'আন নাবী আল উম্মী' মানে নিরক্ষর নয়।





কিতাবঃ 'আন নাবী আল উম্মী' মানে নিরক্ষর নয়।

✍ গ্রন্থনায়ঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

[লেখক, সংকলক, অনুবাদক]

স্টুডেন্টঃ MBBS, ব্লগারঃ সুন্নি-বিশ্বকোষ, ইসলামিক রিসার্চার।



লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

০১৭১০৩৫৫৩৪২

প্রথম প্রকাশকালঃ ৯.১২.১৯

প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম

কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।













উৎসর্গঃ

পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.)। 



























লেখক পরিচিতিঃ 



তরুণ লেখক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ সানি, ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট হিসেবে সুন্নি-বিশ্বকোষ নামক ওয়েবসাইট চালু করেন। অতঃপর অনলাইনে আহলে সুন্নাতের সঠিক আকিদা প্রচারে সুন্নি সাইবার টিম গঠন করে এক ঝাঁক তরুণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সুন্নি সাইবার টিমের মাধ্যমে এপ্স, পি.ডি.এফ, ব্লগিংসহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছেন। ধর্মীয় গবেষণার পাশাপাশি MBBS কোর্সে অধ্যয়ণরত আছেন। 

মসলকে আ'লা হযরতের অনুসারী। পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.) এর নিকট বায়াত গ্রহণ করে তরিকায়ে কাদেরীয়াতে দাখিল হন। 



লেখকের কিছু কথাঃ



বর্তমান জামানায় কিছু আলেম নামের জাহেল নিজেদেরকে আলেম দাবী করে অথচ প্রাণ প্রিয় রাসূল (ﷺ) যিনি সমগ্র মানবজাতির শিক্ষক তাঁকেই তারা নিরক্ষর, অজ্ঞ বানিয়ে দেয়। (নাউযুবিল্লাহ) আফসোস লাগে তাদের জন্য তারা কুরআন হাদিসে নবীর শান পায় না। দলিল দিলে তারা অস্বীকার করে। কোন কিছুর সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝে মতামত দিয়ে দেয়। আর একদল তরুণ যাদের নিকট দ্বীনের ২% জ্ঞানও নেই তারা সহিহ, দ্বয়ীফ, জাল হাদিস মতামত দেয়া শুরু করে যা কিনা মুহাদ্দিসগণের কাজ। তাদের পছন্দের আলেম যাই লিখে তাই ঠিক। এজন্য তারা কুফরি করতে বাধ্য কিন্তু কষ্মিনকালেও সঠিক মানতে নারাজ। আল্লাহ পাক তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। সেইসব জাহেলদের উদ্দেশ্যে কুরআন সুন্নাহ থেকে পুস্তকটি প্রনয়ণ করলাম। পাঠ বিরক্তিবোধ করবে বলে নিজের কোন ব্যাখ্যা মতামতও দেই নি। পুরোটাই দলিলভিত্তিক সাজিয়েছি। আশা করি পথভ্রষ্টদের চোখ খুলে যাবে।

অধম,

মাসুম বিল্লাহ সানি







সূচীপত্রঃ



❏১ম অধ্যায়ঃ 

রাসুল (ﷺ) কে নিরক্ষর বলা তাঁর শানে বেয়াদবী।

➥আল-কুরআনে পিতা-মাতার আদব

➥রাসূল (ﷺ) এর আদব

➥কে অধিক প্রিয় ও সম্মানিত রাসূল (ﷺ) নাকি পিতা-মাতা?

➥বেয়াদবদের জন্য জগৎবিখ্যাত ইমামগণের হুশিয়ার।


❏২য় অধ্যায়ঃ 

উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা-

➥"উম্মুল" শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ।

➥"উম্মী" শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ।


❏৩য় অধ্যায়ঃ 

প্রমাণসহ উম্মী শব্দের বিস্তারিত বিশ্লেষণ-

➥উম্মী শব্দের অর্থ মূল বা উৎস।

➥রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র সৃষ্টির মূল সেই হিসেবে তিনি  নবী আল উম্মীঃ—

●সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকেই সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে।

●রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৃষ্টি না হলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না।

➥সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব বলার কারণ।

➥আল-কুরআন ও লাওহে মাহফুজ উম্ম বলার কারণ।

➥মক্কা নগরিকে "উম্মুল কোরা" বলার কারণ।


❏৪র্থ অধ্যায়ঃ 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লিখতে জানতেনঃ আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকে।

➥ আয়াত ১-৭।

➥ তফসীর ১-৮।


❏৫ম অধ্যায়ঃ 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লিখতে জানতেনঃ আল-হাদিসের আলোকে।

➥রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত মানব জাতির শিক্ষক।

➥আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে।

➥আমাকে সৃষ্টির আদি-অন্ত পর্যন্ত সব জ্ঞান দান করা হয়েছে।

➥হাদিস ও ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা ব্যতীত আমি কিছুই জানি না।

➥বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম তন্মধ্যে একটি হল সবার ইলম।

➥ইয়ামানবাসীদের প্রতি চিঠি।

➥কিসরা, কায়সার ও নাজাশীর কাছে চিঠি।

➥অনারবদের নিকট চিঠি।

➥ইবনুল আলমা'র প্রতি চিঠি।

➥মুক্তিপণের জন্য চিঠি।

➥হিরাকালের প্রতি চিঠি।

➥অন্যান্যদের নিকট চিঠি।

➥রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইন্তেকালের পূর্বে কিছু লিখতে চেয়েছিলেন।

➥হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-কে লিখন পদ্ধতি শিক্ষা।

➥এ সন্ধিপত্র সম্পন্ন করেন- মুহাস্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ (ﷺ)

➥বনূ যুহায়র ইবনে উক্বাইশের প্রতি লিখিত পত্র।

➥মুসায়লামা’র পত্র ও মহানবী (ﷺ)’র উত্তর।


❏৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ 

অন্যান্য ইমামগণ থেকে প্রমাণ।

❏৭ম অধ্যায়ঃ 

আকল বা যুক্তি দিয়ে জবাব।



______________



❏১ম অধ্যায়ঃ 


রাসুল (ﷺ) কে নিরক্ষর বলা তাঁর শানে বেয়াদবীঃ




❏ আল-কুরআনে পিতা-মাতার আদব সম্পর্কে বলেন,

"তাদের একজন বা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্থক্যে উপনীত হলে, তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমকও দিও না, তাদের সাথে সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা কথা বলিও। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও। [সূরা বনী ইসরাঈল -২৩/২৪]


❏ আর রাসূল (ﷺ) এর আদব সম্পর্কে বলেন,


"হে ইমানদারগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।"-(হুজরাত ২)


“(হে ইমানদারগণ)! রসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরকে আহ্বানের মত গণ্য করো না।” (২৪ : ৬৩)


❏ কে অধিক প্রিয় ও সম্মানিত রাসূল (ﷺ) নাকি পিতা-মাতা?

"তোমাদের কেউই ততক্ষন পর্যন্ত ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা , সন্তান ও সকল মানুষ হতে অধিকতর প্রিয়তম না হই।"

▪ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫

▪ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮


❏ বেয়াদবদের জন্য জগৎবিখ্যাত ইমামগণের হুশিয়ারঃ

"ইসলাম বা কুরআনের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যকারী, রাসূলুল্লাহ [ﷺ]-কে নিয়ে কটুক্তিকারী কিংবা তাঁর শানে গোস্তাখীকারী মুরতাদ হয়ে যাবে। তাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড।" 


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম কাজী আয়াজঃ আশ শিফা-২/২১১ 

২.আস-সারিমুল মাসলূলঃ ১/৯

৩.আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীরঃ মুয়াসসার

৪.ইমাম সুয়ুতীঃ মাহাসিনুত তাওয়ীল-৫/১৪২, সূরা তওবা ১১-১৩ এর ব্যখ্যায়

৫.সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ-১২/২১, 

৬.ইমাম তক্বীউদ্দীন সুবকীঃ “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল (ﷺ)"

৭.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকাম 

৮.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬

৯.আ'লা হযরতঃ ইরশাদে আ'লা হযরত।

১০.আ'লা হযরতঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা।

১১.ইমাম কিরদারীঃ আল-ওয়াজীয।

১২.ইমাম ইবনে আবেদীন শামীঃ দুররে মুখতার’।


❏ এই মতের উপর ইমামগণের এক বিশাল জামাত ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

● ইমাম মালেক বিন আনাস (رحمة الله) 

● ইমাম আবুল লাইস (رحمة الله)

● ইমাম আহমাদ (رحمة الله) ইমাম ইসহাক এ বক্তব্যের প্রবক্তা। 

● আর এটাই ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর মাজহাব।

● আল্লামা কাজী ইয়াজ (رحمة الله)

● ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) হানাফী ফুক্বাহাবৃন্দ।

● ইমাম সাওরী (رحمة الله), 

● আহলে কুফা ও ইমাম আওজায়ী (رحمة الله)

● ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)  

● ইমাম তক্বীউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) 

● ইমাম তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী (رحمة الله)

● আবু বকর ইবনুল মুনজির (رحمة الله)



❏২য় অধ্যায়ঃ 


উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যাঃ




উম্মী শব্দটি নিয়ে যত ভুল-বুঝাবুঝির গোড়া হল- এর অনেক অর্থ আছে। কিন্তু নবীর শান বিদ্বেষীগণ শুধু বাজে অর্থটাই নিয়েছে।

যেমনঃ 

"উম্মী" ও "উম্মুল" শব্দটি এসেছে "উম্ম" থেকে যার অর্থ মাতা, উৎস, ভিত্তি। যেমনঃ


🔺"উম্মুল" শব্দের অর্থ ও প্রয়োগঃ


উম্মুল কোরা-মক্কা, (সকল শহরের কেন্দ্র/গর্ভ)

উম্মুল মু'মেনীন-মুমীনগণের মাতা,

উম্মুল কুরআন-কুরআনের মাতা/সারগর্ভ (সূরা ফাতিহা)

উম্মুল কিতাব-আল-কুরআন (সকল কিতাবের মূলউৎস)


🔺"উম্মী" শব্দের অর্থ ও প্রয়োগঃ


১.নিরক্ষর।

২.'পড়াবিহীন’[হুযুর পাক (ﷺ) কারো নিকট থেকে অক্ষর জ্ঞান শিখেন নি স্বয়ং আল্লাহই তাঁর শিক্ষক, সুতরাং যার শিক্ষক আল্লাহ এবং যিনি সমগ্র মানব জাতির শিক্ষক তিনি অশিক্ষিত হতে পারেন?]

