিনয়কে নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়েছিলেন।


আল্লাহতায়ালা হুজুর পাক (ﷺ) কে এখতিয়ার প্রদান করেছিলেন, তিনি নবী বাদশাহ হবেন নাকি নবী বান্দা হবেন। তিনি নবী বান্দা হওয়াটাকে পছন্দ করেছিলেন। যেহেতু হুজুর পাক (ﷺ)       -من تواضع لله رفعه الله 'মানতাওয়াযাআ লিল্লাহি রা ফাআ হুল্লাহ' 'যে আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয়ী হয়, আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদা উন্নত করে দেন' এই বাণীর মর্ম অনুসারে 'তাওয়াযু' বা বিনয়কে গ্রহণ করেছেন। তা আল্লাহ তায়ালা কাকে সর্বোত্তম মর্যাদা দান করেছেন, সমস্ত মানব জাতির সরদার বানিয়েছেন। হুজুর আকরাম (ﷺ) সাহাবীগণকে বলতেন, তােমরা আমার প্রশংসা ও গুণকীর্তনে অতিরঞ্জিত করাে না, সীমা লংঘন করা না। যেমন নাসারা সম্প্রদায় হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (عليه السلام) কে আল্লাহর পুত্র হিসাবে আখ্যায়িত করতাে। পূর্ণ ফযল ও কামাল অর্জন করা সত্ত্বেও আমি আল্লাহর বান্দা-ই। তাই তােমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসূল বলে।


হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লাঠিতে ভর করে আমাদের নিকট তশরিফ আনলেন। আমরা তার সম্মানে দাড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আজমী লােকেরা কাউকে সম্মান প্রদর্শনার্থে যেমন দণ্ডায়মান হয়, তােমরা ওরকমভাবে দণ্ডায়মান হায়েনা। তিনি আরও এরশাদ করলেন, আমি আল্লাহর বান্দা। আমি অন্যান্য বান্দাদের ন্যায় পানাহার করি। আমি ঐ এরকমভাবে বসি যে রকম অন্যান্য বন্ধুরা বসে থাকে। মহান পয়গম্বর মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর মুখনিঃসৃত এমন বাণী তার বিনয় ও নম্রতার মহান স্বভাবের বহিঃপ্রকাশ।


মহানবী (ﷺ) এর তাওয়াযু' বা বিনয়ের প্রকৃতি এমন ছিল যে, তিনি খাদেমগণকেও ধমকের সুরে কিছু বললেন না। একটু কথাও বলতেন না। এমনকি এমনি বলেন না যে, কেন এমন করবে? না এমন করােনি কেননা? পরিবার পরিজনের প্রতি তিনি যেরূপ মেহেরবানী করতেন তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে নেই। হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া কাউকে কখনও হাত দ্বারা প্রহার করেননি। দ্বীনের হক ব্যতীত ব্যক্তিগত কারণে কারও থেকে কখনও কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) কে লােকেরা জিজ্ঞেস করতাে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ঘরে তশরীফ আনতেন, তখন তার অবস্থানের ধরন কেমন হতাে? তিনি বললেন, হুজুর পাক (ﷺ) সর্বাধিক মিষ্টভাষী, হাসি খুশি ও মৃদু হাসির লােক ছিলেন। তার বিনয়ের ধরন এমন ছিলে যে, সাহাবীগণের সঙ্গে উপবেশন কালে তাদের সামনে তিনি কদম মুবারক লম্বা করে রয়েছেন এমন কখনও কেউ দেখেননি। সাহাবায়ে কেরাম অথবা পরিবার পরিজনের ভিতরে কেউ যদি কখনও তাঁকে সম্বােধন করতেন, তখন তিনি ‘লাব্বায়কা' বলে জবাব দিতেন।


হুজুর পাক (ﷺ) এর আচার ব্যবহার এমন সুন্দর ছিলাে যে, তিনি সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতেন। তাদের প্রতি কখনও অসন্তুষ্টির ভাব প্রকাশ করতেন না। তিনি সকল গােত্রের সরদারগণকে সম্মান করতেন এবং তাদেরকে গােত্রের বিচারক নিযুক্ত করতেন। সাহাবায়ে কেরাম কে কি অবস্থায় আছেন তার খোঁজ খবর নিতেন, এভাবে তাদের মন জয় করতেন। তিনি তাঁর সাথী সহচর সকলের প্রতি সমান নযর দিতেন, সমানভাবে গুরুত্ত্ব দিতেন। ফলে সকলেই এ রকম ধারণা করতেন যে, তিনিই বােধ হয় অন্যান্য সকলের তুলনায় হুজুর পাক (ﷺ) এর অধিক নৈকট্য লাভে ধন্য। মজলিসের অধিকার সকল কে সমানভাবে প্রদান করতেন। তার কাছে উপস্থিত অথবা খেদমতে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রস্থান না করা পর্যন্ত তিনি উঠতেন না। কোনাে লােক যখন তার কানের কাছে এসে গােপন কোনাে কথা বলতাে, তিনি তা শেষ পর্যন্ত শুনতেন। কেউ হাত মুবারক চেপে ধরলে, তিনি হাত নরােম করে ছেড়ে দিতেন। যতক্ষণ না সে স্বেচ্ছায় হাত ছাড়তাে, ততক্ষণ স্বীয় হস্ত মুবারককে তার হস্তবন্ধন থেকে সরিয়ে নিতেন না। কোনাে কারণে কখনাে হুজুর পাক (ﷺ) এর পেশানী মোবারকে ভাজ পড়ে (চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লেন) বা তার স্বভাবসিদ্ধ হর্ষ উৎফুল্ল ললাট মুবারকে বা খােশ আখলাকে ছেদ পড়তাে। এ ধরনের কোনো কারণ সৃষ্টি না হলে তিনি সাধারণত অবাধ মেলামেশা থেকে দূরে সরে থাকবে, নিজেকে পরহেজ করে চলতেন। তার প্রশস্ততা এবং প্রফুল্লচিত্ততার দ্বারা মানুষ পরিতৃপ্ত হয়ে যেতাে। তিনি সকলের জন্যই পিতৃতুল্য, এমনকি তার চেয়েও অতি স্নেহশীল ছিলেন। হক বা অধিকার প্রাপ্তির ব্যাপারে সকলেই তাঁর কাছে সমান ছিলে। তাঁর স্বভাবে সর্বদা প্রাণবন্ততা, হাসিখুশি ও মিষ্টি ভাষণ বিদ্যমান ছিল। তিনি কখনো কটুকথা বলতেন না, কর্কশভাষী ছিলেন না, উচ্চস্বরে কথা বলতেন না, ফাহেশা কথা বা কোনাে দোষের কথা কখনও যবান মুবারক দিয়ে উচ্চারণ করতেন না।


উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) বলেন যে, অনিন্দিত স্বভাবের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেয়ে অধিক কেউ ছিলাে না। হজরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি দশ বৎসর পর্যন্ত রসূল (ﷺ) এর খেদমতে ছিলাম, কিন্তু আমি তাকে কখনো উফ' বলতে শুনিনি বা তিনি কখনও আমাকে একথাটিও বলেননি যে, তুমি একাজ কেননা করেছে বা এমনটি করোনি কেন?