৩.‘উম্মুল কোরা’ বা মক্কা মুকাররামা'য় অবস্থানকারীকে উম্মী বলা হয়। [সে হিসেবে উম্মী হুযুর পাক (ﷺ)-এর উপাধি]

৪.উৎস/মূলঃ [সে হিসেবে উম্মী হুযুর পাক (ﷺ)-এর উপাধি, কারণ তিনি সমগ্র বিশ্ব-সমগ্র সৃষ্টির মূল]

৫.অন্যান্য অর্থঃ হিকমাহ', জ্ঞান, সুবিচার, ন্যায়শাসন।

৬.স্নেহপূর্ণ, কোমল।

৭.অপবিত্রতা-দোষত্রুটি থেকে পবিত্র।


বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী (رحمة الله) লিখেছেন, “এখানে উম্মী মানে হচ্ছে হুযুর পাক (ﷺ)-এর মু’জিযা।”

(বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড)


❏৩য় অধ্যায়ঃ 


প্রমাণসহ উম্মী শব্দের বিস্তারিত বিশ্লেষণঃ



❏ উম্মী শব্দের অর্থ মূল বা উৎস।

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র সৃষ্টির মূল সেই হিসেবে তিনি  নবী আল উম্মী।

❏ সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব বলার কারণ।

❏ আল-কুরআন ও লাওহে মাহফুজ উম্ম বলার কারণ।

❏ মক্কা নগরিকে "উম্মুল কোরা" বলার কারণ।



❏ উম্মী শব্দের অর্থ মূল বা উৎসঃ


 ১. ইমাম রাগেব ইসপাহানি (رحمة الله) বলেন,

ويقال لكل ما كان أصلا لوجود شيئ او تربيته أو اصلاحه أو متدءه ام

প্রত্যেক ঐ বস্তুকে উম্ম বলা হয় যা কোনো জিনিসের প্রতিপালন বা সংশোধনের অস্তিত্বের মূল বা উৎস হয়। [রাগিব ইস্পেহানি, মুফরেদাত লিআলফাজিল কুরআন:৫৭।]


২. ইমাম মুরতাজা জুবেদি (رحمة الله) বলেন,

وام كل شئ: اصله وعماده-

প্রত্যেক জিনিসের উম্ম হলো তার উৎস ও মুল ভিত্তি। [জুবেদি, তাজুল আরূস, ১৬:২৭।]


❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র সৃষ্টির মূল সেই হিসেবে তিনি  নবী আল উম্মীঃ


এ অর্থের ভিত্তিতে নবীয়ে উম্মি অর্থ : ঐ নবী যিনি সমগ্র কায়েরনাত তথা সৃষ্টিজগতের মূলভিত্তি ও উৎস। কারণ হাদিসে আছে, 

সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকেই সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে, 

"রাসূলে আকরাম (ﷺ) সৃষ্টি না হলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না।" 


নবী-ই উম্মী মানে সমগ্র বিশ্বের মূল কেননা হাদিসে হুজুর (ﷺ) ইরশাদ করেন, "আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নুর সৃষ্টি করেছেন, আমার নুর হতে প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।" 

[ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাদারিজুন নবূয়্যাত]। 


❏ হাদিস ১:

সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকেই সবকিছু সৃষ্টি হয়েছেঃ


ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দাদা উস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম (رحمة الله) তিনি মা’মার বিন রাশীদ (رحمة الله) থেকে, তিনি মুহাম্মাদ বিন মুনকাদার (رحمة الله) থেকে তিনি জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন,


حضرت جابر بن عبد اﷲ رضی اﷲ عنہما سے مروی ہے فرمایا کہ میں نے بارگاہِ رسالت مآب صلی اللہ علیہ وآلہ وسلم میں عرض کیا : یا رسول اﷲ! میرے ماں باپ آپ پر قربان! مجھے بتائیں کہ اﷲ تعالیٰ نے سب سے پہلے کس چیز کو پیدا کیا؟ حضور نبی اکرم صلی اللہ علیہ وآلہ وسلم نے فرمایا : اے جابر! بے شک اﷲ تعالیٰ نے تمام مخلوق (کو پیدا کرنے) سے پہلے تیرے نبی کا نور اپنے نور (کے فیض ) سے پیدا فرمایا، یہ نور اللہ تعالیٰ کی مشیت سے جہاں اس نے چاہا سیر کرتا رہا۔ اس وقت نہ لوح تھی نہ قلم، نہ جنت تھی نہ دوزخ، نہ (کوئی) فرشتہ تھا نہ آسمان تھا نہ زمین، نہ سورج تھا نہ چاند، نہ جن تھے اور نہ انسان، جب اﷲ تعالیٰ نے ارادہ فرمایا کہ مخلوق کو پیدا کرے تو اس نے اس نور کو چار حصوں میں تقسیم کر دیا۔ پہلے حصہ سے قلم بنایا، دوسرے حصہ سے لوح اور تیسرے حصہ سے عرش بنایا۔ پھر چوتھے حصہ کو (مزید) چار حصوں میں تقسیم کیا تو پہلے حصہ سے عرش اٹھانے والے فرشتے بنائے اور دوسرے حصہ سے کرسی اور تیسرے حصہ سے باقی فرشتے پیدا کئے۔ پھر چوتھے حصہ کو مزید چار حصوں میں تقسیم کیا تو پہلے حصہ سے آسمان بنائے، دوسرے حصہ سے زمین اور تیسرے حصہ سے جنت اور دوزخ بنائی۔ ۔ ۔ یہ طویل حدیث ہے۔


অর্থ : হযরত জাবির (رضي الله عنه) আরজ করলেন, "ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! আমার পিতা-মাতা আপনার কদম মোবারকে কোরবানি হোক, আপনি বলে দিন যে আল্লাহ্‌ পাক সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন?" রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, "হে জাবের, নিশ্চই আল্লাহ্‌ তা'য়ালা সর্ব প্রথম স্বীয় (নিজ) নূর হতে তোমার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন!”

অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে ও ইচ্ছায় ভ্রমণরত ছিল। কেননা ঐ সময় লাওহ-কলম , জান্নাত – জাহান্নাম

ফেরেশতা , আসমান- জমিন কিছুই ছিল না। তারপর আল্লাহ্‌ মাখলক সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন তখন এই নূর কে ৪ ভাগ করলেন, প্রথম ভাগ দিয়ে কলম; দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে লৌহে-মাহফুজ; তৃতীয় ভাগ দিয়ে আরশ এবং চতুর্থ ভাগ দিয়ে বাকি সবকিছু সৃষ্টি করেন…(সে চতুর্থভাগকে আরো ভাগ করেছেন).।


১। ইমাম আব্দুর রাযযাক (رحمة الله) [ওফাত.২১১হি] : মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক।

২। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) [ওফাত.৪৫৮হি] ‘দালায়েলুন নবুয়ত' এর ১৩ খন্ড ৬৩ পৃষ্ঠা।

৩। ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া" ১/১৫ পৃঃ। 

৪। ইমাম যুরকানীঃ শরহুল মাওয়াহেব এর ১৮৯ পৃষ্ঠায়। 

৫। ইমাম আলুসীঃ রুহুল মায়ানী ১৭/১০৫

৬। আল্লামা আজলুনীঃ কাশফুল খাফা' এর ১/৩১১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৮১১, 

৭। ইমাম বুরহানুদ্দিন হালবীঃ “সিরাতে হালবিয়্যাহ" ১/৩৭ পৃষ্ঠায। 

৮। ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) "মাদারিজুন নবুয়াত" খণ্ডের ৫পৃষ্ঠা।

৯। আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি “আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মাওদুআহ" ৪২-৪৩। 

১০। আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারীঃ"আল মাওরিদুর রাভী ফিল মাওলীদিন নবী" ২২ পৃষ্ঠা। 

১১। ইমাম ইবনে হাজর হায়তামীঃ “ফতােয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ" ৪৪পৃষ্ঠায় (শামেলা) এবং ৩৮০পৃষ্ঠায় 

১২। ইমাম নববী [ওফাত.৬৭৭হি,] “আদ্দুরারুল বাহিয়্যাহ" গ্রন্থের ৪-৮ পৃষ্ঠা।

১৩। ইমাম নাবহানী (رحمة الله) “যাওয়াহিরুল বিহার” ৩য় খন্ড ৩৭৭ পৃষ্ঠায এবং ৩/৩১২ এবং ২/২১৯ পৃষ্ঠা।

১৪। ইমাম ইউসূফ নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন” এর ৩২-৩৩ পৃষ্ঠায়। 

১৫। ইমাম নাবহানী “আনওয়ারে মুহাম্মাদিয়া” গ্রন্থের ৯ পৃ

১৬। ইমাম আবদুল গণী নাবলুসীঃ হাদীকাতুন নাদিয়্যাই শরহে আত তারীকাতুল মুহাম্মাদিয়্যাহ” গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৭৫ পৃষ্ঠায়। 

১৭। ইমাম আবু সাদ নিশাপুরী খারকুশী (رحمة الله) যার ওফাত হচ্ছে ৪০৭হিঃ তিনি তার প্রসিদ্ধ সিরাত গ্রন্থ "শরফুল মুস্তফার ১/৩০৭পৃষ্ঠায় ইমাম আবদুর রাযযাক (رحمة الله)'র সূত্রে।

১৮। আল্লামা ইমাম আহমদ রেযা খাঁন ফাযেলে বেরলভী (رحمة الله) ওফাত,১৯২১খৃ.তার “নূরুল মােস্তফা” গ্রন্থে ৫-৭ পৃষ্ঠায়। 

১৯। আল্লামা আহমদ আবদুল জাওয়াদ দামেস্কী (رحمة الله) স্বীয় সিরাজুম মুনীর গ্রন্থের ১৩-১৪ পৃষ্ঠা।

২০। ইমাম মুহাম্মদ মাহদী আল-ফার্সী সুফী “দালায়েলুল খায়রাত" গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মাতৃালিউল মুসাররাত ” এর ২১ পৃ। 

২১। আরেফ বিল্লাহ শায়খ আবদুল করিম জলীলী (رحمة الله) স্বীয় বিখ্যাত গ্রন্থ,

الناموس الاعظم والقاموس الأقدام في المعرفة قدر النبي صلى الله عليه و سلم ২৪১ পৃষ্ঠায়।

২২। মুহাদ্দিস ইমাম খরপূতী (رحمة الله) “কাসীদাতুশ শাহাদাহ শরহে কাসীদায়ে বুরদাহ" গ্রন্থের পৃষ্ঠা নং ১০০ ইমাম আবদুর রাযযাক (رحمة الله)'র সূত্রে।

২৩। আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী *মাতে ইলাহিয়্যাহ এর ১৯ পৃষ্ঠায়। 

২৪। আল্লামা ইমাম মাহমুদ আলুসী “তাফসীরে রুহুল মায়ানী" তে সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ১৭ পারার ৯ম খন্ডের ১৭৭ পৃষ্ঠা।

২৫। আল্লামা দিয়ার বকরী “কিতাবুল খামীস ফি আহওয়ালি আনফাসে নাফীস"২০ পৃষ্ঠায়। 

২৬। ইমাম ইবনুল হাজ্জ আল মালেকীঃ “আল-মাদখাল” এর ২য় খন্ডের ৩২ পৃষ্ঠায়। 

২৭। আল্লামা ইবনে হাযার হায়তামী মক্কী, ওফাত.৭৯৪হি."শরহে শামায়েল" গ্রন্থের ১/১৪৫ পৃষ্ঠায় 

২৮। 

২৯। ইমাম আরিফ বিল্লাহ শায়খ আলী দুদাহুল বুসনভী  তার خلاصة الأثرগ্রন্থে।

৩০। আরিফ বিল্লাহ শায়খ আব্দুল্লাহ বানুভী রুমী (رحمة الله) যিনি "কাশফুল যুনুন"। 

৩১। আল্লামা ইবনে হাযার হায়তামী আল মক্কী (رحمة الله) [ওফাত.৭৯৪হি] তা” আন্-নেয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” গ্রন্থেও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়।

৩২। আল্লামা সৈয়দ আহমদ সাঈদ কাযেমী (رحمة الله) মিলাদুন্নবী গ্রন্থের ২২ পৃষ্ঠা

৩৩। ইমাম ইয়াহইয়া বিন আবি বকর বিন মুহাম্মদ বিন বিন ইয়াহইয়া আলমরী আল-হারদ্বী (رحمة الله) যার ওফাত হচ্ছে ৮৯৩ হিজরীতে তিনি হাদিসটি বাহজাতুল মাহফিল ওয়া বাগিয়াল আমসাল ফি তালখিসুল মু'যিজাত ওয়াল সক ওয়াল শামায়েল" গ্রন্থের ১/১৫ পৃষ্ঠায়। 