হযরত জাবীর ইবন আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি সর্বদাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে মৃদু হাসি অবস্থায় দেখেছি। সাহাবায়ে কেরামের সামনে কখনও তাকে পা মুবারক লম্বা করতে দেখিনি। কেউ তার কাছে এলে তিনি তাকে সম্মান প্রদর্শন করতেন এবং তার জন্য স্বীয় চাদর মুবারক বিছিয়ে দিতেন। যথেষ্ট খাতির করতেন। কাছে নিয়ে বসাতেন। কথা কাটাকাটি করেন না, যতক্ষণ কেউ সীমা লঙ্ঘন না করতে। বক্তা সীমা অতিক্রম করে ফেলবে বলে যখন আশংকা করতেন, তখন দাড়িয়ে যেতেন বা অন্য কোনাে প্রসঙ্গ টেনে পূর্ব আলোচনা সমাপ্ত করে দিলেন। আগন্তুক সাক্ষাৎপ্রার্থীর খাতিরে নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে এবং তার প্রয়োজনের কথা জিজ্ঞেস করলেন। যখন আগন্তুকের প্রয়োজন মিটিয়ে দিলেন, তখন আবার নামাজ মনোনিবেশ করতেন। দুস্থ রোগীর সেবা শুশ্রুষা আত্মনিয়োগ করতে কোনোরূপ দ্বিধাবোধ করেন না। দরিদ্র মিসকিনদের সাথে বসে খেতেন। কোনাে গােলাম ব্যক্তি তাকে দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত কবুল করতে বিন্দুমাত্র কুষ্ঠিত হতেন না। দাওয়াতী খানায় যবের রুটি আর গলিত চর্বির ঝােল এসব ব্যবস্থা থাকতাে। কিন্তু তিনি তাই আনন্দচিত্তে  গ্রহণ করতেন। সাহাবীগণের সঙ্গে সহজ ভাবে বসবে। মজলিসে একেবারে শেষ প্রান্তে কোন এক কোণে যদি খালি জায়গা পাবেন, সেখানেই বসে যেতেন। সফরের সময় কখনও কখনও গাধার উপর আরোহন করেন এবং কাউকে নিজের পাশে বসিয়ে সফর সঙ্গী বানাতেন। বনু কুরায়যা দিবসে তিনি যে গাধার উপর আরোহণ করেছিলেন তার লাগাম ছিলে বশির আর তার পালানগুলি ছিলাে সেঁজুর শাখার বাকলের। তিনি এমন উটের পিঠে আরোহণ করে হজ পালন করেছিলেন তার কাজাওয়াগুলি ছিলো অনেক পুরাতন। তার উপর বিছানা ছিল চার দিরহাম মূল্যের একখানা চাদর। আর এ হজ পালন করেছিলেন ঐ সময়ে যখন ইসলামী বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন দেশ ও শহর অধিকৃত হয়েছিলাে। যেদিন মক্কা বিজয়ের মহান গৌরব মুসলমানদের অর্জিত হয়েছিল, সেই দিন তিনি একশ' উট কুরবানী করে দিয়েছিলেন। আর ঐ সময় যখন তিনি মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে দিতে মক্কা মুয়াজ্জমা প্রবেশ করেছিলেন, তখন তার তাওয়াযু'ও বিনয়ের ধরন এমন ছিল যে, কাজাওয়ার সর্বাগ্রে কাষ্ঠ খন্ডের কাছে স্বীয় মস্তক মুবারক অবনমিত করে রেখেছে। অথচ কোনো পরাক্রমশালী বাদশাহ যখন কোনাে দেশ দখল করে, তখন সেখানে মস্তক উন্নত করে সদম্ভে প্রবেশ করে।


হযরত কায়েস ইবনে সা'দ আনসারী (رضي الله عنه) এবং তাঁর পিতা উভয়েই শ্রেষ্ঠ আনসার গণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হযরত কায়েস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদিন হুজুর আকরম (ﷺ) অনুগ্রহ করে আমাদের ঘরে এলেন। প্রত্যাবর্তনের সময় আমার পিতা হযরত সাদ (رضي الله عنه) বাহন হিসেবে একটি গাধা নিয়ে এলেন। হুজুর আকরম (ﷺ) সেই গাধাটির উপর আরােহন করলেন। হজরত সাআদ (رضي الله عنه) পুত্র কায়সকে লক্ষ্য করে বললেন, কায়স, তুমি যাও হুজুর (ﷺ) এর সাথে থাকো। হযরত কায়েস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, হুজুর আকরাম (ﷺ) আমাকে বললেন, কায়স! তুমি হেঁটে যাবে কেননা? আমার সঙ্গে বসাে। আমি আদবের কারণে আপত্তি করলাম। তখন হুজুর আকরম (ﷺ) আমাকে বললেন, হয় তুমি আমার সঙ্গে বসাে নতুবা চলে যাও। আমার সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্য এক বর্ণনায় আছে, হুজুর (ﷺ) যখন হযরত কায়েস (رضي الله عنه) কে এরূপ বলেছিলেন, তুমি আমার সামনে আরোহন করে, কেননা বাহনের মালিকের হক সামনে বসা।