৩৪.শায়খ মুহাম্মদ বিন খিলাফাত বিন আলী আল-তাইমী (رحمة الله) “হুকুকুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলা উম্মাতি ফি যুউল কিতাৰ ওয়া সুন্নাহ।

৩৫.ইমাম জুরকানী (رحمة الله) [ওফাত.১১২২হি] তার শরহুল মাওয়াহে ৫/২৬১পৃ.। 

৩৬.ইমাম ইয়াদরুসী (رحمة الله) তার “তারীখে নুরুস সফর"।

৩৭.ইমাম আলুসী বাগদাদী (رحمة الله) রুহুল মায়ানী' প্রথমে সূরা ফাতেহার তাফসীরেই (১/৫৪পৃষ্ঠা)

৩৮.ইমাম সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) যার ওফাত,১২৪১হি. তার “হাশিয়াতুল সাভী আলাল শরহুল সগীর”গ্রন্থের ৪/৭৭৮পৃষ্ঠায়। 

৩৯. ইমাম মুহাম্মদ মাহদী আল-ফাসী সুফীঃ “আল-বাহারুল মুদিদ ফি তাফসিরুল মাজিদ" এর ৫/২৭৪পৃষ্ঠায়। 

৪০.ইমাম শিহাবুদ্দীন খিফাযী হানাফী হাশিয়াতুল শিহাব আ'লা তাফসিরুল বায়যাভী" এর (৪/১৪৩পৃষ্ঠায়, সুরা আনআমের এক আয়াতের ব্যাখ্যায়) 

৪১.মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী "ফি মওলিদে খাইরিল বারিয়্যাহ" এর ৫ পৃষ্ঠায়।

৪২. সৌদি আরবের আলেমদের সম্মেলিত ফাতওয়ার কিতাব "কুরাতুল আইন ফাতওয়ায়ে উলামাউল হারামাইন” (যার ১/৩২৫ পৃষ্ঠায়)

৪৩.আহলে হাদিস শায়খুল তৈয়্যব আহমদ হাতিয়্যাহ তিনি তাঁর “তাফসীরে শায়খ আহমদ হাতিয়্যাহ" এর ৩/৩৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন।

৪৪.ইসলামী ইতিহাসবিদ আল্লামা আব্দুল হামিদ মুহাম্মদ যিয়াউল্লাহ কাদেরী (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থ “ওহাবী মাযহাব কী হাকীকত' (উর্দু) এর ৬৪১ পৃষ্ঠায়।

৪৫.হাকিমুল উম্মাহ মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমীঃ “রিসালাম নূর" এর ১৯ পৃষ্ঠায়।

৪৯.দেওবন্দের অন্যতম আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব “নুশরাত্বিব”এর ২৫ পৃষ্ঠায়। 

৫০.দেওবন্দীদের অন্যতম শায়খুল হাদিস ইদ্রিস কালভী সাহেব "মাকামাত ফি হাদিসিয়্যাহর "১ম খন্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায়। 

৫১. পাকিস্তানের ওহাবী দেওবন্দী মুহাদ্দিস সরফরায খাঁন সফদও 'নূর আওর বাশার এর ৩২ (উর্দু) পৃষ্ঠায়। 

৫২। ভারতীয় উপমহাদেশের ওহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা শাহ ইসমাঈল দেহলভী সাহেব তার ‘রেসালায়ে একরােজী' পৃষ্ঠা নং ১১ এ উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

৫৩। 'তাফসীরে নূরুল কোরআন' এর লেখক মাওলানা আমিনুল ইসলাম সাহেব“নূর নবী” বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় ৫৪.বর্তমানের দেওবন্দীদের তথাকথিত শাইখুল হাদিস মুফতি মনসুরুল হক মাসিক আদর্শনারীতে (২০১২ইং এর সিরাতুন্নবী  (ﷺ) সংখ্যায় দরসে হাদিসে) এক পথীয়ে হযরত যাবের (رضي الله عنه)'র হাদিসটি সংক্ষেপে ইমাম আবদুর রাষ্যকের সূত্রে সংকলন করেন।

৫৫. মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃ

৫৬. হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫

৫৭. দাইলামী ২/১৯১

৫৮. ইমাম মুজাদ্দিদ আলফে সানীঃ মাকতুবাতঃ ৩ খন্ড ১০০ নং

৫৯. মওজুয়াতুল কবীর ৮৩ পৃ

৬০. ইনছানুল উয়ুন ১/২৯

৬১. আফদ্বালুল ক্বোরা

৬২. তারীখুল খমীস ১/২০

৬৩. ইমাম আব্দুর রহমান ছাফুরীঃ নুজহাতুল মাজালিস ১ খন্ড

৬৪. দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃ

৬৫. ইমাম আজলুনীঃ কাশফুল খফা ১/৩১১

৬৬. তারিখ আননূর ১/৮

৬৭. আনোয়ারে মুহম্মদীয়া ১/৭৮

৬৮. ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারীঃ আল মাওয়ারিদে রাবী ফী মাওলীদিন নবী ৪০ পৃষ্ঠা ।

৬৮. তাওয়ারীখে মুহম্মদ

৬৯. আনফাসে রহীমিয়া

৭০. মা’ য়ারিফে মুহম্মদী

৭১. মজমুয়ায়ে ফতোয়া ২/২৬০

৭২. আপকা মাসায়েল আওর উনকা হাল ৩/৮৩

৭৩. শিহাবুছ ছাকিব ৫০

৭৪. মুনছিবে ইছমত ১৬ পৃ

৭৫. হাদীয়াতুল মাহদী ৫৬পৃ

৭৬. দেওবন্দী আজিজুল হক অনুবাদ কৃত বুখারী শরীফ ৫/৩


❏ হাদিস ২:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৃষ্টি না হলে আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন নাঃ


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত

ثنا جندل بن والق، ثنا عمرو بن اوس الانصاري، ثنا سعيد بن أبي عروبة، عن قتادة، عن سعيد بن المسيب، عن ابن عباس رضي الله عنهما، قال: «اوحى الله إلى عيسى عليه السلام يا عيسى آمن بمحمد وامر من أدركه من أمتك أن يؤمنوا به فلولا محمد ما خلفت أدم ولولا محمد ما خلقت الجنة ولا النار ولقد خلقت العرش على الماء فاضطرب فكتبت عليه لا إله إلا الله محمد رسول الله فسكن» هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه "

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা'য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তােমার উম্মতের মধ্যে যারা তার যুগ পাবে। তাদেরকে ঈমান আনতে বলাে। কারণ যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃষ্টি করতাম। আমি (আল্লাহ) যখন পানির উপর আরশ তৈরী করেছিলাম, তখন তা এদিক সেদিক কম্পন করতে লাগল। তখন আমি তার উপর কালেমা শরীফ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' লিখে দিলাম অতঃপর আরশ স্থির হয়ে গেল।

● ইমাম সুয়ূতি, ইমাম সুবকী, ইবনে হাজর মক্কী, মােল্লা আলী কারী হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন।

● ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেন, হাদিসটির সনদ সহিহ।


তথ্যসূত্রঃ

১.ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১, পৃষ্ঠা হাদিসঃ ৪২২৭।

২. আল্লামা ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃষ্ঠা।

৩. আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী: আফজালুল কুরা।

৪. আল্লামা সিরাজুদ্দীন বলকী: ফতােয়ায়ে সিরাজিয়া : ১/১৪০ পৃ.।

৫. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী মাওজুআতুল কবীর ১০১ পৃ.।

৬. ইমাম ইবনে সা'দ। আত্-তবকাতুল কোবরা !

৭. ইমাম আবু নঈম ইস্পাহানীঃ হুলিয়াতুল আউলিয়া

৮,আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ হাদিসঃ ২১।

৯,আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পূ.।

১০.আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ২১১৪ পৃ.।

১১. ইমাম যাহাৰীঃ মিনুল ইতিদাল : ৫/২৯৯ পূ. রাবী নং- ৬৩৩৬।

১২, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী লিসানুল মিযানঃ ৪/৩৫৪ পৃ.।

১৩. ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭ পৃ.।

১৪.আবু সা'দ ইবরাহিম নিশাপুরী,শরহে মুস্তফাঃ১/১৬৫পৃ.।

১৫.যুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব:১২/২২০পৃ.।

১৬.ইবনে কাসীর,কাসাসুল আম্বিয়া,১/২৯পৃ.দারুল তা'লিফ,কাহেরা,মিশর।

১৭.ইবনে কাসীর,সিরাতে নববিয়্যাহঃ১/৩২০পৃ.দারুল মা'রিফ,বয়রুত লেবানন।

১৮.ইবনে কাসীর,মু'জিজাতুন্নাবী:১/৪৪১পৃ.মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ,কাহেরা,মিশর।

১৯.ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ:১২/৪০৩পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ বয়রুত,লেবানন।


❏ সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব বলার কারণঃ


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন,

الحمد لله أم القران وأم الكتاب والسبع المثاني-

আলহামদু লিল্লাহ (সুরা ফাতিহা) উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব ও সাবয়ে মাসানি। 

[তিরমিযি, জামে সহিহ, ৫:২৯৭, আবু দাউদ, সুনান, ২:৭১, বায়হাকি, সুনানুল কুবরা, ২:৪৫।]


১.ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (رحمة الله) বলেন, 

وقيل لفاتحة الكتاب ام الكتاب لكونها مبدأ الكتاب-

সূরা ফাতিহাকে কুরআনের মূল হিসাবে উম্মুল কিতাব বলা হয়েছে। [আল-মুফরেদাত ফি গরিবিল কুরআন: 20]


২. ইমাম জুবায়দি (رحمة الله) বলেন, 

الام من القران الفاتحة لأنه يبدأ بها في كل صلاة ويقال لها ام الكتاب ايضا او ام الكتاب-

সুরা ফাতিহা উম্মুল কুরআন। কেননা, এর দ্বারা প্রত্যেক নামাজ শুরু করা হয়। তাকে উম্মুল কিতাব ও উম্মূল কুরআনও বলা হয়। [তাজুল আরূস, ১৬: ২৮]


৩. ইমাম সুয়ুতি (رحمة الله) বলেন, 

قيل ام الشيء أصله وهي أصل القران لأنطوائها علي جميع أغراض القران وما فيه من العلوم والحكم-

উম্ম কোনো বস্তুর মূলকে বলা হয়। সুরা ফাতিহা কুরআনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সমষ্টি হওয়ার কারণে এর মূল। [সূয়ুতি, আল-ইতকান, ১: ১৪৯।]


৪. ইমাম কুরতবি (رحمة الله) বলেন, 

وسميت ام الكتاب لأنه يتبدأ بكتابها في المصاحف ويبدأ بقراءتها بالصلاة-

সুরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব নাম দেয়া হয়েছে। কেননা, কুরআনে করিম লেখা এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে আর এটা পাঠের মাধ্যমে নামাজ শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, 

وأم القران: سورة الحمد وقيل: سميت ام القران لأنها أوله ومتضمنه لجميع علومه-

উম্মুল কুরআন হলো সুরা ফাতিহা। এটাকে উম্মুল কুরআন এ কারণে বলা হয় যে, এটা কুরআনের প্রথম আর এর মধ্যে সকল জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [আল-জামে লে আহকামিল কুরআন, ১: ১১২]


❏ আল-কুরআন ও লাওহে মাহফুজ উম্ম বলার কারণঃ


১. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (أم الكتاب) উম্মুল কিতাব


يمحوا الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب

আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুদৃঢ় রাখেন আর তারই কাছে রয়েছে মুল কিতাব। [আল কুরআন, রাদ, ১৩:৩৯।]


২. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (أم الكتاب) উম্মুল কিতাব


وإنه في أم الكتاب لدينا لعلي حكيم-

আর নিশ্চয়ই এটা (আল-কুরআন) আমার নিকট লাওহে মাহফুজে  উচ্চমর্যাশীল বিজ্ঞময়। [আল কুরআন, জুখরূপ, ৪৩:৪।]


❏ ইমাম রাগেব ইস্পেহানি (رحمة الله) এর উত্তরে বলেন, এ কারণে যে, সকল জ্ঞান লাওহে মাহফুজের দিকে সম্পৃক্ত। আর তা সকল জ্ঞানবিজ্ঞানের মুলউৎস। 


❏ ইমাম বুসিরি (رحمة الله) বলেন, দুনিয়া ও আখিরাত প্রিয় নবী (ﷺ) এর বদান্যতার সামান্য অংশ। আর লাওহ ও কলমের জ্ঞান তাঁর জ্ঞান-বিজ্ঞানের কিয়দংশ মাত্র। [কসিদায়ে বুরদাহ]


❏ মক্কা নগরিকে "উম্মুল কোরা" বলার কারণঃ


কুরআনে করিমে মক্কা নগরিকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

وهذا كتاب أنزلناه مبارك مصدق الذي بين يديه ولتنذر أم القري ومن حولها-

আর এটা (ঐ) কিতাব যা আমি নাজিল করেছি (তা) বরকতময়, পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী। আর তা এ কারণে (নাজিল করা হয়েছে) যে, আপনি [সকল মানব] শহরের মুলকেন্দ্র [মক্কা] বাসীদের এবং এর পার্শ্ববতী লোকদের ভীতিপ্রদর্শন করবেন। 

[আল কুরআন,আনআম, ৬:৯২।]


এ থেকে বুঝা গেলো যে, সকল গ্রাম ও শহরের মুলকেন্দ্র ও উৎস হলো মক্কা। যেমনঃ 


❏ হাদিস শরিফে আছে, 

যখন কায়েনাত সূচনা হলো তখন সর্বপ্রথম শুধু পানিই ছিলো, অন্য কিছু ছিলো না। অতঃপর পানি শুষ্ক হতে শুরু করলো। আর যেখানে যেখানে পানি শুকিয়ে গেলো সেখানে জমি সৃষ্টি হলো। আর এভাবে জমি সৃষ্টি হলো। অর্থাৎ যতোটুকু অংশ শুষ্ক হয়ে গেলো তা জমিতে পরিণত হলো আর অবশিষ্ট সমুদ্র রয়ে গেলো। সমগ্র জগতের ভূখন্ডের মধ্যে সর্বপ্রথম অংশ যা পানিতে শুষ্ক হয়েছে ও জমিনরূপে প্রকাশিত হয়েছে তা হলো মক্কা নগরি।


১. হযরত আবদুর রহমান বিন সাবিত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন, 

دحيت الأرض من مكة 

জমিকে মক্কা থেকে প্রসারিত করা হয়েছে। 

[তাবারি, জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১:১৯৯, সুয়ুতি, আদদুররুল মানসূর, ১:১১৩, ইবনে কাসির, তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:৭১, শাওকানি, ফতহুল কদির, ১:৬৩।]


২.ইমাম কুরতবি (رحمة الله) বলেন, 

سميت ملة ام القري لأنها أول الأرض ومنها دحيت ومنه سميت الأم أما لأنها أصل النسل والارض-

মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে। কেননা, এটা সর্বপ্রথম জমি। আর এটা থেকে জমি প্রসারিত হয়েছে। আর একারণেই উম্মকে উম্ম বলা হয়। কেননা, কেননা, বংশ ও ভূখন্ডের মূল হয়ে থাকে। 

[ইমাম কুরতুবি, তফসীরে কুরতুবী, ১:১১২]


৩.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন, 

"এ শহর সম্মানের দিক দিয়ে পৃথিবীর অপরাপর শহর থেকে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাময়। যেহেতু এটাকে বিস্তৃত করে ভূমণ্ডল অস্তিত্ব লাভ করেছে। তাই এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়।" [ইমাম কুরতুবি, তফসীরে কুরতুবী, ১:১১২]


৪. হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলেছেন,

أن أم القري مكة منها دحيت الارض-

নিশ্চয় উম্মুল কুরা হলো মক্কা মুকররমা। এর থেকে ভূখন্ড বিস্তার করা হয়েছে। [তাবারি, জামেউল বয়ান ফি তাফসিরিল কুরআন, ১৪:১৫, সুয়ুতি, আদদুররুল মানসূর, ৩:৩১৬।] 


৫.ইমাম বগভি (رحمة الله) বলেন,

وام الشيء اصله ويقال لمكة أم القري لأنها أصل البلاد دحيت الأرض من تحتها-

কোনো বস্তুর উম্ম হলো তার মূল। আর মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। কেননা, এটা সকল নগরের মুল। এ থেকে ভূখন্ড ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। [বাগভি, মায়ালেমুত তানযিল, ১:৩৭]


৬. ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন,

وسميت مكة أم القري لتقديمها وجمعها ما سواها وقيل لأن الأرض دحيت من تحتها-

সর্বপ্রথম ভূখন্ড হওয়ার কারণে মক্কাকে উম্মুল কুরা বলা হয়। আর এটা বলা হয় যে, এর নিচ দিয়ে জমি প্রসার লাভ করেছে।। [ইবনে কাসির, তাফসিরূল কুরআনিল আজিম, ১:১০।]


এখানে লক্ষনীয় বিষয় এ যে, যেহেতু মক্কা জমিনের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রকাশিত শুষ্ক জায়গা এ জন্য এটাকে উম্মুল কুরা বলা হয়েছে।


❏৪র্থ অধ্যায়ঃ

আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকেঃ



🕋 আয়াত ১:

❏ আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِيَّ ٱلأُمِّيَّ

অর্থ: যারা আনুগত্য করে রাসূল (ﷺ)’এর, যিনি ‘উম্মী নবী (ﷺ)’।— সূরা আ’রাফ: আয়াত- ১৫৭


🕋 আয়াত ২:

❏ আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন-


هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلأُمِّيِّينَ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُواْ عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَابَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلاَلٍ مُّبِينٍ

অর্থ: তিনি (আল্লাহ), যিনি উম্মী লোকদের মধ্যে তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেন যেনো তাদের কাছে তাঁর (রবের) আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে (ঐশী) কিতাব ও হিকমতের জ্ঞান দান করেন আর নিশ্চয় নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলো। [সূরা জুমুআ, ৬২:২, তাফসীরে নূরুল এরফান]


🕋 আয়াত ৩:

❏ আল-কুরআন শরীফে ইরশাদ হচ্ছে,

ماكنت تتلوا من قبله من كتاب ولا تخطه بيمينك اذا الارتاب المبطلون.

অর্থঃ- “এর পূর্বে (নুবুওয়াত প্রকাশের পূর্বে) হে হাবীব (ﷺ) আপনি না কোন কিতাব পড়তেন এবং না নিজ হাতে কোন কিছু লিখতেন, যদি তা করতেন, তবে বাতিলপন্থীরা নিশ্চয়ই (আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে) সন্দেহ করত।” (সূরা আনকাবুত/৪৮)


❏ এই আয়াতের ব্যাখায় বিখ্যাত মুফাসসির হযরত ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন,

كان عليه السلام يعلم الخطوط ويخبر عنها

অর্থ: হুযুর পাক (ﷺ) লিখতে জানতেন এবং অপরকেও জানাতেন। [তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৬/৬১০]


🕋 আয়াত ৪:

আল্লাহ বলেন : ‘হে নবী! আপনাকে আমি এমন সব জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি যা আপনিও জানতেন না এবং আপনার পূর্বপুরুষও জানতো না।’ [সূরা আনআম, ৬:৯২]।


🕋 আয়াত ৫:

কুরআনের বাণী: ‘যাকে জ্ঞান-প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ করা হয়েছে তাকে মহাকল্যাণে ভূষিত করা হয়েছে।’ [২:২৬৯]।


🕋 আয়াত ৬:

অন্যত্র ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান রাখে আর যে জ্ঞান রাখে না তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ [সূরা জুমার : ৯]।


🕋 আয়াত ৭:


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

الرَّحْمَنُ

করুনাময় আল্লাহ।

عَلَّمَ الْقُرْآنَ

শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন,

خَلَقَ الْإِنسَانَ

সৃষ্টি করেছেন মানুষ,

عَلَّمَهُ الْبَيَانَ

তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা।

[সূরা আর-রহমান, আয়াত ১-৪]


❏ তফসীর ১:


[৫৫:১-৪] আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা'আলেমুত তানযীলে ও তাফসীরে হুসাইনীতে এ বলা হয়েছে, 

-“আল্লাহ তায়ালা মানব তথা মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে (বায়ান) তথা পূর্বে যা হয়েছে এবং পরে যা হবে সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।” 

[ইমাম বগভী: মু'আলেমুত তানযীল : ৪/২৬৭ পৃ. দারুল মারুফ, বয়রুত।]


❏ তফসীর ২:


[৫৫:১-৪] আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে খাযেনে বলা হয়েছে,

-“বলা হয়েছে যে, (উক্ত আয়াতে) ইনসান বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে। তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যা হবে সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা তাঁকে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এবং কিয়ামতের দিন হওয়া পর্যন্ত সব অবহিত করেছেন।” 

[ইমাম খাযেন,তাফসীরে লুবাবুত তাবীল,8/২০৮পৃ.]


❏ তফসীর ৩:


[৫৫:১-৪] আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বায়ানে বলা হয়েছে,

-“আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী করীম (ﷺ) কে নিজেই স্বয়ং কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন আল্লাহ তায়ালা ফরমায়েছেন, আপনার রব সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না।” [ইসমাঈল হাক্কী, রুহুল বায়ান,৯/৩৪০ পৃ.]


❏ তফসীর ৪:


[৫৫:১-৪] আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মাদারিকে আছে,

-“ইনসান তথা মানব জাতি বলতে আদম (عليه السلام) অথবা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে।” 

[ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, ২/২৬৫পৃ.]


❏ তফসীর ৫:


[৫৫:১-৪] আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীলে ইমাম বাগভী (رحمة الله) (ওফাত : ৫১৬ হিঃ) লিখেন, 

-“বলা হয়েছে যে, এ আয়াতের ইনসান বলতে হুযুর (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে এবং এ বয়ান বলতে এ কথাই বােঝানাে হয়েছে যে, তাকে [প্রিয় হাবীব (ﷺ)] কে ঐ সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তিনি জানতেন না।” 

[ইমাম বগভী, মা'লিমুত তানযিল, ৪/২৬০পৃ.]


❏ তফসীর ৬:


আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মদ সাভী আল মালেকী (رحمة الله) (ওফাত : ১২২৩ হিজরী) বলেন, 

-“বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন ইনসানে কামেল। আর বয়ান (শিক্ষা দেয়া) দ্বারা যা হয়েছে ও যা হবে এবং এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা আল্লাহ রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দিয়েছেন।” 

[ইমাম সাভী,তাফসীরে সাভী,৪/১৫৩পৃ.মাকতাবায়ে কাহেরা,মিশর।]


❏ তফসীর ৭:


ইমাম আবুল ফারাহ আব্দুর রহমান বিন যওজী (رحمة الله) (ওফাত : ৫৯৭ হিজরা) বলেন, 

 “নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বয়ান তথা বর্ণনা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হল যা হয়েছে এবং যা হবে। ইমাম কায়সান (رحمة الله) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।” 

[ইমাম জওজী ; যা’দল মাসীর ফি উলমুত তাফসীর : ৮/১০৬ পৃ.]