অন্য একদিনের ঘটনা। এইরূপ বাহনে এক সাহাবী কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হুজুর আকরম (ﷺ) কে দেখে বাহন থেকে নেমে পড়লেন এবং হুজুর পাক (ﷺ) কে আরোহন করলেন। হুজুর পাক (ﷺ) তাকে সামনে বসালেন। এর চেয়ে অধিক আশ্চর্যজনক এক ঘটনা ইমাম তাবয়ী (رحمة الله) মুখতাসার হুশিয়ার কিতাবে উদ্ধৃত করেছেন। একদিন হুজুর পাক (ﷺ) পালন বিহীন এক গাধায় আরোহণ করেন কুবার দিকে যাচ্ছিলেন আর হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হুজুরের পদাতিক সাথী ছিলেন। হুজুর (ﷺ) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে বললেন, হে আবু হুরায়রা আমি তােমাকে আমার সঙ্গে বসাবাে। তিনি আরয করলেন, হুজুরের যা মর্জি হয় । হুজুর (ﷺ) বললেন, উঠ, আমার সঙ্গে বসে যাও। হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) যখন আরোহণ করার উদ্দেশ্যে লাফ দিলেন, তখন তার থাবা হুজুর পাক (ﷺ)এর গায়ে লেগে গেলে। তিনি উঠতে পারছেন না। এমনকি উভয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। হুজুর (ﷺ) পুনরায় আরোহন করে বললেন, আবু হুরায়রা তােমাকে আরােহন করিয়ে নিতে চাই। তিনি আর করলেন, হুজুরের যা মর্জি হয়। এবারও তিনি উঠতে ব্যর্থ হলেন। আবার দুজনেই মাটিতে পড়ে গেলেন। এরপর তৃতীয়বার যখন হুজুর পাক (ﷺ) তাকে সঙ্গে নিতে চাইলেন। তখন তিনি আরয করলেন, কসম ঐ মহান আল্লাহতায়ালার যিনি আপনাকে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন, এ মুহুর্তে আমি আর হুজুর পাক (ﷺ) কে তৃতীয়বারের মতো জমিনে ফেলে দিতে চাইনা।


ইমাম তাবারী বর্ণনা করেন, একদা হুজুর আকরাম (ﷺ) কোন এক সফরে ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে একটি দুম্বা জবেহ করে তা রান্না করতে বললেন। হুকুম পেয়ে সাহাবাগণ দাড়িয়ে গেলেন। একজন আমি দুম্বা জবাই করে। অন্যজন বললেন, আমি তার চামড়া ছিলার দায়িত্ব নিলাম। তৃতীয়জন বললেন, আমি রান্না করবাে। তখন হুজুর আকরম (ﷺ) বললেন, তাহলে লাকড়ী সংগ্রহ করার দায়িত্ব আমার। সাহাবাগণ আর করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরাই তাে একাজের জন্য যথেষ্ট, হুজুরের কষ্ট করার প্রয়োজন কি? তখন হুজুর আকরাম (ﷺ) বললেন, আমি অবশ্য জানি যে, তােমরাই এ কাজের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করিনা। যে, তোমরা কাজ করবে আর আমি তোমার থেকে আলাদা থাকবো। তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে শুধু শুধু কান্না বসে থাকবে? আল্লাহ তায়ালা এটা পছন্দ করেন না যে, তার কোনো বান্দা আপন সাথী সঙ্গীদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রাখুন।


একদা হুযুর আকরাম (ﷺ) এর জুতা মুবারকের ফিতা ছিড়ে গিয়েছিলাে। সাহাবাগণের মধ্যে একজন বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (ﷺ), আমাকে অনুগ্রহ করুন, এটা আমি ঠিক করে দিই। তখন হুজুর আকরম (ﷺ) বললেন, নিজে স্বাতন্ত্র্যবােধ নিয়ে বসে থেকে অপরের মাধ্যমে কোনাে কাজ করিয়ে নেওয়া আমার কাছে পছন্দনীয় নয়।


একদা হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশীর পক্ষ থেকে কয়েকজন দূত এলে হুজুর আকরম (ﷺ) তাদের সম্মানার্থে উঠে দাঁড়ালেন। সাহাবাগণ আর করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ। এঁদের খেদমতের দায়িত্ব আমাদেরকে প্রদান করুন। তখন হুজুর পাক (ﷺ) এরশাদ করেন, এঁরা আমার সাহাবীগণকে যথেষ্ট সম্মান ও খেদমত করেছেন, কাজেই আমি নিজেই তার প্রতিদান পরিশোধ করতে চাই।


হুজুর আকরাম (ﷺ) পরিবার পরিজনের কাজকর্ম অনেক সময় নিজেই করে দিতেন। নিজের কাপড় নিজে সেলাই করে নিতেন। জুতা মোবারক ছিড়ে গেলে তা নিজেই ঠিক ঠাক করে নিতেন। নিজের বকরীর দুধ নিজেই। দোহন করতেন। পােশাক পরিচ্ছদে উকুন হয়েছে কি না তা খুব লক্ষ্য করে দেখতেন। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে এসেছে, কাপড় বা মাথার উকুন তালাশ করাে। অথচ ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা আছে, হুজুর আকরম (ﷺ) এর দেহ মুবারকে উকুন হতােনা। এমনকি তার দেহে মাছিও বসতাে না। তাহলে হাদীছ শরীফে উল্লেখিত বিবরণ নিয়ে দ্বন্দের সম্মুখীন হতে হয়। এর উত্তর হচ্ছে, হুজুর পাক (ﷺ) স্বীয় পােশাক পরিচ্ছদের প্রতি এরকম অনুসন্ধানমূলক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেন, যেন তিনি কাপড়ের উকুন তালাশ করছেন। আসলে তিনি তা করতেন কাপড়ের ধূলা বালি দূর করে কাপড় পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্যে। এছাড়া আরেকটি কারণ এও হতে পারে যে, তিনি এরূপ করতেন উম্মতকে শিক্ষা দেবার মানসে। উম্মত যেনাে স্বীয় কাপড় চোপড়ের প্রতি লক্ষ্য রাখে। উকুন ইত্যাদি হয়ে থাকলে তা ফেলে দিয়ে পরিচ্ছদাদি ব্যবহারোপযোগী করে রাখে। এরকম সুন্দর আমল অনুসরণ করে সুন্নত পালনের ছওয়াবের অধিকারী হয়ে যায়। সম্ভবতঃ তিনি এ উদ্দেশ্যেই এরকম করতেন। (অনুবাদক)


হুজুর আকরম (ﷺ) নিজের বাহন হিসাবে যে উটটি ব্যবহার করতেন, তা খুঁটির সাথে বেঁধে রাখবার কাজটি হুজুর পাক (ﷺ) নিজেই করতেন এবং তার ঘাস খাদ্য ইত্যাদি উটের সামনে নিজেই নিয়ে দিতেন। আটার খামির তৈরির কাজে তিনি খাদেমের সহযোগিতা করতেন। খাদেমের সঙ্গে বসে খানা খেতেন। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া' কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, হুজুর পাক (ﷺ) এর উক্তি কার্যাবলী কোন কোন সময়ের উপর প্রযােজ্য হবে। কোনাে কোনাে সময় এরূপ করে থাকলেও তা দলীল হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে।যেহেতু হুজুর পাক (ﷺ) এর অনেক খাদেম ছিলাে এবং গােলামের সংখ্যা ছিলাে দশ জন। উক্ত কার্যাবলী তিনি কখনও কখনও নিজে সম্পন্ন করতেন। আবার কখনও তাদের হুকুম দিয়ে করান। কখনও আবার তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতেন।বাজার থেকে সামান ক্রয় করে নিজেই বহন করে নিয়ে আসতেন। অন্যের উপর বহনের দায়িত্ব দিতেন না।