❏ তফসীর ৮:


ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) (ওফাত : ৬৬৮ হিজরী) বলেন,  -“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও ইমাম কায়সান (رحمة الله) বর্ণনা করেন, ইনসান শব্দ দ্বারা সরকারে দু’আলম (ﷺ) কে বুঝানাে হয়েছে। 

আর বয়ান দ্বারা হারাম থেকে হালাল এবং পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েতকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এখানে এটাও বর্ণনায় এসেছে, যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে। এমনকি সৃষ্টির শুরু থেকে বিচার দিবস হাশর পর্যন্ত সবকিছু বর্ণনা রাসূল (ﷺ) কে শিক্ষা দেয়া হয়েছে।” 

[ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে জামিউল আহকামিল কুরআন : ১৭/১৫২ পৃ. মাকতুবায়ে. দারুল ইসলাম, 

বয়রুত।]


❏৫ম অধ্যায়ঃ 


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লিখতে জানতেনঃ হাদিসের আলোকে 



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত মানব জাতির শিক্ষকঃ


❏ হাদিস ১: 


রাসূল (ﷺ) বলেন : ‘বুয়িস্তু মোয়াল্লিমান’।

অর্থঃ ‘আমি মানব জাতির জন্য শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। [মিশকাতুল মাসাবিহ]

অপর হাদিসে আছে, ‘নিশ্চয় আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৯]


❏ হাদিস ২: 


জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত:

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْنِي مُعَنِّتًا وَلَا مُتَعَنِّتًا وَلَكِنْ بَعَثَنِي مُعَلِّمًا مُيَسِّرًا


1478 صحيح مسلم كتاب الطلاق باب بيان أن تخيير امرأته لا يكون طلاقا إلا بالنية


আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে কঠোর কিংবা বাধা হওয়ার জন্য প্রেরণ করেননি, বরং তিনি আমাকে শিক্ষা ও শান্তির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।"

[অর্থাৎ, শিক্ষকরূপে প্রেরণ করেছেন] 

[সহিহ মুসলিম ১৪৭৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]



❏ হাদিস ৩:

আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতেঃ


আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

بَابُ الْخَوْفِ


وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم خُطبَةً مَا سَمِعْتُ مِثلَهَا قَطُّ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً » فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَجُوهَهُمْ، وَلَهُمْ خَنِينٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: بَلَغَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم عَنْ أَصْحَابِهِ شَيْءٌ فَخَطَبَ، فَقَالَ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ، فَلَمْ أرَ كَاليَومِ في الخَيرِ وَالشَّرِّ، وَلَوْ تَعْلَمونَ مَا أعلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً» فَمَا أتَى عَلَى أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمٌ أَشَدُّ مِنْهُ، غَطَّوْا رُؤُسَهُمْ وَلَهُمْ خَنِينٌ .

পরিচ্ছদঃ ৫০: আল্লাহ ও তাঁর আযাবকে ভয় করা


রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদা আমাদেরকে এমন ভাষণ শুনালেন যে, ওর মত (ভাষণ) কখনোও শুনিনি। তিনি বললেন, "আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে।’’ (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের কান্নার রোল আসতে লাগল।


তথ্যসূত্রঃ

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) 

১) সহীহুল বুখারী ৪৬২১, ৯৩, ৫৪০, ৬৩৬২, ৬৪৮৬, ৭০৯১, ৭২৯৪, ৭২৯৫।

২) মুসলিম ২৩৫৯।

৩) আহমাদ ১১৫০৩, ১২২৪৮, ১২৩৭৫, ১২৪০৯, ১২৭৩৫, ১৩২৫৪। 

৪) ইমাম নববীঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিস নম্বরঃ [406], অধ্যায়ঃ বিবিধ (كتاب المقدمات), তাওহীদ পাব্লিকেশন।


বুঝা গেল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা জানেন কোন উম্মত তা জানে না।


আমাকে সৃষ্টির আদি-অন্ত পর্যন্ত সব জ্ঞান দান করা হয়েছেঃ


❏ হাদিস ৪:


হুযূর পাক (ﷺ) বলেন,

اتيت علم الاولين والاخرين.

অর্থঃ- আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জ্ঞান দান করা হয়েছে। অপর বর্ণনায়, হুযূর পাক (ﷺ) বলেন,

اعطيت جوامع الكلم.

অর্থঃ- ‘আমাকে (শুরু হতে শেষ পর্যন্ত) সমস্ত ইলিম প্রদান করা হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)


❏ হাদিস ৫:


হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে


إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا،.


-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি।’’


তথ্যসূত্রঃ

১.মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০পৃ. 

২.মুসলিম: আস-সহিহ: ৪/২২১৬ হাদিস: ২৮৮৯, 

৩.বায্যার: আল-মুসনাদ: ৮/৪১৩-৪১৪ হাদিস: ৩৪৮৭, 

৪.ইবনে মাজাহ: আস-সুনান: হাদীস: ৩৯৫২, 

৫.আবু দাউদ: আস-সুনান: কিতাবুল ফিতান: ৪/৯৫ হাদিস: ৪২৫২, 

৬.ইমাম আহমদ: আল-মুসনাদ: ৫/২৮৪ হাদিস: ২২৫০, 

৭.আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৯৭ পৃ. হাদিস: ৪২৫২, 

৮.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ আকায়েদে আহলুস সুন্নাহ।


বুঝা গেল,  সমস্ত বিশ্বের জ্ঞান হুযূর পাক (ﷺ) স্বচক্ষে তিনি অবলোকন করেছেন।


❏ হাদিস ৬:


ইমাম মুসলিম (رحمة الله) হযরত ‘আমর ইবনে আখতাব (আবু যায়দ) আল-আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,

صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا..

তিনি বলেন: “মহানবী (ﷺ) আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যতোক্ষণ না যোহরের নামাযের সময় হয়; তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন এবং নামাযশেষে আবার তাতে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন। ইতোমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয় এবং তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি নামায শেষে আবারও মিম্বরে আরোহণ করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর বয়ান রাখেন। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই তিনি আমাদের বলেন। আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি-ই সবচেয়ে জ্ঞানী যিনি এর অধিকাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন।”


তথ্যসূত্রঃ

১.মুসলিম: আস-সহীহ: ২/৩৯০ পৃ. হাদিস: ২৫, 

২.খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৪/৩৯৭ হাদীস: ৫৯৩৬, 

৩.মুসলিম: আস-সহীহ: ৪/২২১৭ হাদিস: ২৮৯২, 

৪.আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/৩৪১ পৃ.


❏ হাদিস ৭:


হযরত উমর ফারুক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত


قَامَ فِيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَاَخْبَرَ نَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ اَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِ لَهُمْ وَاَهْلُ النَّارِ مَنَازِ لَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ.


-‘‘হুজুর ﷺ এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করেছিলেন, সেখানে তিনি (ﷺ) আমাদেরকে আদি সৃষ্টির সংবাদ দিচ্ছিলেন, এমন কি বেহেশত বাসী ও দোযখ বাসীগণ নিজ নিজ মঞ্জিলে বা ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর র্বণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন, তিনি তো স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেন নি, তিনি ভুলে গেছেন।’’


তথ্যসূত্রঃ

১.বুখারী: আস-সহিহ: ২৮৬ হাদীস: ৩১৯২, 

২.মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০পৃ. 

৩.খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৫০৬ হাদীস: ৫৬৯৯, 

৪.তিরমিজী: আস-সুনান: ৪/৪১৯ হাদীস: ২১৯১, 

৫.আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৪৪১পৃ. হাদীস: ৪২৪০

৬.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ আকায়েদে আহলুস সুন্নাহ।


বুঝা গেল, সৃষ্টি আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল জ্ঞান আল্লাহ পাক তাঁকে দান করেছেন।


❏ হাদিস ৮:


আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (رضي الله عنه) হতে রওয়ায়াত করেন,

قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا، مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ، إِلَّا حَدَّثَ بِهِ، حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ، قَدْ عَلِمَهُ أَصْحَابِي هَؤُلَاءِ، وَإِنَّهُ لَيَكُونُ مِنْهُ الشَّيْءُ قَدْ نَسِيتُهُ فَأَرَاهُ فَأَذْكُرُهُ، كَمَا يَذْكُرُ الرَّجُلُ وَجْهَ الرَّجُلِ إِذَا غَابَ عَنْهُ، ثُمَّ إِذَا رَآهُ عَرَفَهُ..

তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমদের মাঝে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে (কথা বল)-ছিলেন; আর তিনি ওই সময় থেকে (পৃথিবীর) শেষ সময় পর্যন্ত যা যা ঘটবে তার কোনোটাই বাদ দেন নি, সবই আমাদের বলেছেন। যাঁরা তা মনে রাখতে পেরেছেন, মনে রেখেছেন এবং যাঁরা ভুলে গিয়েছেন, তাঁরা ভুলেই গিয়েছেন। যাঁরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সবাই এটা জানেন। আমি হয়তো ওর কিছু কিছু ভুলে গিয়ে থাকতে পারি; কিন্তু যখনই তা ঘটে তখনই আমার মনে পড়ে যায়, যেমনিভাবে কেউ এমন কোনো ব্যক্তিকে মনে রাখেন যিনি দূরে কোথাও ছিলেন, অথচ তিনি ফিরে আসার পরপরই তাঁকে চেনতে পারেন।” 


তথ্যসূত্রঃ

👉হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতেঃ

১.বুখারী: আস-সহীহ: ১১/৯৭৭ পৃ. হাদিস: ৬৬০৪, 

২.মুসলিম: আস-সহীহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০ হাদিস: ২২১৭, 

৩.আবু দাউদ: আস-সুনান: হাদীস: ৪২৪০, 

৪.আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ: ৫/৩৮৩-৩৮৯, 

৫.খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৪৬১পৃ. হাদিস: ৫৩৭৯, 

৬.ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুল নবুয়ত: ৬/৩১৩ পৃ., 

৭.ইমাম কুস্তালানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ৩/৯৫পৃ. 

৮.ইমাম আবু নুয়াইম: দালায়েলুল নবুয়ত: ২০ পৃ. হাদিস: ২৭৩, 

৯.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ আকায়েদে আহলুস সুন্নাহ।

👉হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতেঃ

১০.তিরমিজী: আস-সুনান: ৪/৪১০ হাদীস: ২১৯১।

১১.ইমাম আহমদও বর্ণনা করেছেন এটি। 

👉হযরত উমর (رضي الله عنه) হতেঃ

১২.বুখারী: আস-সহিহ: ২৮৬ হাদীস: ৩১৯২, 

১৩.মুসলিম: আস-সহিহ: কিতাবুল ফিতান: ২/৩৯০পৃ. 