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা আমি হুজুর আকরম (ﷺ) এর সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলাম। হুজুর (ﷺ) চার দেরহামের বিনিময়ে একখানা পাজামা কিনলেন। তিনি ওজনকারীকে বললেন, মূল্য গ্রহণের বেলায় মাল খুব ভারী করে নাও। অর্থাৎ ওজনের সময় মাল কম বা সমান সমান নিও না বরং বেশি বেশি করে নাও। লােকটি হুজুর (ﷺ) এর কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে বললাে, মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমি এর কথা জীবনে কখনো শুনিনি। আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বললেন, আফসোস! তুমি তোমাদের নবী (ﷺ) কে চিনতে পারলেনা। একথা শুনামাত্র লােকটি তার হাত থেকে দাড়ি পাল্লা টা ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে এবং হুজুর আকরাম (ﷺ) এর পবিত্র হাতখানায় চুম্বন করতে উদ্যত হলেন। তিনি হাত মুবারক টেনে সরিয়ে আনলেন এবং বললেন, এরূপ করা তাে আজমীদের কাজ। তারা তাদের বাদশা বা সরদারের সাথে এরূপ করে থাকে। আমি তাকে আর বাদশাহ নই। আমি তােমাদের মতােই একজন মানুষ। হুজুর আকরম (ﷺ) এরূপ বলেছেন নেহায়েত বিনয়ের কারণে। তার অভ্যাস ছিল এরকম। এরপর হুজুর আকরাম (ﷺ) পাজামা খানা উঠিয়ে নিলেন। হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি আগে থেকেই এরাদা করে রেখেছিলাম যে, পাজামাখানা আমি নিজে উঠিয়ে নিবে। কিন্তু হুজুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করলেন, ছামান মালিক ছামান বহনের হকদার। তবে হাঁ, কেউ যদি দুর্বল ও অক্ষম হওয়ার কারণে ছামান বহন করতে অক্ষম হয়, তখন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। দুর্বল সনদের সাথে কোন কোন হাদিসে এরকম বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) তখন হুজুর পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রসূল্লাল্লাহ। আপনি কি পাজামা খানা পরিধান করবেন? তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ, আমি এটা সফর, ইকামত, দিন-রাত সর্বদা পরিধান করে থাকি। কেননা বেশি বেশি করে সতর করার জন্য আমাকে হুকুম করা হয়েছে। আমি সতর ঢাকার জন্য এর চেয়ে বেশি উপযোগী আর কোনাে পোশাক দেখিনা। ইবনে হিব্বান, তাবরানী ও উকায়লীও এই হাদীছখানা বর্ণনা করেছেন। তবে সকল বর্ণনার সনদ দুর্বল। এই হাদীছখানার ভিত্তিস্থল হলেন ইউসুফ ইবন যিয়াদ ওয়াসেতী। তিনি নেহায়েতই দুর্বল একজন বর্ণনাকারী। বর্ণনা পাওয়া যায় যে, হযরত উসমান যুন্নুরাইন (رضي الله عنه) কে যেদিন শহীদ করা হয়েছিলাে, সেদিন তিনি উক্ত পাজামা পরিহিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আরও অধিক আলােচনা করা হয়েছে 'শরহে সফরুসসাআদাত' নামক কিতাবে। প্রয়ােজনে তা অধ্যয়ন করা যেতে পারে।


একদা এক ব্যক্তি হুজুর আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত হলে তার ভয়ে লোকটি কাঁপতে লাগলো। তিনি বললেন, ‘নিজকে সংবরণ করে কেঁপোনা। আমি কোন বাদশাহ নই। আমাকে আমার জননী জন্ম দিয়েছেন। আমিতো ঐ কুরাইশ বংশের লোক যারা কাদিদ নামক খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। গোশতের শুটকি কে কাদীদ বলা হয়। তৎকালীন আরব দেশে ফকীর মিসকীনদের খাদ্য ছিলে কাদিদ নামক শুটকি জাতীয় খাবার। আরেক দিনের ঘটনা। হুজুর আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে এক অপ্রকৃতিস্থ রমণী এসে বলল, আপনার কাছে আমার প্রয়োজন আছে। তিনি বললেন, বসাে। মদীনা শরীফের যে কোনাে অলি গলি বা যে কোনাে রাস্তায় আমাকে বসতে বললে আমি তােমার সঙ্গে বসবাে এবং তােমার অভাব পূরণ করবেন। হুজুর পাক (ﷺ) রমণীর সঙ্গে বসলেন এবং তার অভাব অভিযোগ শ্রবণ করে তা পূরণ করে দিলেন।


সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে, মদীনা শরীফের বাদীগণ নবী করীম (ﷺ) এর কাছে আসতাে এবং তার হাত মুবারক ধরে টেনে নিয়ে যেতাে। তারা যেখানে তাকে নিয়ে যেতে চাইতাে, তিনি সেখানেই যেতেন। আপত্তি করতেন না। এরপ ঘটনার মধ্যেও হুজুর পাক (ﷺ) এর অসাধারণ বিনয়ের নিদর্শন পাওয়া যায়। পুরুষ হোক বা নারী, আযাদ বা বাদী যে কেউ তাকে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলে তিনি নির্দ্বিধায় তাদের সঙ্গ প্রদান করতে। কেউ যদি মদিনা শরীফের বাইরেও তাকে নিয়ে যেতে চাই, তাতেও তিনি আপত্তি করতেন না। তাওয়াযু' বা বিনয়ের এবং অহংকার বর্জনের এর চাইতে উত্তম নিদর্শন কল্পনাই করা যায় না। কোনাে মুসলমান বিধবা অসহায় মহিলার সঙ্গে কোথাও গমন করাকে হুজুর পাক (ﷺ) লজ্জার কারণ মনে করতেন না।


হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবিল হুসামা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে আমি একবার হুজুর পাক (ﷺ) এর কাছ থেকে কোনাে একটি জিনিস ক্রয় করেছিলাম। তার কিছু মূল্য বাকি ছিলাে। আমি হুজুর (ﷺ)এর কাছে ওয়াদা করেছিলাম যে, অমুক জায়গায় গিয়ে আমি বাকি মূল্য পরিশােধ করে দিবাে। কিন্তু আমি সে কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তিনদিন পর আমার সে কথা স্মরণ হলে সেখানে চলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, হুজুর পাক (ﷺ) সেখানেই অবস্থান করছেন। হুজুর (ﷺ) আমাকে বললেন, তুমি আমাকে কঠিন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তিনদিন ধরে আমি এখানে তােমার অপেক্ষায় আছি। আবু দাউদ শরীফে এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঘটনায় হুজুর পাক (ﷺ) এর সীমাহীন বিনয়, ধৈৰ্য্য ও ওয়াদা পালনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সাইয়েদুল ইসমাইল (عليه السلام) সম্পর্কেও এ ধরনের ওয়াদা পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে হযরত ইসমাইল (عليه السلام) ছেলে সাচ্চা ওয়াদাপালনকারী।


-নবী করীম (ﷺ) এর শরীয়তের অনুসরণকারী উম্মতের কোনাে কোনাে বুযুর্গ সম্পর্কেও ওয়াদা পালনে এরকম একনিষ্ঠতার বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন গাউছুস সাকালাইন বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) কোন এক বুযুর্গ ব্যক্তির সাথে কৃত ওয়াদা পালনার্থে পুরা একটি বৎসর তার প্রতীক্ষায় কোনাে একস্থানে বসেছিলেন। আর সেই বুযুর্গ ব্যক্তি হলেন খিযির (عليه السلام)।


তৎকালীন আরব দেশের দস্তর ছিলাে মদীনা শরীফের বাদীরা পাত্র ভর্তি পানি নিয়ে হুজুর আকরম (ﷺ) এর দরবারে আগমন করতাে। 

তিনি স্বীয় হস্ত মোবারক তাদের আনীত পাত্রের পানিতে স্থাপন করেন। আর তারা সে পানি নিয়ে রোগীর গায়ে মুখে ছিটিয়ে দিতে। কখনও কখনও এমনও হতাে যে, শীতকালের সকাল বেলায় তারা ঠাণ্ডা পানি নিয়ে হুজুর পাক (ﷺ) এর কাছে চলে আসতাে। তিনি তাদের সন্তুষ্টির খাতিরে হাতে ঠাণ্ডা অনুভব করা সত্বেও পানি স্পর্শ করতে দ্বিধা করতেন না। কোনাে বুযুর্গ ব্যক্তির কাছ থেকে তাবাররুক গ্রহণ করা বৈধ—এসব ঘটনা তার দলীল।


➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী] 


© | সেনানী এপ্স |

Top