১৪.খতিব তিবরিযী: মিশকাত: ৫/৫০৬ হাদীস: ৫৬৯৯, 

১৫.তিরমিজী: আস-সুনান: ৪/৪১৯ হাদীস: ২১৯১, 

১৬.আবু দাউদ: আস-সুনান: ৪/৪৪১পৃ. হাদীস: ৪২৪০



হাদিস ও ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা ব্যতীত আমি কিছুই জানি না।



❏ হাদিস ৯: 


"হুযূর পূর নূর (ﷺ) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান, “আমি আল্লাহর নামে কসম করছি, নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না কেবল আমার প্রভু যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। [অর্থাৎ, প্রভু আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ব্যতীত আমি নিশ্চই আমি কিছু জানি না]


[উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যাঃ তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উট হারিয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি মানুষদের কাছে ওর খোঁজ জানতে চান, যার প্রেক্ষিতে জনৈক মোনাফেক (যায়দ ইবনে আল-লাসিত আল-কায়নুকাঈ) বলেছিল, “এই হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁর কাছে ওহী এসেছে আসমান থেকে, অথচ তিনি জানেন না তাঁর উট কোথায়।” এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নূরনবী (ﷺ) আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন, ‘‘অমুক লোক (মোনাফেক) এ কথা বলেছে। নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না শুধু আমার প্রভু খোদাতা’লা যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। আর তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে ওই উট অমুক উপত্যকায় একটি গাছের সাথে লাগাম জড়িয়ে গিয়ে আটকে আছে।” মানুষেরা তখনি ওখানে দৌড়ে গিয়ে (ওই অবস্থায়) উটটিকে পায়। 


তথ্যসূত্রঃ

এই বর্ণনা দু’জন সাহাবীঃ

👉হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ (رضي الله عنه)  ও 

👉হযরত উমারা ইবনে হাযেম (رضي الله عنه) সূত্রেঃ

১.ইবনে ইসহাকঃ ‘আল-মাগাযী’।

২.ইবনে হিশাম তাঁর ’সীরাতে ইবনে হিশাম’ (৫:২০৩) ও 

৩.আত-তাবারী তাঁর ‘তারিখে তাবারী’ (২:১৮৪) 

৪.ইবনে হাযম নিজ ‘আল-মুহাল্লা’ (১১:২২২) ৫.ইবনে হাজর আসকালানীঃ ‘ফাতহুল বারী শরহে বুখারী’ :৩৬৪, ১৯৫৯ সংস্করণ) 

৬.ইবনে হাজর আসকালানীঃ ‘আল-ইসাবা’ (২:৬১৯) 

৭.ইবনে হিব্বানঃ ‘আল-সিকাত‘ (২: ৯৩) 


👉ইবনে কুতায়বা (رضي الله عنه) সূত্রে,

৮.‘দালাইল আন্ নবুওয়াহ’ (১৩৭পৃষ্ঠা)  

৯.আল-তায়মী এটি বর্ণনা করেন। 


👉হযরত উকবা ইবনে আমির (رضي الله عنه) সূত্রে,

১০.ইমাম নাবহানীর উদ্ধৃত অংশটি হযরত উকবা ইবনে আমির (رضي الله عنه) হতে 

১১.আবু শায়খঃ ‘আল-আ’যামা’ (৪:১৪৬৮-১৪৬৯ #৯৬৭১৪) 

অনুবাদঃ কাজী সাইফুদ্দীন হোসাইন]


এটাই আহলুস সুন্নাহর আকিদা যে, আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যতটুকু জানিয়েছেন তিনি ততটুকুই জানেন। আর তার পরিমাণ তো আল্লাহই ভাল জানেন। নিশ্চই তা অল্প নয় তা অপরিসীম। আর তিনি যতটুকু জানতেন সব যে প্রকাশ করেছেন তাও না। যেমন এ সম্পর্কে এই হাদিস থেকে ধারণা নেয়া যাক।

 

❏ হাদিস ১০:

বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম তন্মধ্যে একটি হল সবার ইলমঃ


“হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি (আসমানী) ৭১ টি কিতাব পাঠ করেছি। সবগুলাে তেই পাঠ করেছি আর বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মহা প্রলয় পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান বুদ্ধি দান করেছেন তা রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর জ্ঞানবুদ্ধির তুলনায় এমন, যেমন বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম আর বালুকণা সমূহের মধ্যে একটি বালুকণী হল সবার ইলম। নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল।”


তথ্যসূত্রঃ

১. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১৯ পৃ: হাদিস নং-৩৪। 

২. ইমাম আবু নঈম ইস্পাহানী : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৪/২৬ পৃ.।

৩. আল্লামা ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/২৪২ পৃ 


❏ হাদিস ১১:

ইয়ামানবাসীদের প্রতি চিঠিঃ


আমর ইবন মানসূর (رحمة الله) ... আবু বকর ইবন মুহাম্মাদ ইবন আমর ইবন হাযম (رحمة الله) তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইয়ামানবাসীদেরকে এক চিঠি লেখেন, যাতে ফরয, সুন্নাত এবং দিয়াত সম্বন্ধে লিখছিলেন। আর তিনি তা আমর ইবন হাযমের মাধ্যমে পাঠান। 


তথ্যসূত্রঃ

[সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ কাসামাহ, হাদিস ৪৮৫৩]


কিসরা, কায়সার ও নাজাশীর কাছে চিঠিঃ


 ❏ হাদিস ১২:


নাসর ইবনু আলী জাহযামী (رحمة الله) ..... আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, নাবী (ﷺ) (পারস্য সম্রাট) কিসরা, (রোম বাদশা) কায়সার ও (আবিসিনিয়ার সম্রাট) নাজাশীর কাছে চিঠি লিখতে চাইলেন, তাকে বলা হলো তারা তো সিলমোহর ছাড়া পত্র গ্রহণ করে না। এরপর রসূলুল্লাহ (ﷺ) রূপার একটি আংটি তৈরি করলেন এবং এতে مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ  [মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।]

কথাটি খোদাই করলেন। 


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), অধ্যায়ঃ পোশাক ও সাজসজ্জা, হাদিস ৫৩৭৫

●সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩০৫), 

●সহীহ মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার ৫৩২১)


হাদিসের বিশুদ্ধতাঃ (হাদিসের মানঃ সহিহ) 

● আল-মুফহিম (رحمة الله) 

● ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله),

● ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله),

● ইমাম আল বাজি (رحمة الله),

● ইমাম আবু যর হারভি (رحمة الله)

●ইমাম নিশাবুরি (رحمة الله) এবং আরও অনেক মুহাদ্দিসগণ এই হাদিসটির সত্যতা অনুমোদন করেছেন।

[সহিহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম কুরতুবি (رحمة الله) এমন হাদীস থেকে প্রমাণ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লিখতে পড়তে জানতেন।]


❏ হাদিস ১৩:


ইসহাক (رحمة الله) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কায়সারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন এবং এতে বলেছিলেন, যদি তুমি এই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে প্রজাদের পাপের বোঝা তোমারই উপর বর্তাবে।


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ জিহাদ, হাদিসঃ ২৭৩৫, (ইফাঃ) ২৭৩২।

●সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস ২৯৩৬, (২৯৪০), 

●সহিহ বুখারীঃ (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭২১)


❏ হাদিস ১৪: 


ইব্রাহীম ইবনু হামযা (رحمة الله) ... ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কায়সারকে ইসলামের প্রতি আহবান সম্বলিত চিঠি লেখেন এবং দেহইয়া কালবীর (رضي الله عنه) এর মারফত সে চিঠি পাঠান। 


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ জিহাদ, হাদিস ২৭৩৯।

●সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার, হাদিসঃ ২৯৪০, ২৯৩৬।


❏ হাদিস ১৫:


মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (رحمة الله) ... আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (ﷺ) যখন রোমের সম্রাটের নিকট চিঠি লিখতে চাইলেন, তখন লোকেরা বলল, মোহরকৃত চিঠি না হলে তারা তা পড়ে না। তাই নাবী (ﷺ) একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করলেন। [আনাস (رحمة الله) বলেন] আমি এখনও যেন এর উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করছি। তাতে مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ ‘‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ অংকিত ছিল। 


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ বুখারী (ইফাঃ),অধ্যায়ঃ আহকাম, হাদিস ৬৬৭৬।

●সহীহ বুখারীঃ (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৬৩)

●সহীহ বুখারীঃ (তাওহীদ),অধ্যায়ঃ আহ্‌কাম, হাদিস ৭১৬২।


❏ হাদিস ১৬:


হুমায়দ ইবন মাসআদা (رحمة الله) ... আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রোমের বাদশাহকে পত্র লিখতে ইচ্ছা করলে, লোকজন বললোঃ তারা সিলমোহর ব্যতীত কোন চিঠি পড়ে না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রূপার একটি আংটি তৈরি করান। আমি যেন তার শুভ্রতা তাঁর হাতে এখনও দেখছি। তাতে নকশা করা হয়েছিলঃ 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্'।


তথ্যসূত্রঃ

[সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ সাজসজ্জা, হাদিস নম্বরঃ ৫২৭৭]


অনারবদের প্রতি চিঠিঃ


❏ হাদিস ১৭:

 

আবদুর রহীম ইব্‌ন মুতাররিফ (رحمة الله) .... আনাস ইব্‌ন মালিক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন কোন অনারব দেশের শাসনকর্তাদের নিকট চিঠি লেখার ইচ্ছা করেন। তখন তাঁকে বলা হয়ঃ তারা মোহরাংকিত ছাড় কোন চিঠিই পড়ে না। তখন তিনি রূপার একটি আংটি তৈরী করে নেন এবং তাতে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌” খোদাই করে নেন।


তথ্যসূত্রঃ

[সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ আংটির বিবরণ, হাদিসঃ ৪১৬৬]


❏ হাদিস ১৮:


আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন অনারবদের নিকট চিঠি লিখতে চাইলেন, তখন তাকে বলা হল, অনারবগণ সীল লাগানো ব্যতীত কোন চিঠিপত্র গ্রহণ করে না। 


আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

তথ্যসূত্রঃ

●সূনান তিরমিজী,অধ্যায়ঃ অনুমতি প্রার্থনা,হাদিস ২৭১৮

●মুখতাসার শামায়িল (৭৪), 

●বুখারী ও মুসলিম।


❏ হাদিস ১৯: 

মুক্তিপণের জন্য চিঠিঃ


আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইসমাঈল (رحمة الله) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত।  রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ হয়ত তারা তোমাদের মৃত সঙ্গীর রক্তপণ আদায় করবে, না হয় তাদের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাদের কাছে এ মর্মে চিঠি লিখলেন। জবাবে তাদের পক্ষ থেকে লেখা হল যে, আমরা তাকে হত্যা করিনি। 

তথ্যসূত্রঃ

[সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ আহকাম, হাদিস ৬৭০২]


❏ হাদিস ২০: 

ইবনুল আলমা'র প্রতি চিঠিঃ


আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা'নাব (رحمة الله) ..... আবূ হুমায়দ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  

আয়লার অঞ্চল প্রধান (শাসক) ইবনুল আলমা'-র দূত রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট একটি পত্র নিয়ে আসলো এবং তিনি তাকে একটি সাদা খচ্চর উপটৌকন পাঠালেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ)-ও তার নিকট চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাদর উপটৌকন হিসেবে প্রেরণ করলেন। 


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), অধ্যায়ঃ ফাযীলাত, হাদিস ৫৮৪২।

●সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৪৯।

●সহীহ মুসলিম, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৮০।


❏ হাদিস ২১: 


উহায়ব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত হাদীসে বেশি উল্লেখ আছে, রসূলুল্লাহ (ﷺ) তার (ইবনুল আলমা)-এর জন্য তাদের জনপদগুলো লিখে দিলেন। 


তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ মুসলিম (হাঃ এ),অধ্যায়-ফাযীলাতঃ হাদিস ৫৮৪৩

●সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৫০।

●সহীহ মুসলিম, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৮১।


❏ হাদিস ২২: 

হিরাকালের প্রতি চিঠিঃ


ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত। নবী (ﷺ) রোম সম্রাট হিরাকালের নিকট চিঠি লিখেছিলেনঃ ‘‘আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে রোমের সম্রাট হিরাকলের নিকট। যে ব্যক্তি হেদায়াতের অনুসারী তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। 


তথ্যসূত্রঃ

[সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায়ঃ শিষ্টাচার, হাদিস ৫১৩৬]


❏ হাদিস ২৩: 

অন্যান্যদের নিকট চিঠিঃ


মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান সূত্রে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু উকাইম (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আমল পেলেও তার কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করতে পারেননি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের কাছে চিঠি লিখেন।


👉মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার-ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ হতে, তিনি ইবনু আবূ লাইলা (رحمة الله)-এর সূত্রে উক্ত মর্মে একইরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। 

👉আবূ ঈসা বলেনঃ  উকবা ইবনু আমির (رضي الله عنه) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।


তথ্যসূত্রঃ

[সূনানে তিরমিজী, অধ্যায়ঃ চিকিৎসা, হাদিস ২০৭২]



রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইন্তেকালের পূর্বে কিছু লিখতে চেয়েছিলেনঃ


❏ হাদিস ২৪:


উম্মুল মু'মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, "রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর (শেষ) অসুস্থতার সময় তাঁকে বললেন, তাঁর পিতা আবু বকর (رضي الله عنه) এবং তাঁর ভাইকেও ডাকতে, যাতে করে, তিনি একটি দলিল লিখতে পারেন, কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে অন্য কারও ইচ্ছা হতে পারে (তাঁর উত্তরসূরি হওয়ার) এবং কেউ কেউ দাবি করতে পারে: আমি এর চেয়ে উত্তম দাবী রাখি, যেখানে আল্লাহ ও ঈমানদারগণ আবু বকর (رضي الله عنه)  ব্যতীত অন্য কারও দাবী রাখা প্রত্যাশা (প্রতিপাদন) করে না। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৮৭৯]


❏ হাদিস ২৫: 


 عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ لَمَّا حُضِرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَفِي الْبَيْتِ رِجَالٌ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم هَلُمُّوْا أَكْتُبْ لَكُمْ كِتَابًا لَا تَضِلُّوْا بَعْدَهُ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ غَلَبَهُ الْوَجَعُ وَعِنْدَكُمْ الْقُرْآنُ حَسْبُنَا كِتَابُ اللهِ فَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْبَيْتِ وَاخْتَصَمُوْا فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ قَرِّبُوْا يَكْتُبُ لَكُمْ كِتَابًا لَا تَضِلُّوْا بَعْدَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُوْلُ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَمَّا أَكْثَرُوا اللَّغْوَ وَالِاخْتِلَافَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قُوْمُوْا قَالَ عُبَيْدُ اللهِ فَكَانَ يَقُوْلُ ابْنُ عَبَّاسٍ إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ أَنْ يَكْتُبَ لَهُمْ ذَلِكَ الْكِتَابَ لِاخْتِلَافِهِمْ وَلَغَطِهِمْ.


ইবনু 'আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর ওফাতের সময় যখন ঘনিয়ে এলো এবং ঘরে ছিল লোকের সমাবেশ, তখন নবী (ﷺ) বললেন, তোমরা এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেই, যেন তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হয়ে যাও। 

তখন তাদের মধ্যকার কিছুলোক বললেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর রোগ-যন্ত্রণা কঠিন হয়ে গেছে, আর তোমাদের কাছে তো কুরআন মওজুদ আছে। আল্লাহ্‌র কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ ব্যাপারে নবী (ﷺ)-এর পরিবারের লোকজনের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় এবং তারা পরস্পর বাক-বিতণ্ডা করতে থাকেন। তাদের কেউ বললেন, তোমারা তাঁর নিকট যাও, তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিবেন। যাতে তোমরা তাঁর পরে কোন বিভ্রান্তিতে না পড়। আবার কেউ বললেন অন্য কথা। বাক-বিতণ্ডা ও মতভেদ যখন চরমে পৌঁছল, তোমরা রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা উঠে চলে যাও। 'উবাইদুল্লাহ (رحمة الله) বলেন, ইবনু 'আব্বাস (رضي الله عنه) বলতেন, এ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, তাদের মতবিরোধ ও চেঁচামেচিই মূলত রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সহাবীগণের জন্য কিছু লিখে দেয়ার ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। 


হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


তথ্যসূত্রঃ

● সহিহ বুখারী শরীফ ৮/১৩: অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলমঃ হাদীস ৪৪৩২, 

● সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ওয়াসীয়্যা, হাদীস নং-৪০১৬

● আহমাদ  ৪৪৩২ (আধুনিক প্রকা. ৪০৮৩,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪০৮৬)  

● মিশকাত শরীফঃ হাদিস ৫৯৬৬।


❏ হাদিস ২৬: 

হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-কে লিখন পদ্ধতি শিক্ষাঃ


হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

عن معاوية انه كان يكتب بين يديه عليه السلام فقال له الق الدواة وحرف القلم واقم الباء وفرق السين وتعور الميم مع انه عليه السلام لم يكتب ولم يقرأ من كباب الاولين.


অর্থঃ- তিনি হুযূর পাক (ﷺ)-এর সামনে (ওহী) লিখতেন, অতঃপর হুযূর পাক (ﷺ) তাঁকে অক্ষর লিখার পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলম এভাবে ঘুরাও, “با” (বা) কে এভাবে সোজা করে লিখ, سين (সীন) কে পৃথক কর, আর মীম ميم (মীম) কে বাঁকা করোনা, অথচ তিনি দুনিয়াবী কোন কাতিবের (লিখকের)-এর নিকট থেকে লিখা শিখেননি, আর কোন প্রাচীনকালীন কিতাব থেকেও তা পড়েননি। 


তথ্যসূত্রঃ

● ইমাম কুরতুবীঃ তাফসীরে কুরতুবী ১৩/৩৫৩

● ইমাম কাজী আয়াজঃ আস শিফা বিতারীফি হুকমিল মুস্তফা ১/৩৫৮, 

● ইমাম ইবনে কাসীরঃ কিতাবু জামিউল কুরআন ১/১৪১, 

● ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানীঃ ফতহুল বারী লি শরহে বুখারী ৭/৫০৪, 


❏ হাদিস ২৭: 

এ সন্ধিপত্র সম্পন্ন করেন- মুহাস্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ্‌ঃ


হযরত বারা ইবনে আযিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,


لما اعتمر النبى صلى الله عليه وسلم فى ذى القعدة فابى اهل مكة ان يدعوه يدخل مكة حتى فاضاهم على انيقيم بها ثلثة ثلثة ايام فلما كتبوا الكتاب كتبوا هذا ما قاضى عليه محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم قالوا لانقر بهذا لو نعلم انك رسول الله ما منعناك شيئا ولكن انت محمد بن عبد الله فقال انا رسول الله وانا محمد بن عبد الله ثم قال لعلى امح رسول اله قال على لا والله لاامحوك ابدا فاخذ رسول الله صلى اله عليه وسلم الكتاب وليس يحسن يكتب فكتب هذا ما قاضى محمد بن عبد الله·


অর্থঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তিনি বলেন, যিলকাদ মাসে নবী (ﷺ) ‘উমরাহ্‌র উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা প্রবেশের জন্য ছেড়ে দিতে অস্বীকার করল। অবশেষে এই শর্তে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করলেন যে, তিনদিন সেখানে অবস্থান করবেন। সন্ধিপত্র লিখতে গিয়ে মুসলিমরা লিখলেন, এ সন্ধিপত্র সম্পাদন করেছেন, ‘আল্লাহ্‌র রসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)।’ তারা (মুশরিকরা) বলল, ‘আমরা তাঁর রিসালাত স্বীকার করি না। আমরা যদি জানতাম যে, আপনি আল্লাহ্‌র রসূল তাহলে আপনাকে বাধা দিতাম না। তবে আপনি হলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌র পুত্র মুহাম্মদ।’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহ্‌র রসূল এবং ‘আবদুল্লাহ্‌র পুত্র মুহাম্মদ।’ অতঃপর তিনি আলী (رضي الله عنه)–কে বললেন, "রাসূলুল্লাহ" শব্দটি মুছে দাও। তিনি বললেন, ‘না। আল্লাহ্‌র কসম, আমি আপনাকে কখনো মুছব না।’ 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন চুক্তিপত্রটি নিলেন এবং লিখলেন, ‘এ সন্ধিপত্র সম্পন্ন করেন- মুহাস্মদ ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌। খাপবদ্ধ অস্ত্র ব্যতীত আর কিছু নিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি বের করে নিবেন না। আর তাঁর সঙ্গীদের কেউ মক্কায় থাকতে চাইলে তাঁকে বাধা দিবেন না।"

[হাদিসের মান: সহিহ]


তথ্যসূত্রঃ

১.সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৯৯

২.ইমাম আহমদঃ মুসনাদে আহমদ ১৮৬৫৮,

৩.ইমাম বায়হাকীঃ সুনানে কুবরা ৭/৪২: হাদীস ১৩৬৬৮,

৪.ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুন নবুওওয়াত ৪/৩৩৮,

৫.ইমাম দারেমীঃ সুনানে দারেমী ২৫০৭,

৬.ইমাম ইবনে হাজার আস্কালানীঃ ফতহুল বারী ৭/৫০৩,

৭.ইমাম ইবনে কাসীরঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর ৭/৩৫৯,

৮.ইমাম বাগবীঃ তাফসীরে বাগবী ৭/৩১৭,

৯.ইমাম মাহমুদ আলুসী বাগদাদীঃ রুহুল মায়ানী ১১/৬



❏ হাদিস ২৮: 

বনূ যুহায়র ইবনে উক্বাইশের প্রতি লিখিত পত্রঃ


حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا قُرَّةُ، قَالَ سَمِعْتُ يَزِيدَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا بِالْمِرْبَدِ فَجَاءَ رَجُلٌ أَشْعَثُ الرَّأْسِ بِيَدِهِ قِطْعَةُ أَدِيمٍ أَحْمَرَ فَقُلْنَا كَأَنَّكَ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ ‏.‏ فَقَالَ أَجَلْ ‏.‏ قُلْنَا نَاوِلْنَا هَذِهِ الْقِطْعَةَ الأَدِيمَ الَّتِي فِي يَدِكَ فَنَاوَلَنَاهَا فَقَرَأْنَاهَا فَإِذَا فِيهَا ‏


"‏ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ إِلَى بَنِي زُهَيْرِ بْنِ أُقَيْشٍ إِنَّكُمْ إِنْ شَهِدْتُمْ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَأَقَمْتُمُ الصَّلاَةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَأَدَّيْتُمُ الْخُمُسَ مِنَ الْمَغْنَمِ وَسَهْمَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَسَهْمَ الصَّفِيِّ أَنْتُمْ آمِنُونَ بِأَمَانِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ‏"


‏ ‏.‏ فَقُلْنَا مَنْ كَتَبَ لَكَ هَذَا الْكِتَابَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم


অর্থ: হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবদিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন: আমরা মিরবাদে ছিলাম। এমন সময় এলোমেলো চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাঁর হাতে (পশুর) একটি লাল চামড়া নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমরা বলি: আপনি দেখতে তো বেদুঈন। তিনি উত্তর দেন: জি হ্যাঁ। আমরা বলি: আপনার হাতে অবস্থিত চামড়ার টুকরোখানি আমাদের দিন। তিনি তা হস্তান্তর করলে আমরা তাতে পাঠ করি নিম্নের লিপি: 

“মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে বনূ যুহায়র ইবনে উক্বাইশের প্রতি (লিখিত)।

তোমরা যদি সাক্ষ্য দাও এই মর্মে  যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ/উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, আর যদি নামায আদায় করো, যাকাত দাও, গনীমতের এক-পঞ্চামাংশ ও মহানবী (ﷺ)’র অংশ (সোয়াফী) পরিশোধ করো, তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)’এর আমান তথা জিম্মাদারীতে বা সুরক্ষায় থাকবে।” এমতাবস্থায় আমরা তাঁকে (বেদুঈনকে) জিজ্ঞেস করি:

এই দলিলটি আপনার জন্যে কে লিখেছিলেন? তিনি উত্তর দেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ)।


তথ্যসূত্রঃ

● [সুনানে আবী দাউদ: হাদীস নং-২৯৯৩]


❏ হাদিস ২৯: 

মুসায়লামা’র পত্র ও মহানবী (ﷺ)’র উত্তরঃ   


আশজা’র জনৈক শায়খ আমার কাছে বর্ণনা করেন 

সালামা বিনতে নুয়াইম বিন মাসউদ আল-আশজাঈ (رحمة الله) হতে, তিনি তাঁর পিতা নুয়াইম (رحمة الله)হতে; যিনি বলেন: 

আমি হুজূর পাক (ﷺ)’কে মুসায়লামা কাযযাবের চিঠি পড়া হলে তাদের (বার্তাবাহকদের) প্রতি জিজ্ঞেস করতে শুনি, “তোমরা এ সম্পর্কে কী বলো?” তারা উত্তর দেয় যে তারা মুসায়লামার মতামত-ই ব্যক্ত করে। এমতাবস্থায় তিনি (ﷺ) প্রত্যুত্তর দেন, “আল্লাহর শপথ! বার্তাবাহকদের হত্যা না করার ব্যাপারটি যদি না থাকতো, তাহলে আমি তোমাদের দু জনের শিরোচ্ছেদ করতাম।” অতঃপর তিনি মুসায়লামার প্রতি লেখেন: “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে মিথ্যুক মুসায়লামা’র প্রতি লিখিত। হেদায়াত যে ব্যক্তি অনুসরণ করে তার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এই জগৎ আল্লাহতা’লার মালিকানাধীন। তিনি যে সব বান্দার প্রতি ইচ্ছা করেন, তাদেরকে এর উত্তরাধিকার দান করেন; আর উত্তম ফলাফল হচ্ছে পুণ্যাত্মাদের জন্যে (বরাদ্দ)।” এই ঘটনা দশম হিজরী সালের। 

[ইমাম ইবনে ইসহাকঃ সিরাতে ইবনে ইসহাকঃ ৬৪৯ পৃ]



❏৬ষ্ঠ অধ্যায়ঃ 


অন্যান্য ইমামগণ থেকে প্রমাণঃ



❏ প্রমাণ ১ :

 

ইমাম আল-সাফফার (رحمة الله) বলেন, আলী ইবনে আসবাত (رحمة الله) অথবা অন্য কেউ বর্ণনা করেন যে, "আমি আবু জাফর আল জাওয়াদ (رضي الله عنه) কে বললাম, লোকজন বলে থাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনও লিখতে বা পড়তে পারতেন না! 

সুতরাং, তিনি এটিকে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছিলেন: ‘তারা মিথ্যা বলেছে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত হোক! এটা কীভাবে সম্ভব? যখন আল্লাহ পাক স্বয়ং বলেছেন: '(তিনিই) যিনি উম্মি'য়িনা (অর্থাৎ, মক্কাবাসীদের) তোমাদেরই মধ্যে হতে একজনকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর (রবের) আয়াতগুলো পড়ে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল। ’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ২)


 … ’তিনি পড়তে বা লিখতে না পেরে তিনি কীভাবে তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন?’


অতঃপর আলী বিন আসবায়ত ইমাম [জাফর আল জাওয়াদ (رضي الله عنه)] কে জিজ্ঞাসা করলেন: “কেন তাকে আন-নবী আল-উম্মী বলা হত? ইমাম (رضي الله عنه) এর জবাব দিয়ে বলেন: "কারণ তিনি (ﷺ) মক্কার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।" এটি মহান আল্লাহতা'লার বাণী অনুসারে: 'যাতে তোমরা উম্মুল কুরাকে সতর্ক করে দাও (অর্থাৎ, শহরগুলোর মূল) এবং (তদসম্পর্কিত) এর আশেপাশের সবাই। 'উম্মুল কুরা অর্থ মক্কা। সুতরাং, তাকে উম্মি বলা হত।”

[আল-সাফফার (رحمة الله): বাশাইরুল-দারাজাত, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৪৭]


❏ প্রমাণ ২ :


ইমাম আস সাদুক (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ আল-সুফী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন: “আমি ইমাম আলী আল-রিদা (رضي الله عنه) এর পুত্র ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রাসূলের পুত্র [তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আওলাদ ও আহলে বাইয়াতের একজন সম্মানিত ইমাম ও বংশধর], কেন আল্লাহর নবীকে উম্মি বলা হত? 'উত্তরে তিনি বললেন:' লোকেরা কী বলে? 'আমি বললাম,' তারা দাবি করে যে, তিনি নিরক্ষর হওয়ার কারণে তাকে উম্মী বলা হত।


“তিনি জবাব দিলেন:‘ তারা মিথ্যুক! তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত হোক, আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে তাঁর কিতাবে বলেছেন: (তিনিই) যিনি উম্মি'য়িনা (অর্থাৎ, মক্কাবাসীদের) তোমাদেরই মধ্যে হতে একজনকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর (রবের) আয়াতগুলো পড়ে শুনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল।"[জুমুআ ২]


'তিনি নিজে যদি না পারতেন তবে তিনি তা কীভাবে অন্যকে শিক্ষা দিতেন?


“আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ৭২ ভাষা (অথবা ৭৩টি ভাষায়) পড়তে এবং লিখতে জানতেন! তিনি ছিলেন মক্কা থেকে, এজন্য তাঁকে উম্মি বলা হত। মক্কা হল শহরগুলো মাতা এবং এ কারণেই মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: 'যাতে আপনি (মুহাম্মদ) গ্রামগুলির মাকে (অর্থাৎ মক্কা) এবং তার আশেপাশের সবাইকে সতর্ক করতে পারেন।" 

[ইমাম আস সাদুকঃ মা'আনী আল আখবার, পৃষ্ঠা ৫৩]


❏ প্রমাণ ৩ :


হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় (ﷺ) হজরত আলীকে (رضي الله عنه) চুক্তিপত্র লেখার নির্দেশ দিলে হজরত আলী (رضي الله عنه) লিখলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম- মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে এ চুক্তিপত্র’। এতে মুশরিক প্রতিনিধি সুহায়ল আপত্তি জানিয়ে বলল, ‘আপনাকে যদি আল্লাহর রাসূল হিসেবে মেনেই নিতাম তাহলে তো আপনার সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বই থাকত না। সুতরাং আপনি ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি কেটে ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ’ লিখুন। মহানবী (ﷺ) ইসলামের স্বার্থে কৌশলগত কারণে তার এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে আলীকে (رضي الله عنه) নির্দেশ দিলেন ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ মুছে দিয়ে ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ’ লেখার জন্য। এ নির্দেশটি হজরত আলী (رضي الله عنه) প্রতি ঈমানের এক বিরাট পরীক্ষা হিসেবে আরোপিত হয়েছিল। হজরত আলী (رضي الله عنه) অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে করজোড়ে নিবেদন করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর দুনিয়ায় জিন ও ইনসানের মধ্যে আপনার রেসালতের আমিই সর্বপ্রথম সাক্ষী (সূরা রা’দ : ৪৩)। সুতরাং আমি কীভাবে নিজ হাতে তা মুছে দিতে পারি! হে আমার আকা ও মওলা, আমায় ক্ষমা করুন।’। তখন প্রিয় নবীজী (ﷺ) তা নিজ হাতে মুছে দিয়ে সেখানে লিখেছিলেন, ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ’। সম্রাট কায়সার ও কিসরার কাছেও তিনি নিজ হস্তে পত্র লিখেছিলেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে।

[সিরাতুল মুস্তফা, ইদরিস কান্ধলবি ১ম খণ্ড ইঃফাঃ পৃ.২৩০৭]




❏৭ম অধ্যায়ঃ 


আক্বল বা যুক্তি দ্বারা জবাবঃ





➠১) কেউ যদি আপনাকে নিরক্ষর বলে সেটা আপনার জন্য অপমানজনক। আর যিনি দুজাহানের বাদশাহ তাঁকে কিভাবে, কোন আক্কেলে নিরক্ষর বলছেন? (নাউযুবিল্লাহ) ভিতরটা কি একবারও কেঁপে উঠে না?


➠২) নবী আল-উম্মী শব্দের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে কিন্তু আপনে নিরক্ষরটাই কেন বেছে নিবেন?


➠৩) মক্কাবাসীদেরকে উম্মী বলা হত যদিও সবাই নিরক্ষর ছিল না তাও। কারণ তৎকালীন মক্কাতেও বহু কবি সাহিত্যিক ছিল। যাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছিল, যদি তারা পারে আল-কুরআনের মত একটি সূরা কিংবা একটি আয়াত লিখে এনে দেখাক। কিন্তু তারা যতই শিক্ষিত হোক না কেন আল্লাহর চেলেঞ্জের মোকাবেলায় তারা সবাই হেরে গেল। তাই এটা স্থানের সাথেই অনেকটা সম্পর্কিত ছিল।


➠৪) স্বয়ং আল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) এর শিক্ষক, জিব্রাইল (আঃ) তাঁর খাদেম। আপনার শিক্ষক যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি হত আপনে কি নিরক্ষর থাকতেন? আর আল্লাহর সাথে তো কোন শিক্ষকের তুলনাই নাই।


➠৫) ওনার লেখা কতিপয় চিঠি (ইউটিউব ভিডিও দ্রাষ্টব্য) প্রমাণ করে তিনি লিখতে জানতেন। তাহলে কেন এত বড় মিথ্যাচার?


➠৬) আলমে আরওয়া (রূহের জগত) থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তিনি এ বিশাল বিশাল আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবের ভান্ডার বর্ণনা করেছেন যা বুখারী শরীফের বর্ণনায়ও পাওয়া যায়। কেউ অস্বীকার করলে নবুওয়াতের মুজেজাকে অস্বীকার করা হবে। (নাউযুবিল্লাহ)


➠৭) অনেকে এই খোঁড়া যুক্তি দেয় যে, তিনি যিনি লিখতে জানতেন তাহলে সবাই কুরআনকে অস্বীকার করে বলত, কুরআন রাসূলের নিজের হাতে লেখা। তাই তিনি লিখতে জানতেন না। আরে বোকা এটা রদ করার জন্য তো একথাই যথেষ্ঠ যে, তৎকালীন মক্কার সবাই জানত যে, হুযূর পাক (ﷺ) কোন দিন কোন পাঠশালা কিংবা দুনিয়ার কারো কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ (লিখা-পড়া) শিখেন নি। আল্লাহ পাক নিজেই তাঁকে যা শিখানোর শিখিয়ে দিয়েছেন। এ উদাহরণ তো স্বয়ং বিরাট বড় এক মুজেজা। যা অনেক ইমামগণ উল্লেখও করে গেছেন। আফসোস লাগে জাহেলরা রাসূলের এত বড়  মুজেজা অস্বীকার করে তাঁকেই নিরক্ষর বানিয়ে দিল (নাউযুবিল্লাহ) 











তথ্যউৎসঃ 



১.সিহাহ সিত্তাহ এপ্সঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস একাডেমী, ইসলামিক সেন্টার, আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহিদ পাব্লিকেশন থেকে তথ্যসূত্র যুক্ত করা হল।  

২.বিভিন্ন ইংরেজী ওয়েবসাইটের অনুবাদ।

৩.বিভিন্ন বাংলা ওয়েবসাইট।

৪.মাওলানা শহিদুল্লাহ বাহাদুরঃ প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন।

৫.সুন্নি-বিশ্বকোষ।

৬.ড. ইউসুফ জিলানী।

৭.আব্দুল মোস্তফা রাহিম আল-আযহারী।

৮.কাজি সাইফুদ্দীন হোসাইন।

৯.যোসেফ এ, ইসলাম।

১০.আবু আইয়্যুব রিজভী।






Top